কংসাবতী (পর্ব--১৯) মহুয়া




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

কংসাবতী

(পর্ব--১৯)

মহুয়া


দুদিন স্কুলে যায়নি সুচেতা । আজ যেতেই হবে , সামনেই মেয়েদের পরীক্ষা । তাছাড়া ব্লক উন্নয়ন অফিসেও একদিন যেতে হবে মনে পড়তেই প্রতুলের কথা মনে হোলো । আজ স্কুলে গেলেও  বড়দিকে  বলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়বে ভাবতে ভাবতে তৈরি হতে থাকলো ।

----- শুন দিদি , বুড়হার  ব্যথার ওষুধ শেষ হয়ে গেছে , আইনতে হবে 

----- হুম , ঠিক  আছে । নিয়ে আসবো । আর তুই টিভির ভিতরে মুখ গুঁজে থাইকবি লায় । ©️

আমি আসেছু , দরজা লাগায় দে ।

অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকে সুচেতা মন ঠিক করে কাজ করতে পারছে না । বারবারই হাসপাতালে গিয়ে প্রতুল কে দেখে আসতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু যেতে পারছে না । কোথায় যেনো একটা বিতৃষ্ণা পা টেনে ধরছে । ভালোবাসা আর বিতৃষ্ণা দুটোই প্রবলভাবে মন আর মাথাকে আঘাত করছে । স্কুলের প্রচুর কাজ , কিছুতেই করে উঠতে পারছে না । ইচ্ছে করছে কংসাবতীর বুকে মাথা রেখে অঝোরে কাঁদতে । আজ বড্ড মায়ের কথা মনে হচ্ছে সুচেতার । বুকের ব্যথাগুলো উজাড় করে ঢেলে দেবার আজ আর কেউ নেই ওর পাশে । বড্ড একা লাগে । অথচ জীবন টা তো এমন হবার কথা ছিল না । ছোট থেকে আর্থিক কষ্ট সহ্য হয়ে গিয়েছিল । তখন মনে হতো বড়ো হয়ে চাকরি করে অনেক টাকা রোজগার করবে , করেছে ও ।কিন্তু সুখশান্তি কোনোটাই পায়নি । সেই যে পনের বছর আগে  কলেজের  অ্যাক্সিডেন্ট টা ওর জীবনের সব সুখ ছিনিয়ে নিয়েছিল , তারপর থেকে খালি একটা মুখের আশায় বেঁচে ছিল ।সে হোলো প্রতুল । কিন্তু হঠাৎ করে যে ও আবার প্রতুল কে দেখতে পাবে তাও আবার সুখী বিবাহিত রূপে তা ও স্বপ্নেও ভাবেনি । প্রথমে ভেবেছিল ভুল দেখছে , তারপর যা দেখলো তাতে ওর পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছিল । সুন্দরী বউ নিয়ে সুখী প্রতুল বেড়াতে বেরোচ্ছে । সহ্য হয়নি সে দৃশ্য । তখনও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না যতক্ষণ পর্যন্ত হোটেলের ম্যানেজার  ওকে ডিটেইলস না জানিয়েছিল । না পারেনি সহ্য করতে প্রতুলের এই দ্বিচারিতা । হাজার হাজার প্রশ্ন মনে ভিড় বাড়িয়েছিল । সেদিন পা দুটো বাড়ি অবধি টেনে আনতে হাজার মাইল অতিক্রম করতে হয়েছিল । তারপর , তারপরই ও ঠিক করে প্রতুলের পাশের জায়গাটার অধিকার কোনোমতেই ছাড়বে না ।  ওই জায়গাটা যদি ওর না থাকে তাহলে আর কারো ও হবে না ।©️ প্রতুলের দেওয়া হারটা ফিরিয়ে দিয়ে এসেছিল হোটেল ম্যানেজারের হাত দিয়ে ।  সঙ্গে একটা চিঠিও দিয়ে এসেছিল ।  সেদিনই ঠিক করেছিল যেমন করে হোক প্রতুলকে ওর চাই , যে কোনো মূল্যে । গতকাল জিপের ভেতর ইন্সপেক্টরের হাতে হারটা দেখে ঘামতে শুরু করেছিল , ভাগ্যিস ইন্সপেক্টর খেয়াল করেননি । করলে দেখতে পেতো হেরে যাওয়া মানুষের রক্তশূন্য মুখ । হঠাৎ খেয়াল করে ও হাসপাতালের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । কখন যেনো স্কুলের পথ ভুল করে হাসপাতালে চলে এসেছে সুচেতা । গেটের ভেতর বেশ কিছু মানুষের ভীড় । গেটের পাশে পুলিশের জিপ দাঁড়িয়ে আছে । সুচেতা এনকোয়ারি তে  গিয়ে খোঁজ নিলো । শুনলো প্রতুলের বাড়ির লোক এসেছে ওদের কলকাতায় বড় হাসপাতালে  ট্রান্সফার করা হবে । প্রতুলের একটু আধটু  হুঁশ আসলেও ওর মিসেসের একেবারেই জ্ঞান আসেনি । একরকম আছে প্রথমদিন থেকে । ডাক্তার ও কোনোভাবে আশার কথা শোনাননি । আবার মনে হলো প্রতুল কে ওর থেকে দূরে নিয়ে যাবার জন্যেই এইসব ব্যবস্থা হচ্ছে । সবার নজর এড়িয়ে মাথায় বড়ো ঘোমটা টেনে সুচেতা ঢুকে গেলো হাসপাতালের  আট নং কেবিনে । প্রতুলের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো , গালে গাল রাখলো , প্রতুল কঁকিয়ে উঠলো ,"সুচি" । সুচেতা অস্ফুটে বললো ,"তুমি ফিরে আসবে , তোমাকে আসতে হবে " । সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে ঘোমটা মাথায় দিয়ে সুচেতা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো । ©️

হাঁটতে লাগলো অনির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে  অন্যমনস্কভাবে । হঠাৎ একটা বাইক আচমকা ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে গেলো আর সুচেতা পড়ে গেলো রাস্তায় । একটা ছোটখাট ভিড় জমে গেলো । সুচেতা তাড়াতাড়ি ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বাইকওলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল । একটু পায়ে চোট পেলো । আস্তে আস্তে ভিড় হালকা হয়ে গেলো । সুচেতা একটা রিক্সা ডেকে চড়ে বসলো । যেতে যেতে ওষুধের দোকান থেকে বাবার জন্যে ওষুধ নিলো । আবার সেই দিনের পুনরাবৃত্তি হোলো , যেদিন প্রতুলের মা ফোনে বলেছিল , " প্রতুল বিদেশে চলে গেছে " । আকাশের দিকে মুখ করে অস্ফুটে বললো , খারাপ দিনগুলো কেনো বারবার ফিরে আসে , ভালো দিনগুলো একবারও ফেরে না ?? হঠাৎ আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে ।।

(চলবে)

আগের পর্ব পড়ুন .......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