মহান মামানকাম উৎসব || মঙ্গল মিদ্যা (রিপল)




পোস্ট বার দেখা হয়েছে
অঙ্কন : রিয়া চক্রবর্তী 

মহান মামানকাম উৎসব    

(Great MAMANKAM Festival )

মঙ্গল মিদ্যা (রিপল)


" মহান মামানকাম উৎসব " শব্দটা আমি কিন্তু বসাতে চাইনি, ওরা নিজেরাই একের পিঠে অন্যরা বসে গেছে, কারণ পুরো লেখাটা পড়লেই বুঝবেন।

        মামানকাম উৎসবটি বাংলা ক্যালেন্ডার হিসাবে মাঘ মাসের দিকে হতো। বহু ভারতীয় ও বিদেশী লেখকদের বইতে তেমনই উল্লেখ আছে এবং তারা এই উৎসবকে বিভিন্ন মানে যুক্ত অর্থ করে গেছেন -

 * K. V. Krishna Iyer বলেছেন Maha-Magham - Great Magha. 

* William Logan and K. P. Padmanabha Menon বলেছেন Maha-Makham - Great Sacrifice.

* Elamkulam P. N. Kunjan Pillai  বলেছেন Magha Makam 

* Maha-Maham - Great Festival

* Maha-Ankam - Great Fight  অনেকে বলেছেন।

          এইরকম নামকরণ কেনো করা হয়েছিলো সেটাও বুঝতে পারবেন পুরো লেখাটা পড়ার পর।


মামানকাম উৎসবটি অনুষ্ঠিত হত দক্ষিণ ভারতের বর্তমান কেরালার তিরুনাভায়া গ্রামের কাছে নীলা নদী, পোন্নানি নদী বা ভারাতাপ্পুঝা (River Nil̥a, River Ponnani, or Bhārathappuzha) দ্বীপীয় মধ্যযুগীয় শুকনো স্থানে।  তিরুনাভায়া (Tirunavaya) তে অবস্থিত নব মুকুন্দ মন্দিরের উৎসবকে কেন্দ্র করেই হয়তো সেইসময় "মামানকাম " শুরু হয়েছিলো। মনে করা হয় এটিও উজ্জয়িনী কুম্ভমেলা, প্রয়াগ, হরিদ্বার এবং কুম্বকোনামের মত মন্দির কেন্দ্রিক ও সমতুল্য উৎসব ছিলো।

           মামানকাম উৎসবের সময় সেখানকার মানুষরা বিশ্বাস করতেন দেবী মা গঙ্গা সয়ং সেখানে আবির্ভাব হতেন এবং নদীকে গঙ্গার মতোই পবিত্র করে তুলতেন, যেমনটা কুম্ভমেলা ও গঙ্গাসাগর মেলায় হয়। তিরুনাভায়া (Tirunavaya) প্রাচীন মন্দিরের জন্য পরিচিত। মামানকাম উৎসব বা মেলাটি প্রতি ১২ বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবটি সর্বাধিক শিহরিত ও তাতপর্য বহন করে Kōzhikōde (Calicut), the Samutiris (the Zamorins) সম্প্রদায়ের মধ্যে। মামানকাম শুধুমাত্র একটা ধর্মীয় উৎসব ছিলো না, এটি কেরালার সর্বাধিক শক্তিশালী প্রধান ব্যয়বহুল আড়ম্বরপূর্ণ রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক মেলা ছিলো। তাই ভারত ছাড়াও আরব, গ্রীক, চীন দেশ থেকে পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা আসতেন মামানকাম মেলায় অংশগ্রহন করতে। এখানে একটা কথা উল্লেখ করতে হয়, বিখ্যাত পর্তুগিজ নাবিক ভাস্ক-ডা-গামা এখানের কোলাথিলি তে আসে বানিজ্য করতে চায়, কিন্তু সামুথিরি ( Samoothiri) রাজা মানা করতে প্রবল যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো। সামুথিরি রাজা এই মামানকাম উৎসবের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হয়ে সব পরিচালনা করতেন।


