পোস্ট বার দেখা হয়েছে
কবিতা :-
হয়ত পরের জন্মে
ঋষি
তুর দিকে তাকালে মুর বুক শুকিয়ে যায়
তুর দিকে তাকলে মুর সুখ শুকিয়ে যায়
আগুন লাগে গতরে
আগুনে পুড়ে মরি আমি আর মরে না তুর চোখ।
আর রাধা দাঁড়িয়ে আছে হাইরুটের গা ঘেঁষে খদ্দেরের অপেক্ষায়
ছেলে না মেয়ে , নিজেকে দেখেছিলো সে বুক খুলে
কিন্তু নিজের গালের দাঁড়িতে হাত দিয়ে কেঁপে ওঠে রাধা রোজ ,
ঘুম আসে
ঘুম স্বপ্ন সুখ ,স্বপ্ন সুর
নধর নারী শরীর ,সুমধুর মিলন ,মনের পুরুষ।
.
একটা লরি এসে থামে
কত লিবি ? নিতে পারবি তো ?
রাধা মেয়েলি ভঙ্গিমায় বলে ,কত দিবি বাবু। ...তুই ভালোবাসা ,
তারপর কোনো নিষিদ্ধ ডেরায় রাধার অর্ধনারীর শরীরটায় হামলে পরে প্রেম ,
বুকের ডানা গুলো দুহাত দিয়ে ডলতে থাকে
আর পিষ্টন চলে পিছনের কামরায়
রাধার চোখে জল ,
সব কিছু ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় পাঞ্জাবী ড্রাইভার ছুঁড়ে দেয় একটা একশো টাকা।
রাধা বলে বাবু ভালোবাসা পেলি তো ?
ড্রাইভার বলে এই ছিনাল তুর আবার ভালোবাসা ,যা মলম লাগা।
.
রোজ ভোর রাতে রাধা বাড়ি ফেরে
রাধার সারা শরীরে থাকে ভালোবাসা
আয়নার সামনে দাঁড়ায় রাধা নিজের ব্লাউজ খুলে বুক দেখে
চোখ ঘোরে ব্লেড দিয়ে চাচা লোমহীন শরীরটার দিকে
হায় হায়
তুর লাগি মুর অঙ্গ জ্বলে সখি
তোর বিহনে আগুন লাগে বুকে
এ জন্মে রাধাবৃহন্নলা রূপে
হয়তো পরের জন্মে ভালোবাসা।
------------------------------------------
এ কী ছবি আঁকি আমি ?
অরুণ কুমার মহাপাত্র
অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই
আরো গাঢ় অন্ধকারে ...
দেখি ছায়ারা ঘোরাঘুরি করে সেথা
তাহাদের গায়ে কামসূত্র আঁকা ।
অতুল ভাস্কর্য নিয়ে জেগে রয় তারা
অন্ধকার ঘড়িঘরে অতুল ঐশ্বর্য নিয়ে
আঁধার মেয়েরা নির্বাক. ।
দেখি উলঙ্গ কুমারী মেয়েদের অজস্র
ক্যানভাস !!
নিজের মননে সদা নড়ে ওঠে ওরা ।
আমার আমিতে আমি কেবলই খাবি খাই।
অভিলাষ রাখি বেঁধে ,
বুজে রাখি চোখ আমি
যায় না তবুও দিন যাপনের আদিম
অরণ্য ছাপ ।
কোথা আমি ..... ?
কেন ভেসে যাই উষ্ণ প্রস্রবণ এ আজি ?
কালের প্রবাহে হৃদয় জুড়ে এ কিসের আর্তি ?
মৃত্যুর সাথে হাঁটতে হাঁটতে .…
কী ছবি আঁকি আমি ?
