ধারাবাহিক উপন্যাস || কংসাবতী ( পর্ব -১৬) মহুয়া




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


কংসাবতী

( পর্ব -১৬)

মহুয়া 

স্যার হসপিটাল থেকে ফোন , কনস্টেবল এককড়ি বললো ।

------ হ্যাঁ দাও , বলুন ডক্টর । কি কন্ডিশন ওনাদের ? বাড়ির লোকজন কেউ এসেছে কি ? আসেনি ? কাল তো বললো আজ দুপুরের মধ্যে এসে পড়বে । ভদ্রলোকের মিসেসের কেমন অবস্থা ? জ্ঞান এসেছে ? তাহলে তো চিন্তার কথা । কোমায় চলে গেলে তো খুবই প্রবলেম ! এখানে তেমন infrastructure নেই যে বেটার চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে । ওকে , আমি বিকেলের দিকে যাবো । রাখছি বলে ফোনটা কেটে দিলেন অফিসার সুজয় ঘোষ । 

খুব চিন্তিত মুখে এককড়িকে বললেন , খুব সমস্যার কথা বুঝলে এককড়ি । ম্যাটাডোরটাকে ট্রেস করা দরকার । এতবড়ো একটা অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে গেলো অথচ আমরা গাড়িটাকে ট্রেস করতে পারলাম না এখনও । বিকেলে একবার ওই চায়ের দোকানে যেতে হবে । দোকানদারকে বলে রাখবে ও যদি দেখে গাড়িটাকে তাহলে যেনো জানায় । তিন চারদিনের মধ্যে দেখা গেলে বুঝতে হবে গাড়িটা এই এরিয়ার । আর বলতে হবে দোকানদারকে , ও যেনো গাড়ির নং টা দেখে  রাখে । 

বিকেল চারটের সময় অফিসার সুজয় ঘোষ বেরোলেন হসপিটালের উদ্দেশ্যে । খাতরা মহুকুমা হাসপাতালের সামনে ছোটখাট ভিড় দেখতে পেলেন। অফিসার গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়টা  অফিসারের দিকে এগিয়ে এলো । একজন লম্বা চওড়া ভদ্রলোক এগিয়ে এসে নমস্কার করে বললেন , আমি প্রমোদ বসু , প্রতুলের জেঠতুত দাদা । 

----- নমস্কার , আমি ইন্সপেক্টর সুজয় ঘোষ । আসুন আপনার ভাইকে দেখতে আসুন । ভালো রকমের ইনজুরি হয়েছে । বেশি ইঞ্জিওর্ড হয়েছে আপনার ভাইয়ের বউ । দুদিন হয়ে গেলো ,ওনার কিন্তু জ্ঞান ফেরেনি । আপনার ভাই একটু  আধটু সাড়া দিয়েছে । আসলে এখানে বেস্ট চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয় । ওনাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কলকাতায় বড় হসপিটালে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হয় । 

------ কিভাবে অ্যাক্সিডেন্ট টা হোলো  ? বলতে বলতে  ওয়ার্ডে ঢোকে  ওরা । ভাইয়ের অবস্থা দেখে খুব বিমর্ষ হয়ে গেল । ইন্সপেক্টর , কি কি ফর্মালিটি করতে হবে বলুন , আমি আমার ভাই  ও ভাইয়ের বউকে ইমিডিয়েট কলকাতা নিয়ে যেতে চাই । অ্যাম্বুলেন্স এখান থেকেই অ্যারেঞ্জ হয়ে যাবে আশা করি ।  আপনারা কি গাড়িটাকে সনাক্ত করতে পেরেছেন ? 

------- নাহ্ , কি করে করবো ? গাড়িটা তো মেরে বেরিয়ে গেছে । সেসময় রাস্তায় দু একজন লোক ছিল । বৃষ্টি  পড়ছিল তখন । গাড়ির নং টা সনাক্ত করতে না পারলে তো গাড়িটা ট্রেস করা যাবে না । তবুও দেখছি চেষ্টা করে । আচ্ছা আপনার ভাইয়ের বউএর নাম কি বলুন তো? ©️

