পোস্ট বার দেখা হয়েছে
■কবিতা■
ময়ূরাক্ষীর জলে
শিখা পাল
ময়ুরাক্ষীর কাক চক্ষু জলে
অমলতাস রোদ্দুর খোঁজে গোধূলির অন্তমিল।
পাখিদের এখন ঘরে ফেরার খুব তাড়া ;
কিন্তু বুকের ভেতর পোষা পাখিটার আবার ভাঙ্গা ডানা!
সে তো উড়তে-ই পারেনা !
তুমি সাক্ষী থেকো ময়ুরাক্ষী --
সে শুধু ঢেউ গোনে, -- তোমার প্রতিটি ঢেউ,
বিষন্ন বিকেল জানে, আসন্ন সন্ধ্যা জানে --
ডানা ভেঙে যে গেছে, সে খুব কাছের কেউ !
তোমার অবাধ্য স্রোতে ভেসে যায় খড়কুটোর মতো
আমার নাগরিক গেরস্থালী জীবন ;
আমার কোন বন্ধু নেই, ঘর নেই,
আমি শুধু খাঁ খাঁ শূন্যতায় ভাঙচুর হই,
প্রবল বৃষ্টিতে ভিজি সারাক্ষণ ।
শরীর জুড়ে উঠুক ঝড়, সব তছনছ হোক,
ময়ূরাক্ষীর বুকে তখন সাত সমুদ্র ঢেউ --
তেরো নদীর বন্যা এসে চোখ দুটো -তে মেসে,
কূল হারানো প্রশান্ত প্রদোষে ।
এই যে জলে ছবি আঁকা --
এই যে এতো লিখে রাখা --
এই যে এতো বিষাদ রাখি মুঠোয় ;
নদীর জলে একফালি চাঁদ
ব্যাথার আবাদ লুকোয় ।।
**********************
এ শহর
রাজর্ষি দত্ত
সাজানো গোছানো বুলেভার্ড
কেয়ারি সবুজ ঘাসের আইল্যান্ড
সযত্নে লাগানো ফূলের বাহার ...
কয়েকটা কোকিল বসেছে ...
ঘোষিত বসন্তের বজ্র নির্ঘোষ !
এ শহর মিছিলের ,
পদযাত্রার এ শহর ----
জেরুজালেমে নিষ্পাপ শিশু
ক্ষেপণাস্ত্র আক্রান্ত হলে
এ শহর কেনো কাঁদে ?
কতো কাশিপুর এ শহর দেখেছে ,
দামাল শিশুরা সব লাশ হয়ে গেছে
কেউ কেউ কোথায় পালিয়ে গেছে ---
স্বপ্নের চোখগুলো হারিয়ে গিয়েছে !
এ শহর শোকে পাথর হয়েছে ,
তবু অহল্যার তপস্যা করেছে
তপস্বী তরঙ্গিনী কল্লোলিনী এ শহর
প্রেম স্পর্ধিত বুকে উজ্জ্বল বিভোর!
**********************
সভ্যনামিক
অসীম দাস
রাত্রি হাঁটে নিলাজ ঘুমের পথে
ভোরের আগায় বিলম্বিত শ্বাস ,
শান্তি জেগে সপ্ত ঘোড়ার রথে
ফেরাও কবি হারানো বিশ্বাস ।
পূর্বসূরীর আমন্ত্রিত ভুল
ভুখ- জনতা কেমন করে শুধি ,
সীমান্ত দাগ ভাঙছে ভাঙা কূল
সভ্যনামিক নিতান্ত বুদবুদ-ই !
যাচ্ছে সরে বসত- মায়া মাটি
পড়শী পরশ আস্থা পরম্পরা ,
যৌথ শ্রমের যত্নে শীতলপাটি
আসছে নেমে নবান্ন-ভুক খরা ।
সাগর কোলে অনুপ্রবেশ হাসি
পরাগ মৌ এর ঐক্যতানে মধু ,
কুম্ভে ছিল বিভেদ সর্বনাশী
ফেরাও কবি নিশান্তে দিগ-বধু ।
**********************
The present waiting.
Emanuele Cilenti
Talk to me o moon
I am curled up on this bench
I wait for my love
With a cramp in the heart
Only raindrops to keep me company
On this long autumn night.
Talk to me o moon
I await you anxiously
While I listen to the melodious verse
Of a curious owl
They say that waiting is a pleasure
.but today I am close to sorrow
Never to see her again.
