পোস্ট বার দেখা হয়েছে
মহাবলেশ্বর
ক্যামেরা ও কলমে : সুজিত চক্রবর্তী
হঠাৎ চলে গেছিলাম মহারাষ্ট্রর অরণ্যে ঘেরা পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় অবস্থিত শৈল শহর মহাবলেশ্বরে । মুম্বই -এর কাছে এবং পুণের আরও কাছে হওয়ার জন্য এখানে পর্যটকের ভিড় কম বেশি সারা বছরই লেগে থাকে।
এখানকার উচ্চতা 1353 m / 4439 feet হওয়ার ফলে এখানকার হালকা সবুজ পাহাড়ী ঠান্ডার আমেজ খুবই লোভনীয় পর্যটকদের কাছে।
প্রকৃতির রূপই মানুষকে যে কোনও পাহাড়ে বারবার টেনে নিয়ে যায় তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু, প্রকৃতি ছাড়া এখানে আছে শ্রীক্ষেত্র মহাবলেশ্বর শিব মন্দির।
কাছেই আছে শতাব্দী প্রাচীন প্রতাপগড় ফোর্ট । আর আছে একটু নীচে পাঞ্চগনি শৈল শহর।
আমার সুবিধের জন্যে আমি এই পর্বে শুধুমাত্র মহাবলেশ্বরের ছবি দেবো।
সব ফটোই আমার মোবাইলে তোলা ।
Device : Samsung Galaxy M20
রাস্তায় দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে মহাবলেশ্বর পৌঁছানোর যে সময় নির্দিষ্ট ছিল , তার থেকে কিছুটা দেরি হয়ে গেল আমাদের পৌঁছতে । প্যাকেজের ট্যুর হওয়ার জন্য সেদিন বিকেলে যা কিছু দেখার কথা ছিলো তা যাওয়ার মতো তখন সময় নেই হাতে । ট্যুর অপারেটর জানালো , আজ আর কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। আমি বললাম , তাহলে সন্ধ্যার আগে সানসেট পয়েন্ট দেখিয়ে দাও।
ওরা জানালো , এখন বর্ষাকাল শুরু হয়েছে । সান্ই তো নেই , সেট কি করে হবে। অতঃপর ...
আগামীকালের অপেক্ষায় রইলাম। সন্ধ্যার পর ঠান্ডাটা বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠলো । পরে , রাত ন'টা নাগাদ একবার রাস্তায় নেমে এলাম । দেখি , ঘন কুয়াশা দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে আর সামনে চার ফুটের বেশি কিছু দৃশ্যমান হচ্ছে না , অন্তত আমাদের চোখে। বেশ একটা ভালো লাগা নিয়ে ফিরে এলাম হোটেলের রুমে।
পাহাড়ে এসে আমরা যেন নতুন করে উপলব্ধি করতে পারি , আমাদের মাতৃভূমি ঠিক কতটা সমৃদ্ধ ও সুন্দর। নিজের অজান্তেই গুনগুন করে উঠেছিলাম মান্না দের গাওয়া ( কথা: শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুর : অজয় দাস ) সেই বহুশ্রুত গানের কলি:
" কিরীট ধারিণী তুষার শৃঙ্গে
সবুজে সাজানো তোমার দেশ
তোমার উপমা তুমিই তো মা
তোমার রূপের নাহিতো শেষ ..."
সত্যি কথা বলতে কি মনে হচ্ছিল , মুঠো মুঠো কবিতা ভেসে আসছে ঘাসে ঢাকা সবুজ পাহাড়ের স্পর্শে উজ্জ্বলতর হয়ে।
... কবিতার মৃত্যু নেই পৃথিবীতে !
পরদিন সকাল ন'টায় বেরিয়ে পড়লাম সাইট দর্শন করতে ।
বৃষ্টি ছিল না , হালকা মেঘের আকাশের নিচে গাড়ি এগিয়ে চলেছে । রাস্তার দুপাশে চিরহরিৎ বৃক্ষের অরণ্য এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য রচনা করেছে । মাথার ওপর মাঝে মধ্যে সবুজের শামিয়ানা , যার ইংরেজি নাম green canopy ! কখনও ডাইনে, কখনও বাঁয়ে বাঁক নিয়ে এগিয়ে চলেছে পথ ।
মনে পড়ে গেল ' শেষ পর্যন্ত ' ছবিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া সেই বিখ্যাত গানের লাইন
( কথা : গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার
সুর : হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্বয়ং ) ।
" এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকে না তো মন,
কাছে যাব কবে পাব
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ। "
ভিউ পয়েন্টে পৌঁছে দেখা গেল ঝলমলে রোদে ভেসে যাচ্ছে চারদিক। একই জায়গায় পরপর চার-পাঁচটা পয়েন্ট থাকার অর্থ পর্বতমালা ও নিচে বয়ে চলা কৃষ্ণা নদীর সৌন্দর্য বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে দেখে নেওয়ার সুযোগ।
অল্প পয়সা খরচ করে দূরবীনে চোখ রেখে দেখে নেওয়া যায় দূরের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ফোর্ট এবং পায়ের নিচে অনেকটা গভীরে বয়ে চলা কৃষ্ণা নদীকেও !
তখন যেন মনে হচ্ছে ঠাকুর কবির গান শুনতে পাচ্ছি ভিতর-কানে :
" কান পেতেছি , চোখ মেলেছি ,
ধরার বুকে প্রাণ ঢেলেছি ,
জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান ,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান ll"
এখানেই দেখে নিলাম Elephant's head point বা Needle hole point . পাহাড়ের গায়ে হাতির মাথার মতো বা সুচের ছিদ্রের মতো একটি আকৃতি দেখা যায় । নিচে কৃষ্ণা নদী ।
মহাবলেশ্বরে পাঁচটি নদীর সঙ্গমস্থল । এদের নাম কৃষ্ণা, কোয়না, ভেন্না, সাবিত্রী আর গায়ত্রী । এই সঙ্গমস্থলেই আছে পঞ্চগঙ্গা মন্দির , যেটি ওল্ড মহাবলেশ্বরে মহাদেবের মন্দিরের ক্যাম্পাসে ( শ্রীক্ষেত্র মহাবলেশ্বর) অবস্থিত।
এক পয়েন্ট থেকে অন্য পয়েন্ট যাওয়ার রাস্তা।
এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে স্বাভাবিক নিয়মেই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে যায় পর্যটক।
কোথায় যেন শুনেছিলাম, অরণ্যে একলা গাছ বাঁচে না ।
লোকালয়ে বাঁচে ? যারা প্রতিদিন বহু ট্যুরিস্টের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পায় ?
এখানকার নদী , উপত্যকা আর পাহাড় থেকে বেরিয়ে এবার অন্যত্র যাওয়ার পথে এগিয়ে চললাম আমরা । ক্যামেরা ছাড়াও স্মৃতিতে থেকে যাবে এই প্রকৃতির রূপ !
0 মন্তব্যসমূহ