দর্পণ আলোচনা || প্রেমের কবিতা বনাম জীবনমুখী কবিতা




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


মতামত : শংকর ব্রহ্ম

এটাই তো হওয়া স্বাভাবিক।

সমাজে আমরা বিদ্রোহী,প্রতিবাদী,দার্শনিক মানুষ কম দেখি।

প্রেম প্রণয় বিরহে জড়িত মানুষ বেশী দেখি। 

তাই কবিতার পাঠকের ক্ষেত্রেও তারই প্রতিফলন ঘটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা।

মতামত:  অরিজিৎ রায়

আসলে আমাদের বোধহয় এটা ভাবারও সময় এসেছে, পাঠক কারা, কোন বয়সের, সাহিত্য ভাবনা বা বোধের জায়গা পাঠকের কতটুকু! অবশ্যই পাঠকের রাজনৈতিক সত্তার উপরেও নির্ভর করে। পাঠক তার ঠিক কোন মানসিক স্থিরতার বা অস্তিরতার সময় কবিতাটি পড়ছেন। 

আসলে আলোচনাটা যেহেতু কবিতা কেন্দ্রিক, আর কবিতা সাহিত্যের এমন একটি মাধ্যম যা অবশ্যই সকল পাঠক শ্রেণীর জন্য নয়। যেমন সকল প্রকার খাদ্যের ই একটা জিভের স্বাদের প্রিপারেশন থাকে, যেমন বাঙালি মশলাদার খাবার ইটালিয়ন মানুষের মুখে রুচবে না আবার কন্টিনেন্টাল বা পিৎজা সকল বাঙালির মুখে রুচবে না, অর্থাৎ কবিতার পাঠক হিসেবে রুচির কথা বলতে চাইছি। গদ্য বা উপন্যাসের পাঠক যে সবসময় কবিতার পাঠক হবেই তেমনটা নয়। 

আসল কথায় আসি, প্রেম প্রণয় বিরহজনিত কবিতা তুলনামূলক ভাবে সহজে বোধগম্য সেক্ষেত্রে হয়তো সকল শ্রেণীর পাঠকের কাছে তা পৌঁছে যায় এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বিদ্রোহী, প্রতিবাদী এদুটি ক্ষেত্রে একটি রাজনৈতিক সত্তার কথা এসেই যায় তাই সকলের কাছে সেভাবে গ্রহণযোগ্য নয় আবার দর্শনমূলক (যেখানে বোধ ও উপমার ব্যবহার বেশি) কবিতা তুল্যমূল্য বিচারে সহজবোধ্য নয় সকলের কাছে, কিন্তু বিশেষ কবিতার পাঠকের কাছে তা আবার বিশেষ ভালোলাগা বয়ে আনে। 

তাই সার্বিক ভাবে প্রেম প্রণয় ও বিরহের কবিতা বেশিরভাগ পাঠকের কাছে বিদ্রোহী বা প্রতিবাদী বা  দর্শনমূলক কবিতার চেয়ে হয়তো অধিক গ্রহণযোগ্য। তবে আমার নিজের কাছে অবশ্যই পছন্দের বিষয় দর্শনমূলক কবিতা যেখানে বহুল উপমার সঠিক ব্যবহার রয়েছে এবং অপ্রয়োজনীয় শক্ত শব্দবন্ধের ব্যবহার নেই এবং কবিতাটির শব্দচয়ন অবশ্যই কবিতার শব্দচয়ন হতে হবে। কারণ একটি কবিতা সে যে ধরণের কবিতাই হোক তার কাব্যিক শব্দচয়ন কবিতার গুণগত মানকে বেঁধে দেয়।

মতামত: নবনিতা সই

প্রেম-প্রনয় নিয়ে লেখাটা হয়ত সহজ৷ আমার মনে হয়, প্রতিবাদ বা দর্শণ নিয়ে লিখতে গেলে ভাবনার প্রসারতা দরকার৷ মাননীয় কবি শংকর ব্রহ্ম যা বলেছেন আমি সহমত, আমরা সচরাচর যা দেখি সেটাই ব্যক্ত করি ৷ তবুও আমি অন্য কারন হিসাবে বলবো ( যেটা আমার ব্যক্তিগত মতামত ) আজকাল মানুষ পড়ে কম লেখে বেশি৷ এই বেশির উৎপাদনে সাহিত্য গুনকে প্রভাবিত করে আর করছে৷ ভাবনা আর শব্দের জাদুকরী হলো কবিতা , কবির মনের ফসল, সেই মনজমিনে যদি চাষাবাদ না হয় তো সোনা ফলবে কি করে? সেখানে চলে দৈনিক সেরার প্রতিযোগিতার সার৷ অনেকে লেখেন এবং রোজ পোষ্ট করেন এতে আমার কোন আপত্তি নেই , আমি সবসময় সমর্থন করি কারন ফেসবুক আমাদের সেই সুযোগ দিয়েছে৷ কিন্তু নিজের লেখা নিজেকে পড়তে হবে, আরও কবিদের লেখা পড়তে হবে, তারপর তো লিখতে হবে৷ আমি রোজ লিখি , কবিতা৷ কিন্তু পোষ্ট করিনা৷ আমি রোজ পড়ি শেখার চেষ্টা করি ৷ 

