দর্পণ | সাপ্তাহিক নির্বাচিত কলম | কবিতা, নিবন্ধ ও গল্প




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


 


কবিতা :- 

ভালো আছিস ?/ ঋষি 


তোমার ছবিতে ঝোলানো মালাটা শুকোয় না কিছুতেই
আজ প্রায় গত তিনবছর
এ যেন এক অনিয়মের ভিতর থেকে তুমি ডেকে ওঠো
বুনু বাবা,তুই ভালো আছিস ?
আমি বুঝি এ এক রসিকতা আমার সাথে
আমি কি খাচ্ছি ,আমি কিভাবে বাঁচছি তুমি একবারও জানতে চাও না
অথচ বুকের ভিতর টাঙানো শুকনো মালার ফটোটা থেকে জানতে চাও
ভালো আছি কিনা।
.
আসলে সবটাই রসিকতা
এখনো সম্পর্কের ওপারে দাঁড়িয়ে আমি ভাবি তুমি ভালো আছো ,
সেই আটপৌরে শাড়ি তোমার গায়ে
তুমি বাবার দিকে তাকিয়ে বলছো শুনছো বুনুর খুব জ্বর
অথচ এখন আমার দৈন্দিন জ্বরে তোমার গন্ধ খুঁজি
তুমি ছবির ভিতর থেকে মিচকে হাসো।
.
অনেকেই বলে এইবার বদলে দে মালাটা -শুকিয়ে গেছে
অথচ আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তাকিয়ে খুঁজি তোমাকে তোমার ছবির ভিতর
বুঝতে চেষ্টা করি সত্যি কি ছিল সেদিন
যেদিন তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে তুই একদিন অনেক বড়ো কবি হবি
সেও কি ছিল তোমার রসিকতা।
কবি সে কি মানুষে হয় ?
কবি সে কি সুখী হয় ?
কবি সে কি বেঁচে থাকলে হয় ?
.
তুমি আমার কাছে বেঁচে নেই আজ বহুদিন
অথচ তুমি কিভাবে যে বেঁচে রইলে আমার ভিতর
শুকনো মালাটা বিশ্বাস করো আমি বদলাবো না কোনোদিন
ঠিক একদিন ঝুলে পড়বো আমি তোমার পাশে
একই মালার ভিতর।


------------------------------

গভীর অসুখ....../ জয়া

বারে বারে কেন যে তোমায় ভালোবেসে ফেলি জানি না! 
আমার এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। 

তোমার ভালোবাসি,বলারও প্রয়োজন ছিল না। 
যদি অনুভবে নাই নিতে পারো,
তোমায় বলে দিলাম যেই, ভালোবাসা কম হয়ে যায় না! 

ভালোবাসার জন্য কতো কিছু ছিল! 
এক গাছ ভর্তি কবিতা ছিল। 
আমি তো কবিতাকেই ভালোবাসি। 
কবিতা তেই গুমেরে মরি, হাসি, কাঁদি,বাঁচি! 
তবুও তুমি বলো আমি কবিতা পড়ি না! 

সেই তোমাকেই মনের কথা বলে চলি অনর্গল! 
আমার তো এমন হবার কথা ছিল না।

 আকাশের বুকে ওই নীল পাখি টাকে ভালোবাসার কথা ছিল। যাকে ধরা ছোঁয়া যায় না। 
তবু মনের কথা সে ঠিকই বোঝে! 
রাত জাগা পাখির মতো কানে কানে বলে,এই যে তুই নোনা জলে চোখ ভাসালি,দেখ চেয়ে এই পৃথিবীতে কেউ যে কারোর নয়! রাতে না খেয়ে ঘুমাস না। 

সব ভালোবাসাই যেখানে পবিত্র। পবিত্র ভালোবাসার জন্য ফুল বাগান ছিল, যে ফুল বাগানে মালি কখনও বদলায় না। বুকে আঁচড় কেটে অন্য ফুলবনে যায় না। শুধু সুগন্ধি ছড়িয়ে আবেশে জড়িয়ে থাকে। 

ভালোবাসার জন্য বয়ে চলা তিস্তা নদীর কোমল সবুজ বুক ছিল। 
সবুজের ছোঁয়া নিয়ে কেন যে তার অতল গভীরে ডুব দিলাম না! 

