দর্পণ || আলোচনা || সাহিত্য প্রচার ও প্রসারে ফেসবুক গ্রুপের ভূমিকা || পর্ব -৪




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

শিবাজী সান্যাল 


আমার মনে হয় এক বিরাট ভূমিকা। এদের সততা , নিরন্তর প্রচেষ্টা , নানা ভাবে গ্রুপকে সমৃদ্ধ করার জন্য নানা রকমের আয়োজন- এসব এই প্রমাণ করে। খোলা ময়দান বলে এও সত্য যে অনেক ক্ষেত্রেই মানগত দুর্বলতা থেকে যায় , কিন্ত এইসব গ্রুপ সাধারণ ভাবে প্রতি নিয়ত সাহিত্যকে উৎসাহ দিয়ে চলেছে , তাতে বিন্দুমাত্র সংশয়ের অবকাশ নেই। অনেক সমালোচনার সত্বেও তাই এই ধারা আপন গতিতে এগিয়ে চলেছে। এই মুহূর্তে আমার মনে কেউই , সে যে মাপেরই  সাহিত্যিক হোন না কেন , নিজেকে এর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন।  আজ এই গ্রুপগুলি আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

 সুজিত চক্রবর্তী 


খুবই সময়োপযোগী এবং বিতর্কিত বিষয়। ফেসবুকে এখন অজস্র সাহিত্য পরিবারের ছড়াছড়ি।গ্রুপগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা যে আছে তাও বেশ বোঝা যায়। এই প্রতিযোগিতায় অবশ্য দোষের কিছু নেই --- এ হলো সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিযোগিতা।  অনেকটা টিভি চ্যানেলের টি-আর-পি বাড়ানোর প্রতিযোগিতার মতো মনে হয় আমার।  


         বহু মানুষের বহু অভিযোগ আছে এইসব সাহিত্য গ্রুপ নিয়ে। তবে কৌতুক এটাই যে ,  সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে এইরকম ফেসবুকের সাহিত্য গ্রুপের এডমিনদের কাছ থেকে । কৌতুক এইজন্যে বলছি , তাঁরা দোষটা  চাপিয়ে দেন ফেসবুকের সাহিত্য গ্রুপ এই

ব্যবস্থার ওপরে অথবা বলেন এমন গ্রুপ বহু হয়ে গেছে যার কোনও প্রয়োজন নেই , যখন তাঁরা নিজেরাও সমগোত্রীয়। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে নিজের সৃষ্টি নিজের কাছে শ্রেষ্ঠ মনে  হতেই পারে,  কিন্তু আরও অনেকেই যেহেতু এই কাজ করছেন তাদের ক্ষেত্রেও একই ভাবে নিজেরটাই শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য হবে।  


      এই সব সাহিত্য গ্রুপ কি সাহিত্য প্রসারে সহযোগিতা করেছে ? আমার মতে , হ্যাঁ! করেছে।  তার কারণ ব্যাক্তিগত।  আমার সাহিত্য চর্চার মাধ্যম অনেক দিন হলো  ফেসবুকের বিভিন্ন সাহিত্য গ্রুপ ।আমার লেখা কতটা উন্নত মানের তা জানি না বাপু , তবে এইসব গ্রুপে লেখা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা প্রকাশিত হয় , এটাই আমার মতো কবি বা লেখকের বড় পাওনা।  


          অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি , এইসব গ্রুপের সিংহভাগ  সদস্যদের কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা হলো সনদ বা সার্টিফিকেট। এ নিয়ে বেশ মারামারি করতেও দেখা যায় অনেক সময়।  


       অনেক গ্রুপে শর্ত থাকে অন্যদের  লেখায় লাইক ঠুকে না দিলে সনদ পাওয়া যাবে না । সেক্ষেত্রে কবি-সাহিত্যিকদের লাইক ঠুকে কমেন্ট করতেই হয় বাধ্য হয়ে। কিন্তু , অবাক হয়ে দেখেছি যারা লাইক কমেন্ট করলেন তাঁরা কবিতাটাই পড়ে দেখেন নি ! এই অভ্যাস অনেক গ্রুপের এডমিনদেরও আছে। হয়তো কোনও প্রশ্ন করলাম , উত্তর এলো : " অপূর্ব লেখনী " ! অনেক গ্রুপে এমন এডমিনদের দেখা পাওয়া যায় যারা নিজেরাই বানান ভুল করেন অথবা সাহিত্য প্রসঙ্গে বিশেষ জ্ঞান নেই । অথচ তাঁরাই আবার অন্যের লেখার বিচারক ।


