দর্পণ || সাপ্তাহিক পরিচালকীয় কলম




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

কেউ কাউকে চিনিনা 

সায়ন্তিকা 


হঠাৎ খসে পড়লো একটা সবুজ ফুল ,

তাল গাছটা ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরলো ,

জেগে ওঠেনি চাঁদ !


শুধু তোমার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলো কয়েকটা সবুজ ফুল ,

কেউ কাউকে চেনে না , কেউ কারুর নাম জানে না !

শুধু ঘুমের পাশে মৃত্যু হলো কয়েকটা নীল মাছের !


লেবু পাতার মতন গন্ধ মাখছে রাত্রি ,

আচমকা নদীতে এসে পড়লো এক জোড়া শরীর ,

হলুদ সাপটার পাশে বসে একটা বাচ্চা কাঁদছে ,

সূর্যের রঙ কালো হলে সাজগোজ করে সবাই !


সবুজ হয় খিদে ,

লকলকে কুমড়ো গাছটা মাঁচা বেয়ে উঠছে ,

উনুনের আঁচে বৃষ্টি থেমে যায় !

দুপুরবেলার কাদায় মাখামাখি হয় জীবন ,

পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে যে ۔۔

তাকে কেউ চেনে না !


ঘোষেদের পুকুর থেকে উঠে এলো কয়েকটা নীল মাছ ,

ওরা কেউ কাউকে চেনেনা ,

তবুও ওরা সবাই সবার আত্মীয় !

শৈশবে লুকিয়ে রাখা পাথরগুলো ভেঙে গেলো ,

ঘরের তালাটা ঝুপ করে পড়লো পায়ের নিচে ,

যৌন ইচ্ছায় কাঁপছে শরীর ,

অনির্ণয় আঙ্গুলের লিপ্সায় জেগে ওঠে ঈর্ষা ,

একজন এগিয়ে আসছে ۔۔۔

আমরা কেউ কাউকে চিনিনা !


শুধু মাথার পাশে পড়ে আছে কয়েকটা সবুজ ফুল ۔۔۔

যেন কেউ কাউকে চেনেনা !

====

 আশায় চাষা 

 দে বা শী ষ


( জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি - নবারুণ ভট্টাচার্য )


নির্জনতা আর নিঃশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য পাইনা আমি,  

সচল আর অচল সভ্যতায় যতটুকু ফারাক,

ভাগ্যের থুথু চেটে,  ঈশ্বরের বুক থেকে ভরসা খুঁচিয়ে আনা,

সঙ্গে আসে কচি সময়ের মাংস পিন্ড,  আর্থিক উল্লাস আর শান্তির ছিনালী।


রোজ বসে বসে তারামণ্ডল এঁকে চলা -

যা হচ্ছে তা তো হয়েই চলেছে - 

গুবলেট হয় সংস্কারের নামে শপথ,

তারপর গান্ডুর মতো লুট করা পাড়া প্রতিযোগিতা।


কলম থামেনি জানি -

এই কলম কয়েক লক্ষ্য " ফ্যাতাড়ু "  চাটা,  

পুড়তে পুড়তে পোড়ায় ভাবনাদের,  

জন্মাতে দেখেছি হাজার বোধের ; 

গুঁজে দিয়ে শব্দের নরম পাছায় স্মৃতি -

ফিসফিস করে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা শিক্ষায়।


তবুও বসে আছি চেয়ে - 

আসবে " নবারুণ " ঠিক একগুঁয়ে,

চেষ্টার থালায় ফুটপাতের নবান্ন উৎসব হবে ; 

আমরা আবারও বেঁচে উঠবো - 

নিঃশ্বাস নেবো - পার্থক্য কমবে।

====

 ইছামতীর তীরে বহুগমন,, 

জয়তী


ইছামতীর বুক এখন রাতের আলোয় সাদা মার্বেল পাথরের মতো 

মেঘলা জাল তারের ওপরে মেলে ধরেছে জাফরিকাটা সৌন্দর্য -


মেছুয়ারা পট আঁকেনা, চিত্রশিল্পীরা রঙিন জলে ধুয়ে নেয় আকৃতির আকাশ 

ওখানে মেঘ হয়ে ওঠে রূপবতী, আরব্যের ঠোঁটে খয়েরি সুগন্ধি --


ওয়াগনে এমন কত শত বিপ্লব হুইসেল বাজাতে বাজাতে চলে গেলো ঝাউবনের ভেতর দিয়ে ;

জলের ভেতরে মাছের কানকো ফ্যাকাসে! পুরানো পুঁথির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে পোকার ফসিল! 


আমার ঘরটা আজকাল কেমন বিবর্ণ হয়ে উঠেছে 

তাকালেই দেখি জৌলুসহীন, মাকড়সার দল ওদের ডিমগুলো পাহাড়ি মেয়েদের মতো পেটে আটকে রেখেছে। 


কিছুতেই মনকে বোঝাতে পারিনা কেন প্রপিতামহী কাঁচুলি না বেঁধে ভেজা শাড়িটা আষ্টেপৃষ্ঠে গাছের শরীর জড়াতো! 

