দর্পণ || নিবন্ধ || হারায় নি তা হারায় নি || সোমা মুখার্জী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

হারায় নি তা হারায় নি

সোমা মুখার্জী 


আমাদের মননে চিন্তনে অনেকটা'ই জুড়ে রয়েছেন প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ।আমরা জেনে বা না জেনে তাঁরই  নির্দেশিত পথ যেন অনুসরন করে চলেছি।আমাদের জীবনগঠনে তাঁর চিন্তা ধারা অলক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।

তিনি নিজের সময়েই তাঁর যুগের থেকে অনেকদূর এগিয়ে ছিলেন।সেই জন্য তার মৃত্যুর প্রায় উনআশি বছর পেরিয়ে আজকে আমাদের জীবনে যে কোনো পরিপ্রেক্ষিতে  তাঁর বাণী মন্ত্রের মত এসে আমাদের পথ দেখায়।নতুন করে ভাবতে শেখায়।

গান কবিতা প্রবন্ধ ছোটগল্প উপন্যাস ইত্যাদি সাহিত্যের নানা দিক তাঁর রচনা সম্ভারে অলঙ্কৃত হয়ে উঠেছে। এমনকি জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও তিনি চিত্রকলায় নিমগ্ন হয়েছিলেন। তাঁর সেই সব সম্পদ বিদেশে আজও বহু টাকায় বিক্রী হয়েছে,

যে সমস্ত তিনি সেখানে দান করে এসেছিলেন।


তাঁর লেখার মূল উপজীব্য প্রকৃতি। এই আমাদের চোখে দেখা প্রকৃতির মধ্যেই তিনি নিরন্তর খুঁজতে চেয়েছন ঈশ্বরকে।তাঁকে মন্দির মসজিদ গির্জার আড়ালে সরিয়ে রেখে নয় এই প্রকৃতিতে  নিরন্তর ঘটে চলা নানা উপলব্ধিতে, মানুষের পারস্পরিক প্রেমে ,সন্তান স্নেহে, এমন কি  মানুষ ছাড়া অন্যান্য

প্রাণীজগতের মধ্যে প্রকাশিত বাৎসল্য বা প্রেমের ধারায় ঈশ্বরের যে করুনা লুকিয়ে রয়েছে তা তিনি অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করেছেন। তিনি এই জাগতিক বন্ধনের মধ্যেই পেতে  চেয়েছেন  মুক্তির আস্বাদ। লিখেছেন.." বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি সে আমার নয়। অসংখ্য বন্ধনমাঝে মহানন্দময় লভিব 

মুক্তির স্বাদ.."


তিনি একই সাথেএকজন বিশ্বশ্রেষ্ঠ সুরকার ও গীতিকার। তাঁর এই তাৎক্ষণিক অনুভূতিসম্পন্ন এবং একই সাথে গভীর জীবনবোধে সমৃদ্ধ গানগুলি আজো আমাদের চলার পথের পাথেয়।দুঃখে সুখে প্রেমে আনন্দে যে কোনো পরিস্থিতিতে তার গানের বাণী আমাদের চলার পথে অনুপ্রেরণা দেয় , সুর আমাদের অমর্ত্যলোকের দ্বার খুলে দেয়। জীবন যাত্রায় মিশিয়ে নিই তার গান,আনন্দে পথ চলতে থাকি।

"গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি

তখন তারে চিনি..আমি তখন তারে জানি

তখন তারি আলোর ভাষায় আকাশ ভ'রে ভালোবাসায়"..