Listen to me or stars
You who are her sisters
Tell me its flight
Where did it stop
I could reach it
On my winged steed.
I'd have them read
This parchment
That I hold in my hand
A poem written in my blood.
.but as I think back to the drafting of the text
Here it comes
The wait is over
The pain has passed
Thank you my moon that you have me
Taught to love.
**********************
ছায়াসঙ্গী
মধুপর্ণা বসু
আমিতো ছায়াকে হারিয়ে ফেলি কতবার
ভীষণ ভয়াবহ সে সব দাহ্য দুপুর।
কোথাও কোন শান্তিজল ঝরে পড়েনা
মকরের মুখে,
গলায় আকণ্ঠ তেষ্টা ডুবে থাকে কোশা কুশির
হরতুকি শিরায়,
নির্জলা সেযব একাদশী নারায়ণ শিলার
চৌকাঠ ছুঁয়ে,
তারপর সন্ধ্যের নিভু নিভু আলোয়,
পায়রার বাসায় ফেরার মতো ছায়া
সঙ্গী খুঁজে ফিরে আসে
আমার চারচালায়।
ক্লান্ত বুকে আশ্রয় নেয় একা,
চোখে আশ্চর্য নিরাসক্তি আর হতাশা,
সে আমার আত্মার দ্বিতীয় মানুষ।
**********************
■গল্প■
শেষ কলামে
সোমনাথ ঘোষাল
আমার পুরোনো বাসা বদল করতে গিয়ে ভাঙা ট্যাঙ্কের অনেক আবর্জনার মাঝে আমি তোমার ডায়েরিটা খুঁজে পেলাম অনেক অনেক বছর পরে !!! এখন তার ওপর বেশ ধুলো জমেছে, ওপরের লাল সুন্দর কভারটা অবহেলায় কালচে হয়েছে।
সবাই এখন খুব ব্যস্ত, আমার আসবাবপত্র গুলো টেনে হেঁচড়ে ঘর থেকে বাইরে বের করে বড় গাড়িতে তুলছে। আমার ছেলের নতুন 3BHK ফ্ল্যাটে সেগুলো নিয়ে যাবে বলে। আর আমার ঠিকানা হবে বৃদ্ধাশ্রমে।
আমার পরনে সাদা থান কাপড়ের আঁচল দিয়ে, খুব যত্নে, আদরে আমি তোমার ডায়েরিটা বেশ কয়েকবার মুছলাম। তারপর সেটা সবার অলক্ষ্যে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। কেমন আছো তুমি অরুণ ???
আজ কতগুলো বছর পর, জীবনের বেলা শেষে এই ডায়েরিটা তোমাকে মনে করিয়ে দিলো !!!
এখন আমার হাতে অনেক সময় বিনা ব্যয়ে বয়ে যায়। কত সম্পর্কের ভাঙা গড়ায় আমার জীবন এগিয়ে চলেছে। আজ এতগুলো বছর পরে আমি ফুরসৎ পেয়েছি তোমার ডায়েরিটা পড়ার। খুব কৌতুহল ছিল, ওটার পাতায় পাতায় কি লেখা আছে। কিন্তু সময় হয়ে ওঠেনি। সেই বিয়ের দিন রাত থেকে আর আজ এই বর্তমানে, আমি এই সংসারের জাতাকলে শুধু পেশাই হয়েছি। এই এক ঘর, এক দোরে ভরা সংসারে স্বামী, সন্তানদের নিয়ে শুধু ব্যস্ততায় ভর দিয়ে সময় কেটে চলছিলো। এখন আর কেউ নেই আমার পিছুটান। স্বামী গত হয়েছে এই এক মাস সবে হয়েছে। সন্তানেরা সবাই এখন স্বাবলম্বী, আমার প্রয়োজন তাদের কাছে ফুরিয়ে গেছে !!!
কি লিখেছো অরুণ এই ডায়েরিতে ???
সেদিন গোধূলি বেলায় বিয়ের সময় আমি যখন ছাদনাতলায়.....
