পোস্ট বার দেখা হয়েছে
কবিতা :-
২৩৯ নং টেবিল থেকে বলছি .. । দে বা শী ষ
২৩৯ নং টেবিল থেকে বলছি ..
কেমন আছো পৃথিবী? কেমন আছো বিপন্নতা ,
তোমাদের উৎসর্গীকৃত ঝড়ের রাত কাছে আছে,
শোক থেকে আবেগ পর্যন্ত সরলরেখায় ,
কোভিডের দুর্দশাগ্রস্ত ইতিহাসের বুকে -
লেখা ছিলো সামান্য কিছু পরিকল্পনা, লেখা ছিলো আত্মত্যাগী মুহূর্ত।
২৩৯ নং টেবিল থেকে বলছি ..
কাছাকাছির সবটুকু কাছে, দূরত্বের দূরত্ব গন্ধ মেখে ,
সমাজের পাশাপাশি কবিতা জাহাজ চলুক -
চলতে থাকুন নানাবিধ লড়াকু ইতিকথা ।
বহুমূল্যের মাঝে , কোথাও কখনও সময় যদি লেগেছে কোন কাজে,
আজকের উন্মুক্ত লিটিল ম্যাগাজিন মেলায় মেলায় ,
পথের নিঃসৃত শব্দ মাখা আছে।
রেখেছি ষড়যন্ত্রের একটানা নীতি,
রেখেছি একশোবার মাথায় হাত দিয়ে ছুটে চলার প্রবণতা,
হাওড়া থেকে নন্দন ছুঁয়ে নীলাকাশ আর মানুষ হওয়ার শপথে শপথে -
কেমন আছো প্রকৃতি? কেমন আছো দুর্গতি ?
এখন অনেকটা খোলামেলা এই সময় -
তবু পরিস্থিতি এতোটাও সহজ নয়,
লোভের খাঁচায় পুষি আগামীর টিয়াপাখি -
এখনও ইচ্ছে হয় সমাজটাকে সবুজ বলেই ডাকি ,
একসাথে মিলেমিশে কলম -ইস্তেহারে ,
আবারও ফেরার চেষ্টা ঘরে - আবারও বন্দি দশা থেকে আলোর সংকেত পাই -
যতোই ভাইরাস আসুক -
ইচ্ছেরা চিরতরুণ, উন্মুক্ত, ঘরছাড়া -ই ।
মিলেমিশে এসো, শত অভিযোগ ফেলে,
ভালোবাসার আশায় আশায় বেঁচে আছি,
নন্দনের , ২৩৯ নং টেবিলে ...
আঁচল । জয়তী
সে তখন চুপচাপ সূঁচ ফোটায় জাজিমে-
দুই অলিন্দ মুড়িয়ে হেম ফোঁড় দিতে দিতে,
মায়ের পাঁচ আঙুলের সীমান্তে হাটুমুড়ে বসে থাকে...
কত তারিখ উড়ে পড়েছে ঝড়ে -
কত টিনের চাল সরিয়ে সে শহর এখন কংক্রিটের!
সব ভালো হোক -
অ্যাক্রিলিক রঙের ছবিঘরে কত অপূর্ণতার দাবী!
সীম পাতায় লতিয়ে পড়েছে তার নদী ধোঁয়া মেঘের আলো -
শূন্য পোকার মতো ঘুরে বেড়ায় অন্দরে- বাইরে,
সব ছাদের আঁচল তো তোমার মতো মোছে না হাওয়ার কাঁপন -
তবুও এ সমুদ্রের ডাক মুহূর্তের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে,
ওটুকুই ভিজিয়ে ;
কোথায় মিলায়?
দৃশ্য । সায়ন্তিকা
যখন থেমে যায় যাবতীয় লেখা ,
চারদিকে তখন কোলাহল ,
এসো !
শরীরও একাধিক ভাবে এক একটা কবিতা ,
তার ভেতরের দৃশ্যে চোখ রাখো ,
এসো !
তোমার আমার চশমার নিচে থেমে যাক নীরবতা
এসো আরও একবার
ভেঙে যাওয়ার আগে ,
আমাদের আসলে পেট
অথবা
কোনো কবিতা থাকতে নেই !
তবুও এই সব দৃশ্য দেখার আগে ,
এসো !
প্রিয় দর্শিনী । শুভ্রা পাল
তুমি কি শরৎ'শশি- নাকি ভুলুণ্ঠিতা ভোরের শেফালিকা ,
মুক্ত ঝরে ঐ হাসিতে - জানতে চায় মন কোন বাঁশিতে
বেঁধেছ আপন সুর ,
রুনুঝুনু ঝংকার তোলে ঐ হরিণী পায়ের নূপুর ।
শুভ্রবসনা হংসাসনা নয়তো তুমি ,তবু কেন লাগে !
সফেদ বসনে বুঝি নেমে এসেছেন ' সেই তিনি'ই ' ।
হাতে কিছু ফুল দোলে দোদুল দুল গলার মালাখানি ,
কে তুমি বলো সখী প্রিয়তমা --
কে --- কে তুমি প্রিয়দর্শিনী ?
