দর্পণ | সাপ্তাহিক নির্বাচিত কলম | কবিতা , গল্প




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 



কবিতা :- 


নষ্ট নীড় / মুকুল রায়


নীল ক‍্যানভাসে লাস‍্যময়ীর উড়ন্ত বসনে

 সদ‍্য যৌবনে পা রাখা এক ক্ষীপ্ত নদীর নিত‍্য     

  আনাগোনা।

 মিথ‍্যা প্ররোচনায় প্রলুব্ধ বোকা        

  কাকাতোয়াটা

   একদিন চেয়ে দ‍্যাখে 

    নদীটা সরে গেছে অন‍্যদিকে।

     শুধু একরাশ পলি জমে

      নীড়টা নষ্ট হয়ে গেছে।

 অমাবস‍্যার ঘোর অন্ধকারে

  একটা কাল পেঁচার অদম‍্য চিৎকার 

   জানান দিচ্ছে......

    হাড় কঙ্কাল কাঠামোটা দিন গুনছে

     উই ধরার অপেক্ষায়।

  অথচ

   কথা ছিল....

 ফুলশয‍্যার রঙিন বাসরে

  গুণগুণ রবে

   একফোঁটা বৃষ্টি এসে রচনা করবে

    সৃষ্টি সুখের উল্লাস।

      তপ্ত নিশ্বাস 

       পূর্ণিমার জোয়ারকে দোহন করে

        উলকিতে উলকিতে ভরিয়ে দেবে

         অঙ্গন।

          পুলকিত হরষে তাল বেতাল হারিয়ে

           নষ্ট ছন্দে....

