পোস্ট বার দেখা হয়েছে
কবিতা
মনুষ্যত্ব
অমিতাভ মুখোপাধ্যায়
মনুষ্যত্ব'র মৃত্যু ঘটেছে বহুদিন আগেই
এখন তো মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক
বড় বেশী হিসেবী কিংবা কেতাবী
সে সন্তানই হোক কিংবা একান্ত প্রিয়জন
পড়শী বলে এখন আর কেউ নেই
আছে শুধু সারিবন্দী পাঁচিল ঘেরা বাড়ি
এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো
মাঝে আতশ কাচের দেওয়াল
কে কত সুখের সাগরে সপ্তডিঙা ভাসাবে
তা'র অসুস্থ প্রতিযোগিতা
সেখানে প্রেম নেই, ঘৃণাও নেই
আছে শুধু সর্পিল দহন
প্রতিনিয়ত ক্যান্সারের মতো খেয়ে নিচ্ছে
আমাদের উপোসী শরীর, শব্দের বারান্দা
বারো ঘর এক উঠোনের গল্প এখন রূপকথা
স্বজন হারানোর কান্না শুনে
আজ আর অন্যের হৃদয় কাঁদে না
বরং পাপ পুণ্যের দোহাই দেয়
এ এক মন্দ সময়
চোরা বালির সংসারে আমরা কেউ সুখে নেই
আলেয়ার পেছনে ছুটে চলেছে অবাধ্য সমাজ
সংসার, অলৌকিক দিন যাপন
মনুষ্যত্বকে দিয়েছি ছুটি
সমবেদনা'র দুয়ারেও দিয়েছি খিল
নগর দর্পণে দেখি না নিজের মুখ
শুধু মেকী অহংকারের বড়াই করি
সবাই ভাবছি, এই তো বেশ আছি
আমি, তুমি আর আমাদের সন্তান
আসলে সবটাই ফাঁকি
রোদন ভরা এক এক অকাল বসন্ত l
----------------------------------------------
আমি রাজা নই
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
এ শোক আমি নিতে চেয়েছি বারবার
চিৎকার করে বলতে চেয়েছি আমার পিতৃপরিচয়
যারা লুকিয়ে রাখা পাথরের গায়ে লাগিয়েছিল ভাইয়ের প্রতীকী রক্ত
তাদের দিকে আমিই এগিয়ে দিয়েছি খাণ্ডব দহনের সমস্ত অভিযোগ।
ওরা বিষ তুলে নিয়েছিল ধর্মান্ধ তীরের ফলায়
ওরা ঈশ্বরের সামনে রেখেছিল নিজেদের বংশ মর্যাদা-
যুধিষ্ঠিরের দিকে এগিয়ে যাওয়া প্রত্যেকটি তীর ওরা সয়েছিল বুকে।
ওরা ভাই। হয়তবা আমারও।
কিন্তু ওরা মায়ের কোলে সযত্নে রেখে এসেছিল আমার পুড়ে যাওয়া একটা দমবন্ধ খোলস-
জন্ম থেকে এক-একটি দিন আমায় শিখিয়েছে নিঃশ্বাস নিতে
প্রতিদিন দেখিয়েছে নিজের বিপরীতে বেড়ে ওঠা আরও একটি খাঁচার গড়ন...
ছায়ার বদলে আমি আমি একটু একটু করে চেয়ে নিয়েছি সেই উপভোগ্য রেগিস্তান।
ওড়বার বদলে আমি ডানা মেলে আছড়ে পড়েছি হস্তিনাপুরের লুকনো বারান্দায়।
ওরাই চিৎকার করে তুলেছে আমায়
ঝলসানো চোখের পাতায় আমি বারবার খুঁজে দেখেছি ওদের নাম-
জানতে চেয়েছি ওরা আসলে কারা?
