ধারাবাহিক উপন্যাস || কংসাবতী (পর্ব-১৫) মহুয়া




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

কংসাবতী

 (পর্ব-১৫)

মহুয়া


"রিসিভড বিল" কাউন্টারে অপারেশনের করার টাকা হাতে নিয়ে অমল বাবু হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন । বুঝে উঠতে পারেন না টাকাটা কে দিল ? তাও এতগুলো টাকা যা শোধ করার ক্ষমতা কোনোদিনই হবে না ওনাদের । কলেজে একবার কথা বলা দরকার । কি মনে করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ ? টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করিয়ে দেবে ? 

----- নিরঞ্জন ,কাল একবার চিন্তার কলেজে যেতে হবে । তারপর যারা আমাদের মেয়ের এই অবস্থা করেছে তাদের নামে পুলিশে রিপোর্ট লেখাতে হবে । 

----- পুলিসে রিপুট করলে কি আমার বিটি সুস্থ হয়ে যাবে ? তা তো লয় । শুধুশুধু টানাটনি।

----- তুমি ডরাইছ ক্যানে ? ছেড়ে দিলে হবে না । একটা মেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে বলে তাকে কটূক্তি করে মেরেধরে প্রতিবাদ জানাতে হবে ? এত বড়ো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলে কিছু নেই ? কাল কিছু ছেলেমেয়ে এসেছিল কলেজ থেকে ওদের হাসপাতালে ভর্তি করার জন্যে ।ওরাই আলোচনা করছিল , "সংরক্ষণ প্রথার" আওতায় নাকি চিন্তাকে এত ভালো রেজাল্ট করিয়ে দিয়েছে । এটা কোনো শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের কথা ? সংরক্ষণের আওতায় পাস করা যায়। এত ভালো রেজাল্ট করা যায় কখনো ? আন্দোলন করতে হলে সরকারের বিরুদ্ধে করো , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলন , রাজনীতি এসব কেনো ? 

আমি ছেড়ে দেবো না ওদের । 

------ চলো চিন্তার কাছে যাই , যাবার তো সময় হয়ে গেছে তো । চলো চলো , কাইলকের কথা কাইল দেখা যাবে । এখুনো তো ভাল্য করে সাঁড় আসে নাই । কত কষ্ট হইছে বিটির আমার , বলতে গিয়ে গলা বুঁজে এলো  সুচেতার বাবার । 

----- চলো  চলো ।  কিন্তু এখন আর আই সি ইউ তে ঢুকতে দেবে না । বাইরে থেকে দেখতে হবে । ©️


পরদিন , যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ।

----- এই যে ভাই শুনছো , প্রিন্সিপাল স্যারের ঘরটা কোনদিকে ? 

------ এই সোজা গিয়ে ডানদিকে ঢুকে একটু এগিয়ে বাম হাতে

----- আচ্ছা , ঠিক আছে । ধন্যবাদ ।

----- অমল এই যে এদিকে 

----- স্যার আছেন ? 

----- এই কাগজের টুকরোতে আপনি আপনার নামধাম , কি কারণে দেখা করতে চান সেটা ।  

       লিখে দিন ।


চিরকুট টা নিয়ে লোকটা ভিতরে গেলো । তারপর তাড়াতাড়ি এসেই সুচেতার বাবা ও কাকাকে ভেতরে যেতে বললো । 

----- আসুন , আসুন বসুন । 

------ আমরা কেনো এসেছি নিশ্চয় জানেন আপনি ? এত বড়ো একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের হিংসার পরিবেশ থাকলে তো মেয়েদের পড়তে পাঠানোই তো সমস্যা । একটি আদিবাসী মেয়ে ভালো রেজাল্ট করলে তাকে এভাবে ফেলে মারা হবে ? তাকে কি না সংরক্ষণ প্রথায় ভালো মার্কস দেওয়া হয়েছে । ওর মেরিটের কোনো দাম নেই না ? আমাদের মেয়ের অপারেশনের বিল পে করে ভেবেছেন নিজেদের দোষ ঢাকবেন?  সেটা হতে দেবো না । আমি আজই থানায় এফআইআর করবো আপনাদের নামে । 