------------------------------------------
উপকথা
চিন্ময় বসু
আগুন ও হাওয়ার দাপটের এই সময়। জলের মত সাবলীল ও বহতা ভীড় অল্প বয়স্কদের। লাল, হলুদ ও সবুজ, স্বপ্ন থেকে জাগরণ, ইচ্ছে থেকে ক্রিয়া। একটু চেষ্টা করে এক পা বাড়ালেই কীট থেকে হল জোনাকী তার থেকে মণি রত্ন ছিটকে পড়ল।
তাপ এসে থমকে গেল জারুল গাছের নীচে দিঘীর কিনারায়। ঝাঁকড়া আমের মাথার ওপর ঝেঁকে এল বৃষ্টির খোলা চুল। তোমার হাতের তালুর ভিতর গজিয়ে উঠল আরেকটি গাছ, সে গাইলো হেসে উঠে ভবিষ্যৎবাণী করল, সেই শব্দে বাতাস ডানা মেলে দিল। অলৌকিক পাখীর মধুর ধ্বনি ভরে গেল তখন কে কার সবাই সবার সব কিছু সবার। এক ও একক শব্দ, তীব্র, যার কোনো উল্টো প্রতিশব্দ নেই হয় না যেমন, সুর্য।
এক দিন তাই ভেঙে হলো খান খান, চূর্ণ বিচূর্ণ খন্ড গুলি কথার ভাষার অক্ষরের মত দিকবিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইলো। তারা আর মিলবে না একসাথে, ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হওয়া আয়নার মত তাতে বিদীর্ণ বিশ্ব।
এক নারী তার নদীর মত চলন, জলের মত স্বচ্ছ ভঙ্গি, জলের মত নারী; কি কি সেখানে গিয়ে হারিয়ে যায় আর ফেরে না সব দেখা যায়। সেখানে চোখ এক চুমুক জল পান করে, সেখানে এক চুমুক ঠোঁটের তৃষ্ণা মেটে, গাছের, মেঘের, বজ্রের, আমার আর স্মৃতির।
------------------------------------------
নীলচে সবুজ ইতিহাস
দীপাঞ্জলি বিশ্বাস
সব নদীই সাগরের পথে এগোয়
এটাই পরিনতি -
এখন মোহনায় দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করছি -
এই নদী কি নাম তোমার?
কতটা স্বতন্ত্র ও- ও-ই ওর থেকে?
খরস্রোতা না মন্দাক্রান্তা তুমি?
বলতো দেখি -
আরও আছে জিজ্ঞাসা...
চলার পথে কোন কোন পাহাড় মালভূমি ছুঁয়ে এলে?
কত পাড় ভেঙেছো? গড়েছোই বা কত?
উত্তর আছে?
হ্যাঁ আছে.. জানি-প্রশ্ন যখন আছে উত্তর তো থাকবেই...!
আর ঐ তোমার মতন আরও আছে যারা...
তাদের সাথে তোমার স্বাতন্ত্রতা কোথায় এই সাগরের বুকে?
নেই তো..!
স্বাতন্ত্রতা বয়েই তো ছুটে চলেছো এতকাল!
ভিজিয়েছো নিঝুম অরণ্যের কোল...
বুকে ধরেছো শ্রাবণের চঞ্চল ধারা...
প্লাবনের বিভীষিকা নিয়ে ভাসিয়েছো কত জনপদ...
খরার যন্ত্রণা এঁকেছো নিশ্চুপ পাথরের পাজরে...
তবু দেখো.. আজ এই সাগরের অতলান্তে কোনো হদিস নেই তোমার সেই স্বতন্ত্র শরীরের!
শুধু আছে একটা নদীর উপাখ্যান-
একটা নীলচে সবুজ ইতিহাস-
ঐ যে নদীটা ..একদিন সেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চলা শুরু করেছিল..
আজ তার পরিনতি এই কূলকিনারাহীন মহামিলনের মুক্তধারায়।
------------------------------------------
ক্রন্দসী
সুব্রত হালদার
চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকে উত্তুরে হাওয়া ...
জানালার শার্সি ছুঁয়ে ধূসর কুয়াশায় ভেসে যায় বিষন্ন চাঁদ..
এক বাঁও মেলে না,দু বাঁও মেলে না -নৌকার গলুইতে জমে ওঠে অগাধ বিষাদ।
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ ভাঙ্গে গড়ে..
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় নৌকার কঙ্কালে ,পাঁজরে..
