দর্পণ || সাপ্তাহিক পরিচালকীয় কলম || গল্প




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

রংপোতে  রঙ্গোলি

অলিপা পাল


নিভৃত অবকাশ যাপনে পাহাড়ের সঙ্গে নদী ,একে অন্যের পরিপূরক ৷

উপত্যকার বুক চিরে সর্পিল উচ্ছ্বল নদীর পাথুরে যাত্রা পথকে আকর্ষণীয় করে তোলে নদীর বুকে ওঠা ছোট ছোট ঢেউয়ের নিরন্তর প্রবাহ ৷ চারপাশে সবুজ পাহাড়ের ঘেরাটোপ ৷ হাত বাড়ালেই ঢেউ খেলানো পাহাড় ! যেন অস্তিত্বের ভিতর এসে জাহির করছে 

নিজেকে ৷পাহাড়ি পাকদণ্ডী বেয়ে গাড়ি যত উপরে উঠছে চোখেমুখে ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝাপটা বুঝিয়ে দিচ্ছে স্বাগত হিমালয় ৷

শিরা উপশিরার মধ্য দিয়ে রক্তের ভিতর পাহাড়ের টগবগে উপস্থিতি টের পাচ্ছি ৷পাহাড় প্রিয় ফেলুদা উত্তেজনায় বলে উঠলো জুনিয়ার সহকর্মী  মিঃমিত্রকে ৷

প্রত্নতাত্ত্বিক নিখিলেশ রায় ৷ তাকে দুঁদে গোয়েন্দা বললেও ভুল হবে না ৷ নায়োকচিত ছাপহীন ছোট খাটো চেহারার টাক মাথা ৷আমবাঙালির চোখে সে আর এক ফেলুদা ! তার অসীম জ্ঞানের ভাণ্ডারে পৃথিবী হাতের মুঠোয় ৷

মিঃ মিত্রকে মানসিক ভাবে উৎকণ্ঠা মুক্ত রাখার জন্যই দক্ষ প্রত্নতাত্ত্বিক নিখিলেশ রায়-র মুখে প্রকৃতির শোভা বর্ণনা ৷

কথা বলতে বলতেই রাস্তা থেকে হঠাৎ ডান দিকে মাটি পাথরের সরু রাস্তায় পড়ল গাড়ি ৷ দুপাশে বাহারি ফুলের গাছ ৷ সামনে কাঠের বাংলো বাড়ি ৷ খাদের ধার ঘেষে ছোট্ট উঠোন মত একটা জায়গায় থামল গাড়ি ৷ পাহাড়ের কিনারার শেষ প্রান্তে হোমস্টেতে ফেলুদাদের বর্তমান ঠিকানা ৷ ঢুকতেই বাপাশে ড্রইংরুম ৷বেতের চেয়ার সোফা টেবিল বাহারি ফুলের টবে ছিমছাম সাজানো ৷ জানালা থেকে পর্দা সরিয়ে দিতেই চোখ জুড়ানো সবুজ পাহাড় ৷দূরে নিচে কুল কুল করে বয়ে চলেছে সাদা ফিতের মত রংপো নদী ৷

ডানদিকে রান্নাঘর ও ডাইনিংরুম ৷

ফেলুদাদের থাকার ব্যবস্থা হ'ল উপরে একটা ঘরে ৷স্বচ্ছ কাচের জানালা থেকে আরও পরিস্কার দেখা গেলো রংপো নদী ৷ফেলুদার ভ্রু তে ভাঁজ ৷ একভাবে তাকিয়ে আছে নদীর দিকে ৷পাশ থেকে মিঃ মিত্র বলল ,পাথর গুলো দেখেছেন দাদা ! ফেলুদা গম্ভীর সুরে বলল হুম, রংপোতে রহস্য !

