গৌতম বুদ্ধের বিখ্যাত বাণী ও উক্তি




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে যারা প্রতিবাদী ধর্মকে ভারত তথা বিশ্বে সর্বাধিক জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন গৌতম বুদ্ধ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।  বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রন্থ যেমন "জাতক", "সূত্তনিকায়", "মহাবংশ", "দীপবংশ", "ললিতবিস্তার", "বুদ্ধচরিত", প্রভৃতি থেকে গৌতম বুদ্ধ ও তার প্রবর্তিত বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।

বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে নেপালের তরাই অঞ্চলের কপিলাবস্তুর লুম্বিনী উদ্যানে শাক্য নামে এক ক্ষত্রিয় রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শুদ্ধোধন ছিলেন কপিলাবস্তুর রাজা। তার মায়ের নাম ছিল মায়াদেবী। বুদ্ধের জন্ম তারিখ সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও অধিকাংশ ইতিহাসবিদ 566 খ্রিস্টপূর্বাব্দকে গৌতম বুদ্ধের জন্মকাল হিসাবে মেনে নিয়েছেন।

রাজকীয় বিলাস-বৈভব গৌতম বুদ্ধের মনকে মোটেই আকৃষ্ট করতে পারেনি। মানবজীবনের হতাশা, দুঃখ, জরা-ব্যাধি প্রভৃতির চিন্তা তাকে আকুল করে তোলে। তিনি সংসার সম্পর্কে ক্রমে উদাসীন হয়ে পড়লে পিতা শুদ্ধোধন মাত্র 16 বছর বয়সে তাঁকে গোপা বা যশোধরা নামে সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন। ক্রমে সংসার জীবনে দুঃখ, জরা-ব্যাধি এবং মৃত্যুর বিষয়গুলি গৌতম বুদ্ধকে খুব ভাবিয়ে তোলে। বৌদ্ধধর্মে এই তিনটি বিষয়কে "ত্রিতাপ" বলে। মানবজীবন থেকে "ত্রিতাপের যন্ত্রণা" মোচনের জন্য তিনি উদ্গ্রীব হয়ে ওঠেন। 29 বছর বয়সে রাহুল নামে তার এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। গৌতম সংসারের মায়ার বন্ধন ছিন্ন করতে রাজকীয় ঐশ্বর্য, পুত্র রাহুল ও স্ত্রী যশোধরাকে ত্যাগ করে একদিন গভীর রাতে তিনি গোপনে গৃহত্যাগ করেন। তাঁর এই গৃহত্যাগের ঘটনা "মহাভিনিস্ক্রমণ" নামে পরিচিত।

গৃহত্যাগের পর গৌতম বুদ্ধ দীর্ঘদিন কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন ও তপস্যার পর দিব্যজ্ঞান লাভ করেন এবং "বুদ্ধ" বা "মহাজ্ঞানী" হয়ে ওঠেন। এসময় থেকে তিনি "গৌতম বুদ্ধ" বা 'তথাগত' নামে পরিচিত হন।

দিব্যজ্ঞান লাভের পর গৌতম বুদ্ধ মানবকল্যাণের কথা ভেবে তাঁর মতাদর্শ প্রচার করেন। তাঁর বাণী ও উক্তিগুলি আজও মানব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তারে সক্ষম।

বর্তমান পটভূমিতেও যা আলোচনা জীবন বদলে দিতে পারে।  আজ উপস্থাপন করবো গৌতম বুদ্ধের নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উক্তি ।

গৌতম বুদ্ধের বিখ্যাত বাণী ও উক্তি :- 


★”প্রত্যেক অভিজ্ঞতা কিছু না কিছু শেখায় । প্রত্যেক অভিজ্ঞতাই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমরা আমাদের ভুল থেকেই শিখি।”

