দর্পণ | সাপ্তাহিক সেরা নির্বাচিত পরিচালক কলম | কবিতা ও গল্প




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


অতিথি

দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য 


খিদেরা উদ্বিগ্ন হয় - ইচ্ছের নিয়মিত গতি।

আমি যে অবুঝ হয়ে রয়ে গেছি এখনও - 

পৃথিবীর অতিথি।


কতো বাসর জেগেছে আড়ালে, কতো উন্মাদনা, প্রশ্রয়।

এই ঘরে কেউ ফেরেনি কোনদিনই, তবু -

প্রতিদিন কোলাহল হয়।


আকাশকে আড়াল করে মেঘ , সূর্যালোকের স্বয়ংক্রিয় গতি,  

পরিচিতি সবকিছু নয় - 

নিজপথে হাঁটা, নেই ক্ষয়, নেই কোন ক্ষতি।


আজকে একসাথে মিলি, কালকে ঝঞ্ঝাট আশ্রয়। 

বোধেরও আত্মপ্রকাশ আছে, ব্রাত্য , তবু শব্দ হয় ।

=====================================

ফিরে ফিরে আসি

শিবাজী সান্যাল


জানিনা কি তোমার এই অভিমান 

না কি রাগ ? যতবার এসেছি কাছে

দূরে সরে গেছো । সেদিন সামনে আমাকে দেখে

তৃতীয় গানটি না গেয়েই মঞ্চ ছেড়ে নেমে গেলে। 

দূর থেকে তোমার খুশি দেখি , কত হাসো

মেতে থাক বন্ধুদের মাঝে। আর আমাকে দেখে

নিস্তব্ধ হয়ে যাও , ঝর্ণা থেকে শান্ত এক নদীর মত। 


আজকাল আর কষ্ট হয় না বিশেষ 

নিয়েছি মেনে , তবুও পারিনা রুখতে নিজেকে

বারবার ফিরে আসি তোমার অবহেলা পেতে। 


জানি একদিন কোনো জোনাকি সন্ধ্যায়

বৃষ্টি শেষে যখন পাতায় জলের শব্দ টিপ টিপ

চোখ বন্ধ করে ভাববে , এত লোকের ভিড়ে কেন

একজন ফিরে ফিরে আসে , কি আছে তোমাতে ?


সুর গীতবিতান , বলবে তোমার কানে কানে

এ যে ভালবাসা , রজনীগন্ধা , তুমি বুঝবি আর কবে ?


=====================================

বিস্ময়ের তানপুরা

জয়তী


আমাদের ভেতরে প্রতিটা অঙ্গের প্রকৃতি বিভিন্ন 

যেমন থাকে হাসির আলাদা দেহ, কান্নারও আর এক দেহ। 


তাদের ভ্রুকুটি, গভীর ব্যঞ্জনা, সুরের বিস্তার, রাগরাগিণী -

মনের গিরিগুহায় তীব্র কোমল ভঙ্গিমা -


সেই সব সাদা রুমালে ছাপা হয়ে থাকে ওদের বহু ব্যাকরণ -


জ্যামিতিকে বসে যারা বৃত্তের চারপাশে ঘোরে, 

বিশেষ ক্ষমতাধারী চৈত্রের সন্ন্যাসীর বেশে, লোহার শিঁক গেঁথে -


মেঘে মেঘে ওঠে কালবৈশাখী 

আকবরের রাজসভায় সেদিন তুমুল করতালি.. 


ঘোলা রোদের উল্টানো চাদর সরিয়ে;

পরিমার্জন করতে পারিনা সেই ভাষা কাকচক্ষু নদীতে -


যদিও শুনতে পাই, 

ওদের ঘরে কতক্ষণ দাঁড়াই?


=====================================

 টুকরো যাপন 

 অরিজিৎ

 

শব্দ করে প্রহর ভাঙো! 

তিন প্রহরা শরীরে -

মধ্যমা যৌবনের অন্তিম উজান! 

শব্দের পৃষ্ঠে শব্দ সাজিয়ে 

ভোরের দরজা খুলে অপেক্ষা করো আগন্তুকের। 

নৈবেদ্যের ডালিতে সাজতে গিয়ে নিঃশেষ, 

আয়নায় দ্যাখো দানের সাজ। 

প্রেমের ছন্দপতন সে কবিতা খাতায় ;

সেইখান থেকেই শুরু করো আবার -

তবু ভোরের ব্রহ্ম কমল হয়ে ফুটে থাকি, 

পাথর ছেনে দাঁড়িয়ে থাকি তোমার -

দেবালয় ঘিরে , শব্দযামে ছুঁয়ে যাই 

কাজললতার গলে পড়া অভিমান। 

                   