নেপালি দম্পতি অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন এই হোমস্টে ৷ তাদের সারল্য আর ভালবাসা নির্ভেজাল ৷

ওরা ফ্রেশ হয়ে জলদি বসে পড়লো খেতে ৷গরম গরম ভাত ডাল শাক স্কোয়াশের তরকারি আর দেশি মুরগীর ঝোল ৷

খেতে খেতে স্বচ্ছ কাঁচের মধ্যে থেকে  ভদ্র মহিলা চিনিয়ে দিলেন নিচে সরু  ফিতের মত রংপো নদী ৷ঐ যে নদীর ধারে বড় বিল্ডিং,সেটা একটা ওষুধ কোম্পানীর ৷উল্টোদিকে পাহাড়ের গা দিয়ে রাস্তা চলে গেছে রংপো,তার ওপাশের পাহাড়ের পিছনেই সিলারি গাঁও, ইচ্ছে গাঁও ৷ভদ্রলোক বললেন এখানে সূর্যাস্ত অসাধারণ ৷

ফেলুদারা আর দেরি না করে লাঞ্চ সেরেই হাঁটতে বেরিয়ে পড়ল ৷

গড়ানে পথের দু'পাশে সাজানো গোছানো ছোট ছোট কাঠের বাড়ি ৷

প্রত্যেক বাড়ির সামনে ফুলের বাগান ৷ শান্ত জীবন ৷আমাদের প্রতিদিনের দৌড়ঝাঁপের জীবন থেকে একেবারে উল্টো ৷অথচ বেঁচে থাকার সংগ্রাম এখানেই তীব্র ৷ প্রতিকূলতা অনেক ৷ সহজে মেনে নিয়েছে বলেই পাহাড়ি জীবন অভিযোগ হীন ৷মুখে এক চিলতে হাসি সর্বক্ষণ ৷

রংপো নদী এখানে বয়ে চলেছে আপন ছন্দে ৷ ঘন জঙ্গলে ঢাকা উঁচু সবুজ পাহাড়ে ঘেরা নদীর তীরে ছড়ানো অজস্র বড় পাথর ৷

ফেলুদা গভীর দৃষ্টিতে দেখছে!

কোথায় দেখেছে ...

এরকম পাথর কোথায় দেখেছে!

পেরু!রেনবো মাউন্টেন!ভিনিকুঙ্কা!

একটু দূরে থাকা মিঃমিত্রকে চিৎকার করে ডাকল ফেলুদা পাথরের দিকে দেখিয়ে বলল হুবহু দক্ষিণ আমেরিকার অ্যান্ডিস পর্বত মালা ! আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাথরের স্তরের পর স্তর ক্ষয়  হয়ে খনিজের পরিবর্তন হয়ে রামধনু বেরিয়ে আসে ৷

ফেলুদা অভিজ্ঞ জহুরীর সুক্ষ্ম চোখে দেখে চলেছে পাথর ৷ 

দেখতে দেখতে বিহ্বল ফেলুদার মাথায় হাত স্বগতোক্তিতে বলল এ যে পরশপাথর!

চোখের সামনে নেপলস ইয়েলো, বার্নট সিয়েনা,পেইনস গ্রে, ইয়েলো ওকার, র' এম্বার,হোয়াট পাথর!

মিঃমিত্র বলল দাদা এ একেবারে অন্য রকম পাথর ! এতদিন দেখেছি ধূসর পাথর ৷এ নদীর এই অংশ জুড়ে তো লাল হলুদ খয়েরির