তিরুনাভায়া ( Tirunavaya) কেরালার ব্রাহ্মণ ও মহাত্মাদের কাছে এক অত্যন্ত পবিত্র স্থান হিসাবে এখনো মনে করা হয়। তিরুনাভায়ার যে স্থানে মামানকাম মেলাটি হত তার ডান তীরে বিষ্ণু (নব মুকুন্দা) মন্দির এবং বামে ব্রহ্মা এবং শিবের মন্দির ছিলো। মামানকাম মেলাটি প্রথম শুরু হয়েছিলো স্থানীয়দের পরিচালনায় এবং নিজেদের মধ্য বেছে নিতেন রক্ষাপুরুষ ("the Great Protector of the Four Kalakas"), এবং তারা ৩বছর এটি দেখাশোনা করতেন। একসময় তাদের মধ্য ঝগড়া ও বিবাদের জেরে ব্রাহ্মণরা পশ্চিম ঘাটের পূর্বে একটি রাজ্য থেকে একজন রাজপুত্রকে বেছে নিয়েছিলেন মামানকাম মেলা পরিচালনা করার জন্য এবং তাকে সম্মানের সাথে "কেরালার পেরুমাল " ঘোষণা করেছিলো। সেই রাজপুত্রের সাথে চুক্তি করা হয় যে, তিনি কেবল ১২ বছর মেয়াদে শাসক বা পেরুমল থাকবেন। তারপর তিনি অবসর নেবেন বা পুরোপুরি দেশ ত্যাগ করবেন।

প্রথম রাজ্যাভিষেক ঘটেছিলো মাঘ মাসে, এবং কেরালার ইতিহাসে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রতিটি পেরুমল বা শাসকের রাজত্ব বৃহস্পতি চক্রের মধ্যে শেষ হতো। ব্রাহ্মণরা আবার ওইদিন সমাবেত হত আর ২৮দিন ধরে অনুষ্ঠান উৎযাপন চলাকালীন নুতন শাসক বা পেরুমল করে সিংহাসনে বসাতো, তারও মেয়াদ ১২ বছর থাকতো, আর এটি মাঘ মাসেই হত বলে মহা মাগা বা গ্রেট মাঘা বা মামানকাম (mamankam) উৎসব বলা হতো।

                ফ্রান্সিস ওরেডি (Francis Wrede) -এর মতে পেরুমলরা মামানকামে সভাপতিত্ব করতেন, সুতরাং মনে হয় ব্রাম্ভণরা প্রথম পরিচালিত এই মেলাটি উদযাপন করেছিলো তাই প্রথম আমন্ত্রণ পত্রটি তারাই পাঠ করতেন। 

              আলেকজান্ডার হ্যামিলটন ( Alexander Hamilton) তার লেখা বই A New Account of the East Indies, Vol.1 তে উৎসবের প্রাথমিক প্রকৃতির একটা আলাদা বিবরণ দিয়েছিলেন। তাঁর মতে, পেরুমল বা রাজা কেবল ১২ বছর রাজত্ব করবে এটা মানতে পারেনি তাই মামানকাম উৎসবের মঞ্চে নিজের গলা কেটে নিজের পায়ে অর্পণ করে দেহত্যাগ করেন। মহা আড়ম্বরপূর্ণ ও ধুমধাম করে রাজার দেহটি পুড়িয়ে দাহ করা হয় এবং ব্রাম্ভনরা নুতন রাজা বা পেরুমল নির্বাচন করেন।

পরবর্তীকালে এই ঘটনাটি কেরালার মাহাত্ম্যরা প্রমাণ করেছেন যে রাজা মামানকামে পদচ্যুত হতেন তবে আত্মহত্যার কোন উল্লেখ নেই।