অনেককিছু বলে ফেললাম , কারোর মনে আঘাত দেবার জন্য নয়৷ আন্তরিক দুঃখিত কারোর খারাপ লাগলে৷ ধন্যবাদ।

মতামত : বিরাজলক্ষ্মী ঘোষ

পাঠকের ব্যাক্তিগত পছন্দ যেমন তিনি তাই পড়েন।পড়া আর লেখা দুটো সম্পূর্ন পৃথক।রোজ লেখা বা না লেখাটাও অন্য বিষয় যদি শুধু পাঠের কথা বলেন তবে আমার মনে হয় পাঠকের একান্ত পছন্দই তার পাঠকে প্রভাবিত করে আর যদি তিনি লেখক হন সে ক্ষেত্রেও তাই।যেমন আমার একান্ত পছন্দ প্রকৃতি তাই আমি কেবল সেগুলো পড়তে আগ্রহ প্রকাশ করি।তবে আমরা সবাই এক এক রকম এর প্রেমিক তাই হয়তো প্রেম বিরহ গুরুত্ব পায় বিভিন্ন রূপে।


মতামত:  প্রহ্লাদ ভৌমিক 

কেউ প্রেম,প্রণয় ও বিরহকে ছন্দে,সুরে ও স্বরে ভরিয়ে তুলতে চায় শূন্য প্রেক্ষাপট ,আবার কেউ বিদ্রোহ,প্রতিবাদে বা দর্শনে ।জীবন যাপনে অবদমনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছাড়া গত্যন্তর নেই কবির । এই সব কিছুরই আরও গভীরে রয়েছে যে এক অন্তর্লীন ফল্গু স্রোত, দ্রষ্টা ও স্রষ্টা কবিকে তা উপলব্ধি করতে হয় । ওই স্রোতকে কবিকে ধরতে হয়,তুলে আনতে হয়

কবি সত্তায়,মেলাতে হয়,মেশাতে হয় কল্পনা ও অনুভূতির বিষয় বস্তুর সঙ্গে ।প্রকৃত কবি হলে সে চায়য়তার দেশ, জাতি ও সর্বোপরি পাঠক সমাজকে জাগিয়ে তুলতে । তাই কবি সময় চেতনার প্রতি আস্থাশীল । জীবন ও সময় এই দুয়ের ভবিষ্যৎ প্রবাহকেও কবিকে দেখতে নির্মোহ দৃষ্টি দিয়ে । কবিকে নতুন সৃষ্টি করতে হয়, যে সৃষ্টিতে 'জীবনের সত্য এসে শিল্পের সত্যে মিশে যায়'। এই সবের এক আত্মতাড়নায় কবিকে লিখে যেতে হয় । কবি  নিজের পছন্দ মতো স‌ষ্টির ক্ষেত্র ও পাঠক প্রস্তুত করে এবং তার জন্য সে প্রথা ভাঙে । নতুন এক জগৎ ও নতুন এক সময়ের দিকে এগিয়ে যায় তার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে । পাঠককে যেমন বোঝাতে হয় আবার পাঠককেও বুঝতে হয় সময়ের চিন্তা চেতনা ও জীবনের বাস্তবতা কেমন ও কি হওয়া উচিত,সেই ভাবে পাঠককে নিজেকেও গড়ে তলতে হয় সময়োপযোগী করে ।পাঠকের নিজের এই পরিশীলন ও উন্নয়নে সাহিত্য পাঠে আগ্ৰহের ক্ষেত্রে নিজেকে সক্ষম করে তোলার দায়বদ্ধতা অস্বীকার করা যায় না।

মতামত: গীতা ভট্টাচার্য

 ভীষণ ভীষণ বাস্তবসম্মত।  এক দম সঠিক মূল্যায়ন।  আজ কাল মানুষ প্রেম প্রণয় জড়িতই দেখতে ভালো বাসে। 

টি ভি সিরিয়াল গুলোই এই প্রথা আরম্ভ করেছে। 

বেশিরভাগ সিরিয়াল গুলোই ভাববার বিষয়। 

কোন সিরিয়াল দেখে কিছু শেখার উপায় নেই। 

সব সিরিয়াল কেমন অবাস্তব। 

প্রথম প্রথম মনে হয় বেশ ভালো কিছু দিন যাওয়ার পর সেই থোর বড়ি খাড়া। 

এখান থেকে মানুষ যত রকমের রেষারেষির কু শিক্ষাই পাওয়া যায়। 

সমাজের মানুষের মানসিকতাও এই প্রকৃতির হয়ে গেছে। তারা যা দেখতে ভালো বাসে সেই রকমেরই 

