দর্পণ || বিচ্ছেদের বাসন্তী রঙ ~ পারিজাত ব্যানার্জী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

বিচ্ছেদের বাসন্তী রঙ

পারিজাত ব্যানার্জী


“এতো অল্প সময়ের মধ্যে কি আর সব আয়োজন করা যায়?”

“আয়োজন তুমি কি করবে? স্বয়ং প্রকৃতি আজ রূপবন্যায় প্লাবিত — বসন্তের আগুন আভায় উদ্ভাসিত। নতুনকে আঁকড়ে ধরে নব্য আবেশে আনন্দিত। তুমি শুধু দেখো, যেন সে রঙ লেগে থাকে তোমারও গালে, কপালে, মননে।”

এমনভাবেই বসন্ত এসেছিল শ্রীরাধিকার জীবনে সে বছর। বাসন্তী রঙের আঁচলে বাঁধা ছিল পলাশ আর অপরাজিতা ফুল। শ্রীকৃষ্ণের সুর মূর্চ্ছনায় আন্দোলিত জগতসংসার ভরে উঠেছিল প্রেমের এক অপার্থিব করুণ-রসে।

পরের বছরটাই আবার ছিল ভীষণভাবে অন্যরকম। ফাঁকা, একঘেয়ে, বিমর্ষ। রোজকার কাজে আর মন বসাতে পারেনি শ্রীরাধিকা। বারবার চোখ চলে গিয়েছিল শুধু অনন্ত চক্রবালে।

সূর্য তখন মধ্যগগনে। সারা আকাশ জুড়ে আগুনরঙা জোয়ার, ধরণীর বুকে ঘন নিবিড় সবুজ আধার! মাছরাঙার নীল বর্ণে চমক লাগে, হরিণের চপল নয়নে বুক কাঁপে!শ্রীরাধিকার মনে পড়ে,তাই তো - আজ যে দোল! আচ্ছা, বিরহের রঙ কি? কি বেশে সেজে উঠবে আজ রাই? ফ্যাকাশে নৈরাশ্যেও এত রঙ মেখেছে প্রকৃতি, কই তবু তো বসন্ত ধরে না মননে?

এমনই সময় ঘোর করে এলো আকাশ। বিদ্যুৎ চমকে মুখরিত হল চারিদিক! কালবৈশাখীর অকাল আগমনে নিমগ্ন হল প্রান্তর। তবে কি শ্রীকৃষ্ণ বিহনে আর কোনোই রঙে সাজবে না লক্ষ্মী স্বরূপিনী রাধিকা?

না। ওই তো— সব মেঘ গেছে সরে। পলাশ আর কৃষ্ণচূরার দ্যোতনার মাঝেই দেখো, কেমন ফুটে উঠেছে এক অপূর্ব রামধনু!

এ ঘোর বসন্তে গো-পালকের বাঁশির সুরেও যে মাখামাখি করছে একমুঠো আবির, তা কি করে অস্বীকার করবে আমাদের কৃষ্ণকালো নয়ন সম্ভারে বিকশিত গোপিনী!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