=====================================


এখানে মানুষের নামে হেঁটে যায় মানুষের কঙ্কাল 

এ কে আজাদ 


এখানে এই রোদ পড়া বিকেল আজও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে,

কেবল বাতাসে সেদিনের হৈমন্তী সুর নেই। 

এখনো বুড়িগঙ্গা দাঁড়িয়ে আছে, কেবল নদীতে স্রোত নেই।

আজও হলদে পাখিটা ডেকে যায়, 

কিন্তু ধানের শীষ দোলে না দখিনা হাওয়ায়। 


এখানে কেবল জীবাশ্ম পড়ে আছে, সেই জীব নেই;

এখানে কেবল জিভ হেঁটে যায় মানুষের অবয়বে, 

কিন্তু সেই মানুষ নেই।


এখানে প্রাণ নেই, তাই প্রাণের সুর বাজে না,

এখানে গড়িয়ে যায় পৃথিবী, অথচ কাজে না।

জোর করে কুড়িয়ে রাখা এক পকেট রোদ আছে,

অথচ বিবেক কিংবা বোধ নেই।

এখানে ব্যথার ঋণ আছে, কিন্তু কোন শোধ নেই।


এভাবেই বিকেলের সূর্যটা অন্ধকারে মুখ লুকায়,

কোথাও কোন বাঁশিয়াল বসে সুরহীন কেবলই হাওয়া ফুঁকায়।


এখানে জীব আছে, অথচ কোন প্রাণ নেই,

এখানে কণ্ঠ আছে অথচ মায়াবী কোন গান নেই।

ধুলার মাঝে পড়ে আছে তানপুরা, অথচ কোন তান নেই।


এখানে কেবল মানুষের নামে হেঁটে যায় মানুষের কঙ্কাল,

আর ভালবাসার নামে জমা হয় জীবনের যত জঞ্জাল!


=====================================


স্ফুলিঙ্গ 

সায়ন্তিকা 


স্ফুলিঙ্গের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা গাছ ,

তাদের যোনিতে বিষফোঁড়া !


উঠোনের একপাশে বিড়ালগুলো খুনসুটি করছে ,

পাঁচিলের ওপাশে শুধুই জ্বলছে স্ট্রিট۔লাইট !


আমি ঘরের সব আলো নিভিয়ে ছুটে গেছিলাম গাছেদের কাছে ۔۔۔۔


একটু জড়িয়ে ধরবে ? 


নিভু নিভু উপগ্রহের চারপাশে ঘোরা সৌরজগৎ থেকে বেরিয়ে আসে আলো ,

আমি মাপতে থাকি জীবনের পরিমাপ !


তারপর ,

ঘরের ধুলোগুলো জমতে থাকে ,

চিৎকার করে ডাকে জানলাগুলো !


পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় কুয়াশা !


গুমোট হয়ে আসে সমস্ত ঘরটাই ,

পুরোনো আসবাবের ঘুণপোকা একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে আমাকে !


উফফ ! কী অন্ধকার চারিদিকে !


দেয়াল বেয়ে ওঠা টিকটিকির সহমরণে সাক্ষী ۔۔۔

একমাত্র আমি !

ওরা সমকামী ছিলো !

ওরা ভালোবাসতো !


অথচ ۔۔۔

আমরা ভুলে যাই সব ۔۔۔


শুধু আমার পায়ের পাতায় ধুলো লেগে থাকে !


=====================================


প্রশংসিতা তুমি 

শুভ্রাপাল 


যে ব্যারিকেড পেরিয়ে গেলে অজ্ঞানতা দূরীভূত হয়; 

নারী, তুমি সেই গহীন অমাবস্যার রাত পেরিয়ে 

ছূঁয়ে ফেলেছো সে'ই গোপন দিব্য জ্যোতি স্তম্ভ ।


এখন তুমি ছুটে চলেছো উৎসের অভিমুখে, 

পেরিয়ে চলেছো ঘন পাইনের জঙ্গল -

পথের উর্বরতা ছূঁতে পাচ্ছে না তোমায় !

ছূঁতে পাচ্ছে না ধূর্তের ভ্রূকুটি লেহন! 

সরীসৃপের দল পথ ছেড়ে লুকিয়ে গ্যাছে কোথায় !!