              ডুয়ার্টে বার্বোসা (Duarte Barbosa) -এর মতে মামানকাম উৎসবে রাজা খুব ধুমধাম করে মন্দিরের জলাশয়ে স্নান করতেন, এরপরে, তিনি মূর্তির সামনে প্রার্থনা করে ধারালো তলোয়ার দিয়ে নিজের গলা কেটে ১২ বছরের চুক্তির মেয়াদ পূরণ করতেন এবং বার্তা দিতেন -যে কেউ পরবর্তী ১২ বছর রাজত্ব করে এইভাবেই দেবীমায়ের মূর্তীর সামনে নিজের মাহাত্ব্য দেখাতে পারবে। (ডুয়ার্তে বারবোসাDuarte Barbosa এটিকে kingdom of Quilacare বলেছেন এবং সেখানের প্রবাসীদের জীবন ও রীতিনীতি সম্পর্কে খুব বিশদ বিবরণ দিয়েছেন দ্বিতীয় খন্ডের প্রথম অধ্যায়ে )।

      স্যার জেমস ফ্রেজার (Sir James Frazer) তাঁর বিস্তৃত গবেষণায় এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছেন।


     জোনাথন ডানকান (Jonathan Duncan) তাঁর লেখা "Transactions of the Bombay Literary Society" -তে লিখেছেন প্রতিটি মামানকাম উৎসবে কিছু না কিছু প্রথা ভাঙতে থাকে এবং একসময় তিরুনাভায়া জনসভায় সকলে একত্রিত হয়ে পুনরায় মামানকাম রীতিনীতি ব্যবস্থা সাজানোর জন্য বললেও রাজার মেয়াদ ১২ বছরই অব্যাহত ছিলো। তবে জানা যায় যে এই আদর্শবাদী প্রস্তাব সন্তোষজনক ভাবে কার্যকর হয়নি।

সময়ের সাথে সাথে পেরুমল বা রাজার প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১২ বছরের পরে মামানকাম উৎসবে নিজের মুকুট ও পদ ত্যাগ করতে অস্বীকার করে এবং নিজের দেহরক্ষা যোদ্ধার সংখ্যা বাড়িয়ে মামানকাম উৎসবে ব্রাম্ভন দ্বারা আবার নবনির্বাচিত হতে থাকে। যদি কোন সৈনিক বা যোদ্ধা মামানকাম উৎসবে পুরনো পেরুমল বা রাজাকে হত্যা করতে সক্ষম হতো তাহলে তৎক্ষণাৎ তাকে পরবর্তী ১২ বছরের জন্য নুতন পেরুমল বা রাজা ঘোষণা করা হতো এই মামানকাম উৎসব মঞ্চে। কিন্তু মামানকাম উৎসবে দেহরক্ষী সৈনিক ও যোদ্ধাদের ভেদ করে পুরনো পেরুমলকে হত্যা করা সহজ কাজ ছিলো না। ইতিহাসবিদদের মতে, পেরুমল রাম ভার্মা কুলাসেখড়া ( Rama Varma Kulasekhara) ৩টি মামানকাম উৎসব বা ৩৬ বছর শাসন করেছিলো। তিনি ১০হাজার সৈন্য দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে মামানকাম পরিচালনা করতেন।

              ধারণা করা হয়, কোন এক পেরুমলের রাজত্বে কেরালা বিভক্ত হওয়ার পর মামানকাম উৎসব অন্যরূপ নেয়। কোজিকোড (Kozhikode) সামুথিরি ( Samutiri) ও ভেল্লাতিরি

(Vellattiri) সম্প্রদায়ের মধ্য ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়। মামানকাম উৎসব ময়দান বীর যোদ্ধাদের আহুতি, বলিদান ও প্রতিশোধ নেওয়ার মঞ্চ হয়ে যায়।


মামানকাম উৎসবের দ্বায়িত্ব যে রাজা পেতেন, সে কেরালার একছত্র অধিশ্বরের মত রাজত্ব করতে, তাই তাকে সরাতে অন্য গোষ্ঠীর রাজা আত্মঘাতী যোদ্ধা পাঠাতেন। মামানকাম উৎসবে সেইসব যোদ্ধারা নিজের জীবনের আহুতি দিয়ে হলেও মামানকাম উৎসবের দ্বায়িত্বে থাকা পেরুমল বা রাজাকে হত্যা করতে আগ্রসর হতেন। হাজার হাজার দেহরক্ষী সৈন্যদের ভেদ করে এগিয়ে যেতেন আত্মঘাতী কয়েকজন যোদ্ধারা। 