আমার তো তোমাকে ভালোবাসি বলার দরকার ছিল না! 

আমার তো সবুজ বনানীর সৌন্দর্য বক্ষে এনে হৃদয়ের চক্ষু দিয়ে দেখার কথা ছিল। কথা ছিল কোন এক বটবৃক্ষের কোলে আশ্রয় নেবার। আমার তো কোন মানুষ্য কে ভালোবেসে নিরাশ্রয় হবার কথা ছিল না! 

আমার পাহাড়ের মতো শব্দহীন হবার কথা ছিল।
বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার কথা ছিল না। ভালোবাসর জন্য আমার আবাল্য প্রেম বৃষ্টি ছিল! যার স্পর্শে আজও শরীর মন জুড়ে শিহরণ জাগে,জুড়িয়ে দহন জ্বালা! 

ভালোবাসার জন্য কতো কিছু ছিল, তবুও কেন যে তোমায় ভালোবেসে ফেলি,নিজেই ঠিক করে জানি না! 

আসলে আমি ভিখারি নই, বিচ্ছিরি রকমের এক কাঙাল।তাই তো ভালোবেসে ফেলি।তোমায় ভালোবাসা এক ভীষণ রকম অসুখ,গভীর অসুখ, যা সহজে সারে না!!

------------------------------

রাজশ্রী, হাতটা ধরো / সুব্রত হালদার



বিস্মৃতির বেনোজল পেরিয়ে এসে স্মৃতির আলপথে দাঁড়াতেই দেখি- 
মৃত শ্যাওলার মতো কিছু অব্যক্ত অভিমান, 
কিছু স্বপ্নভাঙ্গা শোক লেগে আছে পাঁজরে কঙ্কালে ...  
শিয়রে কিছু এলোমেলো মেঘ .. 
চারপাশে কিছু বিষন্ন আলো-আঁধারির আবছায়া হয়েছে জড়ো...

আরো অনেকটা পথ হাঁটা বাকি.. 
রাজশ্রী, হাতটা ধরো...

বড় গভীর অসুখ এখন পৃথিবীর শিরায় শিরায়...
লোভ-লালসা লাম্পট্টে রক্ত বিষিয়ে যায়..
কলে কারখানায় যে শ্রমিক,মাঠে -প্রান্তরে যে কৃষক ঝরিয়েছিল ঘাম..
তাদের থুবড়ে পড়া রক্তাক্ত মুখে মাছি ওড়ে... 
এ-ছবি ফুটেজ দিতে পারে এইসব ভেবে আজকাল মিডিয়াতে ঘোরে...
নগ্ন নারীর শরীর পণ্য হয়ে যায় , বিজ্ঞাপনে হেসে ওঠে সভ্যতার মুখ..
তবুও দেখি কি অদ্ভুতভাবে বসন্ত আসে -ডালে ডালে ফুটে ওঠে পলাশ- কিংশুক..
জোনাকির চকমকি মুছে নতুন করে আসে হিরণময় ভোর..
গাংচিল ভেসে যায় ডানা মেলে দিগন্তের দেশে..
যুক্তি ফুলের বীজ ওড়ে শুকনো বাতাসে ..
গমরঙা বিকেল ছুঁয়ে আবারো কাকচক্ষু সন্ধ্যা নেমে আসে..
কিছু নির্লিপ্ত অন্ধকার অহল্যা পাষাণীর মত শুয়ে থাকে উদাসী প্রান্তরে.. 
ভিজতে থাকে শিশিরের জলে অগণন নক্ষত্রের সোনালী আলোর ভীড়ে... 
গাছের ছায়ার নিচে, পাতার ছায়ার নিচে ধূসর কুয়াশার স্তর গুলো হয়ে ওঠে গাঢ়...

অনেকটা পথ হাঁটা বাকি..
রাজশ্রী, হাতটা ধরো..

কতদিন হয়ে গেল বৃষ্টি আসেনি.. 
মৌনি পাহাড় শোনেনি ঝরনার কলধ্বনি ... 
সবুজ শস্যের গন্ধ মেখে তোমার শ্যামলী আঁচলের প্রান্তে জলছবি আঁকা হয়নি...

