কবিতাগুচ্ছ || নিবেদিতা




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

চল জলকে যাই...


নদীর কাছে গেলে কেমন যেন হয়ে যাই। 

যেন আরো বেশি বেশি নারী হয়ে যাই.. .নদীর তীরে বসে বয়ে চলা সময়ের কুলু কুলু ধ্বনি শুনি.. পাঠ করতে মন চায় নদীর তরঙ্গের ভাষা। তাই মন বলে চল জলকে যাই। 


নদীর কাছে গেলেই আমি যেন কেমন হয়ে যাই। 

আকাশ জুড়ে বৃষ্টি পড়লেই, 

তাই কিসের টানে যেন ছুটে যাই.. গভীর থেকে গভীরতা খুঁজে পাই... জলের স্পর্শটুকু

সারা অঙ্গে মাখিয়ে যেন আমায় চলার পথে ছন্দ খুঁজে পাই। তাই জলের কাছে গেলেই আমি বেশি বেশি নারী হয়ে যাই। 


দেখ আকাশ জুড়ে কেমন বৃষ্টি পড়ছে..চল না রে জলকে যাই। বৃষ্টি পায় পায় আমি তুই একটু ভিজি.."আয় বৃষ্টি ঝেঁপে জীবন দেব মেপে".... বৃষ্টি তে ধুয়ে যাক যন্ত্রণা ,জুড়িয়ে দহন জ্বালা.. আকাশ মেঘে বৃষ্টি মাটি আর জল..আর শুধু তুই আর আমি... তখন আমি আরো বেশি বেশি নারী হয়ে যাই...। 

তোর কাছে গেলে আমি......!!

===

 কষ্ট....


রোজ রাতের শেষ ভোর ,আর দিনের শেষে রাত এই দুইএর সন্ধিক্ষণে এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হাঁকতে থাকে,আমার মনের গহীনে।


ঝোলাতে হরেক রকমের কষ্ট আছে, কষ্ট নেবে কেউ...কষ্ট! গোলাপি কষ্ট, সবুজ কষ্ট, নৈঃশব্দের কষ্ট,ঝরতে থাকা হলুদ পাতাদের কষ্ট, অনন্ত আকাশের নীল কষ্ট,না বলতে পারার কষ্ট, প্রতিবাদ করতে না পারার কষ্ট, সত্যি বলতে না পারার কষ্ট, সব বুঝেও নীরব থাকার কষ্ট, ভুল বোঝার কষ্ট, অবহেলিত হওয়ার কষ্ট, এমনই কত কিছুই!


জানো, আমার খুব ইচ্ছে করে, বয়েসের অভিজ্ঞতায় নিমজ্জিত সেই ঝুলিতে হাত ঢুকিয়ে দেখি, কষ্ট গুলো ঠিক কি রকম!..কষ্ট কি কম,বেশী হয় কখনো?  সেদিন, বেণীমাধবের কাছে সে কথা বলতেই, ঘনকালো মেঘের কষ্ট আর আলতা পায়ে ডাগর চোখের সাঁওতালি মেয়ের গল্প বলেছিল কাব্যি করে। 


আমার তখন মনে পড়েছিল,ছোট্ট অমলের গল্পকথা... অমলের সেই ফেরিওয়ালা... "দই নেবে গো দই, ভালো দই".... যে জানালার ধারে রোজ অমলের সাথে গল্প করতো। ভাবতেই চোখ ছলছল ! 


যদি,আমারও এমন আপন কেউ থাকতো, বেশ হতো, কতো গল্প হতো,  পাখির মতো মন হালকা হতো, কিন্তু আমার যে কোন ফেরিওয়ালা নেই...কল্পনায় গড়া স্বপনের সেই ফেরিওয়ালা রোজ সকাল সন্ধ্যে একটু করে বদলে যায়! কী যে করি! ভাবতেই একটা চিনচিনে কষ্ট বুকে চেপে বসে।


 আসলে কষ্টের কম বেশি বলে কিছু হয় না.. আরো কষ্ট, বেশি কষ্ট, অনেক অনেক কষ্ট, গভীর কষ্ট... সবটাই ভাবনার ওপর... তাই কষ্টের কোন শেষ নেই, তল নেই, কোন সংজ্ঞাই যেন যথেষ্ট নয়। 


শুধু আছে একটা মন...সেই মনটা হোক সর্বাঙ্গীণ সুন্দর। সহজিয়া সুরে বলতে পারে ভালোবাসি ভালোবাসি।

====

 নীল কথোপকথন...


