দর্পণ |ধারাবাহিক দৈনিক কলম | প্রবন্ধ ~ পারিজাত ব্যানার্জী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


 ঋতুবদল

পারিজাত ব্যানার্জী


ঋতু বদলায়। আমরা যতই বলি না কেন, মানুষ বদলায় না বাইরের এই দোলাচলতায় সাড়া দিয়ে, আসলে কিন্তু আমাদের ভিতরেও ভাঙাগড়া ঠিক চলতেই থাকে নিজস্ব গড়ে তোলা অদেখা বেনিয়মের সূত্রের পরম্পরায়।


আমিও পাল্টেছি। বহুবার। যখন প্রথম বাড়ির আড়াল ছেড়ে দাঁড়িয়েছি গিয়ে সুবিশাল স্কুল প্রাঙ্গণের চৌহদ্দিতে, পাল্টেছি নিজেকে সর্বসমক্ষে মেলে ধরার তাগিদে।


উল্টোদিকে, যখন "বাবা, ও কি মোটা!" বলে হাসাহাসি করেছে পরিচিত মহল, আমি আবার পাল্টেছি নিজের তৈরি ভীরু গহ্বরে মুখ লুকোনোর অসহায়তায়।


একটু বড় হতেই কাছের মানুষদের ভরসায় ভর দিয়ে বুঝেছি, নিন্দামন্দরা কেবল অন্যদের নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার প্রয়োজনে গাঁথা কথার কথা - ওসব উড়িয়ে প্রাণোবন্ত হয়ে বাঁচাটাই প্রকৃত অভিজ্ঞতা!পাল্টে নিয়েছি নতুন করে পথ উদ্যমী হয়ে এগিয়ে চলার প্রচেষ্টায়। বদলেছে ঋতু - এসেছে বসন্ত অপার। 


এমন বাঁকে বাঁকে এঁকে বেঁকেই চলেছে জীবন। জানি, আগামীতেও এর অন্যথা হবে না।এরমধ্যেই সমুদ্রে জোয়ার এসেছে, ঘটে গেছে দু দুটি বড় ঋতুচক্র পাড়।


সত্যি বলতে, মনের মতো সঙ্গীর সাথে সাত পাক ঘোরার আগে পর্যন্তও বুঝিনি, আবার নতুন রূপে সেজে উঠতে তৎপর হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানানসই হওয়াটাই সেখানে এক আমূল পরিবর্তন, যা না পারলেই পলকা সুতোগুলোর টিকে থাকাটাও মুশকিল।


অন্যদিকে অকস্মাৎ হারিয়ে বসলাম সেই মাটিটুকুও আমার শেকরবাকর ছিল যেটুকু আঁকড়ে ধরে। চলে গেল মা।


পাঁচ বছর হল, পেরিয়ে গেছে সেই কালবৈশাখীও - তবু বারবার ঘিরে ধরে ভাবনারা; প্রকৃতির নিজের রঙ পাল্টানোর সময় তো তবু পূর্বনির্ধারিত - জীবনের সকাল সন্ধ্যার হিসাব করাই আসলে আজও বড় দায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