পোস্ট বার দেখা হয়েছে
যেতেও তো পারি--
হয়তো যেতেও তো পারি,
যেতে পারি একদিন!---
অনন্ত মহাশূন্যে যদি হয়ে
যাই বিলীন------
থাকিবে না কোনো ক্রোধ,
থাকিবে না কোনো অভিমান,
থাকিবে শুধু একরাশ
ভালোবাসার গান!-----
আবার আসিবো কি ফিরে?
ওই বালুকাবেলায়,
ওই সমুদ্রতীরে!---
নয়নে নয়ন পড়িবে কি?
অপার বিস্ময়ে
তাকিয়ে থাকিবে কি?
শোনাবে কি আমায়
কোনো বিরহ-বেদনার গান?
থাকিবে কি মিশে তাতে
হৃদয়ের অন্তঃস্থলের টান?
মিশিবে কি তাতে অন্তরের
ভালোবাসার গান?
হে অনন্ত মহাসুন্দর,
হে অনন্ত মহাশেষ!----
থাকিবে কি ধরণীতে,
আমার কোনো রেশ?
====
বিলীন করে দিতে চাই-
এখানে দীর্ঘশ্বাস আছে,
হা-হুতাশ আছে।
গ্ৰীষ্মের কাঠফাটা রোদ আছে;
কাকের কর্কশ চিৎকারে
অশনি সংকেত আছে।
বিধবার বুকফাটা আর্তনাদ আছে!
সেদিকে শকুনের শ্যেন দৃষ্টি আছে।
ভাদ্রের কড়া দুপুরে
কুকুরের মৈথুন আছে।
ভ্যাপসা গরমে, বাস-ট্রেনের
মধ্যে চিৎকার আছে--
সীমান্তে জওয়ানের কফিন-বন্দী
মৃতদেহ আছে, মা ও স্ত্রীর হা-হুতাশ
ক্রন্দন আছে! রাস্তায় গড়িয়ে যাওয়া
কুষ্ঠ রুগী আছে;ডাস্টবিন থেকে
কুড়িয়ে খাওয়া শিশুদের মুখে
অনাবিল হাসি আছে!
স্টেশনে অভুক্ত শিশুদের মুখে
বছরে দু-একদিন জুটে যাওয়া
মাংসের হাড় আছে, সেই মুখে চাঁদের
হাসি আছে! এখানে ছিঁচকে পকেট-
মারকে পিটিয়ে মেরে ফেলা আছে!
আবার কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে
কতো মান্য-গণ্য জননেতা আছে!
মাঝে মাঝে গলার কাছে একদলা
কান্না জড়িয়ে যাওয়া আছে।
তবু আমি বাঁচতে চাই,
ওদের সবাইকার সংগে একাত্ম হয়ে
আমি বাঁচতে চাই-------
ওদের কষ্ট-জ্বালা, ওদের সততা-অসততা,
সব আমি আমার অঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে
জ্যোৎস্না প্লাবিত ধরণীর উন্মুক্ত মাঠের
এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যেতে
চাই, অনুভব করতে চাই ওদের অসহ্য
যন্ত্রণা, ওদের হাসি-কান্না!-------------
আমি বাঁচতে চাই, ভীষণ ভাবে বাঁচতে চাই!
অবশেষে ক্লান্ত হয়ে চিতাভস্মে,
আমি, আমার অনুভূতিকে
বিলীন করে দিতে চাই!
=====
জীবন
খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছিল সততা,
বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত আজ সে।
গহ্বরের অতল শূন্যতা,
তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো।
পূর্ণ প্রেমে আজ তার রিক্ততা,
জ্ঞানের ভাণ্ডারে আজ তার শূন্যতা!
উদ্ভ্রান্তের মতো সে আকাশের দিকে
তাকালো;আকাশ বললো বাতাসকে,
'দেখ,দেখ, আমি তো রিক্ত, আমি তো
মহাশূন্য! তবুও তো আমাকে
দেখেই ওরা তো বাঁচে,
হাসে, কাঁদে, তুই তো
প্রবাহিত হোস।' বাতাস বললো
আকাশকে,'দাঁড়াও দেখি কি করা যায়!'
এক ফোঁটা শিশিরের শীতলতায়
সিক্ত করে দিল তাকে।
শিহরিত হলো সে!
আবার উর্দ্ধাকাশে তাকালো,
দেখলো জ্বলজ্বল করছে ধ্রুবতারা;
আর বলছে, দেখছিস না আমার
অন্তহীন হাসি;দেখিস না ডাস্টবিন
থেকে কুড়িয়ে খাওয়া ছেলে-মেয়েগুলোর
তৃপ্তির আনন্দ! ভোরের জানালা
দিয়ে আসা আলোর রেখা, গাছের
ডালে পাখির কিচিরমিচির!
