পোস্ট বার দেখা হয়েছে
মানুষের দর্শন
দে বা শী ষ
এমন প্রজন্ম ধুলোমাখা পথ, রাষ্ট্র ভিক্ষা ঢেলে দেয় হেসে,
সমাজটা বদলাতে পারিনি কোনদিনই ভালোবেসে ।
শাসন এনেছে হাহাকার - দুর্বোধ্য কিছু আয়ু ,
জীবন বইতে বইতে নেই, কিংবা শেষ, 'পতা নহি কিঁউ '!
সময় খারাপ শুনে ঝাঁপ দিয়েছে দুচোখের পরিভাষা,
কিছুই থাকেনা চারপাশে যখন, কেবলই জেগে থাকে আশা।
আমরা যতটুকু জানি বুঝি রোজের নির্মাণ -
এখনও বুঝি সৃষ্টি হওয়া বাকি , মানুষের দর্শন।
হোঁচটে হোঁচট ভরে রোজের পথ চলা,
রোদের গল্প শুনে বড়ো হয় রাত্রির কথা বলা ।
এখনও যতটুকু বাকি , এখনও যতোটা এগিয়ে যাওয়া যায়,
হতাশার ঠাঁই নেই যেনো, আগামী জয়ের গান গায়।
যাহোক আজকেই হবে - ফেলে রাখা কাল - পরশু,
পৃথিবী মানুষ চিনিয়ে দেবে ঠিক, যেমন চিনেছি ক্রুশবিদ্ধ যীশু।
***************************************
আগের মত হয় না
শিবাজী সান্যাল
না , যেভাবে ভাবি তেমন কিছুই হয় না
মেঘ ছেয়ে যায় না , ঝমঝম বৃষ্টি
রাতকে আরও নেশাময় করে তোলে না ।
না , ছোটবেলার খুশির মুহূর্তগুলো
আর ফিরে আসে না। সেই অঢেল সময় ,সবুজ মাঠ
আকাশে ঘুড়ি , লিচু বাগান , ঝিলের সারস
সেই দিনগুলো আর ফিরে আসে না।
না , আগের মত বন্ধুও আর পাওয়া যায় না
তখন চোখ লাল হলে পাশে দাঁড়াতো
এখন জন্মদিনও মনে রাখে না
ফোন তুলে একটা কথাও বলে না।
না , এত আশা করার কোন মানে হয় না
সমস্ত কারণগুলোও অস্পষ্ট হয়ে গেছে
যতই কাটাই দীর্ঘ এই প্রতীক্ষার প্রহর
জানি তুমি আর ফিরে আসবে না।
না , কিছুই আর আগের মত হয় না।
***************************************
ফুটপাতের যীশু
জয়তী
ফুটপাতের শীত রাত্রি
তুষারপাতের অন্ধকারে জন্ম নিলো কয়েক লক্ষ যীশু,
মেরীর স্তনের গভীরে ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীর হাহাকার
গীর্জায় বারোর কাঁটায় শুরু হয় বড়োদিনের উৎসব-
সেই যীশুকে আজও ছুঁতে পারিনি
ওর কনকনে শীতের দিনের আগুন পোহাতে পারিনি-
রেল কামরায় ওর হাতে মুখে জুতোর কালি,
পড়ে থাকা বিকলাঙ্গ দেহে ক্ষুধার্তের করুণ আর্তি;
খুচরো পয়সায় দয়া দাক্ষিণ্যে ওদের উপোষী গান কিনি
পারিনি শীর্ণ হাড়ের কর্কশ শিঙায় শুদ্ধ স্বর জুড়তে -
পরম আত্মার কাছে যতবারই পৌঁছাতে চেয়েছি
ফুটপাতের নিয়ন আলোর নীচে দেখেছি উইলো পাতারা কাঁপছে জ্বরে,
কয়েকটা তারা বহুদূর- আকাশে জ্বলছে টিমটিম
বেথেলহামের নক্ষত্রের চোখ থেকে গড়িয়ে আসছে নোনা সিম্ফনি -
***************************************
টুকরো যাপন
অরিজিৎ
তোমার আলুথালু গালের প্রান্তসীমা ছুঁয়ে
জেগে আছে এক উন্নত বদ্বীপ।
চারপাশে তার সাগর বেলার বিস্তার!
নগ্ন হয়েছিলাম চরের শরীর জুড়ে
দিগন্ত বেলার একাকীত্বে বালিতে লিখেছিলাম
তোমার আমার নাম- প্রাণ ভরে।
সমুদ্রের গর্জনে পিছন পানে তাকাইনি আর
এভাবেই কত নাম ধুয়ে গ্যাছে ভাটার টানে।
জেগে থাকা বদ্বীপে এখন ঠোঁট রাখছি প্রয়োজনে!
অটোবায়োগ্রাফি ঘিরে এক নির্লজ্জ অস্থিরতা,
কফির কাপের ধোঁয়াশা চুমুকে চুমুকে গিলে নিচ্ছি,
ফেলে আসা পাপবোধ, ঢেকে দিচ্ছে আমার সবটুকু।
***************************************
লবঙ্গলতিকা
সায়ন্তিকা
পৌষাতুর হাওয়ারা পাঁচিলে ধাক্কা দেয় !
