দর্পণ || কলমে এ কে আজাদ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে
এ কে আজাদ,  কবি, সাহিত্যিক,  গবেষক,  সমাজসেবী, পেশায় ব্যঙ্ক কর্মচারী।
জন্মস্থান : বগুরা , বাংলাদেশ 
একনিষ্ঠ নিরলস প্রচেষ্টায় সাহিত্য কর্মে নিজ প্রতিদান রেখে চলেছেন আন্তর্জাতিক স্তরে। 


এই তো যাযাবর জীবন


কেবল হাঁটছি তো হাঁটছিই!

হাঁটতে হাঁটতে কতদূর এগোয় মানুষ? 

না কি পেছনে ফিরে যায় উৎসমূলের দিকে?

কোত্থেকে আসে মানুষ? আবার কোথায় ফিরে যায়?


আচ্ছা - হেঁটে যেতে যেতে মানুষ কি পাখি হয়? 

উড়ে গিয়ে কি কোন বটগাছের শাখায় বসে?

নাকি কেবলই পালকেরা যায় খসে?


চলতে চলতে দুপায়ে যে কড়া পড়ল,

হাতের তালুতে লাগলো জীবনের কালি!

কিভাবে মুছে ফেলব এই কালি?


হাঁটতে হাঁটতে একটু জিরিয়েছিলাম এক বটগাছের নীচে,

ওখানেই তো হারিয়ে ফেলেছি ঘরে ঢোকার চাবি!

নিজের ঘরটাও কি পর হয়ে গেল তবে?

কোথায় যাবো তাহলে এখন? কোথায় থামতে হবে?


বন্ধুর পথ আর অলিগলি পারি দিয়ে 

বিশ্বাসের দড়ি ধরে হাঁটাই তো জীবন,

এ মাঠ থেকে থেকে ও মাঠে, এ ঘাট থেকে ও ঘাটে,

কখনও রৌদ্র ঝলমল, কখনও মেঘলা,

কখনও পথের সাথী মেলে, কখনও একলা,

এই তো যাযাবর জীবন! যায় আর আসে,

ফিক করে একটু হেসেই কান্নার জলে ভাসে।



এখানে মানুষের নামে হেঁটে যায় মানুষের কঙ্কাল 


এখানে এই রোদ পড়া বিকেল আজও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে,

কেবল বাতাসে সেদিনের হৈমন্তী সুর নেই। 

এখনো বুড়িগঙ্গা দাঁড়িয়ে আছে, কেবল নদীতে স্রোত নেই।

আজও হলদে পাখিটা ডেকে যায়, 

কিন্তু ধানের শীষ দোলে না দখিনা হাওয়ায়। 


এখানে কেবল জীবাশ্ম পড়ে আছে, সেই জীব নেই;

এখানে কেবল জিভ হেঁটে যায় মানুষের অবয়বে, 

কিন্তু সেই মানুষ নেই।


এখানে প্রাণ নেই, তাই প্রাণের সুর বাজে না,

এখানে গড়িয়ে যায় পৃথিবী, অথচ কাজে না।

জোর করে কুড়িয়ে রাখা এক পকেট রোদ আছে,

অথচ বিবেক কিংবা বোধ নেই।

এখানে ব্যথার ঋণ আছে, কিন্তু কোন শোধ নেই।


এভাবেই বিকেলের সূর্যটা অন্ধকারে মুখ লুকায়,

কোথাও কোন বাঁশিয়াল বসে সুরহীন কেবলই হাওয়া ফুঁকায়।


এখানে জীব আছে, অথচ কোন প্রাণ নেই,

এখানে কণ্ঠ আছে অথচ মায়াবী কোন গান নেই।

ধুলার মাঝে পড়ে আছে তানপুরা, অথচ কোন তান নেই।


এখানে কেবল  মানুষের নামে হেঁটে যায় মানুষের কঙ্কাল,

আর ভালবাসার নামে জমা হয় জীবনের যত জঞ্জাল!


বেহায়া এক সান্ধ্য-লগন


বড্ড বেহায়া এই সান্ধ্য-লগন 

পরজীবী ফুল খুঁজতে গিয়ে খুলে ফেলে লজ্জার অবগুণ্ঠন। 


বড়ই বোকা এই মালী- বোঝে না সম্পর্কের সমীকরণ!

বোঝে না - বিক্রি হওয়া গোলাপ চেনে না শেকড়ের টান!

তবুও প্রজাপতির ডানা মেলে খুঁজে ফেরে পাপড়ি-হৃদয়। 


আবেগের অবতলে থাকে না কেন্দ্রমুখী প্রতিবিম্ব।

তবুও কার যেন অদৃশ্য হাত ইশরায় ছুটে চলে সারাক্ষণ,

এভাবেই কত বার যে ভেঙেছে অবুঝ হৃদয়-নদীর কিনার! 

কতবার যে ভেঙেছে - প্রত্যাশার মিনার!


হৃদয়ের উষ্ণতার কোন দাম নেই মৃত মাছের চোখে,

হৃদয় ভাঙার কোন মানে নেই হৃদয়হীন কোন পরগাছার কাছে।


সুচতুর কাক বোঝে না - মানুষের আবেগের কী দাম,

বোঝে না - গভীর চোখের অতলে যে মানিক জমে থাকে

তার কী নাম।

সে কেবলই এক থালা নগদ উচ্ছিষ্ট চেনে।


তার কাছে একগুচ্ছ রজনীগন্ধার কোন দাম নেই,

পরম আবেশে মাটির বুকে চুমু দেয়া সুবাসিত শিউলির 

 কোন গ্রাম নেই।


এই তো এই সন্ধ্যা-প্রদীপ

মোহের আলো জ্বেলে আলোকিত করতে চায়

নি:সীম অন্ধকার,

একবারও ভেবে দেখে না- ভোঁতা বুকের ঘরে 

সারাক্ষণ তালা দেয়া থাকে,

হাজার টোকাতেও খোলে না সীসা-ঢালা বন্ধদ্বার!


চোখের ভেতরে বরফ গলে 


বহুদিন ধরে একটা নীলাম্বর ধরে আছি বুকের ভেতর,

সেই গগণে জ্বলজ্বল করে একটি  শুকতারা জ্বলে।

অথচ কি আশ্চর্য - একটু বৃষ্টির পরশেই 

সে তারা গলে পড়ে সমস্ত পৃথিবীর পরে!

এক পশলা বৃষ্টি শেষে আবার জ্বলে ওঠে হৃদয়ের ভেতর!

তাহলে ওটা কি তারা নয়? 

না কি বিশাল একখণ্ড বরফ জমে আছে সমস্ত হৃৎপিণ্ড জুড়ে?

এক ফোঁটা পানির পরশ পেলেই 

কেমন গলে গলে চুয়ে পড়ে চোখের অলিন্দ বেয়ে!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