আমার এই টুকরো টুকরো অর্থহীন অভিমান...
বিনিদ্র রাত জুড়ে বোবা আবেগের অকারণ আকুলতা..
অলীক সুখের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা সবটুকু খেয়ালী দুঃখ যাপন ..
তোমার নীল জ্যোৎস্নার জলে ডুবে ডুবে যায়.. নিশিদিন আমাকে ভেজায়...
আবর্তিত পৃথিবীর মন্থন রেখায় আকণ্ঠ বিষপানে নীলকন্ঠ হতেও বড় সুখ,  
তোমার নির্জনে, গভীর গোপনে ..তোমার খেয়ালখুশী মতো ভাঙ্গো আর গড়ো...

এটুকুই তো চাওয়া ...
অনেকটা পথ হাঁটা বাকি... 
রাজশ্রী, হাতটা ধরো।

------------------------------


দিনান্তে / চন্দ্রনাথ অধিকারী


 বাতায়নে অকাল বৃষ্টির আলাপন
সঙ্গ দেয় এলোমেলো বাতাস
অবুঝ মন খারাপ
আর তুমি! 

হাওয়ায় উড়া তোমার আঁচল
উদ্বেলিত রঙ বাসন্তী! 

অনুভবে এক ফোঁটা বৃষ্টির জল--
পদ্মপাতার মতো টলমল ঠিক স্তনসন্ধির মাঝে! 

পুনর্বার আমি ভেসে যাব ; যেভাবে ভাসতে চেয়েছি! 
জীবন যুদ্ধে হার-জিৎ খেলায় মেতেছি --
                                       শুধু তোমার জন্য!


------------------------------

শিরদাঁড়ার‌‌ দামে লিখো / সুজনা


ওই সম্পর্কটাকে রক্ষা করো
ওই ইচ্ছেগুলোকে মর্যাদা দিতে ভুল কোরোনা
ভুল কোরোনা ওই বিশ্বাসটাকে‌ আগলে রাখতে ভরসার কাঁধে ;
ওইখানে আগুন জ্বেলোনা -----
যদি তোমার সাথে ভাগ করে নেয় এমন কিছু ,
যদি গভীর গোপনের কিছু কথা, কিছু অভিলাষা, কিছু অনুভুতি , কিছু প্রশ্রয় ----
যদি দামী প্রচ্ছদের মোড়ক থেকে কোনো পাতা
কোনো সখ্যতা
কোনো অন্তরঙ্গতা ----

যদি , যদি হৃদয় গহীন কোণ থেকে 
যদি , যদি স্তব্দ রাতের বুক চিঁড়ে 
যদি , যদি নিপাট যত্নের ভাঁজ ভেঙ্গে
যদি, যদি ভীষণই অন্তর্স্থলের উপলব্ধি ‌ছিঁড়েখুঁড়ে ‌----
ওই সম্পর্কটা 
ওই ভাবনাটা
ঘুম আসে যদি অক্ষম চেষ্টায় 
নিঃশব্দ চরণের ধ্বনি যদি রয়ে যায় নদীর মোহনায়
যদি হৃদয়কে ভাসিয়ে দেওয়া দ্বিধাহীন ভাবে
যদি ------ 

বন্ধনটাকে করো সমাদর ;
সম্পর্কটাকে করো অনুভব ;
ইচ্ছেগুলোর করো সম্মান ;
বিশ্বাসকে রক্ষা করো ; রক্ষা করো ;
রক্তাক্ত মনের আশ্রয়টাকে আগলে রেখো আহ্লাদে , আদরে , সাদরে ;
পাথর ধ্বসে গেলে ঠেকিয়ে রেখো পাহাড়টা ক্ষমতার শেষটুকু দিয়েও ।

বঞ্চিতের রাজ্যে 
অবহেলিতের সাম্রাজ্যে 
বিশ্বাসটা যত্নে রেখো তোমার প্রেমেই তুমি ,
আশ্রয়ের আশ্বাস দিয়ো ভালোবাসার অপূর্ব ভুমিতে ,
বেঁচে ওঠা তোমার সাজে 
বেঁচে উঠুক ছবি 
বেঁচে উঠুক রচনা
উঠান‌ জুড়ে বিছিয়ে দিতে স্নিগ্ধ গন্ধ যতো ;
ওই সম্পর্কটাকে নষ্ট করতে পারোনা ; পারোনা ;
ওইখানেই যে ভরসার জন্ম অমলিন ;
ওইখানেই তো লেখা আছে তোমার ঔজ্জ্বল্য ;
ওইখানেই তো অবলম্বনের উৎসটা নিশ্চুপ ।।