তছনছ হয়ে যায় শরীর ,
গাছগুলো দু পায়ের ফাঁকে জড়িয়ে রেখেছে সাপ !
বাকলে ঘষা লেগে উঠে গ্যাছে চামড়া ,
নাভির পাশ দিয়ে হেঁটে চলে যায় একটা অলস শহর !
শোলমাছের কাঁটা বিঁধে আছে ঠোঁটে ,
আশেপাশের মানুষগুলো আজও আগুন হয়ে ওঠেনি বলে , গাছেদের কোনো আক্ষেপ নেই !
সন্ধ্যের ভ্রুর মাঝখানে তিলক কেটে গ্যাছে গোধূলি ,
মেয়েটা সধবা হয়ে উঠলো ,
অথচ পাড়া প্রতিবেশীদের ভ্রূকুটিতে আজও তার ওপর মাস্টারি করে শীত !
গতি হারিয়ে ফ্যালে রাত ,
এ ঘর , ও ঘর ঘুরে কারা য্যানো দরজা আগলে রাখে ,
হাতে বোনা উলকাঁটায় শুধুই সাদা বুদ্বুদ !
আমরা কেউই জানি না ,
দূরে কোথাও একটা নীরবতা আছে ,
পাতা পোড়ার গন্ধের মতন প্রবল !
শীত আসলেই সাপটা পাঁচিল ডিঙিয়ে ঘরে ঢুকে পড়বে۔۔۔۔
একটা লবঙ্গলতিকা বেয়ে উঠে আসবে শেষ মুহূর্তের সুখ
কাছে একটা শঙ্খ বেজে চলেছে ۔۔۔۔۔۔
"এই তো সেই মুহূর্ত "!
গাছেরা এখনো পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছে ۔۔۔۔
পৌষের রোদ মাটি ভেদ করে শিকড় ছুঁয়েছে !
***************************************
পরিত্যক্ত
তন্ময় রাণা
বেখেয়ালে সহসাই চোখ চলে যায় l
দেখি আজও,
একলা দাঁড়িয়ে সে অসহায়!
একদিন সেখানে প্রাণ ছিলো কতো,
ছিলো
অবিরল কতো কলরোল,উত্তরের
সে জানালা বুঝি,
করে চলে তারই স্মৃতি মন্থণ l
গাঢ় হলুদ মাখা সকালের নরম
রোদ,এখনো-
রোজ জানালায়,আসে আর যায়!
স্নিগ্ধ বাতাসের দল,
শুধু বারে-বারে এসে কাকে যেনো তোমাকেই খুঁজে যায়!
বড়ো অবিশ্বাসী বৃষ্টির কণা গুলো যেনো,
নিশ্চিত হতে এসে জানলার কাঁচ
ঝাপটায় l
জীবন বয়ে চলে তার আপন ছন্দে নিজের মাদকতায়/
যাযাবরীয় প্রবণতায় জীবন
প্রবাহে,
মানুষের ঠিকানা বদলে যায়l
রাতের অন্ধকার কিংবা রোদ,ঝড় বৃষ্টি,আর-
একরাশ নিঃসঙ্গতা মেখে নিয়ে গায়ে !
উত্তরের জানালা,চিলে-কোঠার ঘর,
কিংবা
ঝুল বারান্দা গুলো,শুধুই একলা রয়ে যায়,
পুরোনো সে প্রাণের অপেক্ষায় /
***************************************
উপেক্ষিত কপাট
শুভ্রাপাল
রাত জাগা পথ হারানো পাখিটা, আশ্রয় নিয়েছিল মানুষটার কাঁধে,
মানুষের অবয়ব ছিল, আদতে মানুষ নয়,
শীত পড়েছিল খু'ব, নিরাশ্রয়ী মানুষগুলো সব কুঁকড়ে যেতে যেতে
একেবারে কুকুরকুণ্ডলি ।
উত্তরের জানলা দিয়ে ঢুকেছিল সে ; উড়তে উড়তে এসে পড়েছিল
উপেক্ষিত কপাট গোলে -- আসন্ন সন্ধ্যায় ।
প্রস্তর মানবের গায়ে আলোয়ান ছিল! কিন্তু ঢেকে দিতে পারেনি সময়!
লাঞ্ছিতার বয়ে যাওয়া রক্তে ভাসছিল চরম লাঞ্ছনার ইতিকথা !!
হয়তো চিৎকার করে বলতে চেয়েছিল সেই সময়ের একমাত্র সাক্ষী -
সব পুরুষ মূর্তির মতো স্থবির নয়,
কিছু কিছু পুরুষ মানবদরদী হয়,
মহিষাশূর আদতে মানুষই নয় ।
সব খেলায় কিস্তিমাত হয় না ।
পরিবারের অন্ন'জলের দায়িত্ব নেওয়া সাবলম্বী কন্যারা
মৃত্যু লেখায় লিখে যায় পুরুষের পরাজয় ।
পুরুষ কি সেটা বোঝে ???
0 মন্তব্যসমূহ