            সেতারের তার কেটে হবে

             একাকার।




রাত বাঁচুক / অরিজিৎ



রাত ব'লে তাই বেকুব বানাই

বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মনকে রাখি অন্ধকারে ঢেকে,

সকাল হলেই সত্যি জানাই

জানি কাঁদবেনা আর ব্যস্ত সময় চাকরি ফেলে রেখে। 


রাত ব’লে তাই ভুলিয়ে রাখি

চাঁদ তারা আর আকাশ দেখাই, তাতেই ভুলে থাকে, 

দিনের বেলায় ধরলে ফাঁকি

আবার কিছু বুঝিয়ে দেবো কথার ফাঁকে ফাঁকে।


রাত ব'লে তাই কাব্যমধু

ঠান্ডা হাওয়া ছোঁয় যেন তাই কোমল ছন্দ হয়ে,

দিন যেন হায় রুক্ষ শুধু

সাপটা সোজা গদ্য ভাষা শানায় রয়ে রয়ে। 


রাত ব'লে তাই স্বপ্ন সাজাই

কাল বুঝি সব পাল্টে যাবে নতুন সকাল এলে,

দিন এলে আর দেখতে না চাই

জানি বাস্তবে ফের মিলবে আঘাত স্বপ্ন ভেঙে গেলে। 



ভালোবাসার কবিতা / ঋত্বিক গোস্বামী


কেউ তো হতেই পারে

 অসম্পূর্ণা নারী

কেউ বা হয়ে ওঠে 

অসম্পূর্ণ পুরুষ

নারীটি গৌরী বা সুআননা নয়

পুরুষটিও নয় কোনো

গ্রীক ভাস্কর্যের প্রতীক

পুরুষটিকে বর্জন করেছে তার নারী

নারীটিও বহুদিন স্বামী পরিত্যক্তা


ওদের জন্য সবুজ পার্কের এক কোণে একটা নিরালা বেঞ্চ থাকুক

পান্থপাদপের তলদেশে থাকুক

নিবিড় নিভৃতির আয়োজন

ওরা পাশাপাশি হেঁটে যাক

নিস্তরঙ্গ স্বচ্ছ নদীটির ধারে

অভিজ্ঞ চাতকের মতো

পান করুক কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিজল


তারপর শামুকের দিকে

চড়ুইয়ের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে

বলে উঠুক পৃথিবী

তোমাকে বড্ড ভালোবাসি

আমাদের জন্য ভালোবাসা দাও

একটুকরো ভালোবাসা।




স্মৃতি এক অসম্পূর্ণ নারী / ঋষি



জীবন্ত মৃত্যুর ভিতর আমার স্বপ্নরা ঘুমিয়ে থাকো 


তুমিও ঘুমিয়ে থাকো চলন্তিকা সেখানে 


নরম স্মৃতিতে মাথা রাখো ,কাঁধ রাখো নির্বাসনে


ঘুমোও এবার 


ঠিক যেন স্মৃতির ঘাসে সদ্য জমে থাকা একফোঁটা হৃদয় 


সকাল হতে দেরী এখন। 




স্মৃতি এক অসম্পূর্ণ নারী


যার কোলে মাথা রেখে আছে এই পৃথিবীর আবর্তন 


যার স্তনে ঠোঁট ছুঁয়ে আছে একের পর এক অপেক্ষা 


যার খোলা চুলে আগুন 


বুক পুড়ে যায় 


প্রতিবারে স্বপ্নে চলন্তিকা আমি তোমাকে জড়িয়ে বাঁচতে চাই। 



তুমি কি চেয়েছো ?


আমি পাষন্ড কবিতার শব্দে তোমাকে মুড়ে রাখি দমবন্ধ করে 


নিজেকেই কবি বলি - স্বপ্নের মাঝে হত্যা করি তোমার ঘুম


একটা স্বপ্নের মেয়ে তোমার ভিতর বেঁচে থাকা আমার বাঁচায়। 


তোমাকে ঘুমোবার অধিকার আমি দিতে পারি 


তোমার ঘুম আমি কেড়ে নিতে পারি


এই মাটির পৃথিবীতে আমি এক ঈশ্বর 


যে তার সময়ের কংকালে ফুল ফুটিয়ে তৈরী করে চলন্তিকাকে।   


আমার মৃত্যুর মাঝে আশ্চর্য রঙিন এক হাওয়া 


 মাথা রাখো কাঁধে 

ভালবাসা রাখো


আমি বলছি তুমি ঘুমিয়ো আমার জন্য 


তুমি জেগো আমার জন্য।




গল্প :- 



ফোর_নাইন্টি_এইট / অয়ন_দাস


মাঝরাতে আচমকা ঘুম ভেঙে গেল সুচয়নের।সে নিঃশব্দে বিছানায় উঠে বসলো।তার বালিশের সঙ্গে গায়ে গা লাগিয়ে আরেকটি বালিশ, সেই বালিশে মাথা রেখে অঘোরে ঘুমোচ্ছে টিনা।অন্ধকারে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে টিনার বুকের ওঠানামা। সে এতই নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে যেন কোনো সাড় নেই। 

সুচয়নের চোখের সামনে সিনেমার দৃশ্যের মত ভেসে উঠলো কয়েকটি দৃশ্য, একটি আলো ঝলমলে রাত,সানাই এর মনকেমন করা সুর, মালাবদল, শুভদৃষ্টি, অনেক মানুষ, অনেক উল্লাস.... 

পাশে শুয়ে আছে তার স্ত্রী, যে আজ সুচয়নের কাছে সবচেয়ে অচেনা মানুষ। এক অন্ধ রাগ আর কষ্ট সুচয়নের আপাদমস্তক আচ্ছন্ন করে দিল।


সুচয়ন ইঞ্জিনিয়ার, বেসরকারি সংস্থায় অনেক টাকা মাইনে পায়।টিনা'কে প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়ে গিয়েছিল সুচয়নের বাবা মায়ের।উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র সুন্দরী মেয়ে।তাদের তুলনায় আর্থিক অবস্থা বেশ কিছুটা ভালো টিনাদের।টিনা'র মা একজন সোসাল ওয়ার্কার,একটি এন জি ও 'র সঙ্গে যুক্ত। মাজা মাজা গায়ের রং,টানা টানা চোখ,দীর্ঘাঙ্গী,শরীরে একটা মাদকতা আছে,সবসময় পোড়ামাটির গয়না পরে থাকেন,কথার বাঁধুনি অসাধারণ। ওদের পরিবারটিই মাতৃতান্ত্রিক। বাবা বেসরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাড়িতে খুব কমই থাকেন।