ফুটপাতের ধারে জড়াজড়ি করে
শুয়ে থাকা মা ও মেয়েকে!
রাস্তায় গড়িয়ে যাওয়া ওই কুষ্ঠরুগীকে!
তুই না সততা?
দেখিস না, তোর আনন্দে
মায়ের হাসি;
অনুভব করিস না;-
বাবার শীর্ণ চেহারার মুখের
বলিরেখার মধ্যে সততার ছাপ।
তুই না সততা?
কেন আজ হতে
চলেছিস বিলীয়মান?
অনুভব করিস নি কোনোদিন-
কোনো বন্ধুর
নির্ভেজাল ভালোবাসা।
সততা বললো, মিথ্যা,
মিথ্যা, সব মিথ্যা!
খাদের অতল গহ্বরের
শূন্যতাতেই আমার পরিপূর্ণতা!
হঠাৎ চমকে উঠলো সে!
দেখলো, মায়ের হাতের উষ্ণ
স্পর্শ বলছে, খোকা ওঠ;
অনেক যে বেলা হল!
বিলীয়মান সততা এগিয়ে চললো।
পূর্বাকাশে তখন সূর্য
জ্বলজ্বল করছে-
আর বলছে
এই তো জীবন।
=====
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
স্বপ্ন নেবে গো স্বপ্ন? হরেক রকম
স্বপ্ন আছে আমার এই ঝাঁকায়,
তবে হ্যাঁ,দাম দিতে হবে।
কোন্টা নেবে তুমি? দেখো দেখো,
রাস্তার ধারে ওই উলঙ্গ ছেলেটা,
আমার কাছ থেকে দাম দিয়ে
একমুঠো গরম ডাল-ভাতের
স্বপ্ন নিয়ে নিলো;খেয়াল করে দেখো
ওর মুখে বিশ্বজয়ের আনন্দের ছবি
ফুটে উঠেছে!ও বুঝেছি বুঝেছি,
তোমাদের এই সব সস্তা স্বপ্ন আবার
পছন্দ নয়; আছে গো আছে,
আমার কাছে অনেক রকম স্বপ্ন
আছে;ও ব্যর্থ কবি,সফল কবি
হওয়ার স্বপ্নও আমি বিক্রি করি ।
আবার জ্যোৎস্না প্লাবিত ধরণীতে,
বহু বহু দূরে দিগন্তবিস্তৃত ওই
মাঠে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন,
গহন অরণ্যে সিংহদের সঙ্গে
রাত কাটানোর অজানা অনুভূতি,
সমুদ্রের অতলান্তে জলপরীদের
সঙ্গে পথ চলার স্বপ্ন,আবার
এক মুঠো আকাশ ধরার স্বপ্ন --
সবই আছে আমার কাছে ।
কি বললে ?এসব তোমার দরকার
নেই ;আছে গো আছে,তোমার
জন্যও আছে --তোমার বেকারত্বের
জ্বালায় তোমার ক্ষুধার্ত দেহ-মনকে,
বর্ষার অঝোর ধারায় বৃষ্টি দিয়ে
শীতলতায় ভরিয়ে দেওয়ার স্বপ্নও
আছে ;তোমার নিরলস পরিশ্রমে--
ব্যর্থতা ঢাকা দিয়ে একটা চাকরি
পাওয়ার স্বপ্ন,এক অজানা আনন্দে
শিহরিত হয়ে প্রেমিকাকে সেই খবর
দেওয়ার স্বপ্ন,স্বপ্নের পায়রা হাতের
মুঠোয় ধরে,শঙ্খচিলের ডানায়
ভর দিয়ে,চাঁপা ফুলের গন্ধ
শুঁকতে শুঁকতে বাড়িতে ফিরে
এসে মাকে জড়িয়ে ধরার আনন্দ --
সব স্বপ্নই আছে আমার এই
ঝাঁকায়;মাকে নতুন শাড়ি কিনে
দেওয়া ,বাবার হাতে প্রথম টাকা
তুলে দেওয়া,আবার গভীর
গোপনতায় প্রেমিকার জন্য
আনা উপহার সবই আছে;
কি হলো? ও মেধাবী ছেলে,
তুমি মুখ ভার করে আছো কেনো?