তৈরি হচ্ছে। 

তবে যদি চেষ্টা করা যায় ভালো মানবিক ভাবনার সিরিয়াল তৈরিই হবে- আর অন্য কিছু হবে না। 

তবে মানুষ সেই টাই দেখবে। এবং ধীরে ধীরে এই সিরিয়াল কে দেখতেই অভস্ত হবে। 

সমাজের মানুষের তাতে মানবিক চেতনার বিকাশ নিশ্চয়ই ঘটবে আমার মনে হয়। 

জানি না আমি গুছিয়ে কিছু বলতে পারলাম কি না

তবে আমার মন এই টাই বলে।

====

মতামত:  আমা তিতু রহম

মানুষ মাত্র ই স্বার্থপর ও নিজের গন্ডিতে আবদ্ধ তবে কিছু কিছু মানুষের নিজের সীমানা বা গন্ডি পেরিয়ে পৌছে যান সামস্টিক সমাজ বা রাস্ট্রের কল্যানের কাতারে। তারাই যুগে যুগে মহাপুরুষ হয়ে অমরত্ব লাভ করেন।প্রেম প্রনয় বিরহ জীবনে প্রতিমুহুর্তেই হচ্ছে একটা মানুষের জীবনে। আমার সম্পর্কগুলি প্রেমের যেমন ভাইবোন পিতামাতা সন্তান সেখানেই আছে এই ভালবাসার বোধ। আর প্রনয় ত অন্যান্য জীবের মত মানুষের সহজাত  অভ্যেস। কোন সুন্দরি নারীর দিকে তাকিয়ে কিংবা কোন সুপুরুষ এর দিকে তাকিয়ে আমরা অনেকেই প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ি উপযুক্ত সাড়া পেলে তা প্রনয়ে গড়াতেও সময় লাগে না বেশি। এটা জৈবিক চাহিদার অংশ। এত যাকে ভালবাসা বা প্রেমের মানুষ মনে করা হয় সেও মন ভেঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে চলে যায় এভাবেই বিরহ যাতনার উদ্ভব যা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয় একাই। আসলে সব ঠিক আছে যদি আমরা সামস্টিক মানুষকে ভালবাসতাম বা দেশকে ভালবাসতাম বা প্রেমবোধ টাকে দেশ বা সাধারন মানুষের জন্য নিবেদন করতাম তাহলে আমরাও হতাম বিদ্রোহী কিংবা প্রতিবাদী। যেমনটি আমরা দেখি বিদ্রোহী কবি নজরুলের কবিতায় গল্পে উপন্যাসে কিংবা নজরুল গীতিতে।  আর এভাবে সাধারন মানুষের ৫ টি মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের চিন্তায় হয়ত একসময় দর্শনের ও দেখা পেয়ে যেতাম যা বারবার প্রয়োগ আমরা হতে পারতাম সাধারন মানুষের প্রিয় আপন মানুষ বঙ্গবন্ধু, গান্ধীজি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র কিংবা নেহেরু ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন এমনি ভালবাসার নেতা বা নেত্রী।

মতামত : পিন্টু বেতাল 

আসলে বর্তমান সময়টা বাস্তবের চেয়েও কল্পনাপ্রবণই বেশী,,,,, তাই অপেক্ষাকৃত ও তুলনামূলক এবং সহজবোধ্য প্রেম প্রণয় বিরহ জনিত কাল্পনিক লেখার পাঠক মহলে চাহিদা টা বেশি। 

অন্য দিকে বিদ্রোহী বা প্রতিবাদী কোনো লিখতে ও পড়তে গেলে নিষ্ঠুর বাস্তব টাকে জানতে এবং অবশ্যই মানতে হবে,,,,, তাই হয়তো গতানুগতিক ধারাপাতে বাস্তব সত্য কে এড়িয়ে চলার এক উত্তম প্রয়াস অনুরূপ তীক্ষ্ণ কঠিন লেখনী গুলোকে কোনো এক কোণে দাবিয়ে রেখে "আমার কি যায় আসে বলে" হাত তুলে দিয়ে  কাল্পনিক জগতে ডুবে থাকার এক অমলিন প্রচেষ্টা।

আদপে সত্যকে এড়িয়ে পালিয়ে বাঁচার ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র।।

