দর্পণ || গণতন্ত্র সংখ্যা ২০২১ || গণতান্ত্রিক সামাজিক ও মানবিক অধিকার ~ সুকুমার রুজ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

গণতান্ত্রিক সামাজিক ও মানবিক অধিকার

সুকুমার রুজ   


মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কীভাবে লঙ্ঘিত হয়, এ বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে বলতে হয়, মানুষের অধিকার  লঙ্ঘন করা হয় নানা বিষয় অবলম্বন করেই। ধর্মীয় উন্মাদনা, আগ্রাসন, বেশি স্বাধীনতা পাওয়ার ইচ্ছা,   স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তির দমন-পীড়ন, বর্ণ ও জাতি-বিদ্বেষ, বৈপ্লবিক রাষ্ট্রশক্তির সংঘাত, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে ক্ষমতার অতি ব্যবহার ও অপব্যবহার, এসবই হল মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার উৎসস্থল।     

  এ সমস্ত উৎস থেকে অধিকার কেড়ে নেওয়ার অঙ্কুরোদগম হয়। তাকে পুষ্ট ও ফুলে ফলে সমৃদ্ধ করার প্রধান উপাদান হলো সন্ত্রাস বা আতঙ্কবাদ। সন্ত্রাস বা আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে, বা ভয় দেখিয়ে মানুষের সাধারণ অধিকারকে সহজেই কেড়ে নেওয়া যায়। বিশেষত সে সন্ত্রাস যদি 'রাজনৈতিক সন্ত্রাস' হয়। অর্থাৎ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে, রাজনৈতিক দল ও নেতা-নেত্রীর দ্বারা পুষ্ট হয়ে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয়। 'দল' মানেই তো 'গোষ্ঠী'। অর্থাৎ বহু জন। তারা যদি একজনের বা একটা পরিবারের উপর পেশিশক্তি প্রয়োগ করে, তাহলে কতক্ষণ সে ব্যক্তি বা পরিবার তা প্রতিরোধ করতে পারে! আবার সে দল যদি সরকার পুষ্ট হয়, তাহলে তো আর  রক্ষা নেই।   

  কেননা পেশিশক্তি প্রয়োগকারীকে দল মদত দেবে, দলকে সরকার সহযোগিতা করবে। কীভাবে করবে? না   সরকারের হাতে রয়েছে প্রশাসন, সেটাকে প্রয়োজনে অতি-সক্রিয় বা পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করা হবে।        

  বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, কি অন্তর্দেশীয় ক্ষেত্রে, কি শহরে-গ্রামে সর্বত্র ক্রমবর্ধমান এই 'রাজনৈতিক সন্ত্রাস'।   যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন সে দলে আশ্রয় নেয় কিছু স্বার্থান্বেষী ও ধ্বজাধারী। তারা সন্ত্রাস চালিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ময়দানে নেমে পড়ে। তাই চারপাশে চোখ ফেরালেই দেখা যায় অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিদর্শন। কোথাও ভাড়াটের পক্ষ নিয়ে বাড়ির মালিককে হুমকি। কোথাও মালিকের পক্ষ নিয়ে  ভাড়াটেকে উচ্ছেদ। কোথাও বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করে সেখানে বহুতল। আবার কোথাও বহুতলের একখানা ফ্ল্যাট দখল করে পার্টি অফিস তৈরি। এসব তো আকছার চোখে পড়ে।  আবার কোথাও দেখা যায়, বিস্তীর্ণ বস্তির মধ্যে একমাত্র জলাশয়টাকে অন্যায় ভাবে বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল। নিকাশি ব্যবস্থায়  দুর্ভোগে পড়ছে বস্তিবাসীরা। তাদের শৌচকাজ, সাধারণ কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। অর্থাৎ তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কথা না হয় বাদই দেওয়া হল।       

  এসবই হচ্ছে কিন্তু অর্থলোলুপতার জন্য। পার্টি-শক্তি জোগান দিচ্ছে পেশিশক্তি। পেশী-বলে বলিয়ান কাউন্সিলর,  ওয়ার্ড কমিশনার বা পঞ্চায়েত সদস্য প্রচুর অর্থ উপঢৌকন নিয়ে অন্যায় অনুমতি দিচ্ছে। অথবা না জানা, না  দেখার ভান করছে। মানুষের অধিকারকে দু'পায়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতাধারীরা। কোন বিশেষ দল নয়, কোনো বিশেষ রং নয়, যে দল যেখানে ক্ষমতাসীন, সে দল সেখানে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। আর দলীয় কর্মীরা আখের গোছাচ্ছে।   

