দর্পণ | ধারাবাহিক কলম | উপন্যাস ~ কংসাবতী | চতুর্থ পর্ব




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 

       উপন্যাস - কংসাবতী

     উপস্থাপনায় ~ মহুয়া


 "Laayek's Brother (মোবাইল সারানো হয়)" বাঁকুড়া শহরের একটা মোবাইলের দোকান । পুলিশ ভ্যান থেকে নামলেন ইনস্পেক্টর সুজয় ঘোষ । পুলিশ ভ্যান দেখে স্বভাবতঃই আশেপাশের দোকানের লোকেদের উৎসুকতা বেড়ে গেলো । তবে মোবাইলের দোকানি তেমন চমকালো না । ইন্সপেক্টরকে আহ্বান জানালো ।

----- আসুন স্যার , বসুন । অনেকদিন পরে এলেন এবার । 

----- দেখুন তো , এই মোবাইল দুটোর লক খুলতে পারেন কিনা ? 

----- দিন স্যার , দেখি চেষ্টা করে । আজকাল হয়েছে এই এক মোবাইল লকের প্রবলেম । মানুষ চুরি করে যে শান্তিতে ব্যবহার করবে তার উপায় নেই । হে হে হে । বাব্বা ! এত দেখছি বেশ দামী মোবাইল । ইসস যার গেলো সে বুঝবে । কমসে কম হাজার চল্লিশ তো হবেই । বেশি দিন ব্যবহার করতে পারলো না , চুরি ই হয়ে গেলো । দুটো মোবাইল প্রায় আশি নব্বই হাজার তো হবেই । 

----- চুরি নয় , অ্যাকসিডেন্ট কেস । অবস্থা আশঙ্কজনক এই মোবাইল দুটোর মালিকদের । তুমি তাড়াতড়ি দেখো লক খুলতে পারো কিনা , আমি একটু অন্য কাজ সেরে আসি । 

----- আচ্ছা ,স্যার ঠিক আছে । 

------ ইন্সপেক্টর সুজয় ঘোষ বেরিয়ে গেলেন ।


 সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ । মাঝে মাঝে দু এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে আবার কমে যাচ্ছে । সুচেতা আজ স্কুলের জন্যে বেরিয়েও স্কুলে গেলো না । একটা রিক্সা ডেকে নিলো।

----- আমি একটু নদীর পাড়ে যাবো ,কত নেবে ?

------ তা কুড়ি টাকা লাইগবেক । 

------ চলো 

সেদিনটা ও এমন ছিল । সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা শেষে বাড়ি এসেছিল সুচেতা ওরফে চিন্তামনি ।শহরের ছোঁয়া লেগে চিন্তামনি টুডু এখন অনেক স্মার্ট । শাড়ি ছেড়ে জিন্স টপ, সালোয়ার কামিজে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে । আগের মত মহুলের তেলের গন্ধ বেরোয় না গা থেকে ,তার বদলে বডি স্প্রে র মিষ্টি গন্ধে সুন্দর আয়ত চোখদুটো আজকাল অনেকেরই নজর কাড়ছে বিশেষ করে প্রতুল । সেই কলেজের মাইনের লাইন থেকে সম্পর্কটা বেশ টক মিষ্টি হয়ে উঠেছে । সুচেতা বাড়ি এসে এক মাস থাকবে শুনে দুদিন কথাই বলল না ছেলে মানে প্রতুল বসু । বাপমায়ের একমাত্র সন্তান প্রতুল । বাড়ি গোল পার্ক লেকের কাছে । বাবা বিদেশি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর , কাজের সুত্রে প্রায়শই হিল্লী দিল্লী বিদেশ ঘুরে বেড়ান । পড়াশুনোর খাতিরেই প্রতুলের সাথে কথা বলা । প্রতুল মেধাবী ছাত্র তার ওপর আবার সিনিওর । প্রতুলই বলেছিল কোনো সাবজেক্ট যদি দেখবার প্রয়োজন হয় তাহলে ও দেখিয়ে দেবে । এ কথায় সুচেতা আকাশের চাঁদ পেল । সব সাবজেক্ট পিছু প্রাইভেট টিউটর রাখার ক্ষমতা সুচেতার ছিল না । প্রতুল ওকে অঙ্ক দেখিয়ে দিত যতোটুকু সময় পেত । তাছাড়া ওরা কলেজের পরে অনেক সময় লেকে চলে আসতো পড়ার জন্যে ।©️ পড়াশুনোর ফাঁকে কখন যে মন দেওয়া নেওয়া শুরু হয়েছিল তা ওরা নিজেরাই জানে না । সুচেতার এক ঢাল চুল ,আয়ত চোখ , সরলতা কে প্রতুল ভালোবেসেছিল । সুচেতা বারবার মনে করিয়ে দিত ওর অক্ষমতা , তবুও প্রতুল কে নিরস্ত করা যায়নি । বাড়ি আসার সময় প্রতুল বলে ----

