পোস্ট বার দেখা হয়েছে
রেইনবো
চন্দ্রনাথ অধিকারী
আকাশ সাজছে
বৃষ্টি হবে, তুমুল বৃষ্টি!
কত তার আয়োজন! শরতের শোভা যত ছিল ; সব মৃত-
কত নিনাদ! কত ঝলকানি! কত ঘর্ষণ! কত আলো!
নিকষকালো দেখানোর জন্য!
আজ বৃষ্টি হবে।
আমি জানলার পাশে, চুপটি করে বসে দেখবো
কার্ণিশ বেয়ে অঝোরধারায় ঝরে পড়া বৃষ্টি!
জবাফুল টা স্নান সেরে নেবে ভেবেছিল ; এখন ধুম জ্বর ;
টুনটুনির বাসার তিনটে ডিম লড়াই করে বেঁচে গেল খুব-
বড্ড পরিস্কার, হালকা সবুজ! এখন সাপের চোখ এড়াতে পারলে হয়!
গন্ধরাজের সহ অহংকার চূর্ণ ;
সন্ধ্যামণি আজ আর ফুটবে না, বৃষ্টির অতি আদরে!
বিহঙ্গেরা ডানা ঝাপটায়, গৃহে ফিরবে বলে!
আমি ভিজবো না আর ; ঠিক করেছি
জানলার গ্রীলে মুষড়ে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা দেখবো-
আর অপেক্ষা করবো রামধনুর।।
*************************************
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি শোক
রাণা চ্যাটার্জী
কিছুদিন হোক না বিশ্রাম....,
মৃত্যুর চাপা কষ্টে বিষাদ গ্রস্থ মন..!
জানি টুপ করে ঝরে যায় পাতা,
তবু নতুন কিশলয়ে প্রাণ সঞ্চার...।
যারা না বলে হঠাৎ না ফেরার দেশে...,
কোনোদিন ফিরে আসতে চাইলেও ফিরবে না!
প্রাণবন্ত উচ্ছল রঙিন হাত নাড়া হঠাৎ থমকায়,
বিবর্ণ শোক জুড়ে জীবনের গতিশীল খাতা...!
বাকি থাকা কথারা দমবন্ধ মনের মাঝে হাঁফিয়ে, চোরা কুঠুরিতে বোবা কান্না নিঃসঙ্গতায়...
পরে থাকে কত সুখ স্মৃতির মুক্ত মালা,না বলা কথার ভিড়ে,মেঘভাঙা বৃষ্টি ধারায় শোক প্লাবন!
*************************************
একা মন
অনামিকা বোস
এ শহরের নির্জনতায় বৃষ্টি বয়ে চলে অঙ্গ জুড়ে
আমার ঠোঁট ভিজিয়ে দেয়....
দাঁতের কামড়ে সেই লাল দাগটা তখন সকলের কাছে জিঞ্জাসা চিহ্ন !!
খানিক ভালোবাসার মোহভঙ্গের ধোঁয়াটা উড়ে যায় তোমার মুদ্রাদোষে ৷
টাপুরটুপুর নোনা জল নিঃস্ব হয়ে ঝরে ,
এলো চুলের করবী ফুল খোলা উঠোনে উড়ে ৷
মনের চোরা স্রোতে জমেছে আরও গভীর ক্ষত "
লুকিয়ে রেখেছি রুমালের ভাঁজে আমার মনখারাপ যত ৷
এই আসা আর যাওয়ার মাঝে একটাই গল্প বেঁচে থাকে ......
শুধুই শূন্য মন একা হওয়ার গল্প .......৷৷
************************************
পদ্মাবতী - নাম রেখো না
স্মরণ মজুমদার
জন্ম হলে আদর করে
এবার মেয়ের নাম রেখো না পদ্মাবতী!
কেউ বলেনি?
অমন নামে একটি মেয়ের
ভীষণ ক্ষতি ... ভীষণ ক্ষতি!
একরত্তি মেয়েটি যার দাঁত ওঠে না,
কালনাগিনী পোষে না যে ছোবল দেবে!
তবে কেন ভাবছো শুধু - দুধ আর কলায় করবে পুজো?
ভাবছো কেন, ওই মেয়েটি তোমার থেকে শুধুই নেবে?
ছাপিয়ে যাওয়ার গুণ আছে যার নিজের ভেতর,
কেনই বা সে অকারণে বয়ে যাবে?
অকারণে ভাবছো - মেয়ে ঘর ভাঙানো, কুল ভাসানো নদী হবে!
যখন একটি মেয়ে চাষ করে খায়,
যখন একটি মেয়ে মেডেল আনে,
যখন একটি মেয়ে গাইতে লিখতে সবই পারে,
সেই একটি মেয়ে জন্ম নেবে তোমার ঘরেই -
নামকরণের আগে তুমি
এমন ধারা ভাববে কবে?
একটি মেয়ে তোমার ঘরে জন্ম নেবে -
এরচে' বড় আশীর্বাদ আর কি চাও তুমি?
সব মেয়েই বীরাঙ্গনা - যুদ্ধে তুমি নামিয়ে দেখো!