  শুধুমাত্র সমাজ জীবনে যে মানব অধিকার বা গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে তা নয়। আমাদের দেশের   গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রতিপদে গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে নানাভাবে। শিক্ষা ব্যবস্থায়, স্বাস্থ্য পরিষেবায়,  কর্মসংস্থান ব্যবস্থায়, সর্বত্র চলছে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি। স্কুলে-কলেজে উপযুক্ত মেধাবী ছাত্র ভর্তি হতে পারছে না। তার চেয়ে নিকৃষ্ট মেধাবী ছাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তির কোটায় অথবা প্রচুর টাকা ক্যাপিটেশন ফি'র নামে ঘুষ দিয়ে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে মৃতপ্রায় ব্যক্তিকে নিয়ে গেলে উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। টাকার বিনিময়ে  আবার সব কিছুই পাওয়া যাচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্য-পরিষেবা পাওয়াটা কিন্তু মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার।           

  চাকরির পরীক্ষাও প্রহসনে পরিণত হয়েছে। পুলিশ বিভাগ, সরকারি পরিবহন বিভাগ, কর্পোরেশন, দমকল বিভাগ, এমনকি দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগ, যেমন মিলিটারি পুলিশ, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স ইত্যাদি বিভাগে চাকরি   পেতে হলে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। যার টাকা নেই, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তার চাকরি হচ্ছে না। অথচ উপযুক্ত হলে চাকরি পাওয়া তার গণতান্ত্রিক অধিকার।    

  এখন কথা হলো এসব থেকে মুক্তির উপায় কী? কীভাবে মানুষ তার অধিকার ফিরে পেতে পারে ও ভোগ করতে পারে? ইতিহাস থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিই, তাহলে দেখব, জনজাগরণ ও বিপ্লবই হল এর একমাত্র পথ। যেমন হয়েছিল ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, অথবা আমাদের দেশের স্বাধীনতা বিপ্লব।    

  কিন্তু বিপ্লব করব বললেই তো আর করা যায় না। একা একা বিপ্লব হয় না। বিপ্লব করার জন্য চাই সঠিক ও সম্যক চেতনা। কিসের বিরুদ্ধে বিপ্লব সেটা সঠিকভাবে জানা এবং অনেককে জানানো। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা এবং সম্মিলিতভাবে আন্দোলনে নামা। তা না হলে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো ক্রমশ খর্ব হতে থাকবে।   

  মানুষের ন্যুনতম মৌলিক অধিকার হলো অন্ন বস্ত্র বাসস্থান। এরপর আসে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি। তারপর কর্মসংস্থান ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য অধিকার। কলকাতা মুম্বাই কিংবা দিল্লির মত বড় শহরে কোনক্রমে অন্নবস্ত্রের সংস্থান হলেও বাসস্থান অর্থাৎ আবাসন সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শুধু শহর কেন গ্রামে-গঞ্জেও আবাসন সমস্যা রয়েছে। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ খাদ্য যোগাড় করতে পারলেও বাসস্থানের অভাবে খোলা আকাশের নিচে কিংবা ঝুপড়িতে বাস করছে। ফলে নানা রোগব্যাধি ও নানা ধরনের সমাজের পরিপন্থী কার্যকলাপ এই সমস্ত মানুষকে গ্রাস করছে।   

  এবার আসা যাক মানুষের আর এক নৈতিক অধিকার এর কথায়। সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন, দূষণমুক্ত পরিবেশ পাওয়াটা মানুষের নৈতিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। সে কারণে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশকিছু আইন বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা সরকারের দায়বদ্ধতা থেকেই। কিন্তু সে আইনকে বলবৎ করা ও যথাযথভাবে মেনে চলতে বাধ্য করাটাও সরকার তথা প্রশাসনের কাজ। কিন্তু এখানেই হচ্ছে আসল গলদ। আইন বা নিয়মবিধি তৈরি হলো, কিন্তু তা মানছে ক'জন! আর মানতে বাধ্য করছেই বা কে!       