 পসরা ৷ যেন আবির মাখামাখি ৷ ফেলুদারা ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখছে আর স্কেল দিয়ে মেপে চলেছে খয়েরি রঙের বোল্ডার বা হলুদ রঙের চাঙড় ৷  একটা হলুদ  পাথর অনেকক্ষণ ধরে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখে চলেছে ফেলুদা ৷ কৌতুহলের সাথে মিঃ মিত্র বলল, দাদা এই পাথরটা কি স্বচ্ছ ! যেন ভেতর দেখা যাচ্ছে ৷ ফেলুদা বলল স্বচ্ছতা এই পাথরের বৈশিষ্ট্য ৷ বাল্টিক সমুদ্রে পাওয়া যায় এই হলুদ পাথর ৷ সমুদ্রতীরবর্তী ইউরোপের মানুষের যাপনে জড়িত এই এম্বার ৷র' এম্বার পাথরের মধ্যে প্রাগৈতিহাসিক সময়ের কীটপতঙ্গ,ফুলের অংশ ফসিলে রাপান্তরিত হয়ে থেকে যায় পাথরের মধ্যে এমনকি স্বচ্ছতার জন্য খালি চোখে দেখাও যায় ৷এম্বার পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছে জুরাসিকপার্ক সিনেমা থেকে ৷ উত্তেজিত মিঃ মিত্র বলল ,হ্যাঁ হ্যাঁ দাদা ... ৷জুরাসিকপার্ক সিনেমায় এক হলুদ পাথরের মধ্যে কীটের দেহে ডাইনোসরের জিন ছিল ৷ ফেলুদা বলল, তার পর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাহায্যে বৈজ্ঞানিকরা ডাইনোসরকে পৃথিবীতে আনে ৷রহস্যময় এম্বার মানুষকে তখনি ভাবিয়েছিল এবং যথারীতি পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে যায় ৷ 

হাসি ঠাট্টা মজায় দুই প্রত্নতাত্ত্বিকের চলছে এক্সপেরিমেন্ট ৷ কনকনে ঠান্ডায় হোমস্টে থেকে  থার্মফ্লাক্সে আনা টগবগিয়ে ফোটা সুপ, আর ক্যাসারোলে ধোঁয়া ওঠা মোমোর ওপরে ছড়ানো লাল লঙ্কার ঝাল চাটনি।

খেতে খেতেই একটা লালচে পাথরে চোখ আটকে যায় ফেলুদার ৷ প্রায় জঙ্গলের মধ্যে একটা পাথরের সামনে এসে থমকে যায় ফেলুদা, অস্থির হয়ে ওঠে ৷ ফোনে গুগুল সার্চ করতে গিয়ে দেখলো টাওয়ার নেই ৷ 

ফেলুদা হাত মুঠো করে সজোরে মারতে থাকলো পাথরের ওপরে ৷ হঠাৎ হাতে টান পরলো ৷ স্কেলের দড়িটা অটকে গেছে ৷ টান দিতেই ফেলুদা দেখলো একটা হাতল ৷ অবার ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে নিখুঁত ভাবে দেখে চলেছে ফেলুদা ৷ পাথরের গায়ে রথের চাকার মত ভগ্ন কারুকার্য ! চাকার কেন্দ্র থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত লম্বা দাগ গুলোর ওপর  লেখার মত কিছু খোদাই করা !এবার.... ফেলুদার ঠোঁটের কোণায় হাসি !

আচমকা ইউরেকা বলে লাফিয়ে উঠলো সে ৷

পশ্চিমের আকাশ ক্রমশ লাল হয়ে উঠল সূর্যাস্তের রঙ এ ৷ রক্তরাঙা গোল বলের মত সূর্য ৷ ডুবতে যাওয়ার মুখে চমক ৷ ভাসমান মেঘ দু'ভাগ করে দিল গোলা ৷ রক্তিম আভায় মুখরিত রংপোতে রামধনু'র খেলা ৷ 

ঝুপকরে নেমে এ'ল অন্ধকার ৷ছায়া ঘনিয়ে এ'ল পাহাড়ে ৷অগত্যা হোমস্টেতে ফেলুদা'রা ফেরার মনস্থির করল ৷ অন্ধকার দিগন্তে একটু একটু করে  আলো জ্বলে উঠলো পাহাড়ি বাড়ি গুলোতে ৷ নিকষ কালোর মধ্যে যেন অজস্র জোনাকি পোকার ঝিকিমিকি ৷