মতামত: মলয় দাস

কবিতা কবিতাই তা বিদ্রোহ প্রতিবাদ প্রেম ভালোবাসা যা হোক না কেনো।এবার পাঠকের পছন্দ..কোন মানুষ যখন লিখতে আসেন তখন একটা বিরহভাবের প্রকাশ পায় তখন তার লেখার মধ‍্যে প্রেম ভালোবাসা বেশি করে ঘুরে ফিরে আসে যা পাঠককে রিলেট করে আবার পরিপ্রেক্ষিত পাল্টালে যখন সমাজ অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যায় তখন স্বাধীনচেতা লেখক বিভিন্ন সামাজিক অসামাজিকতার বিরুদ্ধে তাদের কলম গর্জে ওঠে যা পাঠককে সহজেই রিলেট করাতে পারে তখন পাঠক বিদ্রোহ প্রতিবাদের কবিতাও পড়েন।এবার কোন ধরনের কবিতা বেশি পছন্দ...বলতে গেলে ভাবুক কল্পনা বিলাসী মানুষ বিভিন্ন বিষয়ের  মধ্য দিয়ে প্রেমিক মনকে খুঁজে নিয়ে একটা আত্মতৃপ্ত হওয়ার চেষ্টা করে ফলে প্রেম ভালোবাসা কবিতাই আকৃষ্ট করে পাঠককে।তবে ঐ সামাজিক ঘটনার অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার দরকার পরলে মানুষ বিদ্রোহ প্রতিবাদের যে সহজাত প্রবৃত্তি থেকে সেই ধরনের কবিতা ভালো লাগে কিন্তু সবশেষে বলি।প্রেম ভালোবাসা বাদ প্রতিবাদ সব মানুষের মানসিক চরিত্রের উপর নির্ভর করে যে সে কোন ধরনের কবিতা বেশি পছন্দ করবে।

মতামত: শিবাজী সান্যাল

প্রতিবাদ , বিদ্রোহ যদি নিয়মিত হয়ে দাঁড়ায় , প্রতিটি কবিতার মূল বিষয় হয়ে ওঠে , তা আকর্ষন হারায়। অন্যদিকে প্রেম , দৈনন্দিন জীবনের নানা দিক , হাসি , দুঃখ কষ্ট,  আনন্দ,  সম্পর্কের বিভিন্ন ধারা ইত্যাদিতে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায়। তাই তেমন লেখা স্বাভাবিকভাবেই পছন্দের মাপকাঠিতে এগিয়ে থাকবে। তবে কিছু সাময়িক অবাঞ্ছিত ঘটনা , অসামাজিক পরিস্থিতি , অপমান বা অর্থহীন অবহেলা যা মানুষর অসহ্য মনে হয়  , তার প্রতিবাদে রচনা মানুষ সমর্থন ও পছন্দ করে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই বিরোধ রাজনৈতিক বা দলগত মনে হলে , যারা সেই আদর্শের অনুসারী নন , তারা তাতে নিজেকে মেশাতে চাইবে না।

মতামত: এ কে আজাদ

দুটোর প্রতিই সমান এবং প্রবল আগ্রহ যা পৃথিবীর অন্য কোন কবির ক্ষেত্রে হয়নি


মতামত: তপন কুমার চ্যাটার্জী

আমার মনে হয় কবিতা সৃষ্টির সময় কবি মনের  অনুভূতিই,

কখনো প্রেম, প্রনয়,বিরহ, প্রতিবাদ ইত্যাদি হয়ে মসিরেখায় ফুটে ওঠে। বাকী 

রইল চাহিদা পাঠকের নিজের,

নানান পাঠকের নানান চাহিদা।

কবিকে পাঠকের মন্তব্য  প্রত‍্যহ অনুধাবন করে বুঝতে হবে চাহিদার ওজন।

মতামত:  শৈলেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী


ভাব থেকে আবেগ , আবেগ থেকে 

কবিতা। ভাবে পাগল আবেগে পাগল হয়ে কবি।  মন- মাতাল পাঠক। কবি -পাঠক নেশায় চূরচূর।

হাত ধরাধরি করে চলে কাব্যের নেশায়। আয়নায় মুখ দেখা। কবিতার মধ্য দিয়ে সমাজের সমস্ত রূপ ফুটে ওঠে। কবিতার অনন্ত রূপ । দেখার মতো দেখলে বহু দর্শনের