ছেলেবেলার অভ্যাসের বাণ যেভাবে বিদ্ধ করতো সহায়সম্বলহীন নীতিকথাদের
গুরু পরশুরামের অভিশাপ যেভাবে মুছে দিয়েছিল দংশনের চিহ্ন
ঠিক সেভাবেই ওদের দরবারে আমি মুকুট পরেছি যুদ্ধের আগে-
আগামী প্রত্যেকটি দিন এই ছিঁড়ে পড়া বাকল থেকে ধীরে ধীরে জন্ম হবে অচেনা সাম্রাজ্যের।
আমার এভাবে রাজা হবার কথা ছিল না-
ভেদ করার কথা ছিল না কুমার অর্জুনের সমস্ত যুদ্ধসাজ-
কিন্তু ওরা চেয়েছিল-
আমায় বিশ্বাস করে বাসুদেবের সুদর্শন কেড়ে সেখানে বসিয়েছিল বিষাক্ত সিংহাসন।
আমি কোনোদিন এই সিংহাসনের দাবীদার নই-
যুদ্ধের এগারোতম দিনে প্রথম অস্ত্র ধারণের আগে আমি নিজেকে একবার সাজিয়েছিলাম সূতপুত্র সাজে,
রথের দড়ির আগায় বসিয়েছিলাম নিজের বিপর্যস্ত ছায়া,
নিজের ঋণগুলো একটা একটা করে সাজিয়েছিলাম তূণে।
কিন্তু ধনুকের ছিলায় এদের বসানোর আগে বন্ধ হয়েছিল বরাদ্দ খাঁচার দরজা-
বন্দি হবার আগে ওরাই পাঠিয়ে দিল খোলাচিঠি আর অব্যবহৃত ঘুণ ধরা ব্রহ্মাস্ত্র...
আমি পারলাম না নিজের রথটুকু দাঁড় করাতে-
কবজকুণ্ডলের ঋণ থেকে একটু বাঁচিয়ে নিজেকে ঘিরে দিলাম আত্মপরিচয়।
এরপর রাজপথে বিছিয়ে রাখা দেহটাকে আপন করে ঘিরে রেখেছিল সেই ওরাই-
শেষমেশ যুদ্ধের সমস্ত সরঞ্জাম ফিরিয়ে দেবার পরে আমি একবার তাকিয়ে দেখেছি ওদের মুখ
ওরা কেউ ধর্মলোভী পান্ডব নয়
ওরা কেউ নয় কৌরব নামক কলঙ্কিত নায়কের ভার
ওরা কেবল আমার দিকে ধেয়ে আসা মাতা কুন্তীর চার চারটি গর্ভের আপোষ।
----------------------------------------------
দৃশ্যপট
উত্তম কুমার দাস
ফ্ল্যাশব্যাক এর আগে; নাটকের দৃশ্যপট এক প্রশস্ত মঞ্চে; ত্রিবিধ ঐক্য উপেক্ষিত।
জীবনের গতি রোধ করা, এক অপার্থিব পথে যৌন উন্মত্ততা; এক হতাশাগ্রস্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি!
পঞ্চ সন্ধিযুক্ত নাট্য রসে - কাহিনী পার্থিব দৃশ্য অভিনয় এর আগে। জীবনের চাওয়া পাওয়াকে দূরে সরিয়ে দিয়ে; আসন্ন সান্নিধ্যে এক হতাশাগ্রস্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি;
জীবনের করিডোরে শূন্যতা।
সামাজিক, রাজনৈতিক সংঘাতে ,আদর্শগত দ্বন্দ্বে, চরিত্রগুলি জর্জরিত! সংলাপে মিথ্যাচার-
জীবনের প্রেক্ষাপটে।
প্রবৃত্তির সঙ্গে বুদ্ধির স্বাতন্ত্র সম্পর্কিত ইচ্ছাকে পূর্ণ করতে জীবনের যবনিকা শেষ করে- নাটকের বিষয়গত ব্যঞ্জনায় অতি নাটকীয়তা।
আবেগের অতিরঞ্জন; নাট্য শ্লেষ ব্যঞ্জনায় তবুও
চরিত্রের মিথ্যাচার।
প্রাপ্ত মিলনের সুখ অনুভূতির পাথরে
অবস; হৃদয়ের রক্তক্ষরণ এ গোলাপি উচ্ছ্বাস;
এর মাঝে তুমি বলো - " আমাকে ভালোবেসে তুমি আমার সঙ্গী হবে"।
আসন্ন সান্নিধ্যে এক যৌন সম্মিলন! ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে; অর্ধ নগ্ন শরীরে আবেগি চুম্বন; অভিনয় নৈপুণ্যে দর্শক মানস মূর্ত হয়ে ওঠে।
নাটকীয় ঘটনাবলীর কাঠামোতে এ এক অতি সংযুক্তি।
কিন্তু ফেরারি জীবনের ট্রান্সপোর্ট বন্ধ!
