দর্পণ || নির্বাচিত সাপ্তাহিক আলোচনা




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

মন মানসিকতা ও মানবিকতা 

প্রিন্স এ ওয়াকী 


একটু কী খটমটে, নিরাসক্ত হয়ে গেলো লেখার বিষয় বস্তু?


কিন্তু অনেক দিন যাবৎ মন নিয়ে লেখার বা কিছু বলার ইচ্ছা ছিল।সাধ্যের মধ্যে কিছু রেফারেন্স বই,পত্র পত্রিকায় মন এবং মনস্তাত্ত্বিক নিয়ে বিভিন্ন ফিচার পড়ার সুযোগ হয়েছে।অনেক বিশাল ব্যাপার।মন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে যেয়ে আমার কাছে মানসিকতা,মানবিকতা ব্যাপার দুটি জড়াজড়ি হয়ে যায়, বুঝতে পারি মনের সাথে মানসিকতা,মানবিকতা খুবই পোক্তভাবে সম্পৃক্ত। মন জুড়েই আছে মানসিকতার সাথে, ইতিবাচক বা নেতিবাচক মানবিকতার সাথে।মোদ্দা কথা ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক শব্দ দুইটি মন-এর সাথে এবং দারুণ স্পষ্টভাবে মানসিকতা ও মানবিকতা শব্দ দুটির সাথে যায় ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক বোধে,কর্মকাণ্ডে।


তাই শিরোনাম হিসাবে নির্বাচন-


" মন মানসিকতা ও মানবিকতা।"


#

তো প্রিয় পাঠক আর কেন শুধু শুধু কলেবর বৃদ্ধি করা,

মূল বিষয়ে প্রবেশ করা যাক।


প্রথমেই প্রশ্ন রাখছি,মন কি?


 মন দর্শনশাস্ত্রের অন্যতম মৌলিক বিষয়। সাধারণত মন বলতে দুইটি বিষয় বা ধারণার সমষ্টিগত রূপকে বোঝায়;বিষয় দুইটি হচ্ছে বুদ্ধি ও বিবেক বোধ,যা আবার চিন্তা ভাবনা চেতনা অনুভব অনুভূতি আবেগ কল্পনা ইচ্ছা,কখনওবা স্বপ্নের বিস্তারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।


মন নিয়ে আলোচনা, তার্কিক উপস্থাপনা সেই গ্রীক দার্শনিকদের সময়কাল থেকে।সক্রেটিস,প্লেটো,এরিস্টটল, এরপরেও অনেক বিশিষ্টজন সেই গ্রীক সময়কালে মনকে নিয়ে নানা রকম তত্ত্ব, তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করেছেন।এছাড়াও সময় পরিক্রমায় মন নিয়ে নানান তত্ত্ব প্রচলিত আছে। 


বিজ্ঞান বলছে,মস্তিষ্ক থেকে বিশেষ শারীরবৃত্তীয় ক্রীয়াকলাপের মাধ্যমেই মন গড়ে ওঠে। 


মন একটি সত্তা।চিন্তাভাবনা, চেতনা, উপলব্ধির অনুষদ।এক বিশেষ মনোভাব;যেখানে কোনো কর্মের ফলে আবেগ, অনুভূতি, অনুভব সম্পাদনের জন্য দায়ী। মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে,আর মন যদি বিগড়ে যায় তবে শরীরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। 


সেই প্রাচীন সময়কাল থেকেই মনকে মস্তিষ্কের কল্পনাপ্রসূত বা কল্পনা স্বীকৃত ক্ষমতা হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।যা নিয়ে এখনও অনেক বিতর্ক,গবেষণা, আলাপ আলোচনার শেষ নেই।


এদিকে আধুনিকতম জীবনব্যবস্থার প্রবর্তক,ইসলাম ধর্মের প্রচারক প্রিয় নবিজি(সঃ) বলেছেন,যা বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে উল্লেখ আছে,"শরীরের ভেতর এক টুকরো মাংসপিণ্ড আছে;যখন এটা ভালো থাকে, তখন সমস্ত শরীর ভালো থাকে।আর যখন এটা আক্রান্ত হয়, তখন সমস্ত শরীর আক্রান্ত হয়।আর এটা হলো ক্বলব।"