বহুল রূপ পাখা মেলে হেথায় --

কবিতায়।

মতামত : উত্তম কুমার সাহা

প্রথমতঃ প্রতিবাদ বা বিদ্রোহের কবিতা লিখতে বুকের পাটা লাগে। 

দ্বিতীয়ত, একটা সময় (নজরুল/রবিঠাকুরের সময়) এটা যারা লিখতেন, তারা নোংরা সমালোচনার মুখে পড়তেন না। কারণ তখন ফেসবুক ছিল না,,আর বিপরীতে থাকতো, হয় বিদেশি শক্তি না হয় একটা কথা উগ্র ধার্মিক শক্তি। যাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হতো, তারা লিখে প্রতিবাদ করতেন না। কাজে দেখাতেন। হয় জেলে ভরতেন, নাহয় সরাসরি দলবল নিয়ে বাড়ি আক্রমণ করতেন। আর এখন প্রতিবাদ করতে হলে একটা রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডকে প্রতিবাদ করতে হয়। উগ্র ধর্মীয় মানুষগুলোও কোনো না কোনো দলের সাথে যুক্ত। তাই প্রতিবাদ হলেই পাল্টা নোংরা মন্তব্য যা ব‍্যক্তিগত জীবন চর্চাকেও নোংরাভাবে তুলোধোনা করে। তাই মানুষ এখন "সেফ-সাইড গেম" খেলতে চায়। প্রতিবাদ বা বিদ্রোহ ছাড়া অন‍্য কোনো লেখাতে সেই ঝুঁকি নেই। তাই সেই পথেই মানুষ বেশী যাচ্ছে।

তবে আপনি তখনই সর্বজনগ্রাহ্য লেখক হবেন, যখন আপনি দলমত নির্বিশেষে সাদাকে সাদা, আর কালোকে কালো বলতে পারবেন। সেই শিরদাঁড়া এখন কমে এসেছে।

মতামত: গঙ্গোত্রী চ্যাটার্জী

প্রেম- প্রণয়------তুলনামূলক  বেশী চায় মানুষ কারণ ব্যস্ত জীবনে মানুষ আবেগ হারাচ্ছে----

মানুষ  সর্বদা  মনের  দিক  থেকে  বিদ্রোহী  প্রতিবাদী  রোজকার  বাস্তবে  লড়াই করা জীবনে আর কবিতায় চায় না---- 

প্রেম-প্রণয়ের পর  চায়  

দর্শনমূলক কবিতা---দর্শন  মানেই  আত্ম  উপলব্ধি  আর  অনুতাপ মিশ্রিত  এক অনুভূতি--

মতামত: সায়ন্তিকা

খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা ! লেখক বা কবি কী লিখবেন আর পাঠক আসলে কী পড়তে চায় ۔۔۔সেটা নিয়ে সত্যিই ভাবার সময় এসেছে এবারে ! প্রেম , প্রকৃতিকে বিষয়বস্তু করে যে সব গল্প  অথবা কবিতা লেখা হয় , সেগুলোই পাঠক বেশি পড়ে ! উল্টো দিকে সমাজ , প্রতিবাদ অথবা একটু বিতর্কিত কোনো লেখা হলেই , পাঠক হয়  এড়িয়ে যায় , আর নয়তো পড়তে চায় না ! এটার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে ! এক ۔۔۔পাঠকেরা হয়তো প্রেম বা সাধারণ বিষয়গুলোকেই জীবনে বেশি প্রাধান্য দেয় , দুই ۔۔۔পড়ার অভ্যাস তিন ۔۔۔মানুষ বোধহয় সত্যিটা মেনে নিতে চায়না আজও  , চার ۔۔۔আজকাল বড়ো বেশি সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মানুষের আবেগ , তাই প্রেম নিয়ে লেখাটাও সহজ হয়তো ! আমরা সকলেই ছুটছি , কলমও যেন ছুটছে ۔۔۔কে আগে পৌঁছতে পারবে গন্তব্যে ? একটা প্রতিযোগিতা চলছে চারিদিকে ! কার কত বেশি লাইক , কতগুলো সম্মাননা , কত বেশি কমেন্ট ۔۔۔এই সব ভাবনা থেকেই হয়তো প্রেম নিয়ে এতো বেশি লেখা চারিদিকে ! তুলনামূলক ভাবে প্রতিবাদী বা দর্শনমূলক লেখা লিখতে গেলে যেমন আমাদের পড়তেও হয় বেশি , পাঠকেরও বুঝতে এবং সেটা আত্মস্থ করতে সময় বেশি খরচ করতে হয় ! সেই সময়টুকুই তো নেই কারুর কাছে ! আমি মনে করি , সাহিত্যে অন্তত এই তাড়াহুড়ো চলে না , এই পথে হাঁটতে গেলে নিজের পায়েই হাঁটতে হবে , এস্কেলেটর বা লিফ্ট  ব্যবহার করা যাবে না !

তবে এই ক্ষেত্রে পাঠককে দোষ দিয়েও কোনো লাভ নেই ! যারা লেখেন , দায়টা কিছুটা হলেও তাদেরও ! আমরা যারা এই লেখালিখি করি , তারাই ব্যর্থ পাঠকের ভাবনা বা দর্শন কে পরিবর্তন করতে ! মানুষ আজকাল পড়ে কম , লেখে বেশি ! কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে কী সত্যিই সাহিত্যের অগ্রগতি সম্ভব ? আমরা কোন দিশায় চলেছি ? আগামী প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাচ্ছি ? 