             পৌরাণিক কিছু তথ্য ও লোকগাথা থেকে জানা যায় মামানকাম উৎসবের দ্বায়িত্ব একবার ভেল্লুয়া(velluya) রাজ্যের রাজা পেয়েছিলো, কিন্তু রাজা তখন বেদ পুরাণে ধর্মিক হয়ে দেশান্তর হওয়াতে তিরুনাভায়া ব্রাহ্মণরা ঠিক করে মামানকাম উৎসবে যুদ্ধে যে রাজ্য জিতবে সেই মামানকাম পেরুমলের দ্বায়িত্ব পাবে। সামুথিরি (Samutiri) রাজা তা জিতে নেয় ভেল্লাথিরি রাজ্যকে হারিয়ে। তার পর থেকে সামুথিরি রাজাকে হারাতে মামানকাম উৎসবে আত্মঘাতী যোদ্ধাদের পাঠাতেন ভেল্লাথিরি রাজা।

          ভল্লুভানাতু ( Valluvanatu) রাজ্যের পানিক্কর ( Panikkars) এমনই এক আত্মঘাতী যোদ্ধাদের পরিবার ছিলো যারা বংশপরমপরায় মামানকাম উৎসবে ৮বার আত্মঘাতী যোদ্ধাদের প্রতিনিধিত্য করেছে। তাদের মধ্য বিশেষ ভাবে যে নামগুলো পাওয়া যায় -

* Putumanna Panikkars

* Chandrattu Panikkars

* Kovilkkatt Panikkars

* Verkotu Panikkars

             উইলিয়াম লোগান ( William Logan) ১৮৮৭ তে তাঁর লেখা বই " district manual Malabar "। এবং ফ্রান্সিস বুচানান-হ্যামিল্টন ( Francis Buchanan -Hamilton) ১৮০৭ লেখা বই " A Journey from Madras through the Countries of Mysore, Canara, and Malabar" যথাক্রমে বিবরণ পাওয়া যায়। 


মামানকাম -এর ২টো ঘটনা উল্লেখ না করলে মহান মামানকাম উৎসব বা মহান যুদ্ধোৎসব বা মহান আত্মাহুতি উৎসব বলা কথাটা পূর্ণতা পায় না। একটা ১৬৮৩ তে হওয়া মামানকাম উৎসব যা উইলিয়াম লোগানের লেখা বইতে উল্লেখ আছে।

আর দ্বিতীয়টি ১৬৯৫ তে হওয়া মামানকাম উৎসব যা আলেকজান্ডার হ্যামিল্টন ( Alexander Hamilton) লেখা " A New Account of the East Indies, Volume 1 " বইতে বর্নিত আছে।


       * ১৬৮৩ মামানকাম উৎসব -

সামুথিরি ( Samutiri) রাজা তিরুনাভায়া এসে জলাশয়ে স্নান করে রেশমের বস্ত্র পরে, গলায় নানারকমের রত্নের মালায় সজ্জিত হয়ে মন্দিরে পুজা দিয়ে পালকিতে যখন মামানকাম মূল মঞ্চের দিকে যায় তখন ফাঁকা মাঠে আতসবাজী প্রদর্শন হয়।

সামুথিরি রাজা যখন মামানকাম সিংহাসনে বসেন আর দ্বায়িত্ব নেন তখনই আত্মঘাতী যোদ্ধারা বিরোধ ঘোষনা করে আর এগিয়ে যায়। এবারে মানে ১৬৮৩ তে বিরোধ ঘোষণা করতে এগিয়ে যায়  পুতুমান্না পানিক্কর ( Putumanna Panikkar) ও তার সতেরো জন বন্ধু। সবাই নিজের ইচ্ছা ও বংশের মান সম্মান বজায় রাখতে আত্মঘাতী যোদ্ধা হয়েছিলেন। 