অনেক প্রতিথযশা স্কলার একেই 'মন' বলেছেন দৃঢ়তার সাথে।আসলে মন নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা পর্যালোচনা করে দেখা যায় মনের সাথে ইতিবাচকতা ও নেতিবাচকতার দারুণ সম্পর্ক আছে।


একটি মন যখন ইতিবাচক ধ্যান ধারণায় ঋদ্ধ থাকে, তখন সবকিছুই থাকে সুখানুভবে,ফুরফুরে, সব কেমন যেন সহজ সরল,সুখ সুখ খেলাঘর। অথচ নেতিবাচক চিন্তায় যখন আচ্ছন্ন একটি মন,পৃথিবীটা হয়ে ওঠে নিরানন্দ, একটি দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যায়,দুঃখ,যন্ত্রণা, অসহায়ত্ব আষ্টেপৃষ্টে চেপে ধরে একটি সত্তাকে,কুঁড়ে কুঁড়ে বিনাশের শূলে চড়িয়ে দেয় জীবন সত্তাকে।


#

এদিকে মনের সাথে মানসিকতা যেন ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে মানসিকতা বা মানসবাদ-ও একটি দার্শনিক নীতি। মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে মানসিক তত্ত্ব আলোচিত হয় যেখানে,সেখানে মন,চেতনা,মানসিকবোধ নানারকম ধারণাগুলি ব্যবহৃত হয় এবং মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় মানসবাদ, মন দারুণভাবে সম্পৃক্ত। 


ঊনিশ শতকের শেষভাগে বেশ গুরুত্বের সাথে মানসিকতাবাদী ধারণার উৎপত্তি হয়েছিল,এর প্রধান বিষয়গুলি ছিল মন,সময় ও পরিস্থিতি এবং প্রক্রিয়া এবং ব্যাপারগুলো মনোবিজ্ঞানে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।বৈজ্ঞানিক মনোবিজ্ঞানের প্রথম ভাগে ও কর্টেসিয়াস দ্বৈতবাদ( মন দেহ) এর প্রভাবকে কেন্দ্র করে সেই সময় দুইটি বিষয়ের অবতারণা হয়েছিলঃমানসিকতাবাদী,যা আসলে মানসিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে চিন্তা ভাবনার কর্মকাণ্ডকে আরও বেশি উৎসাহী করে তোলে।


অন্য ধারণাটি পদার্থবিদ্যা,যা মানসিকতার দ্বন্ধ হিসাবে উৎসাহিত করে এবং শুধুমাত্র সেইসব তথ্য-উপাত্তকে সমর্থন করে যা প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ যোগ্যতার দাবীদার।


মানসিকতার অনেকগুলো স্তর দৃশ্যমান। যেমনঃ প্রায়শই বলতে শোনা যায়, ও বেশ শীতল প্রকৃতির বা অনেক গম্ভীর। এছাড়াও বিদ্রোহী মানসিকতা,চঞ্চল প্রকৃতি, অস্থির, ধৈর্যশীলতা,মাগ্নিক,ভাবুক প্রকৃতি... 


লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে মানসবাদ বা মানসিকতার সাথে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক বোধের দারুণ সম্পৃক্ততা।মানসিকতা ব্যাপারটি যখন অবতারণা, এখানে আমি বা আপনি মানুষটি চলে আসছেন লেখার এই প্রেক্ষাপটে।


