দর্পণ || কবি দিনেশ দাস ~ শ্রদ্ধাঞ্জলি




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

দিনেশ দাস (১৬ সেপ্টেম্বর ১৯১৩  - ১৩ মার্চ ১৯৮৫) ছিলেন একজন বাঙ্গালি কবি । 

আদিগঙ্গার তীরে আলিপুরের চেতলা অঞ্চলে মামাবাড়ীতে (৬৫ এফ জয়নুদ্দি মিস্ত্রি লেন, কলিকাতা - ৭০০ ০২৭)   ১৯১৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর দিনেশ দাসের জন্ম হয়। বাবার নাম হৃষিকেশ দাস এবং মা কাত্যায়নী দেবী। 


১৯৩৪ সালে দিনেশ দাসের প্রথম কবিতা ‘শ্রাবণে’ দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র শ্রমিক, কৃষক ও সকল মেহনতী জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ জয়ী হতে পারে এই বিশ্বাস থেকে ১৯৩৭ সালে দীনেশ দাস রচনা করেন ‘কাস্তে’ কবিতাটি। 


১৯৫৯ সালে প্রকাশিত দিনেশ দাসের প্রথম শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলন ‘উল্টোরথ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। ১৯৮০ সালে নজরুল আকাদেমি থেকে তিনি প্রথম নজরুল পুরস্কার পান। ১৯৮২ সালে শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘রাম গেছে বনবাসে’র জন্য দিনেশ দাসকে রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত হন।


১৯৮৫ সালের ১৩ই মার্চ কবি দিনেশ দাস গোপালনগরের পিতৃগৃহে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


।। নির্বাচিত কবিতা ।।


কাস্তে 


বেয়নেট হোক যত ধারালো—

কাস্তেটা ধার দিয়ো, বন্ধু!

শেল আর বম হোক ভারালো

কাস্তেটা শান দিয়ো, বন্ধু।


নতুন চাঁদের বাঁকা ফালিটি

তুমি বুঝি খুব ভালোবাসতে ?

চাঁদের শতক আজ নহে তো

এ-যুগের চাঁদ হ’লো কাস্তে!ইস্পাতে কামানেতে দুনিয়া

কাল যারা করেছিল পূর্ণ,

কামানে-কামানে ঠোকাঠুকিতে

আজ তারা চূর্ণবিচূর্ণ :চূর্ণ এ-লৌহের পৃথিবী

তোমাদের রক্ত-সমুদ্রে

গ’লে পরিণত হয় মাটিতে,

মাটির—মাটির যুগ ঊর্ধ্বে!

দিগন্তে মৃত্তিকা ঘনায়ে

আসে ওই! চেয়ে দ্যাখো বন্ধু!

কাস্তেটা রেখেছো কি শানায়ে

এ-মাটির কাস্তেটা, বন্ধু!

====

ভারতবর্ষ 


চোখভরা জল আর বুকভরা অভিমান নিয়ে

কোলের ছেলের মতো তোমার কোলেই

ঘুরে ফিরে আসি বারবার

হে ভারত, জননী আমার।


তোমার উত্সুক ডালে

কখন ফুটেছি কচিপাতার আড়ালে,

আমার কস্তুরী-রেণু উড়ে গেছে কত পথে

দিগন্তে আকাশে ছায়াপথে,

তবুও আমার ছায়া পড়েছে তোমার বুকে কত শত ছেলে

তুমি বাঁকা ঝিরঝিরে নদী ছলছলে

বাজাও স্নেহের ঝুমঝমি,

জননী জন্মভূমি তুমি!তোমার আকাশে আমি প্রথম ভোরের

পেয়েছি আলোর সাড়া,

দপদপে হীরে-শুকতারা

অস্ফুট কাকলি,

জলে ফোটে হীরকের কলি

মধ্যাহ্নে হীরের রোদ—

হে ভারত, হীরক-ভারত!কোন্ এক ঢেউছোঁয়া দিনে

বঙ্গোপসাগর থেকে পথ চিনে চিনে

কখন এসেছি আমি ঝিনুকের মতো,

তোমার ঘাসের হ্রদে ঝিলের সবুজে

খেলা করি একা অবিরত!

আমি তো রেখেছি মুখ

তোমার গঙ্গোত্রী-স্তনে অধীর উন্মুখ,

মিটাল আগ্নেয় ক্ষুধা তোমার অক্ষয় বটফলে

দিনান্তে সুডৌল জানু মালাবার করোমণ্ডলে

দিয়েছ আমাকে কোল ;

কত জলতরঙ্গের রাত্রি উতরোল

ভরে দিলে ঘুমের কাজলে ;

মিশে গেছি শিকড়ের তন্ময়তা নিয়ে

তোমার মাটির নাড়ি হাওয়া আর জলে

গ্রীষ্ম বর্ষা হেমন্ত শরৎ —

হে ভারত, হীরক-ভারত!আজ গৌরীশঙ্করের শিখরে শিখরে

জমে কালো মেঘ

বৈশাখী পাখির ডানা ছড়ায় উদ্বেগ ;

তবু এই আকাশ সমুদ্র থেকে কাল

লাফ দেবে একমুখো হীরের সকাল

চকচকে মাছের মতন—

হে ভারত, হীরক-ভারত পুরাতন!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