দর্পণ | সাপ্তাহিক সেরা নির্বাচিত পরিচালক কলম | কবিতা ও গল্প




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 



কবিতা :- 


ভালোবাসা যেভাবে মৃত্যুর পরেও ঘুরে দাঁড়ায়

- দে বা শী ষ


কে বলেছে ক্লান্তি নেই? কোথায় লেখা আছে, ক্লান্তির নিয়মাবলী,  

আকাশ সাগর থেকে মাঠ , নদী, পাহাড় আরও কতো কী,

সমাজটা ধর্মের কারেন্ট একাউন্ট হয়ে গ্যাছে,

যতো ভীড় , যতো আবেগের পথচলা,

উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে ই'রিক্সা চালায় প্রবনতা ;


দৌরাত্ম্য বুঝতে পুরানো কবিতা নিয়ে আসি,  

ভারাক্রান্ত চমকের স্ট্যাটাস আপডেটে,

শৈশবের ধ্বংসাবশেষে নির্বাচনের বুনোফুল ।


কর্পোরেটেড সড়ক যোজনা, দুর্বিক্ষের ছয়ফুট বড়ো হাত,

থালায় থালায় বিপ্লবী মাছি - পকেটে সমাবেশ ভুলে রোজগারের মিছিল ,


এখানেও প্রেম ছিলো, জড়িয়ে প্রেমিকের সর্বনাশ,

পাশাপাশি বসা দুটো চোখে শ্রাবণের খোঁজ,

ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুষে উপলব্ধি হয় কী ছিলাম কবে আমি?

ভুলে যাওয়া পরিষেবায় বেড়ে চলা হা'ভাতের বিদ্রুপ ।


ক্লান্তির কোন পরিমাণ হয়না, সবটাই হতাশা আঁকড়ে থাকা,

পিছিয়ে যেতে যেতে - "হেরে যাচ্ছি না তো?"

তারপরেই ঘুরে দাঁড়াতে চিনেছি নিজেকে।

ভালোবাসা যেভাবে মৃত্যুর পরেও ঘুরে দাঁড়ায়।




"একটি শিশির কণা"-তোমায় দিলাম

জয়তী-----



 ঘাসের উপরে আলোর বিচ্ছুরণ,

  পূর্বাকাশের উদিত ভানুর স্পর্শ,

   "একটি শিশির কণা "--উৎসর্গ করলাম

     হে বীর সন্ন্যাসী ----

 গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজোর মতোই

  তোমার আলোয় উদ্ভাসিত দিগদিগন্ত,

   শিশির কণা.... সে তোমারই চরণামৃত।

হে পরমযোগী, বেদজ্ঞ...

বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকা স্ফুলিঙ্গ,

নিপীড়িত দরিদ্র বুকের মহাপ্রাণ।


মনেহয় তুমি বড়ো আপনার,

হে মহাজ্ঞানী ঘুচাও অন্ধকার.. তিমিরবিদারী।

জাগ্রত হোক বিবেক, নিখিলের প্রতিঘরে

শাশ্বত হোক তোমারই বাণী।।


         




ব্রাভো 

সায়ন্তিকা 


এ বছর কবিতা নেই ,

এ বছর খিদে নেই !


বছর বছর শুধুই উৎসব আর মহামারী !


আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে সে কথা ۔۔۔۔۔


চারিদিকে শুধুই ঘেসাঘেসি আর মাখামাখি ,

এসব কী খুব বেশিদিন ভালো লাগতে আছে ?


অনেকদিন হলো আমার খিদে পায়নি ,


নোনা জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে থাকতে আমি বুঝেছি ۔۔۔۔

সকলের আজ কঠিন অসুখ হয়েছে !


সবাই একে অপরকে কাঁমড়ে ধরছে ,

অথচ কেউ কিচ্ছু চাইছে না !


কেউ য্যানো চিৎকার করছে ۔۔

"ব্রাভো ,ব্রাভো ,ব্রাভো !"


এ বছর কোনো কবিতা নেই ,

অথচ টাগরায় জ্বালা ۔۔۔۔



উত্তরণ 

শুভ্রাপাল 


শিক্ষার তো জলাঞ্জলি, রুটি রুজি ছিকেয় তুলি 

ছিঁড়ছি চুল মাটির দাওয়ায় বসে ;

গড়ছি আমরা মহান দেশ, চাহিদার কি আছে শেষ 

ছেলে কাঁদে মায়ের আঁচল খুঁটে ।

মা রে -- ওমা, দে মা ভাত দে 

মা রে ভাত দে, ভাত দে'না মা! !