 যখন আপনি মানুষ কোন ক্ষতি বা ধ্বংসাত্মক চিন্তা করবেন না,আপনার চারপাশের সবাইকে ভালো থাকতে দেখে নিজেও ভালো থাকবেন, সবার জন্য নিজের অন্তরে,মনে ভালোবাসা অনুভব করবেন,পৃথিবীর চোখে আপনি নিশ্চিত একজন ভালো মানসিকতা বোধ সম্পন্ন মানুষ হিসাবে পরিচিতি পাবেন।যারা এই মানসিকতা লালন করেন, বিভিন্ন সমীক্ষায় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তাদের মনোদৃষ্টি সব সময় খোলা,সব সময় সবকিছু খোঁড়া যুক্তিতে বা ইনিয়েবিনিয়ে ধর্মের অজুহাতে ব্যাখ্যা করেন না কিন্তু ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ধার্মিকও বটে(একজন প্রকৃত ধার্মিক কখনই সীমালঙ্ঘন করেন না,বাড়াবাড়ি করেন, তিনি বা তারা সব সময় স্রষ্টা প্রেমিক,স্রষ্টার সৃষ্টির প্রতি দায়িত্বশীল -তিনি বা তারা যে ধর্মাবলম্বী হোন না কেন), নিজস্ব ধর্মীয় মতবাদ বা নিজস্ব মতামত  জোরজবরদস্তি চাপিয়ে দেন না ব্যক্তি বা সমাজের জোয়ালে।নিজস্ব বিশ্বাসের আবাদ করেন আন্তরিকতা,ধৈর্য আর সুশীল বোধে পরম শ্রদ্ধায়।


একজন ভালো মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ সাধারণত ধীরস্থির হয়ে থাকেন।মিষ্টভাষী,অনুভূতিশীল, কাউকে নিচু করে দেখেন না।কোথাও ভুল দেখলে,অসংগতি দেখলে সময় পরিস্থিতি বিচার করে সরব হোন অথবা জানিয়ে দেন নিজের অপছন্দ বিনয়ের সাথে। নেতিবাচক ইগো ব্যাপারটা মোটেও পাত্তা দেন না।প্রতিনিয়ত নিজেকে ঋদ্ধ করেন সময় বিবেচনায়। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদনে স্বচেষ্ট থাকেন,ছোট বড় সবার প্রতি থাকেন দৃষ্টান্তমূলক। জানতে চেষ্টা করেন সময় উপযোগী বিষয় বস্তু।নিজেকে শামুকের খোলসে লুকিয়ে রাখেন না,সম্পৃক্ততা সকল কল্যাণকর কর্মকাণ্ডে কিন্তু নিজেকে জাহির করেন না প্রয়োজনীয় বার্তা বা কর্মপদ্ধতি জানান দিতে।স্থান কাল পাত্র বিবেচনায় অপরের সাহায্যে এগিয়ে যান,লজিক্যাল কিন্তু নেতিবাচক ইমোশন প্রশ্রয় দেন না।সকল সৃষ্টির প্রতি থাকেন সদয়,শ্রদ্ধাশীল, দায়িত্ববান। বিনয়ের সাথে দৃঢ়তায় অপারগতা প্রকাশ করেন।দিনে রাতের নির্দিষ্ট সময়ে নিজের আত্ম-পর্যালোচনা করেন। যে ধর্মের অনুসারীই হোন স্রষ্টার প্রতি অবিচল আস্থাশীল। নিজের বর্তমান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন কিন্তু সব সময় পরিশ্রম আর মেধার সমন্বয়ে নিজের পরিবারের সমাজের উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন।নিজস্বতা,পরিবার পরিজন,চারপাশ নিয়ে খুশি থাকেন।ধীরস্থির চিন্তা প্রজ্ঞা দিয়ে ভুলকে শোধরাবার চেষ্টা চালিয়ে যান দলগতভাবে।ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে একজন সম্পূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন স্রষ্টার প্রতি সর্বদা সমর্পিত থেকে এবং স্রষ্টার অনুমোদিত কাজে তাঁর উপর পূর্ণ ভরসা রাখেন,উপভোগ করেন মানসিক প্রশান্তি। এসবই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। শুদ্ধাচার জীবনের চারুপাঠ।


আর বিপরীত বোধ,কর্মকাণ্ড একজন মানুষের জীবনে নিয়ে আসে অন্ধকারাচ্ছন্ন ধূসরতা,অসহায়ত্ব,ঈর্ষা,ক্রোধ, মিথ্যাচার, ভোগবিলাস, যথেচ্ছাচার জীবন যাপন, স্বার্থপরতা,হীনমন্যতা, মানসিক অসুস্থতা,অস্বাভাবিক মনস্তাত্ত্বিক ক্রীয়াকলাপ।পরিণাম ইহকালীন দৈন্যতা আর পরকালীন দুর্দশা।


#

এবার দৃষ্টি ফেরানো যাক মানবিকতা কি?