------------------------------

গল্প 

চরিত্রহীনা / জয়া চক্রবর্তী সোমা 


"ছি:ছি:...আমার ঘেন্না করছে,জাস্ট ঘেন্না করছে তোমার মুখ দেখতে বিশ্বাস কর।তুমি... হ্যাঁ এই তোমাকেই নাকি আমি একদিন ভালোবেসেছিলাম।তোমাকে ভালোবেসে মা বাবা কে কাঁদিয়ে ঘর ছেড়েছিলাম।সবাই বলেছিল যে মেয়ের জাত জন্মের ঠিক নেই..যার বাবা মা পাপের সন্তান বলে তাকে অনাথাশ্রমে ফেলে যায়, সে কক্ষনো ভালো হবে না।আমি শুনি নি।ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম।
 জানো হিয়া আমার এখন কি ইচ্ছে করছে? ইচ্ছে করছে সব ভেঙে ছিঁড়ে খুঁড়ে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাই।কিন্তু আমি পারব না।পারব না কারণ আমি খাঁচার পাখি।পারব না কারণ আমি আমার রিয়া সোনা কে ছেড়ে থাকতে পারব না।রিয়া সোনার তো মা বাবা দুজনকে চাই।তাই তোমার মত একটা নষ্ট চরিত্র মেয়েকে আমায় এক ছাদের নীচে সহ্য করতে হবে।"এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে যায় রুদ্র।ঈষৎ হাঁফাচ্ছে ও।চোখ মুখে ঠিকরে বেরোচ্ছে ঘেন্না।দেড় বছরের রিয়া কোলে নিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা দড়াম করে বন্ধ করে ও বেরিয়ে যায়।
হিয়া কিন্তু মাথা নীচু করে পায়ের বুড়ো দিয়ে মেঝে খুঁটছে।চোখে চোখ রেখে রুদ্রের কথার প্রতিবাদ করার মত কিছু নেই তার কাছে। রুদ্রের প্রতিটা কথা সত্যি।রুদ্রের দাদার মত যে অরুণ, তার সাথে সত্যিই তো হিয়ার অবৈধ সম্পর্ক ছিল।রুদ্রের এক্সিডেন্টের পর যখন সে বিছানায় শোয়া ছিল দীর্ঘদিন, তখন এই ফ্ল্যাটেরই রুদ্রের পাশের ঘরে রুদ্রকে ঘুমের বড়ি খাইয়ে আসার পর আদিম খেলায় মাতত অরুণ আর হিয়া।রুদ্র কোনদিনও এতটুকু সন্দেহ করতে পারে নি।তাই রুদ্রের কথার কি প্রতিবাদ করবে সে।
রুদ্র আর সে তো ভালোবেসেই ঘর বেঁধেছিল।সব ছেড়ে এসেছিল রুদ্র শুধু হিয়ার জন্য।সুখেই তো ছিল ওরা।রুদ্র একটা সেলসের চাকরী নেয়।এই ছোট্ট দুকামরার ফ্ল্যাটে সংসার পাতে ওরা।একমাত্র অরুণদা ওদের সাহায্য করেছিল।বিপত্নীক ভদ্রলোক রুদ্রকে ভীষণ ভালোবাসতেন।
কিন্তু সুখ যে হিয়ার সইল না।তাই একদিন একটা গাড়ির ধাক্কায় মারাত্মক এক্সিডেন্ট হল রুদ্রের।বাঁচার আশা ছিল না।হিয়া পাগলের মত ছুটে যায় অরুণের কাছে।তারা এক কাপড়ে চলে এসে সংসার করেছিল।এতটুকু সঞ্চয় নেই।হাসপাতালে এতগুলো টাকা কোত্থেকে দেবে সে?তারপর পুলিশি ঝামেলা।বিহ্বল বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিল সে।শ্বশুরবাড়ির কাউকে সে চেনে না।রুদ্রের কোন জ্ঞান নেই।একমাত্র অরুণদা ছাড়া কেই বা আছে যার কাছে সে যেত।