      পুরনো গ্রুপের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চলে যাওয়ার ব্যাপারটা আমার মনে হয় প্রেমের মতো--- প্রথম প্রথম দু'পক্ষই বেশ গদগদ , 

পরে একঘেয়েমি এসে যায়।  তখন তারা স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চায়।  


            ভালো গ্রুপ অবশ্যই আছে বেশ কয়েকটি ।  বলা বাহুল্য , এখানে বেশ কয়েকটির অর্থ আমার জানা গ্রুপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ । এমনও গ্রুপ এডমিনরা আছেন , যাঁরা শত ব্যস্ততার মধ্যেও আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ ও বানানের ক্ষেত্রে আমাকে নিরন্তর সহযোগিতা করে থাকেন। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।  


          শেষে  , আর একটা কথা বলি ।

ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি বহু রকমের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে নিজের লেখা বহুমুখি হয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা হলো , সাহিত্যচর্চা বজায় রাখতে পেরেছি। 

আমার লেখায় বাংলা সাহিত্যের কি উন্নতি হয়েছে সে প্রশ্ন এখানে অবান্তর, কিন্তু  লিখেছি অনেক। এবং সে লেখার মান যেমনই হোক না কেন, কাজটা নিশ্চয়ই খারাপ নয় ! সুতরাং , আমি মনে করি সাহিত্যের প্রসারে  ফেসবুকের সাহিত্য গ্রুপের অবদান অবশ্যই আছে।

 শংকর ব্রহ্ম 


          এই সামাজিক মাধ্যমটির সুযোগ খুব বেশী দিন হয়নি (মাত্র আঠেরো বছর আগে)  মানুষের সামনে এসেছে ইদানিং এর জনপ্রিয়তা দ্রুত হারে বেড়েই চলেছে।

ইয়েনানের ভাষণে মাও সেতুং একবার শিল্প- সংস্কৃতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে, বলেছিলেন, " শত পুষ্প বিকশিত হোক(Let the hundred flowers blossom).

          তাঁর সে স্বপ্ন পুরণ করলেন ২০০৩ সালের জুলাই মাসে মার্ক জুকার বার্গ 'ফেসবুক' নামক মাধ্যমটিকে উদ্ভাবনের মাধ্যমে। সত্যিই শতপুষ্প বিকশিত হওয়ার উন্মুক্ত ক্ষেত্র প্রস্তুত হল।  

        গৃহেবন্দী থেকেও সহজে সারা পৃথিবীর সঙ্গে মুহূর্তে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়ে উঠল মানুষের পক্ষে।

     অনেক মানুষ নিজেকে প্রকাশ করার সহজ সরল এক মাধ্যম খুঁজে পেল ফেসবুক গ্রুপে । ফলে লেখক কবির সংখ্যা ক্রমশই বাড়তে থাকল দ্রুত।

          আর তার ফলে এখানে মুড়ি ও মুড়কির দড় এক হয়ে দাঁড়াল। লেখার সংখ্যা যেমন বাড়তে থাকল, লেখার মান তেমন (অনুশীলনের অভাবে) পড়তে থাকল দ্রুত। অনেক গ্রুপে সাহিত্য চর্চা শুরু হলো। গ্রুপের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলো, লেখকের সংখ্যা বাড়লো, কিন্তু কমে এলো লেখার মান, কমে এলো যথার্থ পাঠকের সংখ্যাও।

        বর্তমানে যে কোন গ্রুপ খুললে দেখা যায়, এক একটা গ্রুপে যত লেখক লেখে, তত পাঠক পড়ে না সেইসব লেখা। এটা একটা ভীষণ নঞর্থক দিক।

   এতে তাৎক্ষণিক অভিমত পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু সেটা কতখানি সঠিক সে সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায় শেষপর্যন্ত ।

দিনদিন মানুষের মধ্যে ফেসবুকের আসক্তি যেমন বাড়ছে, সেটাও দুশ্চিন্তার একটা কারণ হয়ে উঠেছে আজকাল সমাজ বিজ্ঞানীদের কাছে।