আশমানী নীলে তোমার পানে চাই। অনন্ত আকাশ! কতো গভীর! 

তোমার ওই গভীর নীলে আমি হারাতে চাই। 

আমার শহরে নীল,যাপনে নীল, ভালোবাসায় নীল। 

বেদনার রঙে নীল। নীলে নীলে আরো বিষাক্ত হতে চাই। তোমাতে হারাতে চাই। এমনই ছিল দীর্ঘ শেষতম কথা। আচ্ছা তুমিই বলো, শেষ কথা বলে কিছু কি হয়!! 


ওই দেখো নীলের মাঝে গোলাপি হলুদ ডোবানো সন্ধ্যাবেলা। 

মাটির উপরে হলুদ রঙের সর্ষেক্ষেত। সর্ষের দানায় দানায় তোমায় ছুঁতে চাই। একটু উষ্ণতায় ডুবতে চাই! 

কাছে যেই এলাম, সব তবে ফাঁকা ফাঁকা কেন মনে হয়! 

প্রেম কতো কথা দেয়, কথা গুলো তবে কোথায় যায়! 


বলেছিলে,কোন এক রাঙানো বিকেলে দীর্ঘতম চুম্বন হোক। হয়ে গেল দীর্ঘতম শেষ কথা। দেখ বীজ গুলো কেমন আলো,জল চায়, বৃষ্টি চায় ভালোবাসা চায়!

 সব বীজ বোধহয় পায় না। চাইলেই বুঝি সব পাওয়া যায়! ওরা ভিখারী নয়, ওরা তবে আমারই মতো কাঙাল। 


 ওরা তখন নীল নদী হতে চায়, ভেসে যায়,ভেসে যায়, কুল কিনারা কিছুই না পায়! 

এই মায়াময় সন্ধ্যাবেলায়। শুধু কথা গুলো নীরবে নীল! জেগে রয় রাতের আকাশে,কিংবা হেমন্তিকার শীতল বাতাসে, আমন ধানের গন্ধে ভেসে বেড়ায়!!

====

 নৈঃশব্দের শব্দ..


কোন শব্দ নয়। না, বলো নাকো কিছু,একটু চুপ থাকো। তোমার কর্ণকুহরে গুঞ্জরিত হোক, গভীর  রাতের তোলপাড় করা একবুক যুবক সমুদ্রের গর্জন! অতল গভীরে প্রবেশ ধীরে ধীরে! হুইসেল বাঁজিয়ে যাওয়া ট্রেনের বিরহের সুর,শীতল নিস্তব্ধ রাতের নৈঃশব্দের ভাষা! তুমি শুনেছো কী? 


আমার চোখের কনীনিকায় স্বপ্ন জ্বলে! চোখে চোখ রাখ,দেখো আলিঙ্গনে আবদ্ধ নিথর এক খাজুরাহো! 


 বেশি কাছে এসো না, দূরেই থাকো। যেমন ভর দুপুরে থমকে থাকে দুপুরবেলা। বারান্দায় অলস বিকেল এসে ঢলে পড়ে। নেমে আসে মায়াবী হলুদ ডোবানো গোলাপি সন্ধ্যা বেলা। 


ঠিক তেমনি করেই আমার গভীরে তুমি নেমে এসো ধীরে ধীরে। 


যেমন করে অলির কথায় রাত্রির ফুলেল হাসি, আর গন্ধেভরা তনু মাদকতা। 

শুনি ঝরাপাতার আহ্ট আর শীতল হাওয়ার ক্যালেন্ডারের পাতায় বছর উড়ু উড়ু। শুনি বুকের মধ্যিখানে দুরুদুরু! সেখানে এক আজনবীর আগমন! রক্তকণায় তুলেছে তোলপাড়! 


শুধু সেই টুকুই আমার সুখ, আর সেই টুকুই আমার অসুখ! 


চোখের কোনে যত্নে তুলে রাখা আবেগী অশ্রু বিন্দু! তবুও বুঝি না, আবেশ জড়ানো ঝরা পাতায় কেন যে তোমায় আমি ভালোবাসি!!

===

 নীল রঙের আদর.... 


 এমন নীলাভ বৃষ্টি বাদল দিনে, আমার দিশেহারা চোখ কেবল তোকেই খোঁজে! 