মস্ত বড়ো বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন--
তাও তো রয়েছে আমার এই
ঝাঁকায়,আছে বিলাসবহুল অট্টালিকা
কেনার স্বপ্ন,আবার চাঁদে জায়গা
কেনার স্বপ্নও রয়েছে আমার
এই ঝাঁকায়--কি বললে?তুমি বড়ো
অভিনেতা হতে চাও ?সেই স্বপ্নও তো
রয়েছে আমার কাছে--আবার
বড়ো খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নও
রয়েছে আমার এই ঝাঁকায়,
তুমি ঠিক করতে পারছো না,
তাই তো?কোন্ স্বপ্ন নেবে?
স্বপ্নের জটলায় তোমার চেতনা
বিলুপ্ত হতে চলেছে--আমার
প্রতিটি স্বপ্নের কিন্তু আলাদা আলাদা
দাম ;আর দাম ছাড়া স্বপ্ন নিলে,
সেই স্বপ্ন কিন্তু মহাশূন্যে বিলীন
হয়ে যাবে --তুমি হয়তো স্বপ্নের
প্রকৃত দামও আমাকে দিতে যাবে,
কিন্তু খুব সাবধান! সমাজের কিছু
পাষণ্ড,তোমার হাত থেকে সেই
দাম ছিনিয়ে নিতে পারে!তখন
তোমার স্বপ্ন নীরবে-নিভৃতে চলমান
অশরীরীর মতো তোমাকে ছেড়ে
অনন্তলোকে পাড়ি দেবে--
আমি তো সামান্য ফেরিওয়ালা,
আমার একটা কথা শুনবে তোমরা?
যখন তোমরা স্বপ্নের দাম দিতে
বাধা পাবে,জানাও না কেনো তোমার বন্ধুদের;উপহাসের ভয়ে--ভুল করো;
সবাই তো নিকৃষ্ট নয়,ভাগ করে
নাও তোমার স্বপ্নের আনন্দ তোমার
প্রকৃত বন্ধুদের সঙ্গে; আর দেখি
আমি পারি কিনা,আমার ঝাঁকাতে
থাকা সব স্বপ্ন ওই পাষণ্ডগুলোর
হাত থেকে উদ্ধার করে সবাইকে
বিলিয়ে দিতে---দেখবে পৃথিবীটা
তখন কেমন রঙিন হয়ে উঠবে
আলোকের ঝর্ণাধারায়!-------
=====
অধরা
কে তুমি আর্যা? তোমার জ্যোতি ছটায়
আমার অস্তিত্ব হারিয়ে যায়!আমার অস্তিত্বে,
আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে তোমাকে
আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি, পারি নি,
জল-স্থল,অন্তঃরীক্ষে সর্বত্র তোমায় খুঁজেছি,
পাই নি ,গভীর রাত্রে নিঝুম নিস্তব্ধতায় তোমাকে
ভাবার চেষ্টা করেছি,আমার চেতনার জালে
তোমাকে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি;
ছটফট করতে করতে আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন
হয়ে গেছি;তুমি তো সর্বরূপে সর্বত্র বিরাজমান!
তাহলে কেন পারি না আমি তোমায় ধরতে?
হে মহামায়া,জানি তোমার ওই অসম্ভব
তেজস্বিনী নারীশক্তি স্বর্গীয় প্রেমে ধরা দেয় !
কিন্তু আমি তো এক সামান্য মানুষ;যেখানে
ক্ষুধার জ্বালা আছে,তৃষ্ণা আছে,লোভ-কাম, হিংসা-বিদ্বেষ আছে, বলো তুমি আমায়- তুমি
কি শুধুই মহামানবী ?সাধারণ মানবীর মধ্যে কি
তোমার কোনো অস্তিত্ব নেই?আমার বয়ঃসন্ধিক্ষণের
প্রেমে,আঠারো বছরের দুঃসাহসী প্রেমে তুমি তো
ধরা দাও নি;আজ যখন জীবন যুদ্ধের মধ্য গগনে,
তখন তুমিই বলো- হে মহামানবী,আমার প্রেমের
কোন্ সাধনায় তুমি আমায় ধরা দেবে?আমি তো
মহাপুরুষ নই,আমার পূজার ফুলকে তুমিই
পারবে স্বর্গীয় প্রেমে রাঙিয়ে আমায় দিতে,সেই
ফুল দিয়ে আমি,তোমায় অঞ্জলি দেবো, তুমিই
আমার হাতধরে নিয়ে চলো সেই অনন্ত মহাশূন্যে!
যেখানে প্রেমের গভীরতায় তলিয়ে যাবো, নিশ্চিহ্ন
হয়ে যাবো মহাকালের অনন্ত মহাসমুদ্রে!
0 মন্তব্যসমূহ