আসলে মানবিকতা একটি ট্রেইল বা আচরণগত সড়ক বা চেইন,যা মানুষের আচরণ অবস্থা এবং তার কর্মদক্ষতাকে বিশ্লেষণ করে। মানবতাকে বুঝতে গেলে একজন মানুষের চারপাশ অর্থাৎ তার সংস্কৃতি ও একজন মানুষের শিক্ষা,জ্ঞানের সাথে যুক্ত জীবনাচার অধ্যয়ন গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক ধারণা বেশকিছু বিষয় বা উপাদানকে সম্পৃক্ত করে। সমাজে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ত্বের অধ্যয়ন বা চর্চা, মানুষের চিন্তা চেতনার পরিমাপযোগ্য ফলাফল বা ধারণা আসলে এভাবে বলা যায়,"কোন মানবিক উপাদান না থাকলে কোন অধ্যয়ন সত্যই সম্পূর্ণ হয় না।"


যেকোন অগ্রযাত্রার বিষয় ভাবতে গেলে,বিষয়ের একটি যৌক্তিক উপসংহার টানতে গেলে সামাজিক প্রভাব খুবই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর সামাজিক এ প্রভাব একটি সমাজে বসবাসকারী মানুষের মানবিক চেতনাকে, বিশ্বাসকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে।অর্থাৎ মানবিকতা মানবতার নানা বিষয়ের সিদ্ধান্তকে, পরিবর্তনকে, উপযোগীতাকে গ্রহণ করতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব দেয়,এমনকি বৈশ্বিক গুরুত্বও বহন করে।তবে এ বিষয়টি কখনও মানবতাবাদীর পক্ষে ধীরস্থির, কখনোবা আগ্রাসী,পরিস্থিতি বিষয়টা বিবেচনা করে থাকে স্থান কাল পাত্র বিশ্লেষণে।


মানবিকতার সাথে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এর পাশাপাশি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ধর্মীয় বোধ একটি প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ক্ষেত্র তৈরি করা অর্থাৎ একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে তুলে ধরে। আরও সহজ সরলভাবে বলা যায় মানবিকতা বিষয়টি মানুষের, একটি জনবসতির শিক্ষা ও নৈতিকতার মাঝে নিহিত।যেখানে নানাবিধ পর্যবেক্ষণ, অনুধাবন, পারঙ্গমতা,শিক্ষা দেয় একজন মানুষকে মানবিক হয়ে উঠতে;সামাজিক বিচার, ব্যক্তিগত নীতি নৈতিকতা অনুশীলন করায় পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ব্যবস্থায়।


মানবিকতা আচরণটি একটি সমাজের,পরিবারের শেষ পর্যন্ত একজন ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি। মানবিকতা বিষয়টিও ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাবে প্রভাবিত সামাজিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক বলয়ের শুদ্ধ অথবা অশুদ্ধ জীবনাচারে।