রাতের জোনাকি ঝিঁঝিঁ রা আসর জমিয়েছে।
বর্ষার উম্মত্ততা প্রেমে মিশে গেছে।
- মিলনের সুখ প্রচ্ছন্ন বৈপরীত্যে!
- - দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বাইরে আর এক জীবনের ছবি!
- সেখানে মিলনের সুখ ধর্ষণে; হুইস্কির বোতল এর ফেনা- চলমান জীবনের অভিনয়ে মিশে যায় উক্তি প্রযুক্তির বাইরে!
অন্ধকারের প্রতিচ্ছবি মধ্যে কাল গত ঐকো বিশ্লেষণ!
- তার মাঝে আমি একা----
নাট্য বৃত্তান্তে; পঞ্চসন্ধি খুঁজি!
---------------------------------------------
অনাবশ্যক
মধুপর্ণা বসু
দূরভাষ সম্পর্ক আমাদের...
অদেখার রোমাঞ্চ তিলে তিলে সঞ্চিত খাবারের মতো উপভোগ করি নিতি নিতি,
পর্দানশীন এই অসাক্ষাৎ কাব্য বিশ্লেষণ খুব জরুরী নয়, তবুও আমরা নিজেদের স্পষ্ট করি,
এক রহস্যময় প্রাচীন বটের ছায়ায় মন নিয়ে বসি, আসলে একান্তই নিজস্ব চাহিদায়।
আমাদের অজস্র অজানা নিকষ অন্ধকারই ভীষণ ভাবে আকর্ষণ করে হৃদয়ের গুপ্ত ঘর।
আলোর বেগের গতিতে সেই শূণ্য স্থান ভরিয়ে দেয় কল্পনার ডালপালা।
কি অসম্ভব ভালো সব সাংকেতিকতা কে ছুঁয়ে জীবন আসলে তোলপাড়।
একটা অভাব না থাকলে তুমি আর আমি অবকাশ পেতাম কি করে বলো?
তাইতো আমাদের দুজনের হাজার সময়ের ব্যবধানে এগিয়ে যায় আমাদের
মনের অনটন, অতৃপ্ত অবদমিত প্রশ্নপত্র।
সব প্রয়োজন নেই, অনেকটাই অনাবশ্যক জেনেও
আমরা ধীর পায়ে হেঁটে যাই অদৃশ্য মোহমায়ার মগজধোলাই কারখানায়।
ফিরে আসার রাস্তা পূর্ব নির্ধারিত, তবু এই রাত জাগা অবকাশের পেনকিলার,
নাকি মরফিনের আপাত প্রমত্ততা।?
----------------------------------------------
উজান বাওয়া
সুপ্রীতি দাস
মা বাবা শখ করে নাম রেখেছিল ইছামতী
গতানুগতিক জীবনে আজ ইচ্ছা মতি হতে পারলাম কই?
সমাজের শ্যাওলার বেড়ি পায়ে পায়ে জড়িয়ে রইলো আজীবন!
সময়ের সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে কবে যেন ইচ্ছে গুলো দিয়েছে পাড়ি...
বাধা নিষেধের ডিঙি চেপে ঢেউ গুনে গুনে একান্ত যাপিত জীবনে অবগাহন !!
গোধূলির আলোয় আজ চোখে পড়ে সীমাহীন ধূ ধূ প্রান্তর....
স্মৃতির মিছিলে ভেসে আসে দূর দূরান্তের কতো এলোমেলো সংলাপ!
ইছামতীর মজে যাওয়া বুকে নীরব মন্ত্রোচ্চারন আজও শোনা যায়......