 এতসব ভাল মন্দ বিচার করেও বলা যায় ফেসবুক সাহিত্য যুগ যুগ জীও।


তবে লেখকের স্বাধীনতা এখানে কতটা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায় শেষ পর্যন্ত। কারণ, যে কোন গ্রুপের নিয়মাবলী পড়লেই দেখা যায়, সেখানে স্পষ্ট লেখা থাকে, তিনটি বিষয়ে লেখা পোষ্ট করা যাবে না।

১.যৌনতা বিষয়ক

২.ধর্ম বিষয়ক

৩. রাজনীতি বিষয়ক


 কিন্তু, কেন রে বাবা, এই তিনটি জিনিষ কি আমাদের জীবন খেকে বাদ হয়ে গেছে? নাকি আমাদের জীবনেও কি এইসব গুলির কোন প্রভাব বা মূল্য নেই অথবা নিষিদ্ধ?

আমরা কি জীবনে যৌনতা করি না?

আমরা কি জীবনে ধর্ম পালন না?

আমরা কি জীবনে রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করি না?

তাহলে এগুলো প্রকাশে এত বাধা কেন?

অথচ এই তিনটি জিনিষকে - জীবনের চালিকা শক্তি ও নিয়ন্ত্রক বলা চলে।

সাহিত্য যদি সত্যিই জীবনের প্রতিফলন হয়, তাহলে এ'গুলো প্রকাশে বাঁধা থাকবে কেন?

১.যৌনতা - প্রকাশে দ্বিধা ( লজ্জা)?

২.ধর্ম - প্রকাশে সংকোচ (কে কি ভাববে)?

৩.রাজনীতি - প্রকাশে ভয় (আক্রমণের)?

কথায় বলে, দ্বিধা সংকোচ ভয়, তিন থাকতে নয়।

তাই আমাদের ফেসবুক সাহিত্যে আজও সাবালকত্ব প্রাপ্ত হল না ঠিক এই একটা কারণে। লেখায় বিধি নিষেধ আরোপ। তাই একই গড্ডলিকা স্রোতে ভেসে চলেছে ফেসবুক সাহিত্য, আলোড়িত হবার মতো সে রকম হৃদয় কাঁপানো লেখা কই?

যেখানে লেখকের খুশি মতো লেখার কোন স্বাধীনতা নেই ,সেখানে ভাল লেখার আশা করা যায় না?

অবশ্য স্বাধীনতার সাথে সেচ্ছাচারিতাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।

তাই আমাদের আমাদের ফেসবুক সাহিত্য সাবালকত্ব প্রাপ্ত হবার আগেই নাবালকত্ব থেকে (যৌবনের উদ্দাম মাদকতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়ে) , অকালে বার্ধক্যে পৌঁছে যায়।

এ'ব্যাপারে আমি লেখক ও পাঠকদের মতামত প্রত্যাশা করি।

 সাবিত্রী সন্নিগ্রাহী 


""সাহিত্য প্রচার ও প্রসার""--এর হাতেনাতে প্রকল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্র বা প্লাটফর্ম হোল ফেসবুক। এর সংকীর্ণতা নেই আছে প্রসারতা। 