#

উপরের এত শব্দাবলী, বাক্যাবলীর লেখালেখিতে নিশ্চিত বলতে পারি-

মন, মানসিকতা,মানবিকতা-এর সমন্বয়েই গড়ে উঠতে পারে একজন ইতিবাচক ব্যক্তির পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতা,সর্বোপরি সামাজিক বন্ধন,শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় সীমানা অতিক্রম করে বৈশ্বিক নৈতিকতা। তবে সেক্যুলার ভাবধারায় মন মানসিকতা মানবিকতার নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা থাকলেও শেষ পর্যন্ত পার্থিব জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সাবলীলতা,পরকালীন জীবনের বিশদ গ্রহণযোগ্যতা এবং শান্তিপূর্ণ জীবনাচারের সামান্তরিক চর্চা,মিথষ্ক্রিয়া, নির্বাচিত শব্দত্রয়ীর ব্যাখ্যা,সমাধান,পথনির্দেশনা ইত্যাদি পারিবারিক সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সর্বক্ষেত্রে ধর্মীয় জীবন-বিধান (যতটুকু জানার সুযোগ হয়েছে বিভিন্ন ধর্মাচার সাধ্যের মধ্যে পড়ার সুযোগ পেয়ে),বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে দারুণভাবে বিবৃত হয়েছে,চিত্রিত হয়েছে তাত্ত্বিক,ব্যবহারিক,মনোদৈহিক সহজাত স্বভাবের অনুকূলে সঙ্গতিপূর্ণভাবে।


তাই সবাইকে স্বাগত জানাই আসুন মন মানসিকতা মানবিকতার ইতিবাচক চর্চায়, প্রয়োগে বদলে ফেলি পৃথিবীর রূপ,নিশ্চিত করি ইহকালীন জীবনের পাশাপাশি পরকালীন জীবনকে।


সমাজে একটি বাস্তব বাক্য প্রচলিত আছে, 'বনের বাঘে খায় না,মনের বাঘে খায়',তাই আমাদের নির্বাচিত শব্দত্রয়ের মধ্য থেকে মন'কে নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে।মনের দাসত্ব, শৃঙ্খলাবদ্ধতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে,মনের গোলাম না হয়ে হতে হবে একজন মনের নিয়ন্ত্রক।এ এক বিশেষ চর্চা,অনুশীলন। আসুন মনকে আমার নিজের ইচ্ছাবাহক বানিয়ে আমি আপনি হয়ে উঠি একজন আর ইতিবাচক শুদ্ধাচারে মন আপনার নিয়ন্ত্রণে এলেই ইতিবাচক মানসিকতা,মানবিকতায় ব্যক্তিক পারিবারিক সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় তথা বৈশ্বিক জীবন হয়ে উঠবে অর্থপূর্ণ, স্বাচ্ছন্দপূর্ণ।


প্রিয় পাঠক আরও বেশি পরিশীলিত মানসিকতার অধকারী হতে হলে,আরও বেশি মানবিক হতে হলে আমাদের সবাইকে ইতিবাচক বোধে নিজ মনের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে হবে, মনের লাগাম নিজের আয়ত্ত্বাধীন রাখতে জানতে হবে। অবশ্যই অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে আমাকে আপনাকে।এক্ষেত্রে বিশিষ্ট জনের সান্নিধ্যে যেতে হবে,সবচেয়ে উত্তম ফায়সালা হচ্ছে ধৈর্য্য এবং আন্তরিকতার সাথে যার যার নিজস্ব ধর্মে অবগাহন করতে শিখুন আর প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেয়ে স্রষ্টাকে অনুধাবন করে নিজের মনকে লাগাম পরিয়ে দিন,প্রতিদিন স্রষ্টার অভিমুখে নিজেকে সমর্পন করে দিয়ে দৈনন্দিন আচার আচরণে শুদ্ধাচারী হয়ে উঠতে স্বচেষ্ট থাকুন,দেখবেন মানসিকতা হয়ে উঠবে অর্থপূর্ণ, মানবিকতার প্রয়োগ হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ইতিবাচক।

_____________________________

তথ্যসূত্রঃগুগল,গুণীজনদের আলাপচারিতা,বিষয় ভিত্তিক রেফারেন্স বই আর নিজের একান্ত কিছু মতামত(যা আসলে কখনই আমার নিজের বলে দাবি করি না) সাথে ব্যক্তিগত যাপিত জীবন,সর্বোপরি কৃতজ্ঞতা মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে,যাঁর অনুগ্রহে লেখাটি লিখতে পেরেছি । 