ভোরের উষার মতো স্নিগ্ধ ,কমলকলির মতো পবিত্র ,
নিষ্পাপ , অচঞ্চল ,যেন বনোবাসিনী
অপলকে দেখি তোমায় ,এই শ্যামল শ্যামলিমায়
মুগ্ধতার তবকে মোড়া মৃদুভাষিনী , আমার মনোহারিণী ...
সুন্দীতা । রতন চন্দ্র রায়
সুন্দীতা তুমি কেন? কেঁপে উঠলে
আমার ছবির পানে চেয়ে!
এরকমতো কথা ছিল না।
অতীতের স্মৃতি তোমাকে
কুঁড়ে-কুঁড়ে খাচ্ছে!
ঘর হতে বাহিরে আসো
আকাশের পানে চেয়ে দেখো?
নিল জোছনার মাঝে
লুকিয়ে আছি আমি......
শুধু তোমাকে দেখবো বলে।
তুমি স্বপ্নেও ভেবো না আর কখনও
তোমাকে আমি স্পর্শ করবো।
কত দিন কত রাত কেটেছে তোমার সাথে
সেই তুমি কেমন করে?
বিষ ঢেলে দিলে!
আমার জলের গ্লাসে।
জানি না কার ঈশারায়,
আমার জীবন করলে সর্বনাশ!
আজ আমার বুকের মাঝে
কোন না পাওয়ার কাঁন্না নেই।
সুন্দীতা তুমি কি দেখেছিলে?
লাশ কাঁটা ঘর থেকে যখন
আমাকে দিয়েছিলো তুলে তোমার হাতে
তখন তোমার চোখের মাঝে
কোনো অশ্রু ছিলো না।
শুধু ছিলো ভয়!
সবাই গিয়ে ছিলো সমাধির তরে
শুধু তুমি যাওনি
একটি বারের জন্যও দেখতে।
তবে কেন? সুন্দীতা ভয় পাচ্ছো
অতীতের স্মৃতি মনে করে।
আমিতো আর কখনও ফিরবো না।
অণুগল্প :-
টিয়া কার মেয়ে ? । শিবাজী সান্যাল
এয়ারপোর্টের বইয়ের দোকানে অনিরুদ্ধ বই দেখছিল। হঠাৎ লক্ষ্য করল একটি মেয়ে , বয়স হয়তো উনিশ কুড়ি , পরনে জিন্সের প্যান্ট , গায়ে টি শার্ট কবিতার বই খুলে খুলে পড়ছে। এই বয়সের ছেলে মেয়েদের আজকাল কবিতার প্রতি কোন আকর্ষণ বিশেষ দেখা যায় না। ভাল লাগল , তাই কাছে গিয়ে বলল , “ তুমি কবিতা ভালবাস ? ” মেয়েটি বলল , “ ভীষণ , ইংরেজি অনেক পড়ি , সঙ্গে বাংলায় শ্রীজাত , সুবোধ সরকার , শুভ দাসগুপ্ত , জয় গোস্বামী । ” সামান্য কথার মধ্যে দিয়ে অনিরুদ্ধ জানতে পারল টিয়া কলকাতায় থাকে ,ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে পড়ছে , পরে গবেষণা করবে এবং মায়ের মত অধ্যাপনা করবে। অনিরুদ্ধ বলল , “ তুমি অনিরুদ্ধ হালদারের কবিতা পড়েছ ? ” ও হেসে বলল , “ প্রচুর । মায়ের প্রিয় কবি , আমারও খুব ভাল লাগে। আমাদের বাড়িতে ওনার সবকটি বই আছে , মা কিনেছে। ” খুশি হল অনিরুদ্ধ , কিন্তু পরিচয় তবুও গোপন রাখল।
“ টিয়া এবার চলে এস , বোর্ডিং এ্যানাউন্স হয়েছে। ” “ আসছি মা , দু মিনিট। ” স্বর শুনে অনিরুদ্ধ চমকে পেছনে তাকাল , দেখল নমিতা দাঁড়িয়ে আছে। কুড়ি বছর আগে বিচ্ছেদ হয়েছিল , আজও ঠিক তেমনই আছে। দুজনেই অবাক তাকিয়ে রইল। কয়েক মুহূর্ত , তারপরই নমিতা দোকান থেকে বেরিয়ে জোর কদমে চলে যাচ্ছিল। অনিরুদ্ধও ওকে অনুসরণ করে বলল , “ নমিতা একটু দাঁড়াও। শুধু একবার বল টিয়া কার মেয়ে ?” নমিতা কোন ভ্রুক্ষেপ না করে এগিয়ে যাচ্ছে। অনিরুদ্ধ পেছনে যেতে যেতে বারবার জিজ্ঞাসা করে চলেছে। নমিতা এবার দাঁড়াল ,পেছন ফিরে দৃঢ় কন্ঠে বলল , “ আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। টিয়া শুধু আমার মেয়ে। ” টিয়া আসছিল , নমিতা বলল, “ টিয়া তাড়াতাড়ি চল ।” নমিতা আর টিয়া দূরে চলে যাচ্ছে । অনিরুদ্ধ ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
0 মন্তব্যসমূহ