গুহাদেহের রস নিয়ে চর্যাপদের পাখিটিও রাতের অন্ধকারে সিক্ত 


তবুও কেন বিষক্রিয়ার প্রভেদ নগরজীবন বুঝবে না? 

ইছামতী এখন ঘুমাচ্ছে প্রাগৈতিহাসিকে, দুই পারে নীল আলোয় উলঙ্গ নৃত্য... 


ইছামতী ভালো নেই....

===

 ব্যর্থতার গ্লানি

 রতন চন্দ্র রায়


একাকীত্ব জীবন ঘোছাতে

      কবিতার খাতা নিয়েছি বেছে।

তোমাকে হারাবার পরে।


প্রেম দিচ্ছি ঢেলে

     কলমের কালিতে সাদা কাগজে

দু'চোখ আজও জলে ভরে,

     তোমার ছলনাতে।


কবিতার খাতায় প্রতিনিয়ত

     কলম চলে..... 

তোমার প্রতারণার

      যত ইতিবাচক শব্দে

খাতা ভরে যায়

      অসম্পূর্ণ স্বপ্নে।


জীবনের খাতা জুড়ে

      আজ শুধু ব্যর্থতার গ্লানি

মানু্ষ বলে

      সবই আমার পাগলামী..........

====

কি যে হয় !

শিবাজী  সান্যাল


কি যে হয় ! যা কিছু নিয়মের বন্ধন 

পারিনা চলতে মেনে। বুঝি এ ঠিক নয় , জ্ঞানপাপী

তবুও অবিন্যস্ত এলোমেলো , কি যে হয় !

সব প্রতিশ্রুতি ভুলে যাই সঠিক সময়ে । নিজেই ভুক্তভুগি

মেলাতে পারিনা শেষে , অসহায় তাকাই চারপাশে  । 

কি যে হয়! নীলাঞ্জনা এসে দাঁড়ায় সামনে , বলে ,

“ কতদিন কাটোনি দাড়ি চুল , জামার কলার

গেছে ছিঁড়ে , পড়ে আছো এক বন্ধ ঘড়ি। হিপ্পিসময়

চলে গেছে দীর্ঘদিন , সামলাও একটু  নিজেকে । ”


কি যে হয় ! আকাশের জমা মেঘে খুঁজি শস্যের প্রাণ, 

কালো তমসায় বৃক্ষের আশ্চর্য স্তব্ধতা। যখন জোনাকি

বিন্দু আলোতে , দেখি তাতে পূর্ণিমার মুক্ত তপস্যা । 

মধ্যরাতের ট্রেনের শব্দে অপেক্ষার দোদুল মুহূর্ত 

অন্তিম প্রহরে ক্লান্ত রাস্তার  বাতি একা জেগে থাকে

শূণ্য পথের ধারে । সকালে ফোন আসে নীলাঞ্জনার ,

“ সারারাত  জেগে ছিলে তাই না ? কত আর কষ্ট দেবে আমাকে ?


বারবার সামনে এসে দাঁড়ায় নীলাঞ্জনা , কি দেখেছে আমাতে ?

প্রতিবার চেয়েছি সরাতে দূরে , আবার এসেছে ফিরে

নাঃ আমিই চলে যাব দূরে , ওর সর্বনাশ হবে রুখতে

স্টেশনের ভিড়ে রয়েছি ট্রেনের অপেক্ষায়। হঠাৎ নীলা সামনে

কেড়ে নিল হাতের ব্যাগ , বলল , “ কোথায় পালাচ্ছ তুমি ?

কে দেখবে তোমাকে , এক অচেনা অজানা শহরে ? ”


কি যে হয় ! নেই অন্তমিল এই জীবনে । বুঝিনা মাত্রাবৃত্ত

কবিতার ব্যাকরণ । যা দেখি সম্মুখে আর কিছু হৃদয়ের ঝড়

লিখে রাখি শুধু , কেউ বলে ’দারুণ’ ,অধিকাংশ করে না পছন্দ 

পাই কিছু মালা, সম্মাননা , আর অনেকের তীক্ষ্ণ সমালোচনা। 


নীলাঞ্জনা এসে গোছাচ্ছিল আমার অগোছালো ঘর

বলল আলমারি খুলে “ শালগুলো কোথায় ?