নিজের কল্পনা--কল্পনার বাস্তব রূপ--অন‍্যের দৃষ্টিতে তার বিচার---

ফেসবুক ছাড়া সম্ভব হবে না।


থাকবে তর্ক--যুক্তির লড়াই--আর মতামতের এপিঠ-ওপিঠ।

 মলয় দাস 


ধন্যবাদ সম্পাদক মহাশয়কে সাহিত্যচর্চার বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য।কুক্ষিগত সাহিত্যচর্চা আজ  ফেসবুক তথা বিভিন্ন group এর মাধ্যমে উন্মুক্ত হয়েছে ফলে বিভিন্ন পেশার মানুষ একটু নিজস্ব মানসিকতার বিকাশ ঘটাতে পারছেন এই ফেসবুক তথা বিভিন্ন সাহিত্য group এর মাধ‍্যমে।কুক্ষিগত করে রাখা কিছু মানুষ গেলো গেলো রব তুলেছেন প্রাচীন রীতি অনুযায়ী যে কুল গোত্রহীন কিছু মানুষ যেন হঠাৎ করে দৈত্যের বাগানে প্রবেশ করে অন‍্যায় করে ফেলেছেন।সাহিত‍্যচর্চা করছেন ভালো মন্দ মান খারাপ সব হতে পারে কিন্তু কোন অসামাজিক কাজ তো কেউ করছেন না আর সাহিত‍্যের group তাতে সহয়তা করছেন অসুবিধা কোথায়?এইভাবে সাহিত্যচর্চা করতে করতে অনেকেই অনেক ভালো কবি লেখক হয়েছেন প্রচুর উদাহরণ দেওয়া যায়। হ‍্যাঁ একটা কথা মানতেই হবে বিভিন্ন group সাহিত্যচর্চার নাম করে ব‍্যবসা করছেন কবি সাহিত‍্যিকদের প্রাপ‍্য সম্মান দিতে কুন্ঠা বোধ করেন এটা যেমন মানা যায় না তেমনি সাহিত্যচর্চার নাম মানুষের মধ‍্যে সংস্কৃতির মনোভাব তৈরি হচ্ছে এটাও কম কীসের।তবে যারা সাহিত্যচর্চা করেন আমার মনে হয় একটু উদার মনোভাবাপন্ন হওয়া উচিত পারস্পরিক সহযোগিতা করার মনোভাব থাকা উচিত সাহিত‍্যের group নিজের চেনা গন্ডীর বাইরে বেড়িয়ে একটু বিস্তৃত করুক নিজেদের অবশ্যই কবি সাহিত‍্যিকদের প্রাপ‍্য সম্মান দিয়ে ব‍্যবসা করুক।সবশেষে বলি পরিচিত লেখকরাই ভালো লেখেন আর লেখকরা নিজেদের প্রচুর ফলোয়ার তৈরি করে লাইক কমেন্টসে ভরিয়ে দেন আর বিভিন্ন group বই প্রকাশের অনুষ্ঠান করেন তাতে বিষয় কবি ও কবিতা কিন্তু শেষে দাড়ায় group এর কর্ণধারদের আমন্ত্রিত বিশিষ্টদের বৃক্ততা দিতে দিতে এতোসময় নিয়ে নেওয়া ও কিছুক্ষন বাদে অন্য অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ রক্ষার অযুহাতে বা তাগিদে কবিদের কবিতা না শুনেই চলে যাওয়া আর সেই group সময়ে অনুষ্ঠান শেষের তাগিদে কবিদের বলবেন কোনো সৌজন্য বার্তা না দিয়ে সোজা কবিতা পাঠ পারলে যত ছোট কবিতা পড়া যায়।এটা লেখকদের অসম্মান করা।তাছাড়া আমি বলবো ভালো  খারাপ মিলিয়ে অবশ্যই বিভিন্ন সাহিত্য group বা ফেসবুক সাহিত্যচর্চার দিগন্তকে উন্মুক্ত করে দিয়ে মানুষের মধ‍্য সংস্কৃতির প্রবেশ ঘটাতে সাহায্য করেছেন।

 কাকলি চক্রবর্তী 


হ্যাঁ, সাহিত্যের প্রসারে অবশ্যই ফেসবুক গ্রুপ গুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কোনো একজনের সর্বাধিক ফেসবুক বন্ধুদের সংখ্যা 5000, এবং সাহিত্যিক বন্ধুটির লেখাটি সর্বাধিক 5000 এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যদিও খুব বেশী জন হলেও 600/700 জন হয়তো সেটি লাইক করলেন এবং কমেন্ট এলো 250 টি এবং ঠিকমতো পড়লেন 150 জন ।সেক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে লেখা শেয়ার হলে পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এবং সেক্ষেত্রে বন্ধুত্বের খাতিরে মন্তব্য নয় সত্যিকারের পাঠকের মতামত প্রকাশ পাবে।

 জয়িতা চক্রবর্তী আচার্য 


খুব সুন্দর, অতি চমৎকার এবং খুব 

প্রাসঙ্গিক  আজকের আলোচনার বিষয়।। 

আগে  সবাই বিভিন্ন পত্রিকা কবিতা ছাপাতো

এখন ফেইসবুকের যুগ তাই লিটল ম্যাগ বা পত্রিকার যায়গায় আমরা  ফেসবুককে ব্যবহার করছি।