বর বড় না কনে বড়,
ছাদনাতলায় তুলে ধরো।
শুভ দৃষ্টির সময় মুখ থেকে পান সরিয়ে আমি বরের মুখ দেখতে গিয়ে তোমার চোখে চোখ পড়লো। তুমি তখন আমার বরের গা ঘেষে দাঁড়িয়েছিলে। তোমার চোখে নীরব চাউনি,
আমার আজও মনে আছে।
তারপর মালাবদল, সিঁদুর দানের পর, বিয়ের সমস্ত কাজকর্ম সারা হলে বরের সঙ্গে আমি যখন বাসর ঘরে বসে আছি, ঠিক তখনই তুমি আমার কাছে এসে সুন্দর রঙিন কাগজে মোড়া এই ডায়েরিটা আমার হাতে দিয়ে বলেছিলে, "সময় পেলে পোড়ো একবার",
আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, সে কি করুন চাউনি তোমার, কত যন্ত্রনা বুকে জমে আছে, কত রাত না ঘুমোনোর কালশিটে দাগ চোখের নিচে। চকচকে চোখের তারায় ভাঙা স্বপ্নের নোনা জলের ছিটে।
আমার বাঁধ ভাঙা মনে তখন শুধু শ্রাবনের জলোচ্ছাস। তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে আমি সবার সামনে মুচকি হেসে বলেছিলাম, যাবার সময় খেয়ে যেও......
তুমি কেমন আছো অরু ???
কোথায় থাকো এখন ???
আগে যেখানে ছিলে, সেই গোয়াল পাড়ার খাটালের পেছনে মাটির ঘেরা ঘরে ???
নাকি বিশাল বাড়ি অট্টালিকার মাঝে ???
আমায় মনে পড়ে এখনো ???
আগের মতো খাতার পাতায় আমাকে নিয়ে কবিতা লেখো ???
জানি সে সবের এখন সময় কোথায় !!! আমার মতো স্বার্থপর মানুষের খবর রেখে লাভ কি আছে বলো !!!
সত্যি আমি সেদিন নিরুপায় ছিলাম তাই তোমার হাত ধরিনি।
কিন্তু তুমি আমার আর একটি বারের জন্য খবর রাখনি। এত অভিমান আমার প্রতি।আমার যন্ত্রণার কথা জানতে চাওনি, যে কি করে প্রতিটা রাত এক অচেনা পুরুষের সঙ্গিনী হয়েছি, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, সে এক নীরব যন্ত্রনায় ভোর হয়েছে।
এই অরু আমার মত তোমার চুলেও কি পাক ধরেছে ??? নাকি সেই কালো কুচকুচে এক রাশ ঝাঁকড়া চুল সারা মাথা জুড়ে রয়েছে ???
তুমি কি আগের মত মাংসের হার চিবিয়ে ধুলো করে দিতে পারো ??? নাকি আমার মতো দাঁতগুলো সব হারিয়ে ফোগলা হয়েছ ???
আর তোমার হাসি, আগের মতোই হাসো, সেই প্রাণোচ্ছলে ??? নাকি আমার মতো হাসতে ভুলে গেছো ???
আজ বড় তোমায় দেখতে ইচ্ছে করে।
জানি জানি সে রাতের পর তুমি নিজেকে পাল্টিয়ে নিয়েছো। তোমার পিঠে হাত রেখেছে সুন্দরী কেউ, যে এখন তোমার বউ !!!
তুমি খুব ভালো বাসো না তাকে ???
খুব ভালো আছো না অরু ???
সুন্দর সুখে সংসার করছো, সবাইয়ের চিন্তায় সারাক্ষন তুমি অস্তির, শুধু আমি তোমার চিন্তা থেকে তোমার মন থেকে তোমার ভালোবাসা থেকে হারিয়ে গেলাম, আমারই ভুলে, আমারই অসহায়তায়।
এবার খুলছি অরু তোমার ডায়েরি। এতো দিনে তোমার প্রতীক্ষার অবসান ঘটাবো। দেখি কি লিখেছো তুমি আমায় নিয়ে। কত ভালোবাসা ছিল আমার প্রতি। এখন এটাই তো আমার শেষ সম্বল।
বা, বাঃ, ডায়েরির প্রথম পাতায় আমার নাম,
"সায়ন্তিকা" তারপর দেখি....
একি !!! আরে !!! আর তো কিছুই লেখা নেই !!!
শুধু সাদা পাতা !!! একি এ আবার কি !!!
সারা ডায়েরিতে কিছুই লেখা নেই !!!
ওঃ না, এই শেষ পাতায় শুধু লেখা আছে, দেখি পড়ি....
"তোমার সারা বেলার শেষে
যখন পড়বে আমায় মনে,
হারিয়ে যাবো দূর আকাশে
শুধু থাকবো স্মৃতির কোণে".......
অরুণাভ
1 মন্তব্যসমূহ
অভিনন্দন সবাইকে
উত্তরমুছুন