ভালবাসার ঐশ্বরিক অনুভব এখনো মিলিয়ে যায় নি দিগন্তরেখায়.!!
গাংচিলের ডানায় ভর করে রাত্রি নামে নিঝুম প্রহরে...
রাজপথ জনপথ পেরিয়ে নিঃশব্দে পাড় ভেঙে ভেঙে এগিয়ে যাওয়া!
ইছামতীর মনের ভিতর গভীর ঘূর্ণিপাক,,, একান্তে চোরা বাঁকে উজান বাওয়া.!!
----------------------------------------------
গল্প
সত্যি জোকারের গল্প
সন্দীপ কুমার ঝা
টি.ভি-র ভিতর জনাকয়েক সুদৃশ্য লোক। একজন সঞ্চালক। হাতে একটা ছোট বল।তিনিই রেফারি।ঘন্টাখানেক খেলা চলবে।সঞ্চালক বাঁশি বাজালেন।টানটান উত্তেজনা। বল ছুঁড়লেন উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে প্রথম একজনের দিকে। শুরু হল সেই বলটাকে পরস্পরের দিকে দ্রুত ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেওয়া।লোফালুফির খেলা।
বিজ্ঞাপন বিরতি।
বলটা আসলে,গু-মাখানো একটা বল।প্রকৃত প্রস্তাবে,বলটা একটা সমস্যা।সেই সমস্যাটা নিয়ে লোফালুফি চলল।চলতেই থাকল কিন্তু কেউ বলটাকে কেউ শক্ত করে ধরল না।শুধু সার্কাসের কায়দায়,আশ্চর্য ভাবে সেটাকে একজন অন্যের হাতে ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করে যেতে লাগল। লাগাতার।
বিজ্ঞাপন বিরতি।
সমস্যাটা এভাবে উড়ে উড়ে চলল ,উছলে উছলে চলল কিন্তু কারো হাতে স্থির হল না।একটু উষ্ণ ছোঁয়ার আদরে মিলিয়ে গেল না।
খেলাটা সবাইকে মুগ্ধ করল।এমনকি সমস্যাটা অর্থাৎ বলটা যাদের, তারাও সেটার কথা ভুলে গেল।তারাও মুগ্ধ হয়ে আশ্চর্য কায়দাটা দেখতে লাগল।গুনে গুনে দেখল,তাদের পাঠানো খেলোয়াড় ঠিক কতবার ,কোন কায়দায়,ঐ বলটাকে বিপক্ষের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছে ।তারা দেখল,তাদের খেলোয়াড় কিভাবে পাশের জনকে সমস্যাটার কারন বানিয়ে,নিজের নোংরা হাতটা নিজের পেছনেই মুছে নিল।সবাই দেখল।
বিজ্ঞাপন বিরতি।
এভাবে খেলা জমে উঠল।ছোঁড়াছুড়ির শব্দে চিল কাক উড়ে গেল,ঘরের চাল থেকে গাছের ডালে। খেলা শেষ হল।
বিরতিতে জনতা বিড়ি খেল।রেফারির বাপের ঘরে কোটি ঢুকল।মিনারাল ওয়াটারে চুমুক দিয়ে খেলোয়াড়রা উঠে গেল।বলগুলো অবিকৃত থাকল,গড়াগড়ি খেল।বলগুলো অপেক্ষা করল,নতুন খেলোয়াড়দের হাতে,পরবর্তী খেলার জন্য।
বোকা বাক্সের বাইরে যারা বসে ছিল,শুধু তারাই বুঝতে পারলনা,খেলাটা আসলে শেষ হয়নি।তারাই শুরু বুঝতে পারেনা এই খেলা শেষ হয় না কোনোদিন। টি.ভির বাইরে থেকে তারাই শুধু দেখতে পেল না,এই খেলোয়াড়রা আসলে এক একজন,লাল নাকওয়ালা লোক হাসানো জোকার।আর বলগুলো তাদের নাক।
তারা কেবল বুঝতে পারল তাদের খিদে পেয়েছে।তারা কেবল দেখতে পেল,সেই খিদেটা আস্তে আস্তে তাদের মেরুদণ্ডটাকেও পেটের ভিতরে গিলে নিচ্ছে!