নানান ধরনের মানুষের অংশগ্রহন আছে। অনেকেই এর নেতিবাচক ব্যবহারও করছেন। কিন্তু তার বিপরীতে আমরা যে এই সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সাহিত্য ভাবনা আদান প্রদানের একটি জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছি তার অবশ্যই একটি ইতিবাচক প্রভাব আছে বলে আমি মনে করি। 

ফেসবুক গ্রুপে এক সাথে অনেকে যুক্ত থাকে বলে সহজেই সে লেখাগুলো পৌছানো যায়। 

ফেসবুক সাহিত্য গ্রুপে থাকলে আপনার লেখার মাধ্যমে  আপনাকে চিনবে, পরিচিতি বাড়বে। পাঠকদের মতামতও পাওয়া যায় সহজে। ভাল ভাল মন্তব্য।


অবশ্য ভালোমন্দ সব প্লাটফর্মেই আছে। 

 প্রচুর লেখক,প্রচুর লেখা ফেসবুকের সাহিত্য গ্রুপে। অনেকে লেখা কপি করে নিজের বইয়েও প্রকাশ করছে। গ্রুপে পত্রিকার জন্য লেখা  নেওয়া হয়, সেই গ্রুপ থেকে,।কিন্তু গ্রুপ থেকে যদি সেই  লেখা না নেওয়া হয়,তাহলে অযোগ্য  বা,ছাপার অযোগ্য ভাবা হয়। 

তবে একটা দিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু ভাল লেখাও  পড়তে পাচ্ছি।। কিন্তু  সাহিত্যের প্রসার

কতটুকু হচ্ছে, তা বলা মুশকিল।

 মুরশিদ  সুবহানী 


আমরা অনেকেই এনালগ যুগে লেখালেখি শুরু করেছি, এখনও এই বন্ধুর পথে হাঁটছি। তখন ছিল এখনও আছে সাহিত্য সংগঠন। সেই সময়ে স্বশরীরে হাজির হয়ে নিজেদের লেখা পাঠ করতে হ’ত অপর কেউ আলোচনা করত/করতেন। ভালো হোক, তীর্যক হোক শেখার স্বার্থে মেনে নিয়ে ভুলগুলো ঠিক করে নিতাম।এখন অন লাইন ,জুম ,ফেসবুকের সময়। ফেসবুকে অনেক সাহিত্য পেজ দেখতে পাই, আবার অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও নিজেদের কবিতা, গল্প ইত্যাদি পোস্ট করেন। অনেকের লেখা ভালো ,তাঁরা আরও চর্চা করলে শাণিত হবে এটা বলা যায়।  ফেসবুক গ্রুপ অনেক আছে । ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গীয় সাহিত্য দর্পণ আর দুইটি ফেসবুক পেজ এবং আমাদের কিশোরকালের সংগঠন কবিকণ্ঠের সাথে আমি যুক্ত। আমরা মত যারা প্রিন্টিং মিডিয়া লেখেন ,তাঁরা একমত হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন ,তবে বঙ্গীয় সাহিত্য দর্পণ আন্তর্জাতিক এই সাহিত্য পেজটি অনেক সমৃদ্ধ। অনেকের লেখা আমার খুব ভালো লাগে।সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য, এডমিন সায়ন্তিকা ঘোষাল সহ অপর এডমিনদের কাছে আমার একটি প্রস্তাব, লেখায় শুধু আমরা সুন্দর, খুব ভালো, চমৎকার এইটুকু বলেই শেষ করি। দু/চার লাইনের আলোচনা করলে আরও ভালো হয়। লেখা সমালোচনার উর্ধ্বে নয়, সমালোচনা নিন্দা আলোচনা না হলে সেটি  লেখককে আরও পরিশীলিত ও সমৃদ্ধ করবে।-মুরশাদ সুবহানী