পাকা কথার দিন টিনার মা বললেন, ও ছোটোবেলা থেকেই খুব আদরে মানুষ, একমাত্র মেয়ে তো.. কিন্তু একটু অভিমানী, সেইকারণে আমরা কেউ ওকে বকিনা কখনো। আরেকটা কথা হল,ও না, মাছ মাংস ছাড়া একদম খেতে পারেনা,অভ্যেস নেই ,আপনাদের আবার শনিবার শনিবার নিরামিষ টিরামিষের ঝামেলা নেই তো?সুচয়নের মা বললেন, আমরা শনিবারে নিরামিষ খাই,তাতে কি হয়েছে ..ও মাছ খাবে।


সুচয়ন দের নির্ঝঞ্ঝাট পরিবারে এসে প্রথম দুমাস বেশ আনন্দেই কাটলো টিনা'র। সুচয়নের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, মা গৃহবধু।

টিনা'র মা রোজ মেয়েকে ফোন করেন,জানতে চান কেমন আছে ও,দুপুরে কী রান্না হল,খাওয়ার পর জল খেয়েছে কিনা,বিকেলের পর ঠান্ডা পড়ে, টিনা যেন গায়ে কিছু দেয়। কোনো দিন গলার স্বর ভারি শোনালে জানতে চান বাড়িতে কিছু হয়েছে কিনা।টিনা বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলেও মা কে ফোন করে জেনে নেয় সে কোন পোশাক পরবে।মা বারণ করলে সে পরিস্কার বলে দেয় সে আজ কোথাও যাবেনা।


এইরকম একদিন এক ছোট্ট দুর্ঘটনা ঘটে গেল। এবাড়িতে সুচয়নের মা-ই রান্নাঘর সামলান। সেদিন তার শরীর খারাপ,জ্বর হয়েছে, শুয়ে আছেন,টিনাকে বললেন ভাত নামাতে।

টিনা অনভ্যস্ত হাতে ভাত নামাতে গিয়ে হাতে ছ্যাঁকা খেয়ে গিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। খবর পৌঁছে গেল মায়ের কাছে।মা তাড়াতাড়ি এসে বললেন, আপনারা একটু ওয়েট করতে পারলেননা?সাত তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে রান্নাঘরে ঢোকাতে হল!আপনাদের আর তর সইছিল না!আশ্চর্য সত্যি! আমি টিনাকে নিয়ে যাচ্ছি।

টিনা তার মায়ের সঙ্গে বাপের বাড়ি চলে গেল।


সমস্ত ঘটনায় সবাই কেমন বিহবল হয়ে পড়ল।এইটুকু সামান্য ঘটনায় টিনার মা এত কড়া কড়া কথা শুনিয়ে মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন?


সাতদিন বাদে সুচয়নের বাড়ির ল্যান্ডফোন বেজে উঠল। সুচয়নের বাবা ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কড়া গলায় ধমকে উঠলেন টিনার মা।

সাতদিন হয়ে গেল আপনারা একটা ফোন পর্যন্ত করলেন না?কেমন মানুষ আপনারা? সুচয়নকে বলবেন যেন নিজে এসে নিয়ে যায়, নাহলে কিন্তু ও যাবেনা,এটা ওর আবদার।জানেনইতো ও কেমন জেদি।সুচয়নের বাবা কথার উত্তরে কথা বলতে পারেননা।তার বুক ফেটে এক গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। 


অনেক অনুরোধেও সুচয়ন তার স্ত্রীকে আনতে গেল না।টিনা ও তার মায়ের বোঝা উচিৎ তারও ইগো আছে।


দুদিন পরের এক সন্ধ্যেবেলা টিনা কে নিয়ে আসলেন তার মা।সঙ্গে এক অচেনা বলশালী যুবক,তার হাতে বালা,কানে দুল,চুলে রং,মুখে পানপরাগ।

টিনা'র মা খুব কেটে কেটে বললেন, ফোর নাইন্টি এইট বলে একটা আইন আছে জানেন? আপনাদের ছেলেকে বলে দেবেন বেশি বাড়াবাড়ি না করতে।


সারা বাড়িতে নেমে এসেছে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। কদিন বাদে টিনা কাঁদতে কাঁদতে তার মা কে ফোন করে বলল, জানো মা এবাড়িতে কেউ আমার সঙ্গে হেসে কথা বলেনা,সব্বাই কেমন মুখভার করে থাকে, বলো মা, এটা আমার উপর মেন্টাল টর্চার না?