যদিও বলগুলো নিয়ে তখনও লোফালুফি চলছিল,স্টুডিওর মেঝেতে...
---------------------------------------------
শোধবোধ
দেবী মজুমদার
ঠকাং করে মাথায় গাট্টা মেরে রিনির পিসতুতো দাদা রিন্টু বলে উঠলো-মাথাটা গোবরে ভরা? কিছুতেই মাথায় ঢোকেনা তোর?
মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নিজের মনেই বলে-এর শোধ যদি না নিয়েছি রিন্টু দা ,তবে আমার নামে কুকুর পুষবি। মুখে বলে-কি করবো?সংখ্যার সঙ্গে abcd,xyz দেখলেই আমার মাথা কেমন গুলিয়ে যায়।
রিনি জানে মায়ের খুব আদরের বাঁদর ওটা।মাকে নালিশ করে কোন লাভ হবে না।প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোর আগে রিন্টু ওদের বাড়িতে ঘুড়ি ওড়াতে চলে আসে।বাপীরও আদরের ভাগনা বলে কথা।কত ঘুড়ি কিনে দিয়েছে,কি যেন সব নাম---পেটকাটি,চাঁদিয়াল চৌরঙ্গী, ময়ূরপঙ্খী,মুখপোড়া,বগ্গা।পড়াশোনায় খুব ভালো বলে ওকে ম্যাথটা দেখিয়ে দিতে বলেছে। তাতেই ধরা কে সরা ,মানে নিজেকে সেরা ভাবছে।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সকালবেলায় এক গাদা ঘুড়ি, লাটাইটা নিয়ে ছাদে উঠলো।রিনি জলখাবার খেতে খেতে দেখলো।
আকাশে যেন নানা রঙের আলপনা আঁকা চলছে।রিন্টুও মনের আনন্দে ঘুড়ি বাড়তে বাড়তে আকাশের অনেক উঁচুতে ওড়াচ্ছে।"
"রিনি ,অ্যাই রিনি-নীচে বসে কি করছিস?আয় একটু লাটাইটা ধর।দ্যাখ পটলাদের ছাদে ওদের ভাইবোনেরা সবাই মিলে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে।"
“আমি পারবোনা শুধু শুধু তোর লাটাই ধরে থাকতে।আমাকেও ঘুড়ি ওড়াতে দিতে হবে।“
মা ধমকে ওঠে-"অ্যাই তুই কি ঘুড়ি ওড়াবি? যা একটু ধরগে যা।"
"এখন ধরগে যা, অন্যসময় আমি একটু ছাদে যেতে চাইলেই ,তখন কত কথা – একা একা ছাদে যাবি না,রোদে দাঁড়াবিনা, ছাদের ধারে যাবি না ,ছাদে লাফালাফি করবি না। আর এখন?"