আষাঢ়ে মেঘে পরতে পরতে নির্জন নীলের সমারোহ! বিরহিনী রাধিকার নীলাম্বরী শাড়ি,মেঘের রঙ, বৃষ্টির রঙ,দক্ষিণা বাতাস বলে গেল আষাঢ়ে বাঁধ ভাঙা বারিষ সে তো শ্রাবণের অপেক্ষায়! তোর সুরের ধারায় বৃষ্টিসুখে তৃষিতা মাটির বুকে সোঁদা মাটি গল্প লেখে। ভেজা সুবাসে দোলা লাগে কুঁড়ি কুঁড়ি পাতায়। 


 মনকেমনের মেঘলা দিন, আকাশ ছেঁচা বৃষ্টি জলে আজানুকেশ ভিজিয়ে নিয়ে তোকে ছুঁয়ে আমার ভিজে মন মুছে আমি আবারও একলা..! যেমন সব কটা বৃষ্টির ফোঁটা ভীষণ একলা.. ঠিক তোর মতোন আমার মতোন..! 


আজ বৃষ্টি ভেজা শ্রাবণ দিনে তোকে অনেক টা খোলা আকাশ দিলাম! তেমন করে তোকে কিছুই তো দিতে পারি নি। জানি, আকাশ তোর ভীষণ প্রিয়... তাই তোর আকাশ তোর ই থাক, আমায় শুধু  আকাশের একটু নীল দিস! 

অদ্ভুত চোখে তুই আমার দিকে তাকালি, 

বললি নীল, সে তো দুঃখ!

বললাম, নীল আদর আমি খুব ভালোবাসি..। 

তাই তোর আকাশের নীল টা শুধু আমার  হোক।।

===

 প্রেমরোগ,,,,,,,,


অনন্ত আকাশের বুকে একটাই সূর্য, 

আর ঝিকিমিকি তারায় ভরা রাতের আকাশে একটাই চাঁদ, সে তুমি পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকে যে ভাবেই দেখো না কেন? 

প্রতেক মানুষের বুকের ধুকপুকে একটাই হৃদয়,

সে তুমি যেমন করেই ভাবো। কিন্তু মন? কোথায় মনের বাস? মনখারাপ কেন হয়? মন তবে কি? উত্তর নেই কোন! 


 তোমার কাছে আমি মন চেয়েছিলাম, জানি তুমি কতোজনকেই তো ভালোবাসো! 

তুমি বললে মনটা কোথাও রেখে এসেছি রে। এই মন অন্য কারোর জন্য। বললাম অপেক্ষা করবো, প্রতীক্ষায় থাকবো। 

তুমি বললে ভালোবাসি তো!  বললাম, মনটাই সবচেয়ে দামী,শুধুমাত্র তোমার মনটাই  আমার চাই। তুমি বললে সময়। 

সময় সব ঠিক করে দেবে। 

বেশ তো! দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকবো। 


তারপর,কতো রজনী,কতো শতাব্দী পেরিয়ে গেলো।কোনো এক বৃষ্টি ভেজা শ্রাবণ সন্ধ্যায়, তুমি বললে, জানিস তো, আমার মন অনেক ভাগে ভাগ হয়ে গেছে, নিজের মন কে নিজেই চিনতে পারলাম না আজও ঠিক করে, 

তাই মন টাকে আর জোড়া লাগাতেও পারলাম না। আমি অবাক চোখে তোমার পানে চেয়ে রইলাম কিছুই বলতে পারলাম না। তুমি কিছু হয়তো অনুমান করলে চোখের ভাষায় বললে, কিরে তোর চোখ ছলছল কেন? বোকা মেয়ে! ভালো থাক।


সত্যি নিঃস্বার্থ ভালোবাসলে মানুষ এমনই বোধহয় বোকা হয়ে যায়! শর্তরা যেখানে শর্তহীন, দাবি যেখানে দাবিহীন। তুমি তা বুঝেও বুঝলে না। 

এরপর, অনেক বছর, অনেকগুলো শতাব্দী পেরিয়ে গেলো। 

কোন এক শিউলি ঝরা শরতের ভোরে তুমি এসে বললে, প্রচন্ড এক ঘূর্ণিঝড়ে মনের টুকরো গুলো উপড়ে পড়ে ধুয়ে মুছে গেছে। আজ ভাঙ্গা মন নিয়ে তোর কাছে এলাম.......! 


সময়ের সাথে, তখন আমি ভোরের শিউলির মতো মাটিতে ঝরে গেছি! শুধুই ছবি হয়ে তাকিয়ে আছি তোমারই মুখপানে।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