নদীর জলের গভীরে, বুকের উপরে,
জেগে থাকা পাহাড়ের ছায়ার ভিতরে,
গাছের ছায়ার ভিতরে সেই মুখ ভেসে থাকে...
কতকাল ধরে সে আমার চেনা..
এজন্ম কিংবা বহুজন্মের আগে থেকে ..
সে আমায় হাসিমুখে কাছে ডাকে..
নীল আঁচলে জাগে সমুদ্রের প্লাবন..
শরীরে ঘুমিয়ে থাকে বিবশ শ্রাবণ...
ছুঁতে গেলে ভেসে যায় অন্তহীন স্রোতে ..
বিচ্ছুরিত জোছনার মত সাদা রঙ মেখে অনন্তের পথে..
তার সুর মিশে যায় কল্লোলে কল্লোলে ..
আমি কান পেতে থাকি কোন সে ভাষ্য যায় বলে...
কালের ঘণ্টাধ্বনি বাজে..
অসীমের মাঝে..
প্রহরের চোখে ঝরে জল..
শিশিরের মতো টুপটাপ অবিরল..
এ জীবন ভেসে চলে আপন খেয়ালে ...
এ জীবন বীতশোক হয়..
এ জীবন দুঃখ শোক ভোলে..
নদী ক্রমশ এগিয়ে আসে..
পাড় ভাঙ্গে ,কুল ভাঙ্গে, জীর্ণ বাড়ি ভেঙে নিয়ে যায় একদিন ..
দিতে হলে সবটুকু দিতে হয়..
তা না হলে বাকি থাকে জীবনের ঋণ..
যারা চলে যায় অপূর্ণতা রেখে তারা কি ফিরে ফিরে আসে..
হেমন্তের উদাসী প্রান্তরে হিমেল বাতাসে..
কি বলে ফিসফিসিয়ে সকরুণ গভীর দীর্ঘশ্বাসে?
কথারাও কখনো কখনো ফুরিয়ে যায় কোন কোন বাঁকে...
প্রতিটা শুরুর কোথাও তো শেষ থাকে..
তবু মনে হয়..
কিছু রেশ তার রয়ে যায় ..
কখনো কখনো ভিড় করে আসে অলস অবসরে..
ফড়িংয়ের ডানার মতন, হেমন্তের পাতার মতন দোল খায় স্মৃতির গভীরে..
সেটা মেনে নিয়ে জীবন এগিয়ে চলে জীবনের হাত ধরে..
আশা বাঁচে, ভালোবাসা বাঁচে,নিত্য নবীন প্রাণের সঞ্চারে..
তবু ও এ পৃথিবী কখনো কখনো বদ্ধভূমি হয়ে যায়..
পাতার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে বিষাক্ত তীর হাতে চতুর নিষাদ..
আলোর ফুলকি গুলো ভেসে যায় দূর বহু দূর নক্ষত্রের ছায়াপথে..
চারপাশে ঘনিয়ে ওঠে শুধু অন্ধকার আর অগাধ বিষাদ।
---------------------------------------
গল্প :-
আপেক্ষিক
সুজিত চক্রবর্তী
একই কলেজে পড়লেও , অনুর সাথে আমার সম্পর্ক যে বন্ধুত্বর গন্ডী অতিক্রম করেছে সেকথা আর গোপন থাকে নি আমদের মিত্র মহলে। সন্ধ্যার শুরুতে আমরা প্রায়ই দেখা করি কলেজ স্কোয়ারে। আজ সেখানেই হাসি হাসি মুখ করে বললাম, "তোর সবসময় কিসের এতো তাড়া থাকে অনু ?"
---- সময় বয়ে যায় যে !
---- বয়ে কোথায় যাবে অনু ? কোথা থেকেই বা আসে এই সময় ?
----- দার্শনিকের মতো কথা বলিস না তো । তোর মতো ওল্ডি আমি আর কাউকে চিনি না।
------ এর মধ্যে দর্শন কোথায় পেলি ? ওল্ড ম্যান
বা সি তার কোনওটাই নেই । আচ্ছা বাবা, এবার তবে একটা ছেলেমানুষের মতো প্রশ্ন করি । সময় কি ? কে আবিষ্কার করেছিল এই সময় ?