মাকে বলে ,ঠিক আছে – যাচ্ছি।
মাকে লুকিয়ে সিঁড়ির নীচ থেকে ছোট বালতি টা নিয়ে নিল সঙ্গে।
উপরে উঠতেই দেখে পটলাদের মুখপোড়া ঘুড়ি টাকে কেটে রিন্টুদা ভোওওওওওওকাট্টা বলে চিল চিৎকার করছে। আর পটলাদা ওর বোন শাপলাকে একটা ঠকাং করে দিয়ে দিয়েছে মাথায় ,আসলে মুখপোড়া টা কাঁটা যেতেই ও ট্যান টাটাং ট্যান টাটাং করে কাসরটা বাজিয়ে ফেলেছিল ভুল করে।রিনি ভাবে ভুল করে কিনা ভগবান জানে!ও হয়তো মনে মনে রিন্টুদার দলে।
নিজের মনেই খুক খুক করে হাসে,"কি সব নাম-পটলা- শাপলা! অবশ্য ওদের দুই ভাইবোনের ভালো নাম ও আছে। রজতশুভ্র বসু আর সপ্তপর্ণী বসু। সে রজতশুভ্র হোক আর রূপোলীঅভ্র হোক আমার কি দরকার? শুধু গাটা জ্বলে যখন ঐ রূপোলী অভ্র মায়ের সামনে ভালো ছেলে মার্কা মুখ করে , হিতাকাঙ্খী সেজে জ্ঞান দ্যায়--
" এবছর টা খুব চাপের রিনি ,ভালো করে পড়াশোনা কর" কোথা থেকে নাকি ও খবর পেয়েছে এদেশের সব স্কুলগুলো প্রতিবছর ক্লাস এইটের ছাত্রছাত্রীদের ছেঁকে তোলার জন্য উপকূল অঞ্চলের জেলেদের থেকে মাছধরার জাল ভাড়া করে আনে।
এখন দ্যাখো !! দুজনে রাম-রাবণ সেজে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। আর আমার পিছনে লাগার সময় এক গলায় জল যেন ঢাললে দুজনেরই তেষ্টা মেটে। থাক গে ,আজতো রিন্টুদার মজাটা দেখাই,তারপর একদিন ওকেও দেখবো।"
“দেখেছিস আমার বগ্গাটা কেমন একবগগা,এটা দিয়ে চাআআআআরটে ঘুড়ি-- বলতে বলতেই হঠাৎ অন্য একটা চাঁদিয়াল এসে রিন্টুদার বগ্গাকে এমন রদ্দা দিল যে সেটা কেটে গিয়ে গোত্তা খেয়ে একটা চালতা গাছে আটকে দোল খেতে লাগল।
তুই,তুইই অপয়া,তোর জন্যে ই আমার বগগাটা গেলো।
মাথাটা ঠান্ডা রেখে একটা চৌরঙ্গী ঘুড়ি হাতে ধরে বললাম,এইটা নাও ,আর আমাকে একটু ধরে দাও,ঐ চাঁদিয়ালটাকে এক্ষুনি কেটে উড়িয়ে দেবো।
অ্যাই চুপ করে লাটাই ধরে থাক, মাথা গরম আছে ,একদম জ্বালাবি না, আবার একটা গাট্টা খেয়ে যাবি।
নতুন করে ঘুড়ি জুড়ে ওড়াতে শুরু করেছে, ঘুড়িটা খানিকক্ষণ গোল গোল হয়ে উড়তে উড়তে হুইইইইইই করে অনেকটা উপরে উঠে গেল। ফরফর করে উড়ে যাচ্ছে ঘুড়ি।রিন্টু দা একবার সামনে এগোচ্ছে আবার পিছনে আসছে।কখনো ডাইনে,কখনো বাঁ দিকে পুরো যেন শিবের তান্ডব নৃত্য চলছে ছাদের উপর।
হুঁ,এখন আর মায়ের কানে কিছু ঢুকছেনা।
একফাঁকে আমার হাত থেকে লাটাইটা নিয়ে আপন মনে আগুপিছু করছে, কখনো লাটাই দুহাতে,কখনো কায়দা মেরে একহাতে ,সেই ফাঁকে ওর পেছনে ছাদের মেঝের উপর লুকিয়ে আনা বালতি থেকে মাঞ্জা দেওয়ার জন্য যে সাবুর আঠাটা বেঁচে ছিল তার সবটুকু উবুড় করে ছড়িয়ে দিয়ে বললাম , “আমি তাহলে এখন নীচে যাচ্ছি”
যা,যা,আর তোকে লাগবেনা।তুই থাকলেই আমার ঘুড়ি কাটা যাবে”
"আচ্ছা বাবা,একাই ওড়াও,তবে একটু কম লাফালাফি করো ,পড়ে যাবে যে"
"যা,যা তোকে অত বুঝতে হবেনা।" আকাশপানে তাকিয়ে বকেই যাচ্ছে........
দুটো সিড়ি নামতে না নামতেই বিশাল একটা আওয়াজ শুনতে পেল রিনি -ধড়াআআআম, তারপরেই ঠক্কাস।।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে রিনি গাইছে---
রেল গাড়ি ঝমাঝম.......পা পিছলে আলুর দম।ভোওওওওওওওওকাট্টা.....................।
0 মন্তব্যসমূহ