মা কাঁদে এখন খাওয়াবো কি 

দোকানে, বাজারে সব বাকি 

ধারের ফুর্তি গ্যাছে লাটে উঠে, 

ছেলের বাবা ' ব্যোম শিব ' হেঁকে 

গান ধরেছে এঁকে বেঁকে --- 

' যাক্ যা গ্যাছে তা যাক্ -- যাক্ যা গ্যাছে তা যাক্ '

মা যে অসহায় ----


চাল ডাল ঘরে বাড়ন্ত, তবু তরল আনে মোহন্ত 

বইখাতা সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে 

বিবাগী হব -- যাব গঙ্গা সাগর মেলায় ....





গল্প



অদেখা কিছু

শিবাজী সান্যাল


          সকালে অফিস যাবার সময় এশা লিস্টটা কৌশিককে হাতে দিয়ে বলল , “ এই নাও , বলেছিলে লাঞ্চের সময় অর্ডার করে দেবে। ভুলে যেও না। ” আসলে রোববার এই অনলাইন অর্ডার লাগানোর কথা ছিল কিন্তু কৌশিক তা করে উঠতে পারেনি। আজকাল এমনই হচ্ছে , কৌশিক সবসময় যেন কিছু একটা ভাবছে মনে হয় , অনেক কিছু ভুলে যায়। এসব দেখে এশার ভীষণ অস্বস্তি হয় , অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছে কিন্তু কৌশিক তেমন কিছু বলে নি। আগে বাপ্পার সঙ্গে বেশ সময় কাটাতো , এখন বাপ্পা বারবার কাছে আসে তবুও কোলে তুলে আদর করে না। কেমন যেন এক চিন্তার মধ্যে ডুবে থাকে নয়তো ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে থাকে। সেদিন এশা একটি জরুরি বিষয় নিয়ে অনেক কথা বলছিল , কৌশিক ভাল করে শোনেওনি , বুঝতে পেরে এশা রেগে একরাশ কথা শুনিয়েছিল। কৌশিক পরে নিজের ভুল মেনে নিলে এশারই খারাপ লেগেছিল , ওর ওভাবে রিঅ্যাক্ট করা ঠিক হয়নি। 

                      অফিস থেকে ফিরলে এশা কৌশিককে চা দিয়ে জিজ্ঞাসা করল , “ অর্ডার লাগিয়েছতো ? ” ঠিক যা ভেবেছিল তাই , একদম ভুলে গেছে। কয়েকটি জিনিস একান্ত দরকার ছিল , এশা রেগে গিয়ে বলল , “ তোমার কি হয়েছে বলত , বাড়ির সবকিছু তো আমি সামলাচ্ছি , একটি মাত্র কাজ বলেছি তাও করতে পারো না ? ” এরপর আরও বেশ কিছু কথা শুনিয়ে ও রান্না ঘরের দিকে গেল। একটু পরে প্রদীপের ফোন এল , কৌশিকের জুনিয়র , বলল , “ বৌদি কৌশিকদা তোমাদের নিশ্চয়ই কিছু বলে নি , আজ কিন্তু উনি খুব মানসিক কষ্টে আছেন। এতদিন ধরে যে প্রমোশনের জন্য কৌশিকদা অপেক্ষা করে মেহনত করে যাচ্ছিলেন তা আজ অন্য ডিভিশনের একজনকে দিয়ে দিল। সঙ্গে কৌশিকদাকে এখান থেকে সরিয়ে এডমিনিস্ট্রেশনে করে দিল। সব অফিস পলিটিক্স । বৌদি তুমি ওনার পাশে থাক , মনে জোর দাও। ” এশা ফোন ছেড়ে স্তব্ধ হয়ে রইল , আর এতদিনের ওর নিশ্চুপ অবস্থার কারণ বুঝতে পারল। আজ ওর এই কষ্টের দিনে এতগুলো কথা শোনালো ? ভেবে ও নিজের কাছেই ছোট হয়ে গেল। 

                                   এশা ঘরে ফিরে এসে দেখল কৌশিক বাতি নিভিয়ে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে , একটা হাত ওর কপালে ওপরে রাখা। , পাশে চা পুরোই পড়ে আছে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