ধারাবাহিক উপন্যাস || কংসাবতী ( পর্ব -৭) মহুয়া




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

কংসাবতী

 ( পর্ব -৭)

মহুয়া 


বাঁকুড়া থেকে সুচেতা কলেজের ছুটি শেষ হতেই খুব তাড়াতাড়ি ফিরে এলো কলকাতায় । হঠাৎ করেই কলকাতাকে ভীষন লাগতে শুরু হয়েছে অথচ এক বছর আগেও  গ্রাম থেকে কলকাতা ফিরতে মন চাইতো না । মনে হতেই ফিক করে হেসে ফেললো । কালো চামড়ায় সাদা গজ দাঁত টা ঝিকিয়ে উঠলো । হ্যাঁ শহরে আসার আগে সুচেতার মনে নিজেকে নিয়ে যে হীনমন্যতা ছিল সেটা কলেজে ভর্তি হবার পরে ক্লাসের ছেলেমেয়েদের কটাক্ষ, ব্যঙ্গ , বিদ্রুপের জন্যে আর ও বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রতুল ওর জীবনে ঝকঝকে সূর্যালোকের মত । ওই সুচেতা কে ভাবতে শিখিয়েছে , মানুষ শারীরিক সৌন্দর্য্যে নয় মননে সুন্দর হয় । এ ছাড়াও প্রতুল বলে যে , সুচেতা কালো হলেও নাক চোখ ঠোঁটের গড়নে অনেক সুন্দরী মেয়েকে ফেল করিয়ে দেবে । তাছাড়া ওর ওই কালো মেঘের মত এক ঢাল চুল শহুরে মেয়েরা পাবে কোথায় ? শহুরে মেয়েদের স্টাইল করতে গিয়ে আর পলিউশানের জন্যে নাকি চুল আর ত্বক খুবই খারাপ । প্রতুল ওকে "কালো হীরে" বলতো মজা করে । সুচেতা আর প্রতুলের ব্যাপারটা কলেজে জানাজানি হয়ে গিয়েছিল । ক্লাসের ছেলেরা আর সিনিয়ার ছেলেরাও ওদের দেখে ঈর্ষান্বিত হতো । তার ওপর আবার সুচেতা খুব মেধাবী মেয়ে । সব মিলিয়ে দ্বিতীয় বর্ষ থেকে সুচেতার জীবন একটু একটু করে পাল্টে যাচ্ছিলো । ©️

------ কি রে কি ভাবছিস এত? আমি ডাকছি ভেলপুরি খাবার জন্যে শুনতেই পাচ্ছিস না ।  

আজ রবিবার , আগের থেকেই প্রতুল সুচেতা কে বলেছিল যে গ্রাম থেকে ফিরে এলে একদিন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখাতে নিয়ে যাবে । সেই মত আজ দুপুরবেলা সুচেতা পড়তে যাবার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে । 

------- সরি গো , শুনতেই পাইনি । আমি  অবাক হয়ে দেখছিলাম  চারদিকটা । কি সুন্দর ! গ্রামে থাকতে অনেকের মুখে নাম শুনেছি । সত্যি দারুন স্থাপত্য !!  

------- নে চল এবার , আর দেরি করা ঠিক হবে না । তোর ফিরতে দেরি  হয়ে যাবে । আমার আর কি ? বাড়িতে মা আছে । তেমন কিছু বলবে না । কিন্তু তুই তো পরের বাড়ি থাকিস , তোকে বকা শুনতে হবে । আর সেটা আমি কখনোই চাই না যে তুই আমার জন্যে বকা খাস । ©️

------ ওমা! তোমার জন্যে হবে কেনো ? আমিও তো আসতে চেয়েছি তোমার সাথে । তুমি তো জোর করনি ।সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে ঢুকলেই হবে । কাকু কিছু বলবে না । তবে আমার বিশ্রাম হবে না । কাকু র মেয়েকে পড়াই তো । নাইনে পড়ে কিন্তু ভীষন ফাঁকিবাজ । আচ্ছা একটা কথা বলবে ? 

------ কি কথা ? 

------ তুমি কি আমাকে এভাবেই ভালোবাসবে সব সময় ? কোনোদিন ভুলে যাবে না? ভুলে গেলে আমি আমার সৌন্দর্যকে হারাব প্রতুল তুমি যে আমাকে আমার আমিকে চিনিয়েছ ।

------ দুর পাগলী , কোনোদিন ভুলবো না তোকে । আমার ফোর্থ ইয়ার শেষ হলে ক্যাম্পাসিংয়ে জব পেয়ে গেলে আমরা বিয়ে করবো । 

------ বিয়ে !!!!! না না , কখনোই না । আগে আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবাকে দেওয়া কথা

 রাখতে হবে । তারপর বিয়ে । কেনো ? তুমি অপেক্ষা করবে না আমার জন্যে । নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে আমি একবারে তোমার কাছে যাবো । কি গো করবে না অপেক্ষা ?

----- আচ্ছা সে দেখা যাবে , আগে তোর থার্ড ইয়ার আর আমার ফোর্থ ইয়ার কমপ্লিট হোক । তবে তো । খিদে পেয়েছে ,চল কিছু খাই  । দ্যাখ বকবক করতে করতে ভেলপুরির দোকানে ভিড় হয়ে গেলো । ©️

-------- খালি খিদে , এত খাই খাই কর কেনো ? হাহাহাহা

------- খাই খাই করি ? আজ তো ওই তিনটে নিরস চুমু  দিলি । ওতে পেট ভরে না মন ভরে ? ভয়েই মরে যাচ্ছিলি । কে দেখে ফেলবে ? আর এ বাবা এখানে সবাই যারা প্রেমিক প্রেমিকাকে নিয়ে এসেছে তারা  এসব খুনসুটি করেই । তুইই ভীতুর ডিম একটা । না নিজে খেলি , না আমায় খেতে দিলি । এখন আবার বলছিস খাই খাই করি । সেই কবে কংসাবতী র ধারে তোকে জড়িয়ে চুমু খেয়ে ছিলাম  মন ভরে । কে জানে আবার কবে কংসাবতী দেখব ? বলে প্রতুল সুচেতার কোমর জড়িয়ে ধরে ।

------- এইই ব্রজেশ স্যার না ? দেখো আমাদের দেখছে । এ বাবা এদিকেই আসছে যে !!!! কি করবো ? কাকু কে যে বলে দেবে । কি হবে ? হেই গো মারাং বুরু  মায়েন , ভাইলছে আমাদের  । 


(চলবে )

আগের পর্ব পড়ুন ......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