★ ”অতীত নিয়ে বিভ্রান্ত হয়োনা, ভবিষ্যতের স্বপ্নে হারিয়ে যেওনা, বর্তমানের দিকে মনোযোগ দেও। এটাই সুখী হওয়ার একমাত্র উপায়।”


★ ”চিন্তার প্রতিফলন ঘটে স্বভাব বা প্রকৃতিতে। যদি কেউ মন্দ অভিপ্রায় নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে দুঃখ তাকে অনুগমন করে। আর কেউ যদি সুচিন্তা নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে সুখ তাকে ছায়ার মত অনুসরণ করে।”


★ “জীবনে যতই ভালো বই পড় কিংবা ভালো উপদেশ শোনো না কেন, কিন্তু যতক্ষণ না তুমি সেইসবের থেকে পাওয়া তথ্যগুলোকে নিজের জীবনে ব্যবহার না করছো; ততক্ষন অবধি সেইসবের কোনো মূল্যই নেই।”


★ ”তুমি যা ভাবো সেটাই হও, যা অনুভব করো সেটাই আকর্ষণ করো, যা কল্পনা করো তাই সৃষ্টি করো।”


★ ”রেগে যাওয়া, কোনো জলন্ত কয়লাকে অন্যের গায়ে ছোঁড়ার জন্য সেটাকে ধরে থাকার মতোই সমান হয়ে থাকে | এটা সবার প্রথমে তোমাকে জ্বালাবে” 


★ “একটা শুদ্ধ এবং নিস্বার্থ জীবনযাপন করার জন্য একটা ব্যক্তিকে, সবকিছুর মধ্যেও কিছুই নিজের না; এই ভাবনা রাখতে হবে।”


★ “তোমার কাছে যা কিছু আছে, সেগুলোকে কখনোই অন্যের কাছে বাড়িয়ে বলোনা আর অন্যকে দেখে ঈর্ষাও করোনা । যে অন্যদের দেখে ঈর্ষা করে, সে কখনোই মানসিকভাবে শান্তি পাবেনা।”


★ ”যার সূচনা আছে তার সমাপ্তি আছে। এটা বুঝতে শিখলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”


★ ”আসক্তিই দুর্ভোগের মূল কারণ।”


★ “চিন্তার প্রতিফলন ঘটে স্বভাব বা প্রকৃতিতে। যদি কেউ মন্দ অভিপ্রায় নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে দুঃখ তাকে অনুগমন করে। আর কেউ যদি সুচিন্তা নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে সুখ তাকে ছায়ার মত অনুসরণ করে।”


★ ”মন ও শরীরের পক্ষে সুস্থ থাকার রাস্তা হলো – অতীতের জন্য শোক না করা আর ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা না করা। বরং বুদ্ধি ও সৎভাবের দ্বারা বর্তমানে বাঁচার চেষ্টা করা।”


★”একটা প্রদীপের মাধ্যমে হাজারটা প্রদীপকে জ্বালানো যেতে পারে কিন্তু তাতে সেই প্রদীপের আলো কখনোই কমে যায়না। ঠিক সেইভাবেই খুশিকে সবার সবার মাঝে ছড়ানোর দ্বারা খুশি কখনোই কমে যায়না বরং বেড়ে যায়।”


★ ”অন্যকে কখনও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করো না, নিয়ন্ত্রণ করো কেবল নিজেকে।”


★ ”আলস্য ও অতিভোজের দরুন স্থূলকায় নিদ্রালু হয়ে বিছানায় গড়াগড়ি দেওয়া স্বভাবে পরিনত হলে সেই মূর্খের জীবনে দুঃখের পুনঃ পুনরাবৃত্তি ঘটবে।”


★ ”তোমাকে তোমার রাগের জন্য শাস্তি দেওয়া হবেনা বরং তুমি তোমার রাগের দ্বারাই শাস্তি পাবে।”


★ ”খারাপটি সর্বদা তুমি নিজেই পছন্দ করছো। সুতরাং, তোমার খারাপ কাজের জন্য তুমি নিজেই দায়ী। এর দায়ভার অন্য কারো নয়।”