১৬৪৪

২৮ জুলাই ২০২২

লেখালেখির কারখানার নিজস্ব কক্ষ থেকে।

অ পা

🌟🌟🌟🌟🌟


লেখালিখি কিছু কথা কিছু ভাবনা

অয়ন দাস


ফেসবুক আজকের নবীন লেখক দের কাছে এক আশীর্বাদ কারণ লেখক ও পাঠকের মধ্যে সম্পাদক নামক ব্যক্তিটির ক্ষমতার অপব্যবহার নেই। অতীতের বহু প্রতিভাবান লেখক শুধুমাত্র সম্পাদকদের খুশি করতে পারেনি বলে পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারেনি,একসময় হতাশ হয়ে লেখালিখির জগৎ থেকে হারিয়ে গেছে। এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি।

আবার কোনো সম্পাদনা না হওয়ায় কোনো অনুশাসন থাকছেনা এবং অজস্র ভুল লেখা ফেসবুকের গ্রুপ গুলিতে ছড়িয়ে পড়ছে।অভ্যন্তর ও সর্বজন এর পরে ইন প্রত্যয় যোগ করলে যে অভ্যন্তরীণ ও সর্বজনীন হয় আজকের লেখকরা তা জানেনা।সর্বত্র দেখি আভ্যন্তরীণ ও সার্বজনীন এই দুটি ভুল শব্দ।

র,ড়,ঢ় এবং শ,স,ষ এর ভুল ব্যবহার দেখে কান্না আসে।কি এবং কী এর ব্যবহার দেখে হাসি পায়।

"তুমি কি খাবে?"- এখানে খাবে কি খাবেনা তা জানতে চাওয়া হচ্ছে।  উত্তর যদি হ্যাঁ অথবা না হয় তবে তা " কি"।

আবার, "তুমি কি খাবে"? - এখানে উত্তর হবে ভাত বা রুটি।কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে তুমি কি খাবার খেতে চাও।এখানে হ্যাঁ বা না তে উত্তর দেওয়া যাবেনা।এখানে বানান হবে- 'কী'।

অনেকে 'আসলে' শব্দের পাশে 'ই' যোগ করে লেখেন 'আসলেই', বা অনেকে'র পাশে 'ই' যোগ করে লেখেন 'অনেকেই' যা একটি ভুল বাংলা শব্দ।বাংলা সাহিত্য লিখতে গেলে ভাষার প্রতি  নজর দেওয়া সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আর তা করতে গেলে নিয়ম করে বাংলা ব্যকরণ পড়তে হবে।কারক,বিভক্তি,সন্ধি,সমাস ও প্রত্যয়ের সঠিক ব্যবহার না জানলে ভুল বাংলা লেখা চলতেই থাকবে।


আমি যখন লেখালিখির জগতে ঢুকব বলে ওয়ার্ম আপ করছি তখন এক সিনিয়র লেখক দাদা আমায় বলেছিলেন-শোনো ভাই-উল্টোপাল্টা কল্পনার ফানুষ উড়িয়ে পাঠককে বিভ্রান্ত কোরোনা,চালাক সাজার চেষ্টা করে পরে বোকা বনে যেয়োনা।যা দেখবে এবং যেভাবে দেখবে-ঠিক সেটাই লিখবে এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই লিখবে।যা জানোনা তা লিখতে গিয়ে জটিলতার ঘূর্ণিপাকে ডুবে যেয়োনা।লেখা যেন সহজ ও স্বাভাবিক হয়।

এই গুরুবাক্য আমি কখনও অমান্য করিনি।

এ প্রসঙ্গে দুই দিকপাল লেখক বিভূতিভূষণ ও তারাশঙ্করের গল্প আপনাদের শোনাই।

তখন ধারাবাহিক ভাবে বেরোচ্ছে বিভূতি বাবুর আরণ্যক উপন্যাসটি।(আরণ্যক আমার মতে পৃথিবীর সর্বকালের সেরা দশটি উপন্যাসের একটি।শুধু এই উপন্যাসের জন্যই লেখককে নোবেল প্রাইজ দেওয়া যেতে পারে)।

