দর্পণ || গণতন্ত্র সংখ্যা ২০২১ || সংক্ষিপ্ত আলোচনা ~ বন্দনা পাত্র




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

সংক্ষিপ্ত আলোচনা 

বন্দনা পাত্র 


গণতন্ত্র কি?

গণতন্ত্র হল এমন একটি শব্দ যা যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক চিন্তা জগতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গণতন্ত্র কথাটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে জণগণের শাসন বা কর্তৃত্ব। গণতন্ত্র এমন একধরনের শাসন ব্যবস্থা যে শাসনক্ষমতা সমাজের সদস্যদের কাছে থাকে।গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে শাসনসংক্রান্ত ব্যাপারে শাসিতের সম্মতি লাভ। অতীত ও মধ্যযুগে গণতন্ত্র এই অর্থেই প্রযোজ্য। 

আধুনিক যুগে গণতন্ত্র বলতে আমরা একধরনের সরকারকেই বুঝি না। সাথে একধরনের সমাজ ব্যবস্থাকেও বুঝি। 


সরকার বা শাসনব্যবস্থা যখন সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়ে পরিচালিত হয়, তখন তাকে গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বলা হয়। প্রথম গণতন্ত্রের সূচনা হয় গ্রীসের নগর রাষ্ট্র এথেন্সে।


গণতন্ত্র কেন? 

অধ্যাপক গেটেলের মতে,'যে শাসন ব্যবস্থায় জণগণ সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগে অংশ নেওয়ার অধিকারী তাই গণতন্ত্র। 

ইংরেজি Democracy থেকে এসেছে। গ্রিক শব্দ demosঅর্থ হলো জণগণ আর kritos অর্থ শাসনক্ষমতা বা কর্তৃত্ব। 


গণতন্ত্র কতটা পালিত হয়? 

ভারতের গণতন্ত্র হলো পরোক্ষ গণতন্ত্র। 

গণতন্ত্র ও নির্বাচন সমার্থক শব্দ নয়,তবে দ্বিতীয়টি পরিপূরক।নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র হয় না। 

আবার গণতন্ত্র ছাড়া নির্বাচন প্রায় অর্থহীন।গণতন্ত্র ছাড়া নির্বাচন আত্মাহীন দেহের মতো।


খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে সলোন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেন। এজন্য তাঁকে 'গণতন্ত্রের জনক'বলা হয়। 

আধুনিক গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয় ১৫জুন(১২১৫)ম্যাগনাকার্টা চুক্তির মাধ্যমে। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে গণতন্ত্র বলতে আমরা এক প্রকার শাসনব্যবস্থাকে বুঝি। 

প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছেন,

'গণতন্ত্র এক প্রকার শাসনব্যবস্থা যেখানে শাসন ক্ষমতা কোনো শ্রেণী সমূহের উপর ন্যস্ত থাকে না বরং সমাজের সদস্যগণের উপর ন্যস্ত হয় ব্যাপকভাবে '।


গণতন্ত্রের কতটা প্রয়োজন তা জণসাধারণের ইচ্ছা, মঙ্গল, অমঙ্গল ও হিতকর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।সাম্য এবং স্বাধীনতা প্রাধান্য  পায়।

গণতন্ত্র সম্পর্কে লর্ড ব্রাইস বলেন, "যে শাসনপ্রথায় জনসমষ্টির অন্ততঃ তিন চতুর্থাংশ নাগরিকের ভোটের শক্তি যেন তাদের শারীরিক বলের সমান হয়।

১৮৬৩খ্রিস্টাব্দ আব্রাহাম লিঙ্কন গেটিসবার্গ বক্তৃতাতে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন 

'Government of the people,by the people,for the people'.


গণতান্ত্রিক অধিকার কি? 

মৌলিক ছয়টি অধিকার। 

সাম্যের অধিকার 

স্বাধীনতার অধিকার 

শোষণের অধিকার 

ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার 

সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার 

সংবিধানের প্রতিবিধানের অধিকার। 


তবে,জরুরি অবস্থায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়।মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে যে কোনো ভারতীয় নাগরিক হাইকোর্টে বা সুপ্রীম কোর্টে আপীল করতে পারে।


সবশেষে,আমেরিকান রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ফরিদ জাকারিয়ার মন্তব্যের কথা বলি। গণতন্ত্র সম্পর্কে ভারতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র অনেক সংকটের জন্ম দিয়েছে। তাঁর মতে,গণতন্ত্র বর্তমান বিশ্বের অনেক সংকট যেমন জাতিগত সংঘাত, দারিদ্র্য, অত্যাচার, যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ তৈরি করেছে, যাকে তিনি 'সংঘাতের গণতন্ত্রায়ণ' বলেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