চোখ বন্ধ করে থাকলেই কী বর্তমান পরিস্থিতিকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে ! আমি মনে করি ۔۔কলমই হলো প্রতিবাদের এবং পরিবর্তনের এক মাত্র অস্ত্র ! এতএব , মানুষকে সচেতন করতে পারে একমাত্র সঠিক কলমই ! 

প্রেম , ভালোবাসা ۔۔অবশ্যই থাকুক , কারণ মানুষের জীবনে এই সব আবেগ থাকবেই কিন্তু তাই বলে সমাজকে অস্বীকার করতে আমরা পারিনা ! এটা ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা প্রত্যেকেই সামাজিক জীব , সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকতেই হবে আমাদের ! 

সর্বশেষে একটাই কথা বলবো ۔۔۔মানুষকে পড়ার অভ্যাসটা রাখতেই হবে ! শিক্ষাই হোক একমাত্র সাধনার পথ !

প্রেম হোক বা প্রতিবাদ হোক ۔۔۔সঠিক দিশায় এগিয়ে চলুক সাহিত্য ۔۔۔এটাই কাম্য !

আর কবি বা লেখক অবশ্যই পাঠকের কথা ভেবে লিখবেন , কিন্তু তার নিজের ভালো লাগা , তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বা সচেতনতাকেও প্রাধান্য দিতে হবে ! কারণ সাহিত্য কেবলমাত্র একটা সৃষ্টি না , সাহিত্য হলো সাধনা এবং অবশ্যই একটা খিদে ! কবি বা লেখকের খিদে পেলেই , সৃষ্টি হয় নতুন আলোর !

তাই চলুক কলম ! ভালো থাকুন সকলেই , সাহিত্যে থাকুন , সৃজনে থাকুন , প্রেমে থাকুন এবং বিপ্লবেও থাকুন !

====

মতামত : নীলাঞ্জনা ভৌমিক 

প্রেম বা প্রণয় - কিশোরপ্রেম ,বাল্যপ্রেম,যৌবনের প্রেম --- পৃথক সময়ে পৃথক উপলব্ধি। কিন্তু বয়স যত বাড়ে ততই তথ্যমূলক,গবেষণাধর্মী ,আধ্যাত্মিকতার প্রতি মন আকৃষ্ট হয়। যদিও ' শেষের কবিতা ' -  সাহিত্যজগতকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আশীবছরে উপহার দিয়েছেন যার গভীরতা বুঝতে কিছুটা ম্যাচিওরিটির প্রয়োজন। তবুও বলব পৃথক পৃথক কবিতার ভাবনা যেমন পৃথক , পাঠকের রসবোধ ও ভাবনার জগৎ ও পৃথক। তাই কোনটি বেশি কোনটি কম সেভাবে সঠিক মূল্যায়ন করা যায় না।

মতামত :  সুজিত চক্রবর্তী

 আলোচনার বিষয়টি বেশ মজার : 

 : বিদ্রোহী , প্রতিবাদী কিংবা দর্শনমূলক কবিতার তুলনায় প্রেম , প্রণয় , বিরহজনিত কবিতার প্রতি পাঠকের আগ্রহ তুলনামূলক ভাবে বেশি ।  প্রথমেই যেটা মনে এলো তা হচ্ছে , ' ইহা কি আলোচনা বা বিতর্কের বিষয় হইতে পারে ? ' আমার মতে " না " ! 

            কেন না ? আমি যদি প্রশ্ন করি  সবাই বিরিয়ানি , ফুচকা, চকলেট বা আইসক্রিম খেতে  ভালোবাসে অথচ তারাই দেখি পেঁপে, উচ্ছে , কাঁচকলা বা কালো জাম খেতে মোটেই পছন্দ করে না !  তারা কেন বুঝতে পারছে না শেষোক্ত খাদ্যসামগ্রী পূর্বে কথিত খাদ্য তালিকায় উল্লিখিত খাদ্য সমূহের তুলনায় ঠিক কতটা উপকারী !

         এই কথা শুনে  বিস্ময়ে হতবাক হয়ে শ্রোতারা আমাকে ভীমরতি আক্রান্ত জ্যাঠামশাই আখ্যা দিলেও বিশেষ অবাক হবার কিছু নেই । 


         পরের প্রশ্ন হলো , কে এই প্রশ্ন করবেন  ? 

         উত্তর  : অবশ্যই যিনি কবি অথবা লেখক । 

      -----  কেন  ? 