=====

 নীলাঞ্জনা ভৌমিক


বিষয়বস্তু সময়োপযোগী যেমন তেমনই যুগোপযোগীও বটে। একটা সময় ছিল তখন প্রায় প্রতিটা বাড়ি থেকে সুর ভেসে আসত। রবীন্দ্র সাহিত্য, শরৎসাহিত্য,বঙ্কিম সাহিত্য প্রায় সকলের আগ্রহ ও আলোচনার বিষয় ছিল। জীবনানন্দ , শীর্ষেন্দু,সমরেশ বোস,সমরেশ মজুমদার সাহিত্যের ধারাকে কিছুটা বদল করলেন কিন্তু আমজনতার মনোসংযোগের কোনো ঘাটতি ছিল না। যুবক- বৃদ্ধ  সকলেই সাহিত্যের প্রতি কমবেশি আগ্রহী ছিলেন। এই সময়ের দিকে ফিরে দেখুন সাহিত্যের একেবারে সেই কদর কতোটা কমে গেছে। এখন মনোরঞ্জনের এবং মনসংযোগের অনেক ডিজিটাল মাধ্যম হয়েছে। সবাই উন্নত মানসিকতা বা মানবিকতা যাইই বলা যাক না কেন সেদিকে বিশেষ আগ্রহ নেই। শপিংমলে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আড্ডাই এখন মনোরঞ্জনের প্রায় শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। সময় বদলায়,যুগ বদলায় সেইসাথে মানুষের জীবনের চাওয়া- পাওয়াও বদলে যায়। এতকথা এইজন্যই বলা যে এই সময়টাই এমন যে সেখানে সাহিত্যকে প্রায় লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে। এই অবস্থায় যাঁরা আজও সাহিত্য ভালবাসেন তাঁদের জন্য ফেসবুক গ্রুপগুলি অবশ্যই সচেতন ভূমিকা রাখেন।

====

অমল কুমার ব্যানার্জী 


1. প্রথমেই বলতে হয় এই বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক ও বিস্তারিত ভাবে আলোচনার বিষয় এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই প্রথমেই উপস্থাপক দেবাশীষ মহাশয়কে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। 


2. এ প্রসঙ্গে আলোচনা করার পূর্বে সাহিত্য চর্চা ও প্রসারে পৃথিবীর সমস্ত গতানুগতিক মাধ্যমগুলিকে আমার শ্রদ্ধাপূর্ণ কুর্নিশ জানাই। 


3. ঐ মাধ্যমগুলির কোন  বিকল্প নেই। কারন Hard Copy তো প্রচার করার জন্য ঐ মাধ্যমগুলোর বিকল্প কোথায়। 


 4. হ্যাঁ প্রযুক্তি ত্বরান্বিত হওয়ার জন্য অনেক অনেক সময় বাঁচে। পৃথিবীর পরিধি হাতের মুঠোয়। কম সময়ের মধ্যে  complete করে প্রকাশ সময়ের বাঁধনের মধ্যে করা যায়। 


5. মার্কেটিং ও এডভার্টিইজমেন্ট খুব সত্বর করা যায়। পাবলিক সহজেই বই বুকিং করতে পারে।

6. এ হল সাধারণ আলোচনা।  কথা হচ্ছে ফেসবুকে সাহিত্য গ্রুপ গুলির ভূমিকা। 

প্রতিষ্ঠিত পুরাতন সাহিত্য গ্রুপ ও বর্তমানে ফেসবুকে সাহিত্য গ্রুপ। 


a) প্রতিষ্ঠিত পুরাতন সাহিত্য গ্রুপ গুলি যে ঐতিহ্য বহন করছে তার parallel বর্তমান ফেসবুকে সাহিত্য গ্রুপ গুলিকে আসতে অনেক সময় লাগবে এবং গ্রুপ গুলিকে খুবই সচেতন হতে হবে "বানান ও ব্যকরণের ব্যাপারে। 


b) বেশির ভাগ "ফেসবুক সাহিত্য গ্রুপ গুলি যখন 


বই প্রকাশ করেন তাদের এডভার্টিইজে পরিস্কার লেখা থাকে বানান ভুল ও ব্যকরণ জনিত ভূল লেখকের দায়িত্ব। 



c) লেখকের দায়িত্ব তো বটেই কিছু তর  proof reading লেখককে পাঠানো হয়না।


d) Selected list প্রচার করে অগ্রিম বুকিং এর প্রচার মুখ্য ভূমিকায় চলে আসে। প্রকাশের জন্য অবশ্যই একটি বই কেনার আবেদন থাকা স্বাভাবিক। 


e) আপনার লেখা যতই প্রাসঙ্গিক সামাজিক সুন্দর   বানান ও ব্যকরণ ত্রুটি মুক্ত হোক না কেন advanced booking সম্পূর্ণ না হলে তা Dustbin এ চলে যাবে। কারণ সাহিত্য সাধনার চাইতে বাণিজ্যেক ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 


f) অনেক গ্রুপ আছে যাদের বাৎসরিক সদস্য পদ নিতেই হবে তাছাড়া লেখা নির্বাচিত হবে না এবং লেখা প্রকাশিত হওয়ার জন্য পয়সা তো লাগবেই।  