  দূষণ তো এক রকম নয়, একাধিক। পরিবেশগত দিক থেকে দেখলে বায়ু দূষণ, জল দূষণ, মাটি দূষণ, যেমন  মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পক্ষে হানিকর; তেমনি সমাজগত দিক থেকে দেখলে দৃশ্য-দূষণ, শব্দ-দূষণ, বাক্য-দূষণ এসব সমাজ জীবনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার অন্তরায় হয়। কিন্তু এসব দূষণ রোধ করার জন্য সরকার বা প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয় না। ফলে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কীভাবে লঙ্ঘিত হয়।   

  এবার আলোচনা করা যাক মানবিক অধিকার নিয়ে। কথাটা শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই! মানবিক অধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে ও হ্রাস পাচ্ছে কীভাবে, তা দেখা যাক। 

  'সমাজবিরোধী' শব্দটা গত কয়েক দশক ধরে প্রচলিত হয়েছে। সমস্ত গণমাধ্যমে এবং রাজনৈতিক নেতাদের ভাষণে এসব ঘুরেফিরে আসে। 'সমাজবিরোধী' বলেই বোধহয় এই বিশেষ শ্রেণীটা সমাজে বসবাস করে না। এদের আবাসস্থল হলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আবার পোর্টফোলিও-হীন কোন রাজনৈতিক নেতার নাম কাগজে কিংবা পোস্টারে ছাপা হলে, তার নামের পাশে 'সমাজসেবী' এ শব্দটা বসানো হয়।   

   অর্থাৎ কিনা সমাজসেবীরাও রাজনৈতিক দলেই অবস্থান করেন। আমি সমাজের একজন সাধারণ সামাজিক জীব হয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখি, 'সমাজসেবী' ও 'সমাজবিরোধী'র কী অদ্ভুত সহাবস্থান! বিস্ময়ের ঘোর কাটলে  গভীরভাবে যখন ভাবি, তখন বুঝি যে, আমার বোঝা উচিত ছিল সিংহ আর হরিণ এক ঘরে অর্থাৎ এক দলে থাকা সম্ভব নয়। থাকেও না। আসলে ওরা সিংহও নয় আবার হরিণও নয়। অর্থাৎ সমাজসেবীও নয় আবার   সমাজবিরোধী ও নয়। ওরা হলো 'সিংহরিণ' নামের এক আজব প্রাণী, যাদেরকে সুকুমার রায় যথাযথভাবে চিহ্নিত   ও নামকরণ করেছিলেন। এই সিংহরিণের কখনো সিংহ প্রকট হয়, আবার কখনো হরিণ প্রবৃত্তি প্রকট হয়। তাই কখনো সমাজসেবী আবার কখনো সমাজবিরোধী। প্রায়শই  দেখা যায়, কোন রাজনৈতিক দলের কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা তার গোষ্ঠীকে সমাজবিরোধী আখ্যা দেওয়া হল এবং শুদ্ধাচার প্রদর্শনকারী সেই দল তৎক্ষণাৎ তাকে বা তার গোষ্ঠীকে বহিষ্কার করে দিল। কিংবা দলের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই ঘোষণা করে গর্দভসম সাধারণ মানুষের বাহবা লাভ করেন। সাধারণ মানুষও পরম তৃপ্তিলাভ করে এই ভেবে যে, যাক রাজ্য বা দেশ চালানো  রাজনৈতিক দলের কিছুটা শুদ্ধিকরণ তো হল। 

  কিন্তু এই তৃপ্তিটুকু মরুভূমিতে বৃষ্টি পড়ার মতো ক্ষণস্থায়ী। কিছুদিন পরেই দেখা যায়, বহিষ্কৃত 'সমাজবিরোধী'  বিপক্ষীয় দলে 'সমাজসেবী' হয়ে বড় নেতার পাশে মঞ্চ আলো করে বসে রয়েছেন। তখনই মনে একটা ছড়া গুলগুলিয়ে ওঠে --

                                কাল ছিল সিংহ আজ সে হরিণ।   

                               বিরোধী দলের কাছে রয়ে গেল ঋণ।।     

  বাঙালি 'আত্মবিস্মৃত জাতি' হওয়া সত্ত্বেও নিশ্চয় মনে পড়বে, কিছুদিন আগেই রাজ্যের মন্ত্রীর পাশে মঞ্চ আলো,  নাকি অন্ধকার করে বসে থাকা খুনের আসামির ছবি, যার নামে নাকি ওয়ারেন্ট আছে এবং পুলিশ তাকে খুঁজছেন।  কিন্তু মন্ত্রীর অন্ধকারে তিনি লুকিয়ে থাকায়, প্রকাশ্য দিবালোকে লক্ষ মানুষের সামনে উন্মুক্ত মঞ্চে বসে থাকা   'সিংহরিণ'টিকে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছেন না।  

  যদিও এ দৃশ্য আমজনতার কাছে মোটেও নতুন নয়। সমাজের চোখে ও আইনের চোখে 'সমাজবিরোধী' বলে চিহ্নিত ধিক্কৃত ও বহিষ্কৃত মানুষটি দ্বিপক্ষীয় দলে সমাজসেবী রূপে আবির্ভূত হন ও আদরণীয় হয়ে ওঠেন। তখনই প্রশ্ন ওঠে সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে।        