অনুসন্ধানী দৃষ্টির প্রখরতা অবলুপ্ত ।


মুগ্ধ চোখে দেখছি কেবল চেয়ে --

নদীর মতো তোমার শান্ত - স্থির -অচঞ্চল রূপ, 

যেন সঠিক দিশার খোঁজ পেয়ে গ্যাছো তুমি, 

তাই বেগবতী স্রোতে অনন্য তুমি, অপরূপ ।।

=====================================

 চলতে চলতে 

 তন্ময় রাণা


ভালোবাসা আর আন্তরিকতায় ভরা 

কিছু টুকরো মুহূর্ত, 

কখনো কখনো মনকে বেশ,সতেজতায় ভরিয়ে দিয়ে যায় l 

হেমন্তের হিমেল সন্ধ্যায় সদ্য পড়তে থাকা 

হিমের মত 

ওগুলো আমি মেখে নিই গায়ে l 


যাযাবরিয়তা যখন মানুষের সহজাত ধর্ম 

সে তাড়নায়, 

প্রায়ই ঠিকানা বদলে যায়,ছুটে বেড়াতে হয় এক-

প্রান্তর থেকে আর এক,সম্পর্কের গাছে নতুন পাতা গজায়, 

তার শিকড় পৌঁছতে চায় আরও গভীর থেকে গভীরে 


পুরোনো সম্পর্কে যারা থাকতে চায় থেকে যায় বাকিরা, 

হেমন্তের খসে যাওয়া হলুদ পাতার মতো 

ঝরে যায় 

জীবনের ফেলে আসা বালুকা বেলায়l  


আতার খোলসের মতো এবড়ো খেবড়ো জীবনে, 

হাজার উৎকণ্ঠা,হিংসা,বিদ্ধেষ,হানাহানি 

আর লোভের মাঝেও,

নিজের অজান্তেই কখন যেনো সেই 

মুহূর্ত গুলো, 

মনের সুপ্ত কোনে চিরদিন স্মৃতির সম্পদ 

হয়ে থেকে যায়l

যা মন্থনে,অবিরল সুখামৃত হয়ে ঝরে,  

মনকে-

ভিজিয়ে দিয়ে যায় বারবার l 


=====================================

তোমার ফেরেমে

 মঙ্গল মিদ্যা (রিপল)

 


তোমার ফেরেমে হইচি মুই পাগল পারা,

কতবার খেলুম তোমার বাপ দাদার কাছে তাড়া।

পাড়ার দাদ্দারা করেদিলো মাথা নাড়া,

তবুও ভালোবাসি ওগো টাইটেল খাঁড়া।।


আলাদা করার যতই ফন্দি করুক ওরা,

ওদের ফাঁদে খাঁচায় ওরাই পড়বে ধরা।

আমার পিঞ্জরা তোমার ফেরেমে ভরা,

তোমার লগে আনিচি আস্ত গাছের তোড়া।।


তোমার ফেরেমে তুলে ছবি বাঁধাবো ফ্রেরেম,

দেখে সবাই বুঝবে আমার আছে কত্ত এলেম।

তোমার তরে বাড়িতে গাল মন্দ পিটুন খেলেম,

তবুও তোমার লগে ভালোবাসা রেখে দিলেম।।


তোমার পিছু সাইকেল নিয়ে কত্ত ঘোরা,

ইস্টাইল চুল উড়িয়ে আমি দেশি ছোঁরা।

পরামর্শ দিতে পাশে ছিলিস বন্ধু তোরা,

তাই তো বুক ফুলিয়ে তারে ফেরেম করা।।



=====================================

 

                  হরিজন 

                  রতন চন্দ্র রায়


      অবজ্ঞার চোখে দেখে সবাই 

      স্বার্থের পৃথিবীতে, 

             মায়ের লাশ কাঁধে করে 

             আমি চলে ছিলাম একাই শ্মশানে। 

       বিষাক্ত জলাভূমি পাড়ি দিয়েছি 

       মানুষহীন রাতের আধারে, 

              বিষাক্ত সাপ গিয়েছে 

              আমার অঙ্গবেয়ে জলের উপর দিয়ে।

       সমাজের মানুষগুলো কোন কারণে

       কপাট বন্ধ করেছিলো,

              আমার বিপদ দেখে।

              আমি তো কখনো থাকিনি 

                     চুপ করে বসে, কারো বিপদ দেখে। 

জাতের দোহাই দিয়ে

      কেউ এসে দাঁড়ায়নি পাশে 

      আমার দুঃসময়। 

            হরিজন বলে কি আমরা মানুষ না? 

পূজা অর্চনার সময় 

       মন্দিরে নেই ভেদাভেদ 

       ছোট বড় জাত নিয়ে। 

               পূজা শেষে সবাই অঞ্জলি নেয় 

               একই পুরোহিতের হাত থেকে। 

        তবু কেন অবুঝ মানুষ গুলো

        বুঝতে পারছে না 

                 জাতের দোহাই দিয়ে 

                 কখনো স্বর্গ পাওয়া যাবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