সেদিন সন্ধ্যায় সুচয়নের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হতে রাগের চোটে ব্লেড দিয়ে নিজের হাত কেটে ফেলল টিনা।সে অত ফেলনা নয়।

টপটপ করে রক্ত পড়তে লাগল সারা মেঝে জুড়ে। 


সেদিন রাতে মেয়েকে নিয়ে চলে গেলেন মা।পরেরদিন লোকাল থানার সেকেন্ড অফিসার বধূ নির্যাতন আইনে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল সুচয়নকে।শান্ত,নিরীহ,রুচিশীল,সাতে পাঁচে না থাকা সুচয়ন তিনদিন জেলে কাটিয়ে বাড়ি ফিরে এলো।

এ বাড়িতে কখনো পুলিশ ঢোকেনি।সারা বাড়িতে রান্না খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।লজ্জায় আর অপমানে রাস্তায় বেরনো বন্ধ হয়ে গেল সবার।


এর মধ্যে খবর এলো টিনাকে আবার এবাড়িতে দিয়ে যাবেন তার মা।


স্থানীয় নেতা বললেন,সব ভুলে আগে বউকে ঘরে তুলুন,পুলিশ বাড়িশুদ্ধ সবাইকে তুলে নিয়ে গেলে কিচ্ছু করা যাবেনা।


আজ বিকেলে মেয়েকে আবার রেখে গেছেন মা।শাসিয়ে গেছেন, তিনি আপাতত কেস তুলে নিচ্ছেন কিন্তু ভবিষ্যতে আবার কোনো বেচাল দেখলে বাড়িশুদ্ধ সবকটাকে তিনি জেলে পুরবেন।


টিনা অঘোরে ঘুমোচ্ছে। রাগে,ঘেন্নায় স্ত্রী কে ছুঁতে ইচ্ছে করলনা সুচয়নের।তার মনে হল সমস্ত পৃথিবীটা ঘন তমসায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। তার বুক ভেঙে বেরিয়ে এল এক গভীর দীর্ঘশ্বাস।




ঘুড়ি উড়ছে / হেমন্ত সরখেল



একটা সময়ে এসে সামনে দাঁড়ায় সময়। তখন আর সুতো ছাড়তে থাকা চলে না। সে সময়টায় মোহভঙ্গের ইহকাল। ইহকাল হুজুম-হিল-হুজ্জত ভঙ্গের। অ্যাদ্দিন উঁই আকাশে টিমটিমে ঘুড়ির লেজ নজরে ছিল। আজ গুটিয়ে নেবার পালা। নদীর বিস্তৃত বুক এগিয়ে যেতে যেতে দৃষ্টিপথে ক্ষীয়মান। এক সময় ফক্কা বনানীর আড়ালমায়ায়। 

               একদা, যে ছিল স্বপনচারিনী, সে অবয়ব গুটিয়ে গেছে স্মৃতির গুটোনো অস্তিত্বে। এই বৈশিষ্ট্যে ব্যতিক্রম নেই। সবই গুটিয়ে আসছে শনৈঃ শনৈঃ। আসবে। একসাথে সবাই ভীড় করবে না মন জুড়ে। কমে কমে ক্রমে ক্রমে ধারণারা যূথবদ্ধতা ছেড়ে একাশ্রয়ী হবে। শুকনো আটায় জল দাও, ঠেসে চলো, ঠাসো, তাল হয়ে এলে জানবে এবার প্রস্তুত সে। এ ও কী সেই ইঙ্গিত দেয় না! গুটিয়ে আনো নিজেকে! 