সাগর মহাসাগর আর নদীর তলদেশে যেমন অনেক প্রাকৃতিক জিনিস রয়েছে, তেমন মানুষের নির্মিত অনেক কাঠামোও পাওয়া যায়।সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন,ঝড় তুফানে ডুবে যাওয়া জাহাজ,নৌকা, উড়োজাহাজ, যুদ্ধ বিমান এবং আরও অনেক কিছু। এসব ধ্বংসাবশেষের মাঝে প্রায়ই এমন কিছু দেখা যায়, যার স্বাভাবিক ব্যখ্যা মীমাংসিত হয়েও অমীমাংসিত থেকে যায় ৷

মিঃ মিত্র বলে একদমই তাই দাদা,

পৃথিবীতে এমন কিছু জায়গা আছে যা আজও রহস্যে ঘেরা ৷মিঃমিত্র'র কথা শেষ হতে না হতেই সেই সুরে ফেলুদা বলল,সেরকম ডালসি বেস!

মেক্সিকোর কলোরাডো বর্ডারের কাছে অবস্থিত শহরটিতে মাটির নীচে রয়েছে ল্যাবরেটরি ৷ শহরের বাইরের মানুষের প্রবেশ নিষেধ ৷ সেখানে নাকি মানুষ ও জন্তুর সংকর পদ্ধতিতে প্রাণী তৈরী হয় ৷

সেরকম ধাঁধার চেয়েও জটিল রহস্যে ঘেরা অ্যান্টিকিথেরা মেকানিজম !যা বিস্ময় হয়ে থাকবে চিরকাল ৷ 

হ্যাঁ স্যার আপনার আর্টিকেল 

পড়ে জেনেছি সেই রিসার্চের টিমে আপনি ছিলেন ৷

ফেলুদা গম্ভীর গলায় দীপ্ত কণ্ঠে বলল,হ্যাঁ মিঃ মিত্র সেই রিসার্চকেই আবার ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ এসেছে ৷

মিঃ মিত্র অবাক বিস্ময় চোখে বললেন কেন স্যার ?এখানে কি কিছু...৷

ফেলুদা বলল হ্যাঁ মিঃ মিত্র তার প্রমাণ এখানে পেলেও পেতে পারি ৷

কি বলছেন স্যার ! এখানে !

এবার ফেলুদা হেসে ফেলে বলে, কিছুক্ষণ আগেও তো দাদা বলেই ডাকতেন মিঃ মিত্র,হঠাৎ স্যার হলাম কখন!

লজ্জিত মুখে মাথা চুলকে মিঃ মিত্র আবদারের সুরে বলে দাদা যদি বলতেন সেই অ্যান্টিকিথেরা'র কথা...৷

হোমস্টেতে ঢোকার মুখে রাস্তায় রয়েছে বসার জয়গা ৷ সেখানে বসে ফেলুদার বুদ্ধিদীপ্ত চোখ যেন চলে গেলো  হিমালয় পর্বত ভেদ করে ইউরোপের মাটিতে ৷পৃথিবী বিখ্যাত

প্রত্নতত্ত্ববিদ ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে একটা টিম তৈরী হ'ল ৷

মিঃমিত্র বলল হ্যাঁ দাদা 2007 এ ইউরোপের একটা জার্নালে দেখেছিলাম ৷

ফেলুদা মাথা হেলিয়ে সম্মত জানিয়ে বলল,আমাদের টিম ওয়ার্ক কিন্তু শুরু হয়েছিল আরও বছর তিন আগে ৷