     ------ সম্ভবত তাঁর পাঠক সংখ্যা তুলনায় বেশ কম ।


            মনে পড়ে যায় একশো বছর আগের একটি ঘটনা । শরৎবাবুর কাছে তাঁর ভক্ত পাঠকরা নালিশ জানাতে গেছেন এই বলে যে আপনি যা লেখেন তা আমরা বুঝি । কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যা লেখেন তা আমাদের বোধগম্য হয় না ।

           শরৎ চাটুজ্জের উত্তর  ,

" আমি আপনাদের জন্য লিখি আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জন্য লেখেন । He is a poet of poets ..... "  ইত্যাদি । 


          শরৎ চাটুজ্জে বেস্টসেলার ছিলেন ,  রবীন্দ্রনাথ নয় । সুতরাং সমস্যা মোটেই নতুন নয় । সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বা মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কতগুলো বই বিক্রি হতো ?


         এবার একটু অন্য রকম একটা কথা বলি । আসুন আমরা পাঠককে প্রশ্ন করি , " অমুক কবির কবিতা তোমরা পড় না কেন  ? তোমরা জানো উনি কত ভালো লেখেন ? "

         সম্ভবত পাঠকের উত্তর এইরকম কিছু একটা হবে, " আমরা সাধারণ মানুষ এতো হাই থটের লেখা বুঝতে পারি না । আমরা ইন্টেলেকচুয়াল নই মশাই । " 

        অর্থাৎ , মানুষ করলার রসের চেয়ে খেজুরের রস খেয়ে বেশি আনন্দ পাচ্ছে । কি বলা যায় ? এটা তাদের অপরাধ ? 

          একসময়ে দেখেছি বাংলা ভাষার সাহিত্যিকদের মধ্যে আশু মুখুজ্যে , নিমাই ভট্টাচার্যদের কিছুটা হেয় করার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই ছিল । কিন্তু কথা হচ্ছে পাঠকের বদান্যতায় তাঁদের বই বিক্রি হয়েছে আর পাঠক না থাকলে লিখে হবেটা কী ?

' রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে কি হবে তোমার , 

  কাছে কেউ না এলে এবার .... '  !! 

           তাহলে বোঝা গেল , সাধারণ মানুষ পড়বে না। তাহলে সম্ভাব্য পাঠক কে ? 

যাঁরা কবিতা লেখেন ? অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যাঁরা লেখেন তাঁদের অনেকেই অন্যের লেখা পড়েন না । একসময় ( উত্তরবঙ্গে) অনেক সাহিত্য সভাতে উপস্থিত থাকতাম। সেখানে দেখেছি , প্রায় সব কবিই নিজের কবিতা পড়া হয়ে গেলেই মঞ্চ থেকে নেমে পত্রপাঠ বিদায় নিতেন । জিজ্ঞেস করলে বলতেন, " খুব জরুরী কাজ ফেলে এসেছি এখানে । না এলে , যারা আমন্ত্রন জানিয়েছিল তাদের অপমান করা হয় বলেই আসতে হলো।   " 


           তখন ভাবতাম,  যিনি অন্য কারও কবিতা

শুনতে চান না , তিনি কি করে আশা করেন যে তাঁর কবিতা সভায় উপস্থিত অন্য কবিরা শুনবেন ?  তেনারাও তো জরুরী কাজ ফেলে এসেছেন ! 


               আমি বুঝতে পারছি শরৎবাবু রবীন্দ্রনাথের লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়তেন। 

সেটা রবীন্দ্রনাথের লেখার হাত অসম্ভব ভালো হওয়ার কারণেও তো হতে পারে ! বলা বাহুল্য ,  রবীন্দ্রনাথের সমতুল্য কবি আজ  একজনও নেই এবং ভবিষ্যতেও হবে না । 


               আবার রবীন্দ্রনাথের গানে কবিতায় প্রেম আছে বলে কি দর্শন নেই  ? আমার মতে বাংলা ভাষায় লেখা শ্রেষ্ঠ  প্রতিবাদী কবিতা কাজী নজরুল ইসলামের ' আমার কৈফিয়ত ' ।

আজকাল আর এক সমস্যা আছে।  যতক্ষণ  বিরোধীদের সঙ্গে আছি ততদিন সুকান্ত ভট্টাচার্য।  সিংহাসনে বসে গেলে এসব কথা শুনতে ভালো লাগে না। এবার যারা সিংহাসন চ্যুত হয়েছেন তাঁরা সুকান্তকে আঁকড়ে ধরেন ।

এতে সাধারণ পাঠকের কি এসে যায়  !