           কথক ঠাকুর বলছেন, সব ছোড়য়ে, সব পাওয়ে। কোন্ সব ছোড়য়ে? 'ছোড়য়ে' তো 'পাওয়ে' কী? মথে দেখি সেই গুটিয়ে আনবারই কথা। প্রথম বিশ্বাস মা-এ। মা মা বলে চোখ বন্ধ করে চিল-চিৎকার। মুখে দুধ ঠুঁসে দিলে গপগপ করে গিলছে। আঙুল না ধরে সে পা ফেলবে না। ট্যাঁ ট্যাঁ করে ঘেঙটে যাচ্ছে। নাকে পোঁটা কাঁধে ঝোলা, ঘেঁসটে ঘেঁসটে চললো প্রথম শিক্ষাভিমুখী, বিদ্যালয়ের প্রথম প্রভাত। চুপ করে বসে আছে বড়দির পাশে। আজ মাধ্যমিকের রেজাল্ট, একা কিছুতেই যাবে না। কী জানি কী হয়! নাম ডাকার সাথে সাথেই বুকের মধ্যে সুমেরু পর্বতোপরি শৈলখণ্ড ভাঙে- ধড়াস্। জীবনের প্রথম ভাইবা। চাকরির আঙিনায় প্রবেশের লক্ষ্যে ঠকঠক করে কাঁপছে শীর্ণকায় রুগ্ন পোল্ট্রির ঠ্যাং দুটো। এখন আর সাথে কেউ নেই। এখন অত্যাচার সইতে ও করতে শেখা রপ্তের পালা। তারপর এক পেল্লাই হুটোপুটি, জগঝম্পে লোটপোট। 'ডাগর আঁখিতে রেখে আঁখি আমি মরণের মাঝে সুখস্বপন দেখি…'। ল্যাণ্ডা বাচ্চা, খ্যাঁচ-খ্যোঁচ, এই নেই, সেই নেই, রিস্টওয়াচ, চশমা, টাই পিন, মোবাইল, এটিএম, ভলেট, নেইলপালিশ ইত্যাদি আরও রাশ রাশ এই আছে এই নেই পেরিয়ে ছেলের বিয়ে। ততদিনে বকলেস খুলে ফেলা গেছে। ইতিউতি চাওয়া যাচ্ছে। তিতলি, পঙ্খুরি অদা কৌতুক দিচ্ছে। ধর্মবিহীন সহধর্মিনীর নজর পিঠে ফুটছে না আর। হৃতযৌবন সাহস দিয়েছে একঝুড়ি। ফেরি করে বেড়ানো যাচ্ছে বেশ। একটা ফুরফুরে আমেজ। ঠিক এইখানে আবার ঢুকে পড়েছেন কথক ঠাকুর। 'সুখ কে সব সাথী দুখ মে ন কোঈ…'! সুখে থাকবে, সে জন্ম তো বাপে মায়ে দ্যায় নাই! বিছানা ডাকছে। ধপাস করে একদিন পড়ে গেল হিমোগ্লোবিন। এবার চললে গিনিপিগ হতে। ছোটবেলায় ন মাসির বাড়িতে গিনিপিগের কান ধরে ছুঁড়ে ফেলার সাজা এবার ভোগ করো রাজা! বাইরে থেকে কাচে চোখ রেখে তোমায় দেখে যাচ্ছে। সংখ্যা কমবে, কমে কমে একে-দুইয়ে আসবে। তারপর কমবে দিন। প্রতিদিন কমে এক, দুই,তিনদিন পরপর। গোটাও,গোটাও। ঐ তো গুটিয়ে আসছে। এবার ঘুড়ি চোখের সামনে। তবুও উড়ছে। স্পষ্ট, ধূসর, বর্ণের খেলা শেষ। লাটাই বলছে, ছোড়য়ে, ছোড়য়ে। এরই ফাঁকে কোন একদিন, কেবিনের কাচের ঘুলঘুলিতে ভেসে উঠল কচি মুখ। তোমার বংশপ্রদীপ। সাতদিন বয়স। তুলতুলে। দূর থেকে দেখা গেল না মুখ। তবুও খুশ্! আলো এল। পাওয়ে পাওয়ে। যদিও এখন তুমি নখদন্তহীন তৃণভোজী ব্যাঘ্র, তথাপি, ভাবো, এই সারাৎসার, কোন দীপ জ্বেলে দিয়ে গেল! যে এল সে কী নিতে এল, তুমিই বা তাকে কী দেবে! 