অরুণদা পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।টাকায় পয়সায় ছোটাছুটিতে।দিনরাত স্নান খাওয়া ছেড়ে হিয়া বসে থাকত হাসপাতালে। অরুণ টেনে টেনে ওকে নিয়ে গিয়ে খাওয়াত।বিপত্নীক অরুণের বোধহয় কেমন মায়া পরে গিয়েছিল অসহায় মেয়েটার উপর।এত সুন্দর দেখতে হিয়াকে,অরুণ দেখেছে যেখানেই সে যায় কিছু চোখ অন্যভাবে দেখে।অসহায় একা মেয়ে দেখলে তারা সুযোগ নিতে চায়।অরুণ তাই আগলে রাখে হিয়াকে।রুদ্রর অপারেশনটা হয়ে যায়।প্রাণে বেঁচে যায় সে।কিন্তু সারাজীবন উঠে বসতে পারবে কিনা সে কথা ডাক্তারেরা বলতে পারেন না।
রুদ্র বাড়ি ফেরে।হিয়া অরুণকে বলে যদি একটা কাজ পাওয়া যায়।অরুণ বলে-"কাজ করলে রুদ্রের দেখাশোনা করবে কে?আমি তো আছি।একটু ভরসা কর আমায়।"হাতে হাত রেখে উষ্ণ চাপ দেয় অরুণ।চমকে ওঠে হিয়া।এটা কি শুধুই আশ্বাস....নাকি এই আশ্বাস নিজেও কিছু প্রতাশা করে।
অরুণ একাই থাকে।তার বৌ বাচ্চা হতে গিয়ে মারা যায়।এখন রুদ্রকে দেখতে সে প্রায়ই আসে অফিস ফেরত।হিয়া না খাইয়ে ছাড়ে না।রুদ্র কথা বলে কোন রকমে উঠে বসে।কিন্তু কোমরের নীচ থেকে নড়ে না।ডাক্তার আশ্বাস দেয় দীর্ঘ চিকিৎসায় হয়ত....
একদিন ঝড় ওঠে। রুদ্র অষুধ খেয়ে দশটার মধ্যে শুয়ে পরে।সেই ঝড়ে বাড়ি ফেরা হয় না অরুণের।মাঝরাতে ঝড় বাড়ে।কারেন্ট চলে যায়।অরুণের ঘরে মোমবাতি আনতে যায় হিয়া।মোমের কম্পমান আলোয় হিয়াকে কি অপূর্ব লাগে... চেয়ে থাকে অরুণ।রুদ্র আজ তিনমাস বিছানায়।আর হয়ত কোনদিন সে উঠবে না।এই মেয়েটাও তার মত একা....তার মতই রিক্ত....তার মতই শূন্য... কি যেন হয়ে যায় তার।হিয়ার কাঁধে হাত রেখে গভীর স্বরে সে ডাকে-"হিয়া...."
হিয়ার অন্তরাত্মা পর্যন্ত কেঁপে ওঠে সেই ডাকে।অরুণের চোখে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষুধা।কি করবে সে????পাশের ঘরে পরম নিশ্চিন্ত বিশ্বাসে যে মানুষটা ঘুমিয়ে আছে সে যে শুধু তাকেই ভালোবাসে।তার শরীর মন আত্মা সবটুকু শুধু রুদ্রের।কিন্তু অরুণদাকে যদি সে আজ ফিরিয়ে দেয় অরুণদা যদি হাত সরিয়ে নেয় কি করে সে বাঁচাবে রুদ্রকে।ডাক্তার অষুধ ফিজিওথেরাপি সংসারের খাওয়া পরা সব...সব চলে অরুণদাও দয়ায়।চোখে জল ভরে আসে তার।অরুণদার আঙ্গুলগুলোকে ক্লেদাক্ত মনে হয়।কিন্তু চোখ বুজে অরুণের বুকে মাথা রাখে সে।
যে শরীর শুধু রুদ্রের তা রুদ্রকে বাঁচানোর জন্য তুলে দেয় অরুণের হাতে।
ঘেন্না ঘেন্না নিজেকে অপরিসীম ঘেন্না করে তার।তবু অরুণের সাথে এই শরীরের খেলা হাসি মুখে চালিয়ে যায় সে দীর্ঘ প্রায় একবছর।
ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে রুদ্র।ক্রাচ নিয়ে হাঁটতে পারে।স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে থাকে।একদিন অরুণদার হাত জড়িয়ে কেঁদে ফেলে রুদ্র।বলে-"তুমি আমাদের জন্য যা করেছ অরুণদা..আমার নিজের দাদাও করত না।তুমি আমার কাছে নেক্সট টু গড।"সেদিন অরুণকে দেখে মনে হয়েছিল চাবুক খেয়েছে সে।সাদা হয়ে গিয়েছিল মুখ।
এরপর অরুণ আর আসত না।টাকা পাঠিয়ে দিত।রুদ্র বাড়িতে ডেটা এন্ট্রির কাজ শুরু করে অরুণদাকে বলে পাঠায় আর টাকা না পাঠাতে।হিয়াও বাড়িতে সেলাই এর কাজ শুরু করেছিল। রুদ্র যখন হিয়াকে বিছানায় আদরে আদরে ভরিয়ে দেয় ওর বুকে মাথা রেখে কাঁদে হিয়া।রুদ্র বোঝায়-"কাঁদছ কেন পাগলী...আমি তো সুস্থ হয়ে গেছি।"হিয়া বলতে পারে না ওর যন্ত্রণার কথা।হিয়া জানে ভেঙে যাবে রুদ্র।নিজের অক্ষমতাকে ঘৃণা করবে ও।অরুণের কাছে নিজেকে সে বিক্রি করে রুদ্রকে সুস্থ করেছে জানলে রুদ্র বেঁচে থেকে মরে যাবে।
এরই মধ্যে হিয়া টের পায় শরীরে নতুন প্রানের আগমন বার্তা।বন্ধ বাথরুমে আকুল কাঁদে কারণ সে জানে তলপেটে আঘাত লাগার কারণে রুদ্র কোনদিনও বাবা হতে পারবে না।এ সন্তান অরুণের। নষ্ট করে দিতেই পারত এই বাচ্চাটাকে কিন্তু পারেনি দুটো কারণে। এক তার মাতৃত্ব বাঁধা দিয়েছিল।আর দুই যে সন্তানসুখ রুদ্র পেতে পারবে না তা হিয়া তাকে দিতে চেয়েছিল।রুদ্রের যে ভীষণ পিতৃত্বের আকাঙখা।বিয়ের পর থেকে সে বাচ্চাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।মেয়ে হলে যে নাম রিয়া রাখবে সেও তো অনেক আগে রুদ্রই ভেবে রেখেছিল।
অরুণও জানত সত্যিটা।জানত রুদ্র নয় রিয়ার বাবা সে।কিন্তু নিজের সন্তানের পিতৃত্বের সুখ রুদ্রকে দিয়ে সে চেয়েছিল তার পাপের একটু প্রায়শ্চিত্ত করতে।অরুণ তাই আর কোনদিন হিয়ার সামনে আসে নি।
আজ এতদিন পর অরুণের লেখা পুরানো কিছু চিঠি যা নিতান্ত অন্যমনস্কতায় থেকে গিয়েছিল হিয়ার ড্রয়ারে রুদ্রের প্রেসক্রিপশনের সাথে। হাতে পরে যায় রুদ্রের।আসলে রুদ্রের সামনে কথা বলা যেত না বলে হিয়াকে অন্তরঙ্গ কিছু বলতে হলে প্রেসক্রিপশন বলে প্রেসক্রিপশনের সাথে অরুণ ওর হাতে চিঠি গুঁজে দিত।তার কিছু হিয়া পড়ত।কিছু অবহেলায় পড়তও না।এগুলো হয়ত সেই ভাবেই থেকে গিয়েছিল।
তাই আজ রুদ্রের চোখে চরিত্রহীনা হিয়া চোখ তুলতে পারে না।শুধু মনে মনে বলে-"ঘেন্না কর, আমায় যত খুশী ঘেন্না কর।কিন্তু নিজেকে অক্ষম ভেবে ঘেন্না কোরো না।রিয়াকে নিয়ে তুমি আমায় ঘেন্না করেও ঠিক বাঁচতে পারবে দেখো।"