যাই হোক উপন্যাসটি পাঠক মহলে এবং লেখক মহলে দুর্দান্ত সাড়া ফেলে দিয়েছে।এই প্রথম একজন লেখকের সন্ধান পেয়েছে পাঠক  যিনি শরৎ বাবুর ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।

ঠিক এইসময়ই সহ লেখক তারাশঙ্কর তার  প্রিয় বন্ধু বিভূতি কে ডাকলেন তার বাড়িতে।দুই বন্ধু দুপুরে খাওয়ার পর পান মুখে দিয়ে আড্ডায় বসলেন।

তারাশঙ্কর বললেন-দেখো বিভূতি তোমার আরণ্যক উপন্যাসটা পড়ছি কিন্তু ভাল লাগছেনা।কেন জানো? তোমার উপন্যাসের মধ্যে শুধুই প্রকৃতি,প্রকৃতির বৈচিত্র,রোমান্টিসিজম...কিন্তু মানুষ কই?মানুষের দুঃখ যন্ত্রনা কই?সেই কারণেই লেখাটা ঠিক উৎরালো না।মানুষের কথা লেখো..তাদের সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনার কথা লেখো।তবেই না তোমার লেখা সার্থক হবে।


বিভূতিভূষণ ব্যাথা পেলেন।পরের দিন ভোর বেলায় ছুটলেন কবিশেখর কালিদাস রায়ের বাড়িতে।সেইসময় বিভূতিভূষণ তারাশঙ্কর দের লেখার গুরু ছিলেন কবিশেখর কালিদাস রায়।

বললেন-আমার আরণ্যক উপন্যাসটা আপনার কেমন লাগছে দাদা?লেখাটা কী আদৌ হচ্ছে?

কালিদাস বললেন-অসাধারণ লিখছো..ঠিক এভাবেই লিখে যাও-

বিভূতিভূষণ বললেন-কিন্তু তারাশঙ্কর যে বলল ভাল হয়নি,কারণ আমি শুধুই প্রকৃতির কথা লিখেছি,মানুষের কথা লিখিনি-

কালিদাস হেসে ফেললেন।বললেন-সবাই যদি মানুষের কথা লিখবে তাহলে প্রকৃতির কথা কে লিখবে।তোমার মত প্রকৃতিকে দেখার চোখ কার আছে?তুমি প্রকৃতির ঐ অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছো বলেই না লিখতে পেরেছো।ঐ চোখ কজনের আছে?শোনো বিভূতি-যা দেখবে এবং যেভাবে দেখবে তাই লিখবে,সেটাই সাহিত্য।


সহলেখক ও অনুজ লেখকদের বলব-আমাদের চারপাশে প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন গল্প তৈরি হচ্ছে।লেখকের কাজ হল শুধু চোখ কান খোলা রেখে গল্প গুলিকে চোখের ক্যামেরায় তুলে রাখা এবং মস্তিষ্কের ডার্করুমে সেভ করে রাখা।তারপর সময় বুঝে সেগুলিকে ডেভেলপ করা।লেখক তো আসলে একজন ম্যাজিসিয়ান, যিনি সামান্য একটি মোমবাতিতেই পাঠকের মনে একহাজার ওয়াটের আলো জ্বালাতে পারেন।

আজকের অনেক লেখককেই দেখি গল্পে অতি নাটকীয়তার আমদানি করতে।অনেকে আবার অহেতুক নারী পুরুষের জাপটা জাপটি না দেখিয়ে সুখ পাননা।

আমার মতে এগুলোর কিচ্ছু লাগেনা।

ধরা যাক একটি মোমবাতি স্থির শিখায় জ্বলছে।আলগা একটা বাতাস দিল।মোমবাতির শিখাটি সামান্য কেঁপে উঠল।

