পোস্ট বার দেখা হয়েছে
অরণ্য সপ্তাহ
পরিবেশনায় - সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী
অরণ্য সপ্তাহ - বৃক্ষরোপণ - - বৃক্ষপালন- সবুজায়ন ---শব্দগুলো যেন অতিভারী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দিয়ে গেলেন আমাদের এই শব্দগুলো। নিজে সূচনা করে গেলেন "বৃক্ষরোপণ উৎসব"--১৯২৮ সালের ২১ জুলাই। লাগালেন একটি শিশু বকুল চারা। শুরু হোল আমাদের উৎসব অরণ্য সপ্তাহ পালন। মহা সমারোহে আমরা বহন করে চলেছি বৃক্ষরোপনের মহাযজ্ঞ। কচিকাচাদের হাত ধরে কচিকচি চারারা মাটিতে স্থায়ীভাবে আশ্রয় পায়। বড় হয়--সদ্যজাত শিশু যেমন ক্রমশঃ নিজের নরম নরম আঙ্গুল নাড়ে --ছোট্ট ছোট্ট চোখ খুলে চোখের তারা চারদিকে ঘোরায়-ঠিক তেমনি কচি চারারা নতুন নতুন পাতা বের করে নিজের দেহ থেকে। নিজেকে দেহ লম্বা হয়--শিশুদের মতো। শাখা প্রশাখা বের হয়--ছড়িয়ে পড়ে শরীরের চতুর্দিকে। একবার বড় হতে আরম্ভ করলে আর আটকানো যায় না। মনে হয় সবে হাঁটতে শেখা শিশু ছুটছে। এভাবেই বড় হয় দলে দলে কচি কচি চারা--কৈশোর থেকে যৌবন। ফুল ফোটে --ফল হয়--আবার তৈরী হয় শিশুচারা জন্ম দেওয়ার তোড়জোড়। এ তো গেল বৃক্ষরোপনের-সবুজায়নের স্বাভাবিক জীবন। মহা সমারোহে আমরা গাছ লাগাই--বড় হয়--আর আমাদের কোন দায়িত্ব থাকে না।
আমরা যদি ভাবি আমরা --বিভিন্ন সংস্থা-বিভিন্ন দপ্তর-- যা চারা রোপণ করি তার মধ্যে সবগুলোকে কি বাঁচতে দিই?? যদি বাঁচতো তবে রাস্তা হোত না, মানুষ থাকার জায়গা পেতো না। বিশাল বিশাল বাড়ি তৈরী হোত না, কোম্পানির কমপ্লেক্স তৈরী হোত না। কাঠের মিল মালিকদের মিল চলতো না। কোন উন্নয়নই হোত না। তাও আমরা উদ্যোগ নিই--গাছ লাগাবো--বড় করবো- -সবুজে ভরিয়ে দেবো। কত কত মানুষ অফুরন্ত উৎসাহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন এই কাজে। বছরভর অনেকেই এই কাজের সাথে যুক্ত থাকেন। চারাদল বড় হয়--পরিনত হয়--আমরা ভরসা নিয়ে থাকি যে বৃক্ষগুলো বহু বছর বেঁচে থাকবে। যখন সেই গাছগুলো আগুনে পোড়ে --রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ভূলুন্ঠিত হয় তখন একটি প্রশ্ন সবসময় ঘুরে ফিরে আসে---সত্যিই কি আর প্রয়োজন আছে --"বৃক্ষরোপণ"-করার!!
"অরণ্যসপ্তাহ"---পালন করার!!! তাও আমরা করি--আমরা আশাবাদী। পৃথিবী সবুজ থাকবে। অক্সিজেন মাত্রা বাড়বে --পৃথিবীর তাপমাত্রা কমবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম ভালো থাকবে।
আচ্ছা--যদি ক্রমাগত বৃক্ষনিধন অব্যহত থাকে তবে বৃক্ষরোপণ করে কি হবে? দিকে দিকে বৃক্ষনিধন চলছে--চলছে প্রতিবাদ--চলছে রাস্তা সম্প্রসারণ--চলছে সবুজ সঙ্কোচন। দুটোই চলবে --পাশাপাশি--যতদিন মানবজাতি টিকে থাকবে। তবে কোনটি জিতবে ভবিষ্যতের সময় বলবে।
--আমরা গাছ লাগাবো--
প্রাণ বাঁচাবো--
এইটি মোদের পন।
প্রাণের সেবা করবো মোরা--
আমরা মাতৃভূমির ধন।
একশ' বছর আগে ছিল ১৬ লক্ষ বর্গকিমি বনাঞ্চল,
ধীরে ধীরে কমে হোল ৬
লক্ষ ৪০ হাজার---
উঠলো গড়ে কারখানা -রাস্তা আর বসতে অঞ্চল।
আমরাই বাড়াবো --বৃক্ষসংখ্যা,
পরিবেশ পাবে সবুজ আখ্যা।
চলুক মোদের অরণ্য সপ্তাহ পালন,
আর সমারোহে বৃক্ষরোপণ--।
2 মন্তব্যসমূহ
প্রশংসনীয় সবুজায়ন প্রচেষ্টা এবং সুন্দর প্রতিবেদন। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে কবি সুকান্তের কথা - "এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
উত্তরমুছুননবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।" ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা দায়বদ্ধ।
এই উৎসাহ এবং মহান উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এই কামনা।
উত্তরমুছুন