তবু কেন সফল কোন বীরপুরুষের পাণি ভিক্ষা?
লড়তে পারে যেই মেয়েটি বাইরে ঘরে, জলে স্থলে,
অলিম্পিকে ও ,
দু'বার ভেবে সেই মেয়েটির নামটি রেখো!
যে মেয়েটি ভবিষ্যতে জন্ম নেবে, রূপ লাবণ্য নাই বা থাকুক,
নাই বা তাঁকে হাজার প্রেমিক খুঁজে বেড়াক,
নাই বা তাঁকে কিনতে আসুক রাজা মশাই রাজ্য বেচে!
একলা মেয়ে সব মেয়েই, জীবনটা তাঁর এমনিতেই মহাকাব্য!
তোমরা কেন তাঁকে নিয়ে কাব্য লেখার ভাণ করবে?
দাও না সুযোগ - একটি মেয়ে কবিতা হোক নিজেই যেচে!!
জন্ম হলে আদর করে
এবার মেয়ের নাম রেখো না পদ্মাবতী ...
জেনে রাখো - অমন নামে একটি মেয়ের ভীষণ ক্ষতি ... ভীষণ ক্ষতি।
*************************************
জীবন ও মৃত্যু
ধর্মেন্দ্র রাওয়াত
"মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে"। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার এই লাইন দিয়ে শুরু করছি আমার আজকের কথা ও উপলব্ধি। দ্বিতীয় কে ছেড়ে নিজেকে নিয়ে অধ্যায়ন করব আজ।আজ ঘরে ফেরার পালা।
খুব অদ্ভুত লাগে যখন দেখি ভাবি-
কৈশোর ও বৃদ্ধের দিকে আমরা সরাসরি তাকাতে ভয় পায় । এমনকি আয়নাতেও আমরা বুক ফুলিয়ে তাকাই না । নিজের ছায়াতেও আমরা নিজেকে মিথ্যে দেখতে চাই। প্রতিবিম্বেও আমরা নিজেকে জীবন্ত দেখতে চাই ।
কেন এমন হয়!
কেন এত আড়াল করি নিজেকে আমরা!
আপনি কি কখনও খেয়াল করেছেন- ভেতরে যে 'আমি'বোধ আছে তার কোন মৃত্যুবোধ নেই ,তার কোনো পরিবর্তন নেই ,সে যেমন ছিল তেমনি থেকে যায় চিরন্তন শাশ্বত ।
ধরুন আপনাকে এমন জায়গায় রাখা হলো যেখানে "দ্বিতীয়" কেউ নেই। এমনকি কোন জীব না জন্তু। যার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি আপনাকে বুঝতে পারবেন জানতে পারবেন। দ্বিতীয় কোন চোখ নেই। পুকুরের শান্ত জলও নেই।
তাই
আপনি শিশু থেকে বৃদ্ধ হয়ে গেলেও বুঝতে কি পারবেন যে আপনি একদিন শিশু ছিলেন আজ বৃদ্ধ?
আমার মনে হয় আমরা বুঝতে পারবো না। দ্বিতীয়" জনের উপস্থিতিতেই আমরা আমাদের সমস্ত কিছু দেখি জানি বুঝি। নিজেকে আবিস্কার করি। দ্বিতীয় জনের মৃত্যু কে দেখেই আমরা বুঝতে পারি যে আমরাও একদিন মারা যাবো। তা না হলে হয়তো আমরা কখনোই বুঝতাম না যে আমাদের মৃত্যু আছে। এমনকি মৃত্যুর আগের মুহূর্তেও আমরা বুঝতে পারতাম না যে আমরা মারা যাবো। চির বিদায়ের ভাব ভাবনা আমাদের ভেতরে কোথাও নেই। তাই
আমাদের ভেতরে কোথাও মৃত্যু বোধও নেই।
আমাদের ভেতরে মৃত্যুবোধ নেই অথচ সামনে শ্মশানের চিতা!
যেহেতু অন্যের চোখে আমরা নিজেকে দেখতে পাই, নিজেকে খুঁজি।
যেহেতু অন্যের দৃষ্টিতেই আমাদের মরণ বাচন।
যেহেতু আমাদের সম্পূর্ণ জীবনযাত্রা কনসাস মাইন্ডে যা দশভাগের মাত্র একভাগ -
তাইতো আমাদের মৃত্যুহীন- প্রাণের বোধ কনসাস মাইন্ডে নেই।
তাই এত মৃত্যুভয় ! দ্বিতীয় জনের মৃত্যু দেখে নিজের মৃত্যুভয় !
আমরা যদি ফিরতে পারি নিজের দিকে সম্পূর্ণরূপে। কনশাস আনকন্সাস সাবকনসাস মাইন্ড কে 'এক'করে নিতে পারি। তাহলে আমাদের খুব সহজেই এই বোধ হবে যে-
এখানে শুধু জীবন জীবন আর জীবন। জীবনের কোন মৃত্যু নেই।
এখানে
"মৃত্যুর চেয়ে বড় মিথ্যে আর নেই।
0 মন্তব্যসমূহ