আজ বাঙলা সাহিত্য জগতে এত যে সাহিত্য চর্চা

তার মূল অনুপ্রেরণা কিন্ত রবীন্দ্রনাথ।রবীন্দ্রযুগের পূর্ববর্তী কবিতাগুলি কিন্তু আমাদের সাহিত্য জগতকে সে ভাবে অনুপ্রাণিত করে না। কিন্তু আজো আমরা  যে সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে চলেছি রবীন্দ্র কবিতা তার মধ্যে একটা আলাদা স্থান দখল করে রয়েছে তাঁর মৃত্যুর এতদিন বাদেও।

তিনি যা সত্য বলে অনুভব করেছেন , উপলব্ধি করেছেন  তাঁর সমৃদ্ধ কলমে তিনি তাঁকেই প্রকাশ করতে চেয়েছেন। তাঁর মতে----

"সত্য মূল্য না দিয়েই সাহিত্যের খ্যাতি করা চুরি,

ভালো নয় ভালো নয়  নকল সে  শৌখিন মজদুরি"


আজকাল আমরা গ্লোবাল সিটিজেন গ্লোবাল ভিলেজ কথাগুলি প্রায়শ ব্যাবহার করি। কিন্তু তৎকালীন সময়েই দেশকে অতিক্রম করে তিনি 

বিশ্বমানবে পর্য্যবসিত হতে পেরেছিলেন। শুধু দেশ বিদেশ এবং তাঁর মানুষ নয় এই বিশ্বপ্রকৃতি তাঁকে সঙ্গ দিয়েছে নিরন্তর  আর অন্তরে এই বিশ্বপ্রকৃতিকে উপলব্ধি করে বিশ্বদেবতার চরণে প্রণত হয়েছেন বারবার। বলেছেন---

"যদি চিনি যদি জানিবারে পাই  ধূলারেও মানি আপনা..

ছোট বড় দীন সবার মাঝারে করি চিত্তের স্থাপনা

..হই যদি মাটি হই যদি জল..

হই যদি তৃণ হই ফুলদল..

জীবসাথে যদি ফিরি ধরাতল 

কিছুতেই নাই ভাবনা...

যেথা যাব সেথা অসীম বাঁধনে অন্তবিহীন আপনা..."

এই হচ্ছেন বিশ্বমানব রবীন্দ্রনাথ..

এই হচ্ছেন প্রকৃতির প্রিয়সখা রবীন্দ্রনাথ...


তাঁর কথা বলতে গেলে তো শেষ করা অসম্ভব।

তাঁর সমুদ্রসমান অতুল সৃষ্টিসম্ভারকে  সীমিত ক্ষমতায়  ছুঁতে চাওয়ার চেষ্টা করা বাতুলতা মাত্র।

তবুও ভালোবেসে আমরা কবিকে ছুঁতে চাই আমাদের মনের মধ্যে নিরন্তর কথা জুগিয়ে

গিয়ে চলা এক কাছের মানুষ হিসেবে।


তাঁর ছোটো গল্পগুলি জীবনের কথা বলে। এ সমস্ত ঘটনার অনেকাংশেই যে সত্য জীবন থেকে উঠে আসা তা তিনি তাঁর উনিশ খন্ড চিঠিপত্রে বহুবার নিজমুখে ব্যক্ত করেছেন।

বিজ্ঞান প্রকৃতি দর্শন মহাজাগতিক বিষয় ভ্রমন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা তাঁর প্রবন্ধ গুলি যেন শুধু প্রবন্ধ নয় , তার সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে পৌঁচেছে বহুদূর।আমাদের দিয়েছে সুধাসাগরতীরের  সন্ধান।


কবি তুমি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বেঁচে থাকো পাঠকের অন্তরে। নব নব প্রজন্মের নব নব পাঠক

তোমাকে আবার নতুন করে আবিষ্কার করুক...

তোমার জয়যাত্রা চলতে থাকুক কালের খাতায়।

চলমান সহিত্য জগতকে পথ দেখাক---

    চির নূতনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ

        হে নূতন...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. বাহ্ চমৎকার এই নিবন্ধটি। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন আঙ্গিককে ছুঁয়ে গেল। বেশ ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন
  2. সোমা মুখার্জির এই রচনা টি মনকে নাড়া দিল । অল্পকথায় আজকের প্রেক্ষিতে কবি কে অনুধাবন করার একটি অনবদ্য প্রয়াস

    উত্তরমুছুন