----- সুইজারল্যান্ডে নিশ্চয়ই। আদ্যিকালে যত ভালো ঘড়ি তো শুনেছি ওখানেই তৈরী হতো!
---- আমি ঘড়ি আবিষ্কারের কথা বলি নি। বলেছি সময়ের কথা। ঘড়ি দিয়ে আমরা সময়কে মাপতে পারি । কিন্তু সময় একটা অবয়বহীন অস্তিত্ব ।
----- দ্যাখ , সারাদিন লেকচার শুনতে শুনতে কান ভোঁতা হয়ে গেছে । তুই আর এখানে এসে লেকচার ঝারিস না বাপু !
----- আসলে ব্যাপারটা কি জানিস , তুই এখন বোর হয়ে যাচ্ছিস। আমি কিন্তু এনজয় করছি । সুতরাং, সময় একটি আপেক্ষিক বিষয়।
----- ও ! আমাকে বোর করে তুই এনজয় করিস ।
অ্যা ম্যান ইজ অলওয়েজ অ্যা ম্যান ! তোরা সব এক গোয়ালের গরু।
------ গরু নয় ম্যাডাম। ষাঁড় তবু চলতে পারে।
------ হ্যাঁ। ঠিক তাই । পাগলা ষাঁড়।
------ সে যা হয় হোক না। যা বলছিলাম, সময় কিন্তু আপেক্ষিক। এবং , একই গতিতে সব সময় বয়ে যায় না।
------ তোর মনে হয় পেট গরম হয়েছে আজ । দাঁড়া , চা-ওলাকে ডাকি ।
এরপর অনু চা-কাকু গোছের কিছু একটা একটু জোরে বলতে চাইছিল । তার সেই অধৈর্য উচ্চারণ যাকে ডেকে নিয়ে এল, সে হচ্ছে আমাদের ক্লাসের কাকাবাবু । সে কার কাকা তা আমরা স্পষ্ট জানি না। তার আসল নামও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে আমাদের স্মৃতির পাতায়।
কাকাবাবু মনে হলো বিশেষ উৎফুল্ল হয়েছে আমাদের দেখে ! মানে ,কাকা এনজয় করছে কেসটা। এবার সে আমাকে প্রশ্ন করল , " হে ভগবান! সন্ধ্যাবেলা এখানে কিসের ক্লাস চলছে শুনি । মানে টপিক কি ? "
আমি গম্ভীর মুখে বলে দিলাম, " টাইম এন্ড স্পেস। তুই কি ইন্টারেস্টেড এই বিষয়ে ?"
কাকাবাবু মনে হলো বেশ বিরক্ত হয়েছে ।
বললো, " আমাকে তো আর পাগলা কুকুরে কামড়ায় নি । "
বলেই হন হন করে হাঁটা দিল সেখান থেকে।
আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। অনুও মনে হলো খুশী হয়েছে কাকাবাবুর প্রস্থানে ।
আমি দৃষ্টি ফেরালাম আমার প্রেয়সীর মুখের দিকে। জলের ওপর স্তরে প্রতিফলিত আলো এসে মুখে পড়ে অনুকে বেশ আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে এই মুহূর্তে !
বললাম, " দ্যাখ অনু। আইনস্টাইন ঠিক এই কারণেই সময়কে আপেক্ষিক বলেছেন। এই যে এতক্ষণ এখানে বসে আমি তোর সাথে গুজুর গুজুর করছিলাম তখন সময় যে কত দ্রুত বয়ে যাচ্ছিল , তা কিছু বুঝতেই পারছিলাম না । এক ঘন্টা যেন এক ন্যানো সেকেন্ড। আর , কাকাবাবু যতক্ষণ ছিল ? এক মিনিট যেন কাটতে চায় না।
এটাই হলো আপেক্ষিকতার তত্ত্ব ! "
আদুরে গলায় অনু বলল, " মামু , বাদাম ভাজা খামু !
0 মন্তব্যসমূহ