------ তুই বাড়ি গেলে আমার সময় কাটবে না । কদিন থেকে চলে আয় 

------ না গো তা হয়না, কতদিন পর যাচ্ছি । ক্লাস শুরু হয়ে গেলে তো একটানা থাকতে হবে । 

হাসতে হাসতে মজা করে সুচেতা বলে , তার থেকে তুমি চলে এসো দিন সাতেকের জন্যে আমাদের বাড়ি । বাড়িতে বলবে কলেজ থেকে নিয়ে যাবে ছুটিতে । প্রতুল তক্ষুনি রাজি হয়ে যায় । যদিও সুচেতা মজা করেই কথাটা বলেছিল , ভাবতেই পারেনি যে প্রতুল রাজি হয়ে যাবে ।সুচেতা ছুটিতে বাড়ি চলে এসে অধীর আগ্রহে দিন গুনতে থাকে । অবশেষে প্রতুল এলো ।

সুচেতা দের বাড়ির একটি ঘরে থাকার ব্যবস্থা হোলো । বাড়িতে বললো ,প্রতুল ওর কলেজের বন্ধু , বাঁকুড়ায় কাজে এসেছে দিন সাতেকের জন্যে । সুচেতার মা বাবা অমত করলো না । গ্রামের সাদাসিধে মানুষ তারা কি করে বুঝবে কেমিস্ট্রির অনার্সের ছাত্রীর সাথে শহুরে ছেলেটার কেমিস্ট্রি কি ? এরপর মুকুটমনিপুর , রানীবাঁধ , শুশুনিয়া পাহাড় আর বাঁকুড়া শহর দুজনে মিলে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াল। মুকুটমনিপুরে ঘুরতে গিয়ে দুজনে ক্লান্ত হয়ে কংসাবতীর ধারে বসে পড়ে । হঠাৎই প্রতুল সুচেতাকে জড়িয়ে চুমু খায় , সুচেতা কেঁপে ওঠে । পরক্ষনেই এক ভালো লাগার আবেশ ছড়িয়ে পড়ে সুচেতার দেহেমনে । প্রতুল দুষ্টু দুষ্টু মুখ করে বলে ,

----- কেমিস্ট্রি ভালো করে আত্মস্থ করার জন্যে শুধু বই মুখস্ত করে কিছু হবে না , প্র্যাকটিক্যালি শেখা দরকার , প্রেমের রাসায়ানিক ধর্ম কি ? মানে রসায়ন বিদ্যা আয়ত্বকলে আমরা কি রসায়নে রসাক্ত নাকি বিষাক্ত সেটা পরখ করা জরুরি । চুমু ও আলিঙ্গনের ক্রিয়া বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণের পর আমরা পরবর্তী পর্যায়ের টেস্ট করবো । সামনের তিনদিন আমরা প্রাণ রসায়ন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবো । হাহাহা হাহাহাহা । 

 তারপর সুচেতার মুখ দুহাতে ধরে প্রতুল বলে ,"কষ্টি পাথরের গালে লজ্জার লাল পলাশ না ফুটলেও কষ্টিপাথর কিন্তু অমূল্য । চল ফেরা যাক "।


------দিদি , আস্যে গেলো তোমার লদী , কুথায় লাইমবে ? 

রিক্সাওলার ডাকে চমকে উঠলো সুচেতা । কত বছর পর আবার এলো কাঁসাই এর কাছে ।


(চলবে)

_____

আগের পর্ব পড়ুন ......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