  কেননা, যে ব্যক্তিটি কিছুদিন আগেই গোটা চারেক মানুষকে খুন করেছে, তোলাবাজি করেছে নারী-ধর্ষণ করেছে,   সেই মানুষটিকে দল-বদলানোর কারণে রাতারাতি সমাজসেবীর মান্যতা দিতে হবে কেন? শুধুমাত্র গোটা কতক নেতা মন্ত্রী নিয়ে তো দল নয়! দল হল সাধারণ জনগণের। তাহলে শুধু কয়েকজন নেতার অনুমোদনে একজন সমাজবিরোধী দলে জায়গা পেয়ে যাবে এবং কিছুদিন পরেই সে দলে ছাতার আশ্রয় থেকে আবার সিংহ মূর্তি ধারণ করবে এ কেমনতর কথা! জনগণের কি অধিকার নেই এই মানুষটিকে দলে থাকতে দেওয়া বা না দেওয়ার? 

  দল তো জনগণেরও। হয়তো বলা হবে -- নিশ্চয়ই অধিকার আছে। জনগণের ভোটের অধিকার আছে। কিন্তু  'সিংহরিণ'টা ততদিন সিংহরূপ ধারণ করে হুংকার ছাড়তে শুরু করেছে। তাতে ভোটের বুথ অব্দি জনগণের যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিংবা স্বাধীন মত প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।   

  এটাকেই বলা হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন। এখানেই গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে -- আইনের ও প্রশাসনের চোখে যে মানুষটি অপরাধী, সে মানুষটিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো, শাস্তির দাবি জানানোর অধিকার মানুষের আছেই। প্রতিটি সমাজ সচেতন মানুষের সোচ্চার হওয়া উচিত সেই ব্যক্তি এবং আশ্রয়দাতা দলটির  বিরুদ্ধে। তা সে নিজের প্রিয় দল হলেও। বরং নিজের পছন্দের দল হলে তাকে পরিচ্ছন্ন ও সমাজবিরোধী-মুক্ত     রাখার দায়িত্ব আরও বেশি থাকবে। পছন্দের জিনিসকে মানুষ সহজাত প্রবৃত্তিতেই বেশি করে যত্ন নেয়, সুরক্ষা   দেয়, আগলে রাখে। 

  সমাজের স্বার্থে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ক্লেদাক্ত দলকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে নতুন দলকে  সিংহাসনে বসালেই জনগণের দায়িত্ব শেষ হয় না। নতুন দলে জায়গা পেতে চাওয়া তথাকথিত ক্লেদকে প্রতিহত  করাটাও জনগণের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালন করতে প্রশাসনিক সাহায্য পাওয়া মানুষের অধিকার। কিন্তু মানবিক অধিকার সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় এবং ভয় ও ঝঞ্ঝাটমুক্ত থাকতে চাওয়ার কারণে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  

  বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে গভীর ভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে, সমাজবিরোধী ও সমাজসেবী শব্দদুটি  আপাতদৃষ্টিতে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ মনে হয়।  কিন্তু এটা কখনো কাম্য নয়। এক যদি অহিফেন সেবি কথাটার অর্থ আফিং খান যিনি, এরকম বৃহত্তর অর্থে সমাজসেবী মানে সমাজকে খান যিনি, ধরে নেওয়া যায়, তাহলে সমাজসেবী ও সমাজবিরোধী অনেকটা সমার্থক দাঁড়ায়।     

  বর্তমানে জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা জনপ্রতিনিধি কীভাবে তার ক্ষমতার অপব্যবহার ক'রে   অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, কোটি কোটি টাকা রোজগার করছেন, তার দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি।  কোন কোন জনপ্রতিনিধিকে এও বলতে শোনা যাচ্ছে, 'পাঁচ বছরের জন্য এসেছি। কয়েক কোটি টাকা কামিয়ে নিই। পরের বারে তো আর জনগণ আমাকে ভোট দেবে না।'   

  আমার বক্তব্য পরের বারের ভোট অবধি অপেক্ষা কেন? জনগণের এই অধিকার পাওয়া উচিত, দুর্নীতিগ্রস্ত জনপ্রতিনিধির দুর্নীতি প্রকাশ হলে, তৎক্ষণাৎ তাকে ক্ষমতাসীন আসন থেকে টেনে নামিয়ে আনা। 

  অন্যায় করা আর অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া যে সমান অপরাধ এবং উভয়কে সমানভাবে ঘৃণা করা প্রকৃত মানুষের কর্তব্য, একথা তো গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন মাত্র দুটি লাইনে --

                   অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে 

                    তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