শব্দমালা || ধারাবাহিক কলম || ৩ পর্ব || কবি জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


 স্বপ্নকবিতা
জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়


আমি সেই কবিতার স্বপ্ন দেখি

যা মানুষের কাছে জ্যোৎস্না হয়ে ঝরে পড়বে

ধূসর মনে অনির্বাণ প্রত্যয় হয়ে

জেগে থাকবে আবহমান

মানুষকে দেবে সম্প্রীতির মহার্ঘ মন্ত্র। 


ক্ষয়ে যাওয়া ভালােবাসার ডিজিটাল পৃথিবীতে

একটু প্রশান্তি চায় মানুষ।

গভীর অনিশ্চয়তার আবর্তে সময়-শাসনে

ছুটে চলেছে সেলফি জেনারেশন।

তাদের চারপাশে শুধুই হানাহানি..বারুদ...দূষণ... 

মুখােশ পরা মানুষের বিরামহীন নগ্নতা... 


চিরায়ত কবিতার শরীর ছুঁয়ে বেঁচে থাকে বৈদুর্য আলাে...শুদ্ধতার স্বপ্নবীজ...

শুধু শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে নয় অক্ষরপ্রতিমার দিগন্ত ছুঁয়ে

আমরা পরিশুদ্ধ হতে চাই

নিতে চাই আলাের শপথ। 


প্রিয় পৃথিবীর জন্য কবিতা শরীরে

রেখে যেতে চাই সূর্যের দীপ্তি, চাদের স্নিগ্ধতা....

শুদ্ধতার স্বপ্নবীজ...

===

কথাবার্তা

জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়


ক থা বা র্তা - এক


রুদ্রনীলঃ এই যে ম্যাডাম সেদিন আপনার সঙ্গে রেডিও স্টেশনে দেখা না হলে কী হতাে? 


সুদর্শনাঃ দেখা হতােই স্যার, এটা পূর্বনির্দিষ্ট, বলতে পারেন ডেসটিনি, তাই দেখা হতে বাধ্য। বেশ মনে আছে জানাে, সেদিন তুমি ছিলে নীল জিন্সের পাঞ্জাবীতে, দারুণ সপ্রতিভ। একটুও জড়তা ছিল না কথাবার্তায়, বেশ পেশাদারী দক্ষতায় দিচ্ছিলে সাক্ষাৎকার...


রুদ্রঃ একটাই স্টুডিয়াে মাইক্রোফোনে মুখােমুখি বসেছিলাম আমরা। তুমি পরেছিলে মেরুন রঙের চুমকি বসানাে চুড়িদার। তােমার শ্বাস-প্রশ্বাসের দমকা আগুন লাগছিল আমার মুখে... 


সুদর্শনাঃ আর মশাই আপনি, চেনা নেই জানা নেই, একজন ভদ্রমহিলার চোখে এমনভাবে চোখ রেখেছিলেন... 


রুদ্রঃ অস্বস্তি লাগছিল, তাই তাে ! 


সুদর্শনাঃ তুমিই বলাে, চিনি না, জানি না, কোথাকার কোন রাজপুত্তুর এলেন আর চোখের ভাষায়, শব্দের মায়ায় সব কিছু ওলট পালট করে দিলেন.. 


এতদিনে তিলে তিলে গড়া স্বপ্নের জগৎ কোন্ এক প্রবল জোয়ারে.. মূহুর্তে ভেসে গেল... 


হাসছ কেন, বল হাসছ কেন... 


রুদ্রঃ দেখছি তােমাকে, আবেগে তুমি কেমন রক্তিম হয়ে ওঠো। অনাবিল এক লাবণ্য ছুঁয়ে থাকে তােমাকে। তােমার ডান গালের কালাে তিল জ্যোৎস্নারাতে আবহমান প্রেমিককে পথ চেনায় গােপন অভিসারে ... তুমিই আমার কবিতার মানস প্রতিমা, আদিগন্ত আকাশ, ভােরের শিশির। তােমাকে না পেলে হয়তাে অসম্পূর্ণই থেকে যেত পরিক্রমার দিনলিপি। 


সুদর্শনাঃ অতাে কাব্যি বুঝি না, একটা হাতিও বাঁচে একশ বছরের বেশি, আর আমরা 


তার চেয়েও কম, সুতরাং যে ক'দিন আছি, এসাে সকলে হাতে হাত রেখে বাঁচি, বাঁচার আনন্দে বাঁচি। 


টেনশন লেনে কা নেহি ইয়্যার 


টেনশন দেনে কা হ্যায় 


রুদ্রঃ সুদর্শনা ... (রুদ্র সুদর্শনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে) 


সুদর্শনাঃ এই, এই, ছাড়, ছাড় বলছি (হাসি)


বিশ্বপ্রাণে বাংলা

জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়


বাংলা আমার মাতৃভাষা বাংলা আমার অহংকার

পদাবলির ঋদ্ধ অতীত একুশ-ঊনিশ পারাপার ৷


বাংলা আমার স্বপ্নতোরণ বাংলা আমার কণ্ঠহার

গৌরনিতাই, লালন ছুঁয়ে জগৎপ্রেমের অঙ্গীকার ৷


আমরা সবাই ভাষাপ্রেমিক ছড়িয়ে আছি ভুবনময়

গৌরব আর পরম্পরায় গড়ব নজির মুছবো ভয়৷


অতিমারীর আগ্রাসনে শঙ্কা-শোকের অন্ধ দিন 

গড়তে হবে সমাজটাকে ভালোবাসায় অন্তহীন ৷


রবিঠাকুর নজরুলেতে ধমনীতে আলোর গান 

মিলবো সবাই মানবব্রতে বসুন্ধরায় সবুজ প্রাণ ৷


বিশ্বভরা প্রাণের মাঝে লক্ষ তারার বরাভয়

মিলনমন্ত্রে আমরা জেগে বাংলা ভাষায় আনবো জয় ৷


শাশ্বত রবি

জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়


রবি  শাশ্বত এক নাম 

রবি  রামধনু মাখা গান

রবি  আকাশপ্রদীপ মনে 

রবি  প্ৰীতিমাখা গৃহকোণে৷


রবি  গ্রীষ্মের উত্তাপ

রবি  মুছে চলে সন্তাপ

রবি  পঁচিশের আলোভোর

রবি  খুলেছে বন্ধ দোর৷


রবি  সম্প্রীতি নির্ঝর 

রবি  মানুষের সহচর

রবি  তিমির বিনাশী ভাের 

রবি  অন্তর রাঙানোর৷


রবি  কালবৈশাখী ঝড়

রবি  সরস্বতীর বর

রবি  সাধনার আলোনদী

রবি  প্রজ্ঞা-সপ্তপদী৷


রবি  শিশির মাখানাে ঘাসে 

রবি  পেঁজামেঘ নীলাকাশে 

রবি  মংপু শিলাইদহে

রবি  মানুষের জয়গানে৷ 

 

রবি  আলােকিত অক্ষরে 

রবি  প্রতিসাক্ষর মনে 

রবি  অগ্রপথিক প্রাণ 

রবি  দীপ্ত সাম্যগান৷


রবি  শান্তির নিকেতন

রবি  আবহমানের ধন

রবি  জনগণমন অধি

রবি   চিরায়ত মহাবোধি৷


রবি  উত্তরণের গান

রবি  মানবিকতায় স্নান 

রবি  জ্যোৎস্নার পরিভাষা 

রবি  জেগে আছে ভালােবাসা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