------- অপারেশনের বিল ? আমরা দিয়েছি ?? নাতো । তবে আমরা কলেজের তরফ থেকে কিছু হেল্প করবো সেটা ভাবা হয়েছে ।শুধু তো অপারেশন নয় , আর ও তো খরচ আছে । একজন মেধাবী ছাত্রীর জন্যে এইটুকু তো কলেজের তরফ থেকে করা যেতেই পারে ।

------ তাহলে বিল মেটাল কে ? এতটা টাকা !!!©️

------ সেটা বলতে পারবো না । ওরা দুজন ছিল একসাথে । প্রতুল বসু আর সুচেতা চক্রবর্তী । রেজাল্ট নিয়ে ছেলেমেয়েদের ভিতর একটা অসন্তোষ তৈরি হয়েছল । ওদের দেখে সেটা বেড়ে যায় । এর মধ্যে কলেজের কোনো ভূমিকা নেই । তবে যেটা হয়েছে তার জন্যে আমি দুঃখিত । সুচেতা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী । আমরা সবাই ই জানি যে কোটায় পাস করা যায় কিন্তু ভালো রেজাল্ট করা যায় না । হাসপাতালে ওদের ভর্তি করার পর কলেজ থেকে ৪/৫ জন টিচার গিয়েছিল দেখতে ।কোনোরকম টাকাপয়সা দেওয়া হয়নি । যে ঘটনাটা ঘটেছে  তার জন্যে আমি খুবই দুঃখিত । তবে থানা পুলিশ না করাই ভালো ।যারা এটা করেছে তারা হিট অব দা মোমেন্ট করেছে । কিন্তু থানায় গেলে ওদের নামের পাশে লাল কালির দাগ পড়বে সারাজীবনের মত ।  দয়া করে আর এফ আই আর করবেন না । কলেজের পরিচালন কমিটি অবশ্যই ওই সব ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে স্টেপ নেবে । ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি ,আপনাদের মেয়ে যেনো খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে ।আমরা আপনাদের সাথে আছি সব সময় ।

------ নমস্কার , উঠছি তাহলে । আপনার অনুরোধে থানায় গেলাম না । কিন্তু মনে রাখবেন ভবিষ্যতে যেনো এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে । ©️

প্রায় ২৩দিন পর সুচেতা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলো । অমল কাকার কাছে শুনলো , প্রতুলের খুব বেশি আঘাত লাগেনি । ওকে প্রাথমিক চিকিৎসা করেই ছেড়ে দিয়েছিল । বাড়ি ফেরার পর বারবার প্ৰতুলের কথা খুব মনে হতে লাগলো । কিন্তু কিভাবে যোগাযোগ করবে বুঝে উঠতে পারলো না । একটা ফোন নং অবশ্য আছে কিন্তু ফোন করতে হলে বাইরে বেরিয়ে বুথ থেকে করতে হবে । একটা একটা করে দিন কাটছিল সুচেতার আর ততই উৎকণ্ঠা বাড়ছিল । কলেজে তেমন বন্ধুবান্ধব কখনোই করে উঠতে পারেনি ও । দু একজন যাও আছে তারা প্রতুলের বাড়ি চেনে মনে হয় না । সুচেতা একটু সুস্থ হবার পর ওর বাবা এসে ওকে বাঁকুড়া নিয়ে গেলো । প্রতুলের সাথে দেখা হবার ক্ষীণ সম্ভাবনা ও রইলনা l কাল তবুও একটা চিঠি ই লিখবে সুচেতা । যোগযোগের শেষ চেষ্টাটা করে দেখতে হবেই । আর ভাবতে পারে না সুচেতা । কপাল টিপে ধরে শুয়ে পড়ে ।।


(চলবে)

আগের পর্ব পড়ুন ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