------------------------------

প্রবন্ধ 


আত্মসম্মানবোধ ও সচেতনতা    
শ্রীমতি প্রতিমা ব্য৷নার্জ্জী


        আত্মসম্মান না থাকাটা লজ্জার...
 আত্মসম্মানের অর্থ বোঝেন প্রকৃত সচেতন মানুষ.... সচেতন মানুষের থাকে সূক্ষ্ম বোধ... যদি সূক্ষ্মবোধ না থাকে তবে আত্মসম্মান ও অহংকারের পার্থক্য বোঝা অসম্ভব.... আত্মসম্মান বোধ তৈরি হয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকা ,নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও তা পালনের সতর্কতা,সচেতনতা থেকে...
প্রতিটি বয়সে প্রতিটি মানুষের ভূমিকা,দায়িত্ব - কর্তব্য ভিন্নরূপে হয়... 
বাল্য৷বস্হায় যতোদিন লজ্জাবোধ তৈরি না হয় ততোদিন অঙ্গ আচ্ছাদনের প্রয়োজনটুকুও নিজের বোধের বাইরেই থাকে... 
এই বোধ যতো সূক্ষ্ম হবে ততোই সে উচ্চ হতে উচ্চতর পর্যায়ে নিজের জীবনকে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে তার উন্নততম ভাবনাচিন্তা ও সংস্কারের মধ্য দিয়ে...
কিশোর অবস্থায় তার রুচি ও সংস্কার তার পছন্দ অপছন্দ ,সঙ্গ এসবকিছুতে সামান্য আভাস মিলবে বৈকি....
কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের সন্ধিক্ষণে ধীরে ধীরে ঘটে যায় সেই বোধের পূর্ণ প্রকাশ... 
কি সেই বোধ ? 
লজ্জা...আত্মদহন ... 
নিজের বিচার যত সূক্ষ্ম হতে সূক্ষ্মতম হবে ততোই তার সংস্কার হবে উন্নত...
পিতা-মাতা- গুরু এঁদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ... প্রথমাবস্থা থেকেই এঁদের সচেতনতা সর্বাগ্রে প্রয়োজন... বাণী,আচরণ, পঠনপাঠন,সঙ্গ এবং নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে প্রতিটি সম্পর্কের মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হওয়া... 
বাচ্চার ভুল বা অন্যায়কে সঠিক সময়ে শুধরে দেওয়া... অনেকে হাঁসেন ঠিক এই সময়টিতে... কারণ বোঝেন না এই অন্যায়কে ঠিক কিভাবে শুধরে দিতে হয়... কোনো শারীরিক নির্যাতন এ ভুল শোধরাবে না... শোধরাবে আপনার ব্যবহার... 
তৈরি করে দিন তার আত্মসম্মানবোধ...তার লজ্জা...
যে বয়সের যে ভূমিকা সে সম্বন্ধে প্রথম থেকে নিজে সচেতন হোন ও সচেতন করুন... 
নিয়মশৃংখলা ভাঙার অবকাশ নির্দিষ্ট করুন... ছুটির সময় যেমন নির্দিষ্ট করতে হবে ঠিক তেমনিই কাজের সময়ও নির্দিষ্ট করতে শেখাতে হবে... 
যৌবনকাল তার ফলপ্রসু হয়ে উঠবে.... যদি সুরুচি ও সুসংস্কার থাকে... শাসন ও আদর নিজের mood হিসাবে নয় কাজের হিসাবে করুন... নিজের সমস্যার প্রভাবে অন্যকে প্রভাবিত না করে যদি সম্ভব হয়... সমস্যা ভাগ করে নিতে শেখান... সংসারে কেউ সার্বজনীন দাতা আর কেউ সার্বজনীন গ্রহীতা এ হেন ভাবনাচিন্তা তৈরী হতে দেবেন না.... সময়ের সাথে সাথে ভূমিকা,দায়িত্ব,কর্তব্য সব বদলে যায়...
কে জানে কখন কবে 
কোন ভূমিকায়
জীবনের সাজঘর 
কাকে কি সাজায়..... 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