এমনি এক সন্ধ্যায় আর্কিওলজিস্ট

মিঃ স্তাই-এর মেল ৷জরুরী তলব ৷ সাথে রিসার্চের প্রাথমিক তথ্য ৷ ফেলুদা'র গলা আবেগে কেঁপে উঠল,বলল শুধু আমার রাজি হওয়ার অপেক্ষা ৷ সেদিনের সেই মুহূর্তের আবেগে চোখে জল চলে এসেছিল ৷ পৃথিবী বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদদের সাথে কাজ করার সুযোগ ! এতো হাতে স্বর্গ পাওয়া ! প্রাথমিক তথ্যে ছিল এজিয়ান সাগরে ক্রু নৌকা নিয়ে বেরিয়েছিলেন এক ক্যাপ্টেন স্পঞ্জের খোঁজে ৷ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি পৌঁছায় ক্রিট আর গ্রিসের মাঝে এক দ্বীপে ৷ সেখানেই স্পঞ্জের খোঁজে নাবিক সমুদ্রের তলে যায় ৷ সেখানে দেখেছেন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ৷ফিরে এসে নেভির হেড অফ দা ডিপার্টমেন্ট কে 

জানায় সে কথা ৷ গভর্নমেন্ট অফ গ্রীস এর সাহায্যে তুলে আনাহল 

ধ্বংসাবশেষ ৷উদ্ধার হয়েছে মূর্তি অলংকার ভাস্কর্য মুদ্রা -র সাথে সাগর তল থেকে উঠে এসেছে বিচিত্র কিছু পাথরের যন্ত্র ৷ সেই সব জিনিস গবেষণা করে দেখা যায় সে গুলো আনুমানিক খ্রীষ্ট জন্মের আগে ৷ ফেলুদা বলে, যন্ত্রের সিটিস্ক্যান করতে গিয়ে তো আমাদের চক্ষু চড়ক গাছ ৷যন্ত্রে একটা হাতল আছে ৷ দেখতে

ঘড়ি ডায়াগ্রাম এর মত আবার কখনাে মনে হবে কোনার্ক টেম্পেলের চাকার ভাস্কর্য ৷হাতলটা গিয়ারের মত এন্টিক্লক অনুযায়ী ঘোরাতেই দেখা গেলো চাকার স্টিক গুলো এক একটা গ্রহ নক্ষত্রকে চিহ্নিত করছে ৷ প্রত্যেকটা স্টিকের ওপর ছোট ছোট হরফে অনেক কিছু লেখা ৷প্রতিটা স্টিক ভিন্নগতিতে ঘুরছে ৷ ডিফারেন শিয়াল গিয়ার সিস্টেমে বোঝা যাবে চন্দ্র সূর্য গ্রহণের দিনক্ষণ ৷ কথা বলার মধ্যেই   হোমস্টের ভদ্রমহিলা ওদের কফি খেতে ডাকল ড্রইংরুমে ৷ গরম গরম স্কোয়াশের পকড়া সাথে কফিতে চুমুক দিয়ে জমে গেলো আড্ডা ৷

মহিত হয়ে শুনতে থাকা মিঃ মিত্র  বলল দাদা তার পর ... ৷

ফেলুদা বলে হ্যাঁ,আমাদের গবেষণা এতটাই নির্ভুল ছিল যে, অলিম্পিক্স প্রতিযোগিতার আয়োজন কবে হবে তাও বুঝতে পেরেছিলাম সেই যন্ত্রের কার্যক্ষমতায় ৷সিটিস্ক্যনে বোঝা যায়  যন্ত্রের সরু স্টিকের ওপর তার ব্যবহারের নিয়ম খোদাই করা ৷

বিস্মিত চোখে উৎসুক হয়ে মিঃ মিত্র বলল দাদা !"পৃথিবী যে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে" এই শাশ্বত সত্য তো তাহলে কোপার্নিকাসের জন্মের বহু আগে ঘটেছে ৷

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফেলুদা বলে তাই তো প্রমাণ হল এবং অবশ্যই ইউরোপীয় গভর্নমেন্টের হেল্প সম্পূর্ণ মাত্রায় ছিল বলেই আমরা 

সাকসেস ৷

দাদা, আপনি কি ভাবছেন এই পাথরও...!