পেয়েছিলে সাহিত্য সভায়?” বললাম, “ কি হবে রেখে বল

দিয়েছি কিছু দুস্থ অভাগাকে। ” ওর হাল ছাড়া দশা

বলল , “ কি যে হয় তোমার ! ” মুহূর্ত , তারপর হেসে

তাকাল আমার দিকে । সে দৃষ্টিতে ছিল অনেক বিস্ময় 

আর মিশে ছিল একরাশ ভালবাসা অপার শ্রদ্ধায়।

====

নির্জনতা 

দেবলীনা 


দিনমানের সমস্ত জড়তার নিপাট ভাঁজে তুমি এসেছিলে ঝরোখা বর্ষা হয়ে 


ভেজা শার্সিতে তখন তুমি সর্পিল বাঁকে ঝরে পরছো


বারান্দা জুড়ে বেজে চলেছে তোমার সোঁদা জলছাপ রিনরিনে সুর 


আমি নির্জনতা ছুঁয়ে ছায়া ছায়া মুখে চেয়ে আছি শুধু


আর টের পাচ্ছি আকাশি সায়রের ঘন চোখ থেকে নেমে আসছে টুপটাপ অন্ধকার


অনাকাঙ্ক্ষিত  অসুখ, 


 গভীর থেকে উঠে আসা কম্পন

 

আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে প্রথম কাতরতা


সেইসব বহন করতে করতে,


প্রলাপের কাছে জমা করে রেখে যাই শুধু ঋণ....

====

 সময়ের হাত ধরে 

 অমিতাভ মীর 


ডাকলেই কেউ ছুটে আসবে আমার কাছে

এমনটা আর ভাবি না এখন,

পড়িমরি ছুটে এসে আলিঙ্গনাবদ্ধ হবে

খুব অপ্রত্যাশিত এমন দৃশ্য;

নারীর মন চিরকালের অবগুণ্ঠিত এক রহস্য।


কাউকেই আর পাশে থাকতে বলি না,

বললেও জানি থাকবে না, 

সময়ের হাত ধরে একে একে ঢুকে গেছে;

জীবনের সঞ্চিত যত সময়

অবিনাশী মহাকালের গহ্বরে। 


একবার কাছে এসে যদি ফিরে যায়-

সে-ও হবে এ জীবনের পরম প্রাপ্তি,

দখিনা জানালা খুলে বসে থাকি;

ভুল করে এই পথে যদি এসে পড়ে

চোখ জ্বলে সেই অলীক আশায়।

===

ফিঙে'টা

অলিপা

                  

আমার বন্ধু'রা বাঘা বাঘা শিকারী ৷ গুলি করে উড়ন্ত পাখিকে নিচে নামানো ওদের বা'হাতের খেল ৷

আমার বনেদি গোলথাম বারান্দায় শালিক চড়ুই বুলবুলি ফিঙে আরও কত পাখি আসে ৷ সবাই কিচিরমিচির করে অথচ ফিঙে নিশ্চুপে আমাকে দেখে ৷বলছি না আমাকেই দেখে ,আমি অনুভব করি ৷আমিও দেখি না তা নয়;আড়চোখে দেখি বৈকি! মাঝে মাঝে রাগই হয় ফ্যালফ্যাল করে তাকানো দেখলে ৷ গ্রাম্য তো !আসলে শহুরে আদবকায়দা জানে না ৷দানা দিই খায় না ৷আমাকেই দেখে ৷ এখন হয়তো বুঝেছে দানা দিলে খেতে হয় ৷ এটা ভদ্রতা ৷ আমিও তেমনি, যেই দানায় ঠোঁট ছোঁয়াতে যায়-তখনি তুলে নিয়ে শালিক চড়ুই বুলবুলিদের দিই ৷ তাদের সেকি উল্লাস!ওআবারও আমার দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক চোখে !সারাদিন হয়ত ওর কিছু খাওয়াই হয় না ৷রোজ দেখি ওর টলটলে চোখ ৷অবশ্য সে চোখে, ভাষা ফুল আছে কি না সে সব খবর রাখার ইচ্ছা ধৈর্য্য আমার কোনটাই নেই৷সন্ধ্যে নামলেই ফিঙে চলে যায় ৷ রঙবেরঙের ছবি গুলো ফুরোয়,ওর মুখখানা নিবে আসায় ৷

ফিঙে পাখি'টা কি খুব চতুর!

এ প্রশ্ন আমায় দিন রাত ভাবায় ৷

তা হোক,আমার শিকারীরা আছে ৷ তাদের রীতিমতো রোম হর্ষক শিকারের গল্প ৷তাদের কথাতেও বাঘের গর্জন ৷ ঘরোয়া আড্ডার আসরে হঠাৎ স্নায়বিক ধাক্কায় ওদের বলে ফেল্লাম ফিঙের কথা ৷শুনে ওদের সেকি বিজ্ঞের হাসি ! হিমালয়ান বার্ড হলে তাও কথা ছিলো ৷পাতি ফিঙে ৷আমিও কি চাই ফিঙেটা মরুক ! স্বস্তি'র হাসি হাসলাম ৷তবে ওদের কথায় যুক্তি আছে ৷ মেরে ফেললে তো ল্যাটা চুকে গেলো ৷তাতে আর মজা কি !

মজা তো লুকোচুরি খেলায় ৷

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. অনেক কবিতা একসঙ্গে পড়ার সুযোগ হল। প্রতিটি কবিতাই মনকে প্রসন্নতা এনে দিল

    উত্তরমুছুন