             আর কেন! সন্ধে হল। কথক ঠাকুর, আরেকবার শোনাও না কেন, মন চল নিজ নিকেতনে...




বৈবাহিক / জয়ন্ত অধিকারী 


"কোন হাত দিয়ে মেয়েটার গায়ে হাত দিয়েছিলিস? ডান্ডা'টা দে তো হিরেন"... গর্জে ওঠে ইনস্পেক্টর আর্য। পাশ থেকে কনস্টেবল হিরেন মোটা লাঠিটা বাড়িয়ে দেয়। লাঠিটা হাতে নিয়ে ছেলেটার গায়ে জোরে জোরে তিন চারবার আঘাত করে আর্য। ছেলেটা চেঁচিয়ে ওঠে যন্ত্রণায়। আর্য আবার গর্জে ওঠে, "হারামজাদা, শুওরের বাচ্চা। চিল্লা, চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে গলা ফাটিয়ে দে। আমার হাতে সুযোগ থাকলে তোকে মেরে মেরে এখানেই...থু:" ছেলেটার গায়ে একদলা থুতু ছিটিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে আর্য। 

হিরেন দৌড়ে আসে ভেতর থেকে। এক গ্লাস জল বাড়িয়ে দিয়ে বলে, "এদের বাড়িতে মা বোন নেই ? মেয়েটার কী অবস্থা করেছে। ছিঃ !" 

আর্য চেয়ার ছেড়ে উঠে বলে, "ওদেরকে ও হয়ত ওই চোখেই দেখে। এদেরকে পিষে মেরে ফেলতে হয়। আমি এখন উঠি। রিপোর্ট ঠিক করে লিখে নিন। সকালে এসে দেখব, আর তারপর হসপিটালে গিয়ে মেয়েটার জ্ঞান ফিরলে - স্টেটমেন্ট নিতে হবে। " 

বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমন্ত মেয়ের ঘরে গিয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় আর্য। রঞ্জিনী একটু পরে সব কাজ শেষ করে এসে পাশে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, "খুব স্ট্রেসড? " 

"আর বোলোনা। একটা রেপ কেস। মেয়েটাকে ছিঁড়ে খেয়েছে শয়তানটা। তুলে এনেছি ওটাকে। ইচ্ছে করছিল গায়ের চামড়া টেনে ছিঁড়ে ফেলি। এদেরকে বাঁচিয়ে রাখাটাই একটা অপরাধ। " 

"শোবে চল। তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। ঘুমিয়ে যাবে। " 

বিছানায় শুয়ে যায় আর্য। লাইট অফ করে উঠে আসে রঞ্জিনী। আর্য'র কপাল টিপে দেয় ও। হঠাৎ করেই আর্য ঝাঁপিয়ে পড়ে রঞ্জিনীর শরীরের ওপরে। রঞ্জিনী আর্যকে কোনও রকমে বলে," লক্ষীটি, আজ না। ভাল লাগছে না। জ্বর জ্বর লাগছে, অনেক কাজ ছিল আজ। "

অন্ধকারেও আর্য'র চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। আঙুলগুলো দিয়ে টেনে খুলতে থাকে রঞ্জিনীর জামা'কাপড় অন্তর্বাস। ওর হিংস্রতার উল্লাসে চাপা পড়ে যায় অসহায় কাতর আর্তনাদ...চোখের জল মিশে যায় বালিশে। রঞ্জিনীর মনের মধ্যে অনুরণিত হতে থাকে

...মেয়েটাকে ছিঁড়ে খেয়েছে শয়তানটা। 





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