ফেলুদা,মিঃ মিত্র'র পিঠ চপড়ে বলে-

বন্ধু ধৈর্য্য ধরো ৷ সবেতো দু'বছর চাকরী করছো আস্তে আস্তে সব অভিজ্ঞতা হবে ৷আমাদের তখনকার গবেষণাতেই উঠে এসেছিল কয়েকটি সমুদ্র ও নদীতে এমন পাথর পাওয়ার সম্ভবনা আছে ৷তার মধ্যে ভারতের রংপো নদী অন্তর্গত ৷ এই নিয়ে আটবার হ'ল রংপো নদীতে তল্লাশি ৷

"আটবার" শব্দটা বিস্ময় ভরা চোখে অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করল

 মিঃ মিত্র ৷

আক্ষেপের সুরে ফেলুদা বলল,আমাদের দেশের যা পরিকাঠামো—রাজনীতি দেশটাকে ফোঁপড়া করে দিয়েছে ৷এখানে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে কতটা কাজ করতে পারবো বলা মুশকিল ৷এই পোড়া রাজ্য সহ দেশে অনেক 

হ্যাপা ৷

মিঃ মিত্র এবার নড়েচড়ে বসল

বলল,দাদা তবে কি প্রশাসনিক হেল্প নেবেন ভাবছেন !

মিঃ মিত্র'র কথা'র মাঝেই ফেলুদা বলল, না না ওভাবে কাজ শুরু করা যাবে না ৷তাতে হিতে বিপরীত হবে ৷

কারণ, কলকাতার মিডিয়ারা সবাই আমাকে চেনে ৷

তাছাড়া সিকিম পুলিশ বা পশ্চিম বঙ্গ পুলিশের কাছে নোটিশ না দিয়েই এত বার এসেছি ৷আমি বা আমাদের ডিপার্টমেন্ট চায় না সঠিক প্রমাণ পাওয়ার আগে বিষয়টা ভাইরাল হোক ৷ এতটুকু এদিক ওদিক হয়ে গেলেই মিডিয়া ব্রেকিং নিউজ করতে একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়বে ৷পুলিশ ছেড়ে কথা বলবে

 না ৷পুলিশ কমিশনার আপনাকে আমাকে দু'বগলের তলায় ধরে প্রেস কনফারেন্সে বসাবে ৷

সুতরাং এই এক্সপেরিমেন্টের প্ল্যানটা হবে একদম অন্যরকম ভাবে ঠাণ্ডা মাথায় ৷ কোন হটকারিতা নয় ৷

মিঃ মিত্র হতভম্ভ হয়ে বলে কি রকম দাদা?

ফেলুদা বলল, পরশপাথর কি বলতে পারবেন?

মিঃ মিত্র'র তৎক্ষণাৎ চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল ৷প্রায় লাফিয়ে উঠে ডান হাতটা উপরের দিকে মুঠো করে জিতে যাওয়ার ভঙ্গিতে ছুঁড়ে বলল

ধাতুতে ঠেকালেই সোনা ৷

ফেলুদা হেসে বলল ব্রেভো !

চলুন ডিনার করে শুয়ে পরি ৷ সকালে সিল্করুট ঘুরে আসবো ৷

বাবা মন্দির দর্শন না করে কাজে নামা যায় না কি !কি বলেন ?

কম্বলের উষ্ণ আমেজে শুয়ে শুয়ে ভাবুন, ভাবা প্রাকটিস করি চলুন—

একটা পরশ পাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে ৷ সেটা চুরি করা বেশ ঝামেলার হলেও উপায় নেই ৷

কিন্তু কি ভাবে?



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. অনন্য ভাবনার অনুপম কাব্যিক মুন্সিয়ানায় অপূর্ব কথামালার অসাধারণ উপস্থাপন।

    উত্তরমুছুন