পাঠকের মন হল মোমবাতির ঐ স্থির শিখা।কোনো একটি কবিতা বা গল্প বা প্রবন্ধ হল ঐ আলগা একচিলতে বাতাস যা পাঠককে একটু হলেও নাড়া দেবে,পাঠক সামান্য থমকাবে,খানিকটা এলোমেলো হয়ে যাবে।লেখাটি অন্তত কয়েক সেকেন্ডের জন্যও পাঠককে কষ্ট বা আনন্দ দেবে।


আরও একটি ব্যাপার আছে।ধরা যাক সকালে রাস্তায় বেরিয়ে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হল লেখক। সে তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে এসে ঘর্মাক্ত শরীরে সেই নাটকীয় ঘটনাকে লেখায় রূপ দিলো।

না, এটা কিন্তু সংবাদ হয়ে গেল,সাহিত্য  হল না। লেখক কিন্তু কখনোই একজন সাংবাদিক নয়।ওই যে বললাম, চোখের ক্যামেরার ছবি তুলে মস্তিষ্কের ডার্ক রুমে সযত্নে সাজানো আছে ঘটনাবলী।তাদেরকে ঘুমিয়ে থাকতে দিতে  হয়।সেই ঘটনাগুলি যেন একএকজন মানুষ। তাদের মধ্যে থেকে হঠাৎ কেউ একজন আচমকা জেগে উঠে লেখকের কাছে এসে আর্জি জানায়,বলে,তুমি আমার কথা লিখবেনা!লেখক বিপন্ন বোধ করে। তখনই জন্ম হয় নতুন লেখার।

একজন লেখক আসলে তো একজন সাধারণ মানুষই।সে বাবা বা মা,সে স্বামী বা স্ত্রী, সে ছেলে বা মেয়ে,সে প্রেমিক বা প্রেমিকা, সে অফিসের চাকুরে অথবা ব্যবসায়ী অথবা কাঠ বেকার। সে হারতে হারতে আর ঠকতে ঠকতে হঠাৎ একবার জিতে যাওয়া কোনো এক সাধারণ লোক।এই যে প্রতিদিনের কষ্ট, বিপন্নতা, অসহায়তা.,অন্যের কাছে হেরে যাওয়া, প্রতিমুহূর্তের ব্যর্থতা ...এর থেকে বাঁচবার জন্যই তো তার হাতে কলম তুলে নেওয়া। এই যে নিরন্তর আত্মান্বেষণ, আত্মানুশাসন.. এখান থেকেই তো জন্ম হয় নতুন লেখার। টেলিগ্রাফের তারে বসা পাখির মত জীবনকে দেখতে দেখতে এই যে রক্তক্ষরণ,এই যে কান্না, এখান থেকেই  তো সার্থক লেখার স্বপ্ন 

,এখানেই তো লেখকের চ্যালেঞ্জ।


একেবারে শেষে বলব,লেখককে কিন্তু ভয় পেলে চলে না।কোনো একটি বিষয় লিখলে তার সামাজিক ও পারিবারিক অভিঘাত কেমন হবে,লেখকের প্রতি পাঠকরা বিমুখ হবে কিনা,লেখকের দুধ সাদা ইমেজে কালির ছিটে লাগবে কিনা,এই ভাবনা যদি লেখকের থাকে, তাহলে আর যাই হোক, তার লেখক হওয়ার যোগ্যতা নেই। লেখককে হতে হবে নির্ভিক ও নিরপেক্ষ। সে যখন লেখক তখন সে কারোর নয়,তার কোনো পরিবার,বন্ধু বা আত্মীয় নেই,সে একা, সে একমেবাদ্বিতীয়ম। একজন লেখক কে হতে হয় শৈবদের মত উদাসীন ও নির্বিকার, শাক্তদের মত কঠোর ও নিয়মানুবর্তী এবং বৈষ্ণবদের মত কোমল ও অনুভূতিপ্রবণ। আর তাই হতে গিয়ে লেখককে যেতে হয় যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে।সারাজীবন ধরে এই নিদারুণ যন্ত্রণার অনুশীলন করে যাওয়াই লেখক জীবনের নিয়তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