২২শে শ্রাবণ শ্রদ্ধার্ঘ্য ২০২২ || পর্ব -৪




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

অজর

অনিরুদ্ধ দত্ত

                 

ঠাকুর তুমি ভালো আছো? তোমার মৃত্যু দিন বলে কিছু নেই ঠাকুর।তুমি তো অজর,অমর,অক্ষয়! বাইশে শ্রাবণ একটা বিশেষ দিন, সেদিনে আমার স্নায়ুতন্ত্রে তোমার অনেক অমর গানের অনুরণন ঘটে। তুমি তো আছো আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে। সমস্ত কিছু তো দেখো তুমি ঠাকুর।শকুনের চিৎকারে আজ আমাদের বক্ষ পিঞ্জর শিহরিত হয় ঠাকুর! তখনও কিন্তু তোমার বাণী,আমাদের আশার আলো দেখায়, মুক্ত করে ভয়।আবার যখন আর্তের সেবায় দেখি মনুষ্যত্বের ছাপ,তখনো তোমার গান আমাদের আনন্দের সোনার তরীতে বয়ে নিয়ে চলে। আবার প্রিয়জন যখন ছুটি নিয়ে অনন্তলোকে পাড়ি দেয়, তখনো সেই তুমি এসে দাঁড়াও আমাদের পাশে, মনে পড়ে যায়,আমার প্রাণের মানুষ আছে আমার প্রাণের মাঝে,নয়নতারায়-আলোকধারায়।আবার যখন প্রেমের বিরহে আমাদের যাত্রা থেমে যায়,তখনও তোমার কন্ঠে সেই অমৃতবাণী,আলোকের ঝরনা ধারায় সমস্ত কিছু ধুইয়ে দিয়ে আমাদের চরৈবেতির মন্ত্রে দীক্ষিত করে। ঠাকুর,তোমার প্রেমের গভীরতা, আমাদের চেতনাকে রাঙিয়ে পান্নাকে করে সবুজ, চুনী হয়ে ওঠে রাঙা!ঠাকুর কী অসাধারণ আত্মত্যাগ তোমার! ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলে তুমি; জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের দুঃখের খবর, তোমার বুকের পাঁজর পুড়িয়ে দিয়েছিল! ফিরিয়ে দিলে ইংরেজ সরকারের দেওয়া উপাধি!ঠাকুর তুমি তো তোমার জীবদ্দশায় ম্যালেরিয়া, গুটিবসন্ত,প্লেগের মতো প্রাণঘাতী বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করেছিলে; আর আজ আমরা প্রাণঘাতী নানা রোগে বিধ্বস্ত ;তাই তখনকার তোমার কথাতেই বলি, মূলব্যাধি তো দেশের মজ্জার মধ্যে প্রবেশ করেছে ঠাকুর। কিন্তু তোমাকে স্মরণ করে, আমরা সমস্বরে বলতে চাই, 'নাই নাই ভয় হবেই হবে জয়'-ঠাকুর, তুমি তো দেখতে পাও, দেখতে পাও তোমার সাধের বিশ্বভারতীকে;জোড়াসাঁকোর সেই ঠাকুরবাড়িকে,-- ভগবানের উদ্দেশ্যে আর‌ এক কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল, 'খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে'-তাই বলি ঠাকুর তুমি গান করো, গান করো তুমি- আর আমরা বলবো, 'তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী, আমরা অবাক হয়ে কেবল শুনি'।

====

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ঠাকুর পরিবারে কানাঘুঁষা! 

দেবাশীষ সান্যাল


রবীন্দ্রনাথ বহু প্রতিভার অধিকারী ছিলেন, তা আমাদের সকলেরই কম-বেশি জানা আছে!

প্রবল প্রতাপশালী জমিদার ব্রাহ্মধর্ম  প্রচারক দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোদ্দ সন্তানের সর্বো কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বহু আদরের সন্তান ছিলেন তিনি ঠাকুর পরিবারে। 

লেখাপড়ায় শিশুকাল থেকেই মন বসেনি তাঁর। বিশেষত স্কুলে। স্কুল পালানোর দায়ে বাবার কাছে বহু ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে। যখন বাবা দেবেন্দ্রনাথ বুঝলেন স্কুলে দিয়ে কাজ হবেনা, তখন বাড়িতেই গৃহ শিক্ষক নিয়োগ করা শুরু করলেন তিনি। তাই প্রথাগত বিদ্যার ধার ধারেননি রবীন্দ্রনাথ। তার মানে এই নয় যে, রবীন্দ্রনাথ মুর্খ অশিক্ষিত ছিলেন!

বাবা দেবেন্দ্রনাথ সেই শৈশবেই রেখে দিলেন একেকটি বিষয়ে শিক্ষক।

সেই ৮ বছর বয়সেই রবীন্দ্রনাথ ছড়া কবিতার দিকে ঝুকে পড়েন। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন রবীন্দ্রনাথকে আকর্ষণ করতো! কিন্তু বাবার নির্দেশ অন্যান্য বিষয় গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। তা জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

রবীন্দ্রনাথ কুস্তি করতেন, বিজ্ঞান শিক্ষাও করেছেন। পৃথিবীর নানা ভাষা চর্চা করেছেন। বিভিন্ন ওস্তাদের কাছে গানের তালিম নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। শিখেছেন ক্লাসিকাল মিউজিক। বাবা দেবেন্দ্রনাথের কাছে শিখেছেন ভারতীয় বেদ-উপনিষদের শিক্ষা। তা হৃদয়ঙ্গম করে ব্যাখ্যা করতেও শিখে যান রবীন্দ্রনাথ।


অপর দিকে পড়েছেন পৃথিবীর ইতিহাস ও সাহিত্য। 

যেকোনো মানুষের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের জন্য যা যা দরকার, সবই বালক-যুবক রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজস্ব শিক্ষায় আয়ত্বে নিয়েছিলেন সেই শৈশব কৈশোরেই! সেই বয়সেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন জ্ঞানের ভান্ডার! 

স্কুলের প্রথাগত বিদ্যা তাঁকে বাঁধতে পারেনি। বেঁধেছে নিজস্ব পারদর্শীতা। যা তিনি গৃহ শিক্ষকের মাধ্যমেই সমৃদ্ধ হয়েছিলেন!


রবীন্দ্রনাথ হতে পারতেন বৈজ্ঞানিক,  ভারতীয় কোনো দক্ষ পন্ডিত, ব্যায়ামবীর, সংগীতজ্ঞ বা এমন আরো অনেক কিছু!


মাত্র ষোলো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ যখন লিখে ফেললেন "ভাণু সিংহের পদাবলী"।...

তখন ঠাকুর পরিবারে সর্বোকনিষ্ঠ সন্তান রবি হয়ে উঠলেন 'কবি'!

এর জন্য তো বাবা দেবেন্দ্রনাথ কোনো গৃহ শিক্ষক রাখেননি তখন?

তাহলে কবি হলো কি করে 'রবি'?


রবীন্দ্রনাথ 'কবি' হিসেবে আবির্ভূত হবার পর ঠাকুর বাড়ির অনেকের মাথাতেই চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়! 

আড়ালে আবডালে কানাঘুঁষা শুরু হয়ে যায়- 'রবির ভবিষ্যতে যে কী আছে কে জানে!' ঠাকুর পরিবারে এ কথাও উঠেছিল 'কবি হয়ে কী কেউ কোনোদিন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে?'


প্রিয় পাঠক, আপনারাই বলুন, রবীন্দ্রনাথ কি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছিলেন?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