সুতরাং "ফেল কড়ি মাখ তেল আমার রাজ্যে উপাস নাই"


g) এতে বহু সাহিত্য প্রকাশ হচ্ছে। সাহিত্য সুলভ যে মান থাকা দরকার তা হচ্ছে না।


h) তবে বহু ব্যতিক্রম ফেসবুক সাহিত্য গ্রুপ রয়েছে  যাদের নিরলস সাহিত্য মুখি ভূমিকা আজ বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। 


আমার জানা অনেক গুলি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। 


তবে নাম নিচ্ছি না। আমি কামনা করি যে সমস্ত গ্রুপ গুলি রয়েছে তাদের সার্বিক ভূমিকা পালনে আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। 


 i) এর সঙ্গে আরও একটি প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ কথা হল পাঠকবর্গ। লেখক বর্গের বৃদ্ধির হার প্রচণ্ড উর্ধগামী। 


j) এটা স্বীকার করতেই হবে যে পাঠকবর্গ আমরা আজও সেই ভাবে বৃদ্ধি করতে পারিনি। পরবর্তী আলোচনায় এই বিষয়টির উপর আলোকপাত করার অনুরোধ রইলো। কারণ পাঠকবর্গ হচ্ছে সাহিত্যের প্রাণ।


k) প্রতিষ্ঠিত পুরাতন সাহিত্য গ্রুপ গুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই গ্রুপগুলি Tradition বজায় রেখে 


আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে সাহিত্য চর্চার পথটি সুগম করে চলছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। 


বনেদি পুরোনো সাহিত্য গ্রুপ গুলি ফেসবুক সাহিত্য গ্রুপ গুলির লেখার দিকে নজর রেখে ভালো লেখার অনুসন্ধান করছেন বা যদি করেন 


তবে তা সাহিত্যের আরও একটি দিক উন্মোচন করে সাহিত্যকে আরও আগে নিয়ে যাবেন এটাই প্রত্যাশা। কারণ এই গ্রুপগুলির অনুভব বা experience খুবই মূল্যবান। তার প্রয়োগ সাহিত্যের

নূতন প্রজন্মের উত্তরদায়িত্ব বোধ শিক্ষা দেবে। 


l) বনেদি পুরোনো সাহিত্য গ্রুপ গুলির সমস্যা হচ্ছে 


কিছুটা আর্থিক সমস্যা। নূতন প্রযুক্তির প্রয়োগ এর জন্য capital প্রয়োজন। কারণ তারা quality বিসর্জন দিয়ে commercial হতে পারবেন না। 


m) এর জন্য সাহিত্য সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক প্রয়োজন। আসামের মহারাজ সাহিত্যের বিরাট পৃষ্ঠপোষক ছিলেন যদিও সাহিত্যিক ছিলেন না। 


n) বনেদি এই সাহিত্য গ্রুপ গুলির পর্যালোচনা করে সাহিত্যের স্বার্থে  সরকারকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সাধারণ জনগণের মধ্যে থেকে পৃষ্ঠপোষক এগিয়ে আসুক এই আবেদন রইলো। 


এই ভাবে যদি কোন সমাধান পাওয়া যায় তবে সাহিত্য আরও অনেক অনেক আগে চলে যাবে। 


সাহিত্য প্রসারে প্রচারে ফেসবুকে সাহিত্য গ্রুপ গুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে সাহিত্যের quality র দিকে নজর রেখে commercialisation এর পথটি সীমিত করতে হবে। আজ এখানে রাখলাম। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. সকলের লেখা পড়লাম।
    সুন্দর মনোগ্রাহী আলোচনা।
    অনেক ঋদ্ধ হলাম।
    আমার মন্তব্যটি স্থান পায়েছে দেখে আনন্দিত হলাম। সম্পাদক মহাশয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন