পোস্ট বার দেখা হয়েছে
।। একগুচ্ছ কবিতা ~ কবি জয়তী দাস ।।
একিলিস হিল,,
মনেহলো নতুন দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলে
সে এক নতুন দেশ, নতুন জামা, অন্য রঙের...
কেন জানিনা আঁচে জ্বলে ওঠা গন্ধের ধোঁয়া
এখনো যাচ্ছে না...
কোথায় কত কি ঘটে, সব কি হয় জানাশোনা...
আয়না জানতো বোধহয়, লুকানো দেওয়ালের পোষ্যরাও..
কখনও ডানপাশ ঘেঁষে বাম পাশে গেছো আড়ালে...
ছায়াও তো কথা বলে,
নরম পশমের দুপুরে লুকিয়ে রেখেছো তাকে!
ওখানে কখনই আমি তীর ছুঁড়বো না
যতটা লুকিয়ে গেলে ঢেকে যেতে পারো আরো...
দেহের নয়, অদৃশ্য নিক্ষেপে মনেরও মৃত্যু হয়..
একমাত্র তুমিই জানতে...
===
কান পাতো..
প্লাটফর্মের এককোণে এক বৃদ্ধা ভিক্ষুক
থালায় চটকে মেখে খাচ্ছে সাদা ভাত
তোবড়ানো গাল, কোটরে ঢোকানো চোখ
কঙ্কাল কাঠামোতে জড়ানো মলিন কাপড়
চারপাশে চারটি বেড়াল প্রহরী
বুড়ির হাতে লাঠি,
লাঠি গর্জাচ্ছে না, বেড়ালও পালাচ্ছে না
শুধু ঠক ঠক ঠক
বুড়ির স্পন্দন
আয়... নে নে... খা...
এ এক অলীক চুম্বন
ভগ্ন বুকে গজিয়ে ওঠে জীবন যখন
শিকড় নেমে আসে ইটের পাঁজরে
মাটির সভ্যতা চিৎকার করে বলে... কান পাতো..
====
জটপাকানো চিরুনি
শঙ্করী ওর কাজ করে দিয়ে যখন বাড়ি গেলো তখন প্রায় দুপুর তিনটে। আমিও গুছিয়ে নিয়েছি অনেকটাই। এতক্ষণে ভেজা জটপাকানো চুলগুলোর দিকে তাকাতেই মনেহলো এই সামান্য চিরুনি দিয়ে সব জট ছাড়ানো আদৌ সম্ভব হয়!
অথচ কখনও নিজেকে গোয়েন্দা বলে দাবী করিনি। রোমহর্ষক থ্রিলারগুলো আগে ভীষণ ভালো লাগতো। চাপা চাপা উত্তেজনা ছাপিয়ে উঠতো ঘন নিশ্বাসে। কী অদ্ভুত নাটকীয়তায় একজন খুন হয়ে যায়। সব খুনের বৈশিষ্ট্য এক নয়। এসব বেশী পড়লে মানুষের গতিবিধি সম্বন্ধে জটিল অংক ঘোরাফেরা করে চারপাশে।
যেমন, হঠাৎ কোনো মানুষের চোখ অনেক্ক্ষণ কোনো বাড়িতে স্থির হয়ে গেলে যথেষ্ট সন্দেহজনক ভাবে তাকে দূর থেকে দেখতে থাকি। লোকটা এসময়ে এখানে কেন? কার জন্য অপেক্ষা করছে, লোকটা কি এভাবে লক্ষ্য রাখে বাড়িটার দিকে, কি এমন ভালো লাগলো যে এত বাড়ির মধ্যে এটাকেই তার নজরবন্দি করতে হচ্ছে। লোকটার ভেতরে কোনো ক্রিমিনাল লুকিয়ে আছে কিনা। লোকটির মনে কুমতলব আছে কিনা, আরো অনেক অনেক প্রশ্ন.....
হঠাৎ চোখ অ্যাঙ্গেল বদলালো। এসব সন্দেহের ঘোর কাটিয়ে সাদাকালো ছবিটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করতে লাগলাম। মানুষটার দুশ ছয়খানা হাড় খুলে ভেতরের নথিপত্র ঘাটতে লাগলাম। যতখুলি দেখি আমার চেনা রান্নাঘরে পোষা দাঁড়কাকটাকে। ফ্রিজের ভেতরে কাঁচা মাংস মাছ ফল সবজি সাথে সেই ধারালো ছুরি, আঁশ বটি । বদ্ধ ঘরে ছেঁড়া বাতিল পুটুলি, দেওয়ালে পিঠের কালো দাগ, আর সুদৃশ্য কার্পেট পাতা ঢাকা মেঝেতে বাইরের ঘর।
এবার চোখ দুটো ক্রমশ বিবর্ধক কাচ। মানুষটার আঙটিতে খুঁজছি খুনের শুকনো রক্ত, চোখের নীচে গভীরে গিরিখাদে জমানো জল, আর ত্বক ও বুকের গভীরে স্নেহজ পদার্থে মিশে আছে ভালোবাসা,ঘৃণা, যন্ত্রণা, হিংস্রতা, লোভ। আসামির কাঠগড়ায় তাকে কতবার ওঠানামা করতে হয়েছে। তীক্ষ্ণ চোখে খুঁজে যাচ্ছি কতক্ষণ...
হ্যাঁ এবার ঠিক চিনেছি, এই তো সেই লোকটা। ভোটের আগে বাড়ি বাড়ি হাতজোড় করে বলেছিলো আমাকেই ভোটটা এবার দেবেন। আর ওই তো সেই মহিলাটা যাকে চব্বিশ ঘন্টা টিভি চ্যানেলে দেখিয়েছিলো স্বামী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পুত্রবধূকে পুড়িয়ে মারলো। সেই যে লোকটা সাত বছরের শিশুকন্যাকে যৌন নিগ্রহের দায়ে গণপিটুনি খেলো। আর সেই যে বৃদ্ধাটি, কর্মসংস্থান থেকে ছাটাই হওয়া ছেলেটার সুইসাইড নোটটা বুকে জড়িয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলতে ফেলতে জেগে থাকে প্রতিরাতে। পাগলিটাকেও এবার দেখতে পাচ্ছি চোখের কোটরে পথের মানুষের দিকে শানিত দৃষ্টি অথচ কাকে ঠিক লক্ষ্য করে বিড়বিড় করে বকে যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। অসংখ্য মানুষের মিছিলে সেই লোকটা....
এবার কর্কশ স্বরে বলতে থাকি, আমার অনেক সময় আপনি নিলেন। এবার ঢুকুন তো প্যাকিং বাক্সে। এতক্ষণে সবচুল গোছা করে আটকে দিই বাহারী ক্লিপ।চিরুনির দিকে তাকিয়ে দেখি সব চুল জট পাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে....
0 মন্তব্যসমূহ