দর্পণ ॥ ঐতিহাসিক ঘটনা ( ২পর্ব ) ॥ কৌশিক চক্রবর্ত্তী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


 রাজা কংসনারায়ণ ও বাংলার                             দুর্গোৎসব 

                     ২ পর্ব

                  কৌশিক চক্রবর্ত্তী 


কালাপাহাড়। ওরফে কালাচাঁদ রায়। আসলে নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান হয়েও অবাধে নষ্ট করেছেন বাংলা ও উড়িষ্যার অসংখ্য দেবদেউল। এমনকি হানা দিতে ছাড়েননি পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে কোনার্কের সূর্যমন্দির পর্যন্ত। নবাব সুলেমান করনানীর জামাই এই কালাপাহাড়ের অত্যাচার কাহিনী যতই বলা যায়, ততই যেন কম পড়ে যায়। নবাবের কন্যাকে বিয়ের সূত্রে তার মুসলিম ধর্ম গ্রহণ। আর তারপরেই সরাসরি হিন্দুবিদ্বেষ প্রদর্শন। কোথা থেকে এলো তার হিন্দু সনাতম সমাজের প্রতি এত ক্ষোভ? সে আলোচনা তোলা থাক অন্য কোনো ধারাবাহিকে। এখন ফিরে আসি নবাব সুলেমান, কালাপাহাড় ও কংসনারায়ণের কেন্দ্রবিন্দুতে। তখন সুলেমানের রাজধানী ছোট্ট সবুজ গ্রাম তন্দা। পাশ দিয়ে কুলকুল করে বয়ে যায় মহানন্দা। একেবারে অজ পাড়াগাঁয়ে প্রাসাদ তৈরি করে ঝকঝকে নগরে পরিণত করেছেন আফগান সুলতান সুলেমান। তারই দরবারে দেওয়ানের পদে আসীন রয়েছেন কংসনারায়ণ। তরুণ কংসনারায়ণের দক্ষ জরিপ বিদ্যা ও দেওয়ানির কাজ চারিদিকে প্রশংসিত। কিন্তু শুধুমাত্র নিজের চাকরি বাঁচানোর জন্য জমিদার কংসনারায়ণ আপোষ করবেন নিজের এস্টেটের সাথে, প্রজাদের সাথে, এমন মানুষ নন তিনি। কালাপাহাড় ও সুলেমানের বিরুদ্ধে বাদশা দরবারে নালিশ জানানোর আগে নির্দ্বিধায় জবাব দিলেন নবাবের চাকরিতে। নবাব সুলেমানও ঠিক আঁচ করতে পারেন নি এক সামান্য জমিদারের ক্ষমতার ব্যাপ্তিটা। যাই হোক, ছাড়বার পাত্র নন তাহিরপুরের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদার কংসনারায়ণও। আগ্রার দূর্গে পৌঁছে আকবর বাদশার আশ্বাস আদায় করে তবে ছাড়লেন তিনি। বাংলা তখন সম্পূর্ণ মুঘল শাসনাধীন ছিল না। পাঠান সুলতানের শাসনে বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক চেহারা তখন খুব অস্থির। বিচক্ষণ হিন্দু জমিদাররা সকলেই চিন্তা করছেন পাঠান রাজবংশ পতনের। তারমধ্যে বারো ভুঁইয়ার কথা আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয়। বিষ্ণুপুরের রাজা বীর হাম্বিরের পাঠান বিরোধিতার কথাও এক্ষেত্রে স্মরণীয়। বাংলার জমিদারদের এই তীব্র বিরোধিতাই যে সুবে বাংলার আফগান পতন ও মুঘল সালতানাতে অন্তর্ভুক্তির কারণ তা সহজেই বলা যায়। 

এভাবেই রাজা কংসনারায়ণও সরাসরি বিরোধ বাঁধিয়ে বসলেন সুলতানের সঙ্গে। পতন ঘটাতেই হবে কালাপাহাড়ের। বাংলায় ফেরাতেই হবে শান্তি। এদিকে অবস্থা বুঝে নিজের সৈন্যদের প্রস্তুত থাকতে বললেন আফগান নবাব। কিন্তু তখনই ঘটে গেল এক চরম বিপর্যয়। ১৫৭২ সালের ১১ই অক্টোবর দুই পুত্র বায়েজিদ খান ও দাউদ খানকে রেখে মৃত্যু হল সুলেমান করনানীর। তবে একটি দিনও ফাঁকা থাকেনি বাংলার নবাবের মসনদ। যদিও জীবদ্দশায় সুলেমান কখনও নিজস্ব মুদ্রা চালু করেন নি তাঁর সাম্রাজ্যে এবং সরাসরি সংঘাতেও যান নি মুঘল শাহেনসার সঙ্গে। কিন্তু কংসনারায়ণের মত আরও কিছু হিন্দু জমিদারের মিলিত ইচ্ছাশক্তি তাঁর মৃত্যুর পর বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি তাঁর সাম্রাজ্যকে। তাঁর পুত্র দাউদ খান করনানী মদনদে বসলে সরাসরি যুদ্ধ এসে হাজির হয় বাংলার দোরগোড়ায়। কংসনারায়ণও নিজের এস্টেটের সৈন্য ও অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন দাউদ খানের বিরুদ্ধে।


(ক্রমশ)

প্রথম পর্বের লিঙ্ক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