উপস্থিত সকল স্থানীয়রা পুতুমান্না পানিক্কর কে বড় পানিক্কর হিসাবে জানতেন তাই সবাই অবাক আর হতবাক হয়ে যায়। পুতুমান্না পানিক্কর যোদ্ধা হিসাবে এতোটাই সক্ষম ছিলেন যে নিজের তলোয়ারের সাহায্যে বৃষ্টির ফোঁটাকে কেটে দু-ভাগ করতে পারতেন।

            উইলিয়াম লোগান নিজের ভাষায় বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন -

ঢাল তলোয়ার বর্শা নিয়ে আত্মঘাতী যোদ্ধারা ছুটে চলেছে আর তাদের আটকাতে ১০হাজার সামুথিরি রাজার সৈন্য দাঁড়িয়ে আছে। আত্মঘাতী যোদ্ধারা বাতাসে উড়ে, নিজের দেহকে ঘুরিয়ে আগে পিছে উঁচু নীচু নানারকম কলাকৌশলে একের পর এক সৈন্যদের হত্যা করে এগিয়ে যাচ্ছে। যেনো তাদের শরীরের হাড় নেই। দর্শকরা বিস্মিত হয়ে দেখা ছাড়া কোন উপায় নেই। আর তাদের মাস্টার বা নেতার আস্ত্রের প্রযোগ ও দক্ষতা অতুলনীয়।

            এতো সবকিছু সত্ত্বেও পরেরদিন ভোরে হাতির পিঠে করে আঠারো জনের মৃতদেহ গিয়েছিলো। সামুথিরি রাজা আবারো কুটনীতি ও ছলনার আশ্রয় নিয়ে জিতে ছিলো এবং পরের মামানকাম পর্যন্ত রাজত্ব বজায় রেখেছিলো।


          * ১৬৯৫ মামানকাম উৎসব -

একই ভাবে এসে সামুথিরি রাজা যখন মামানকাম সিংহাসনে বসেন এবং বিরোধ ঘোষণার সময় হয় তখন ৩জন আত্মঘাতী যোদ্ধা সামনে আসে বীরত্বের সাথে হত্যা ও আহত করে রাজার দিকে এগোতে থাকে।

স্থানীয়দের মতে এই ৩জনের মধ্যে একজন পনেরো ষোল বছরের ছেলে ছিলো, সে তার মামার সাথে আত্মঘাতী যোদ্ধা হয়ে আসে। এই মামানকাম যুদ্ধে ঢাল তলোয়ার বর্শার সাথে বারুদের বিষ্ফোরণ করেছিলো যোদ্ধারা।

         যদিও এখানে ওই ৩জন যোদ্ধা পরাজিত হয়েছিলো তবুও পনেরো বছরের যুবকটি সামুথিরি রাজার সামনে উপস্থিত হয়ে আক্রমণ করতে সফল হয়েছিলো আর সামুথিরির মাথায় আঘাত করেছিলো, কিন্তু পেরিমল বা রাজার মাথার উপর থাকা জ্বলন্ত একটি পিতলের প্রদীপে তা ব্যর্থ হয়। সঙ্গে সঙ্গে প্রহরীরা এসে যুবককে হত্যা করে আর মঞ্চের নীচে ফেলে দেয়।


স্থানীয় সূত্র থেকে একটা ঘটনা জানা যায়, যদিও সেটার সত্যতা যাচাই করা নেই তবুও শোনা যায় সেই তরুন যুবক আত্মঘাতী যোদ্ধার নাম চন্দ্রাত্তু পানিক্কর (Chandrattu Panikkar) ছিলো। মামানকাম উৎসব ক্ষেত্র থেকে আত্মঘাতী কোন যোদ্ধার মৃতদেহ বাইরে আসতো না কিন্তু ছোট্ট চান্দ্রাত্তু পানিক্করের দেহ তার পরিবারের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলো। কে বা কিভাবে তা সম্ভব করেছিলো তার নাম জানা যায়নি তবে স্বানীয়রা মনে করেন ১৬৮৩ মামানকাম ময়দানে পুতুমান্না পানিক্কর মানে বড় পানিক্করের মৃত্যু হয়নি তার মত সুদক্ষ ও নিঁপুন যোদ্ধাকে বোকা বানিয়ে রাজা সামুথিরি গুপ্ত পথে পালিয়ে যেতে দেখে বড় পানিক্কর নিশ্চই পালিয়ে তার পিছু করেছিলো। আজ সেই বড় পানিক্কর নিজের ভাগ্না চান্দ্রাত্তু দেহ ফিরিয়ে এনেছিলো। এখনো 