মতামত : শবনম তালুকদার


ভালো পোস্ট।প্রেম, পরকাষ্ঠা অতি পরাকাষ্ঠা যার যা বিষয় নিয়ে লিখুক না যা ইচ্ছে হয়।কিন্তু পরিশেষে মানুষের কথা, তার জীবনযন্ত্রনার কথা না আসলে না বললে সাহিত্যের কোনো পরিপূর্ণতা নাই।

 মতামত: স্মৃতি বেগ বিশ্বাস


আলোচ্য বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।প্রথমেই বলি কবিতা চিরকালই খুব স্পর্শকাতর বিষয়। কবিতা ও পাঠকের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক যেমন সহজেই গড়ে উঠতে পারে আবার তেমনই কবিতা পাঠের প্রতি পাঠকের অনীহাও দেখা দিতে পারে।এর মূলকারণ পঠিতব্য কবিতার বিষয় আর পাঠকের মানসিক স্তর ও পড়ার অভ্যাস।

মনে রাখতে হবে সব লেখা সব পাঠকের জন্য নয়।তাই পাঠকের গড়পড়তা মূল্যায়ন করলে আলোচনা হয়তো ফলপ্রসূ হবেনা।এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ করছি।

লেখক শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে একজন বলেছিলো যে, রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়ে বোঝা যায়না কিন্তু শরৎচন্দ্রের লেখা পড়ে বুঝতে পারে তাই শরৎবাবুর লেখাকেই ভালোবাসে। উত্তরে লেখক বলেছিলেন--

'' রবীন্দ্রনাথ লেখেন আমাদের জন্য আর আমি লিখি তোমাদের জন্য।" এই ঘটনা আমাদের বুঝিয়ে দেয় কোন্ পাঠকের জন্য কোন্ লেখা উপযুক্ত। পাঠকের মানসিক স্তর বুঝতে গেলে শুধু তার ডিগ্রী বা শিক্ষাগত যোগ্যতাই বড়ো কথা নয়।বিষয় হলো পড়ার অভ্যাস ও বোঝার ক্ষমতা কার কতখানি।

ইদানীং লেখাপড়া বিষয়টাকে প্রশ্নোত্তর বা ক্যুইজ ভিত্তিক করে দেওয়ায় পড়ুয়াদের পাঠ্য বই খুঁটিয়ে পড়ার অভ্যাসটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বা ভালো ফল করার জন্য শিক্ষক/গৃহ-শিক্ষকের দেওয়া নোট বা সহায়ক বই থেকে নির্ধারিত প্রশ্নের উত্তরটুকুই যথেষ্ট।

তারপরে আছে যন্ত্রসভ্যতার নানান সহজলভ্য সুবিধা যা বই পড়ার অভ্যাসটাকে মেরে ফেলছে। তাছাড়া মানুষের চিন্তা,রুচি,বোধ এগুলো এখন ভার বইতে ও সইতে চায়না বা পারেনা। তাই যে কোনো ক্ষেত্রেই তারা তুলনামূলক ভাবে ভারহীন বিষয়ের সন্ধান ও চর্চা করে৷ 

কবিতার ক্ষেত্রে প্রেম-প্রণয়-বিরহজনিত রচনার প্রতি পাঠক বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে।এর প্রধান কারণ মানুষের জীবনে এই অনুভূতিগুলো সহজাত।জন্মের পরেই শিশু থাকে মাতৃপ্রেমের ছায়া ও মায়ায়।পরবর্তী কালে সেই প্রেমই  সম্পর্ক ও বয়স ভেদে নানা নামে চিহ্নিত হয়।আর প্রেম-প্রণয় থাকলে মান-অভিমানজনিত বিরহ ও বেদনাও থাকবে।এই বিরহ থেকে সৃষ্ট বহু কাব্য-কবিতা তো আমাদের হৃদয়বৃত্তির স্বর্ণফসল। তাই সর্বকালে, সর্বযুগে এর প্রতি মানুষের টান অনেক বেশি। 

এক্ষেত্রে আমাদের জীবনের দু'টি দিকের কথা বলা খুব প্রয়োজন। তা হলো মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও হৃদয়বৃত্তি। যুক্তি-বুদ্ধি,পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিত বুদ্ধিবৃত্তি চিরকালই

বাস্তব-নির্ভর।অন্যদিকে হৃদয়বৃত্তি হলো আবেগচালিত কোমলতা।বর্তমানে বোঝা যায় মানুষ বড়ো অসহায়। সর্বদা যেন অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। তাই হয়তো অন্য ভারবহ চিন্তা এড়িয়ে যেতে চায়। 

শেষে বলি কবিতা লেখার সময় রচয়িতাকেও মনে রাখতে হবে শুধু তত্ত্বকথা ও তথ্যসমৃদ্ধ রচনা দিয়ে পাঠককে আকৃষ্ট করা যায়না তাকে হৃদয়গ্রাহীও করা প্রয়োজন। আগেও তো বিদ্রোহী,প্রতিবাদী কিম্বা দর্শনমূলক কবিতা লেখা হতো বা হয়েছে। তখন কিন্তু পাঠকের এমন মনোভাবের খবর জানা যায়নি। তাই আলোচনায় মনে রাখতে হবে যে,কবিতা ও পাঠক অঙ্গাঙ্গী সম্পর্কিত।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