------ মেরি , আসলে ও অ্যা্ংলো ইন্ডিয়ান । বাংলা বলতে পারে এবং সাজপোশাক ও বাঙালির মতো ।  খুবই ভালো মেয়ে। বছর দুয়েক বিয়ে হয়েছে ওদের ।  আপনাকে ছোট্ট করে আমার ভাইয়ের সম্পর্কে একটু জানাই । কারণ আমি তো ওদের নিয়ে বেরিয়ে যাবো । ভাই তো বিয়ে করতে চাইছিল না , কিন্তু আমাদের জোরাজুরিতে রাজি হয় । কানাডাতেই বিয়ে করে । দিন দশেক আগে এসেছে ইন্ডিয়াতে । কাকিমা মারা যাবার পর এই এলো । আসলে বি টেক করার পরেই ওকে কাকা বিদেশে পাঠিয়ে দেয় পড়াশুনোর জন্যে । তাছাড়া  যাদবপুর কলেজে পড়াকালীন ও একটি আদিবাসী মেয়ের খপ্পরে পড়ে যায় । শুনেছি সেও নাকি এই বাঁকুড়ার কোনো গ্রামের মেয়ে। প্রায় তিন চার বছরের প্রেম ছিল ওদের । কলেজে একটা ঝামেলায় পড়ে দুজনেই আহত হয়েছিল । তখন কাকিমারা জানতে পারেন ওদের এই সম্পর্কের কথা । আমার ভাই মেয়েটিকে বিয়ে করার জেদ ধরেছিল । বলেছিল , ওই মেয়েটিকে বিয়ে না করলে সে আর কাউকেই বিয়ে করবে না । সম্ভবতঃ কাকিমা ওকে দিয়ে কিছু প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিল যার ফলে ভাই আর ইন্ডিয়ায় আসেই নি দীর্ঘ বছর । পাঁচ বছর আগে কাকা এয়ার ক্রাশে মারা যান । বিদেশে যাবার পর সেই প্রথম ও দেশে আসে কাকার কাজ করার জন্যে । তারপর কাকিমা মারা যাবার পরেও আর আসেনি । আবার এত বছর পরে মেরির জেদে ও  এসেছে । লেক গার্ডেনের অত বড়ো বাড়ি পড়ে পড়ে খারাপ হচ্ছে । কদিন আগে আমাদের বাড়িতে দুজনকে নেমন্তন্ন করেছিলাম । তখন মেরি ই বললো বাঁকুড়ার আসার কথা । গাড়িটাও নতুন । এবার এসে কিনেছে । কিন্তু ওরা যে বাঁকুড়া চলে এসেছে তাতো জানতাম না l কাকা মারা যাবার পর যখন এসেছিল ,তখনও বাঁকুড়ায় এসেছিল । আমরা এসবই পরে কাকিমার কাছে জেনেছি । কাকিমার প্রতি টুবলুর খুব অভিমান ছিল । মৃত্যুর আগে কাকিমা বলে গেছেন । ©️

------- আপনার ভাই সুচি, সুচি বলে ডাকছিল , তাই ভাবলাম ওনার মিসেসের নাম বুঝি সুচি । 

ঠিক আছে আপনারা ব্যবস্থা করুন ওনাদের নিয়ে যাবার । আমি সুপারের সাথে কথা বলে নিচ্ছি । চিন্তা করবেন না  । আপনারা দুজন এসেছেন ? ওকে আপনারা সব অ্যারেঞ্জ করুন । আমি থানায় যাচ্ছি । কিছু প্রবলেম হলে জানাবেন । আমি অবশ্যই খোঁজ নেবো । 

---- আমাকে কি থানায় যেতে হবে কোনো ফর্মালিটি করতে ?

----- নাহ্ , আপাতত দরকার নেই । তবে ওনাদের জবানবন্দি তো নেওয়া হয়নি , তাই হয়তো আমাকেই কলকাতা যেতে হতে পারে । তবে ওনাদের আগে চিকিৎসার প্রয়োজন । আচ্ছা আসি ।

 থানায় ফিরে অফিসার বেশ চিন্তান্বিত মুখে পায়চারি করতে লাগলেন । 

------ বুঝলে এককড়ি, ব্যাপারটা বেশ ঘোরালো হয়ে উঠছে । যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে বাঁকুড়া , আদিবাসী মেয়ে ? অতদিন আগে আদিবাসী একটি মেয়ে যাদবপুরে পড়তে গিয়েছিল ? ভারী আশ্চর্য !! বিদেশ থেকে আসলেই বাঁকুড়ায় আসা ?  বোঝা যাচ্ছে বাঁকুড়ার সাথে একটা পুরনো সম্পর্ক আছে প্রতুল বাবুর । সেটা কি ?


(চলবে ) 

আগের পর্ব পড়ুন ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