কেরালার মালাপুরম (malappuram) জেলার মক্কারাপুরবা (makkaraparamba) গ্রামে ছোট্ট চান্দ্রাত্তু পানিক্করের সমাধি মামানকাম আত্মঘাতী যোদ্ধার ইতিহাস বহন করে চলেছে।

 *" বীর আত্মঘাতী যোদ্ধাদের রক্তে পবিত্র এই ধরাধাম ।

অদ্ভুত শক্তি গ্রন্থের শক্তিতম জায়গার নাম মামানকাম।। "* 


          কে ভি কৃষ্ণ আইয়ার ( K. V. Krishna Iyer) মতে শেষ মামানকাম উৎসবটি হয়েছি ১৭৫৫ তে। বেশকিছু সূত্র থেকে জানা যায় সামুথিরি রাজাকে হারিয়ে জামুরিন(Zaborin) রাজত্ব পায়। তারপর ১৭৫৫ মামানকামে ১৮ বছর বয়সী পুঠুমানা কান্দারু মেনন ( Puthumana Kandaru Menon) আক্রমন করেন পেরুমল বা রাজা জামুরিন কে এবং প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেও ১৭৬৫ খ্রিঃ হায়দার আলি তাকে পরাস্ত ও হত্যা করে।

তারপর ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সারিংপাতাম (Seringapatam) চুক্তির মাধ্যমে কঙ্গানপাল্লি কালারি (Canganpaḷḷi Kaḷari) , পালুক্কামান্ডাপম (Paḻukkāmandapam) , নীলাপাতু তারা (Nilapāṭu Tara) , মারুন্নারা (Marunnara) এবং মানিক্কিনার (Manikkiṇar) স্থান গুলিকে সুরক্ষিত স্মৃতিসৌধ করে সংরক্ষণ হয় ১৭৯২ খ্রিঃ।


~~ নীলপদু থারা (Nilapadu Thara) : এই স্থানটি আপাতত কোডাক্কল টাইল কারখানার প্রাঙ্গনে অবস্থিত। মামানকাম উৎসব চলাকালিন সামুথিরি ও কোজিকোডের অন্যান্যরা এখানে দাঁড়িয়ে থাকত। 


~~ মানিক্কিনার ( Manikkinar) : এটি এমন একটি কূপ, যেখানে আত্মঘাতী যোদ্ধাদের মৃতদেহ হাতিতে করে এনে ফেলা দেওয়া হতো।


~~ মারুন্নারা (Marunnara) : এটি কোডাক্কল (Kodakkal) বন্দর রোডে অবস্থিত। সামুথিরিরা যুদ্ধের সময় বারুদ সংগ্রহ করতে ব্যবহার করতো এটিকে।


~~ চাঙ্গামপাল্লি কালারী (Changampally Kalari) : এটি থাজাথারা - কুট্টিপুরম (Thazhathara - Kuttippuram) রোডের কাছে অবস্থিত। এখানে যোদ্ধাদের যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া ও আহত দের চিকিৎসা করা হত। 


        ২০১০ সালের আগস্টে, কেরালার রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহায়তায় Nila Tourism Project  এর আওতায় মামানকাম ধ্বংসাবশেষ গুলি সংস্কার করা হয়। এটিকে বাস্তবায়িত করে কেরালা শিল্প ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ সংস্থা। মোট সংস্কারের জন্য অর্থ ব্যয় হয়েছিলো ৯০ লক্ষ টাকা।

      Times of India -এর ২০১১ সালের মাঝামাঝি প্রতিবেদন অনুসারে তিরুনাভায়া মামানকাম অবশেষগুলি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে এবং বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়েছে।


      ততকালিন মামানকাম উৎসবের ঐতিয্য ও আত্মঘাত বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে শুধুই ইতিহাস।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