দর্পণ || কবিতাগুচ্ছ || কৌশিক গাঙ্গুলী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

"ধূসর প্রান্তর"


লাশের মিছিল আমাকে বিব্রত করছে

পাগলা হাওয়ার মতন

মহামারী না গণহত্যা?

কিছু ভালো লাগছেনা,

আমার মন ভালো নেই।

ভালোবাসার দিনে চোখে জল,

কালো দিন।

যে সব সৈন্যরা সেদিন মারা গিয়েছিল বিস্ফোরণে

 তাদের মধ্যেও নিজেকে খুঁজছিলাম

 গঙ্গার ধারে বসে একা একা, রবীন্দ্র গান

 আমাকে শান্তি দিতে পারো, প্রেম দিতে পারো কবিতা।

 ঈশ্বর কি জানে আমার কান্নার মধ্যে যে যন্ত্রনার উপকথা লুকিয়ে থাকে  তার প্রতিটি স্তরে  একটা অপমান তাকিয়ে থাকে।

ভুল হয়েছিল, ভুল হয়ে গেল সব

শূন্যতাকে ঘিরে রাখে ধূসর প্রান্তর।

তবু আগুন ছুঁয়ে সব সত্য আর মিথ্যা কে

ঘিরে মাকড়সার জালের মতন নীল স্বপ্নগুলোকে

ছুঁড়ে ফেলে পালাতে থাকি নিজের থেকে,

যদি নিজেকে কোনদিন খুঁজে পাই

অনন্ত মানবিক স্রোত থেকে যেখানে কোনো গোপন কথা থাকবে না,

থাকবেনা হিংসা,লোভ,প্রবঞ্চনার চিহ্ন,

কেউ কারোর ক্ষতি করে বিকৃত আনন্দ নিয়ে 

এগিয়ে যাবে না সাফল্যের রাস্তায়।

হে ঈশ্বর আমার আর কাঁদতে ভালো লাগে না

আমারও তো আনন্দের অধিকার আছে,

আছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পাওয়ার।

=====

 "ঘুম তাড়ানিয়ার গান"


আজ বিশে ফেব্রুয়ারী রাত, বাতাসের মত অস্বস্তি

ঘুমের মধ্যে হানা দিচ্ছে মুখের পর মুখ, চরিত্রের পর চরিত্র,

এক বৃদ্ধ জানালেন তিনি মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন, এখন তার সোনার বাংলাদেশ তাঁকে মনে রেখেছে কি...?

এপাশ ফিরে শুলে জিজ্ঞাসা করে এক যুবতী, কান্না ভেজা মুখ ধর্ষিতা অবস্থায় খুন করেছিল রাজাকারেরা, এখন তার সোনার বাংলাদেশে রাজাকারেরা আছে কি?

ওপাশ ফিরলে এক কিশোরের দীপ্ত মুখ ভাসে -

ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল, সে প্রশ্ন করে

আপনার বাংলায়, বাংলার জন্য কি করেছেন?

ক্রমশঃ অবাঙালী অধ্যুষিত কলকাতার চারপাশ নিয়ে তীব্র দহন এসে পড়ে আধোঘুমের স্মৃতিকোঠায়...

শিলচর, বরাক উপত্যকা- ১৯ শে মে।

ঘুম হয়না, আজ একুশে ফেব্রুয়ারীর ভোর, হিমেল স্পর্শ-

আঙিনায় শিউলি ফুলের কার্পেট, মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি, নগরকীর্তন, সেরে বাড়ি ফিরছেন অনাদিবাবু,

পড়ার টেবিলে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া ফুল রেখে আমার মাথার  ঘ্রাণ  নিয়ে মা জানালেন আজ তাঁর জন্মদিন।

রাস্তায় কয়েক পা হাঁটতেই কানে এলো চটকলের সাইরেন-

পাশাপাশি চলেছে বিহারী ও বাঙালি শ্রমিকেরা...

কাঁঠালি চাঁপার সুবাসকে চাপা দিয়েছে কেমিক্যালের কটুতা।

দীপেনকাকু মাড়োয়ারীর দোকানে কাজ করতে যাচ্ছেন কোলকুঁজো শরীরটা নিয়ে সংসার সামলানোর দায়বদ্ধতায়।

আজ একুশে ফেব্রুয়ারির দুপুর, রোদের তেজি ছটা-

বসে চাকরির দরখাস্ত লিখছি ইংরেজিতে  তখনই

বাংলাদেশের কোণে কোণে একক কিংবা সমবেত স্বরে গাওয়া হচ্ছিল সেই গান, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী/ আমি কি ভুলতে পারি....

কোন কোন মানুষ সূর্যের দিকে চেয়ে বলছিলেন :  লাঠি  চলেছে  চলেছে বন্দুকের গুলি / লড়াইতে  পেয়েছি জবানের ভাষা  আমরা কি করে ভুলি...।

আজ একুশে ফেব্রুয়ারী রাত, মায়াবী আলো- পাশের বাড়ি থেকে শোনা যাচ্ছিলো রবিঠাকুরের গান,

বারবার মনে আসছিল আবুল, সালাম, বরকত কিংবা বরাকের

শহীদ ভাইদের কথা, চোখ আপনা থেকে ভিজে যাচ্ছে, 

ভাষার জন্য সংগ্রাম,স্বাধীনতার জন্য লড়াই।

ঘুমোতে পারছিলাম না ভয়ে, যদি আবার স্বপ্নে সেই দীপ্ত তরুণ প্রশ্ন করে :  এই বাংলায়, বাংলার জন্য কি করেছেন?

অস্বস্তিতে আঁকড়ে ধরি জীবনানন্দের "রূপসী বাংলা" বইটিকে

একের পর এক কবিতা পড়ে চলি,

বাতাসে বাতাসে ভেসে আসছিলো,

আমি কি ভুলিতে পারি...।

=====

 "ইতিহাস"


ভেঙেছ ভালো করেছো 

আরো ভাঙো,আরো ভাঙো

দুমড়েমুচড়ে ফেলে দাও আমার লাশ ,

সভ্যতার বুকে এ এক বর্বরতার চাষ,

আমার রক্তে রাঙানো মাটিতে লিখেছি যে ইতিহাস

তা আলোড়ন তুলবেই এ আমার বিশ্বাস।

তবুও আমি চেঁচিয়ে যাব 

যতই মিথ্যা ফানুস গড়ো

লোভ দেখিয়ে যাবে না কেনা

যতই তুমি মিথ্যা মানুষ গড়ো,

ওরা মানুষ নয় শুধুই ক্রীতদাস

সভ্যতার বুকে বর্বরতার ইতিহাস

অন্ধকারের জয় দেখতে যারা করে উল্লাস

তাদের দেবে যোগ্য জবাব,

পড়ে থাকা আমার লাশ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