★ “তুমি একমাত্র সেটাই হারাও যেটা তুমি আঁকড়ে ধরে বসে থাকো।”


★ ”প্রাজ্ঞ ব্যক্তি কখনো নিন্দা বা প্রশংসায় প্রভাবিত হয় না।”


★ ”মৈত্রী দ্বারা শত্রুকে জয় করবে সাধুতার দ্বারা অসাধু কে জয় করবে, ক্ষমার দ্বারা ক্রোধকে জয় করবে, ও সত্যের দ্বারা মিথ্যেকে জয় করবে।”


★ ”শুভর সূচনা করতে প্রত্যেক নতুন সকালই তোমার জন্য এক একটি সুযোগ।”


★ ”অন্যের জন্য ভালো কিছু করতে পারাটাও তোমার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।”


★ “সবকিছুকে বোঝার অর্থ সবকিছুকে ক্ষমা করে দেওয়া।”


★ “প্রত্যেক মানুষ, তার স্বাস্থ্যের কিংবা রোগের সৃষ্টিকর্তা হয়ে থাকে।”



★ ”লক্ষ্যে বা গন্তব্যে পৌঁছানোর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেই যাত্রাকে ভালোভাবে পূরণ করা হয়ে থাকে।”


★ “নিষ্ক্রিয়তা হচ্ছে মৃত্যুর একটা ছোট রাস্তা। কঠোর পরিশ্রমই ভালো জীবনের রাস্তা হয়ে থাকে | নির্বোধ মানুষরা নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে এবং বুদ্ধিমান মানুষরা কঠোর পরিশ্রমী হয়।”


★ ”পরের কৃত ও অকৃত কার্যের প্রতি লক্ষ্য না রেখে নিজের কৃত ও অকৃত কাজের প্রতি লক্ষ্য রাখবে।”


★ ”নির্বোধ বন্ধু আদৌ কোনো বন্ধু নয়। নির্বোধ বন্ধু থাকার চেয়ে একা হওয়া অনেক ভালো।”


★ ”কোনো হিংস্র পশু অপেক্ষা কোনো শয়তান বন্ধুকে আপনার বেশি ভয় পাওয়া উচিত। কারণ হিংস্র পশু আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে কিন্তু একজন খারাপ বন্ধু আপনার বুদ্ধির ক্ষতি করে দিতে পারে।”


★"মানুষের অহংকার কোন দিন সত্য কে গ্রহণ করতে দেয় না, তাই অহংকার করা কখনো উচিত না।"


★"অন্যের আচরণে যেন কোন দিন ভিতরের শান্তিকে নষ্ট না করে।"


★ "নিজের মনকে যেকোন পরিস্থিতিতে শান্ত রাখতে শেখা।"


★ "মানুষের কোন পরিস্থিতিই ভাগ্যরে জোরে পরিবর্তন হয় না, একমাত্র পরিবর্তন সম্ভব আমাদের কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে।"


★ "নিজেকে কখনো অন্যের সাথে তুলনা করতে নেই, কারন সূর্য ও চন্দ্র তার নিজস্ব সঠিক সময় জগত কে আলো প্রদান করে।"


★ "মানুষের সবচেয়ে বড় ভুল ধারনা হল তার কাছে এখনো অনেক সময় বাকি আছে।"


★ "মানুষ বড়ই বোকা কারণ সে নিজে রাগ ও অহংকারের বিষ পান করে অন্যের মৃত্যুর কামন করে।"


★ "আপনি যদি ভুল করার পর মানুষ দিক পরিবর্তন না করেন তবে সে সেখানেই যাচ্ছে যেখানে শুরু করেছিল।"

__________

উপস্থাপনা : দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. সুন্দর লিখেছেন "গৌতম বুদ্ধের উপদেশ গুলি। চির স্বাস্বত বাণী।

    উত্তরমুছুন