২২শে শ্রাবণ শ্রদ্ধার্ঘ্য ২০২২ || পর্ব -৭




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

শ্রাবণের ধারার মতো .....

সায়ন্তিকা 


২২ এ শ্রাবণ আসলেই আমার ওনার কথা মনে পড়ে ! 


এমন দিনেই তো আমি ও আমার ভাই বোনেরা হয়েছিলাম অভিভাবকহীন ,


আমার মা সোনার তরীর সংসারটুকু আগলে রাখতে রাখতে নতুন বৌঠান হয়ে উঠেছিলেন ,

আমাদের চৌকাঠে রহমত খুঁজে পেয়ে ছিলো তার মিনিকে ,

আর আমার বাবা গীতবিতানের ঊনত্রিশটা ভাঁজে লুকিয়ে রেখেছিলেন তার রোজকার দিনলিপি !


২২ এ শ্রাবণ এলেই আমার গ্রন্থি ছিঁড়ে বেরিয়ে পড়ে আটপৌরে দুপুরগুলো ,

সাতাশ নম্বর সিমলাই লেনটা ঝুলতে থাকে কোলকাতার রাস্তায় ,


এমন সময়ে গাছগুলো জোড়াসাঁকোর ঘর থেকে বেরিয়ে আসে ,

হরিনাভি বনে কান পাতে পাতারা ,

আর কোনো এক মফস্বলী পাড়ায় পড়ে থাকে চারুলতাদের নীরবতা !


প্রতিটা বাইশে ঘরে বাইরের এক কোণে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন উনি ,

ভাঙাচোরা কার্নিশে ভিজে যায় শৈশব ,

সোনাঝুরি জঙ্গলটুকু আগলে বসে থাকে বাউলিয়া মাটি !


এমন এক শ্রাবণে , বর্ষা নামে কোলকাতার বুকে ,

ধুয়ে যায় মেয়ো রোডের কার্নিভাল ,

দূরবীনে চোখ রাখা জানালার ফাঁকে শুধু পুড়তে থাকেন উনি ,


বাইশে শ্রাবণে আজও আমার কেবল তোমার কথা মনে পড়ে ,

অথচ ۔۔۔۔۔۔۔۔۔

তুমি তো কোনো রবীন্দ্রনাথ নয় যে আমাকে নষ্ট করবে !


তবুও আজও এক একজন রবীন্দ্রনাথ আমার মুখোমুখি বসলে আমি কবিতার গল্প লিখতে শিখি ۔۔۔۔۔


শ্রাবণের ধারার মতো শব্দগুলো চিকচিক করে ওঠে মরুভূমির বুকে ,

বুঝতে পারি ۔۔۔۔۔তুমি নেই বলেই আজ রাবীন্দ্রিক আমি ও আমার ভাই বোনেরা !

====

"রবির প্রেম"

আমি পৌষালী...


শেষ প্রহরে এসে সে খুঁজেছে তাঁর সেই মনের প্রিয় মানুষটিকে।


ঘাটের শেষ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে যখন সে জানে, এক পা জলেতে রয়েছে তখন সে উপলব্ধি করেছে তাঁর পুরাতন ঢেকে যাওয়া প্রেমকে।


সে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছিল সেই সে রঙিন অনুভূতিকে।


রবির প্রেম।  


এমন কোন নারী আছে যে অবলীলায় উদার ভাবে তার ভালোবাসাকে পেতে চাইনি?

রবির প্রেমকে কীভাবে স্পর্শ করা যায়? কেমনভাবে প্রিয় মানুষের বিহনে আরো অনেককে ভালোবাসা যায়?


আমি শিখিনি। আমি জানি না। আমি রবির মতো অত জ্ঞানী নই।


"রবির প্রেম"--- আমি শিখিনি। আমি জানিনা। 

====

বাইশে শ্রাবণ 

সুচন্দ্রা বসু


'তোমার সৃষ্টি অমর কৃষ্টি রবে' কেমনে? 

                              যা ছিল সব গোপনে মনে 

হরণ করলে কেমনে চেতনে

                   ভেসে আসে সব বাইশে শ্রাবণে।

সকলই সে দান সাজিয়ে রাখিলে যতনে

                কলস করিলে তোমার গীতবিতানে

সকল তত্ত্ব সুর তাল লয় ছন্দে

           মুখরিত বিশ্ববাসী গাহিছে তা আনন্দে।

বরিলে তুমি সাজিয়ে ডালা,

                                       চন্দনে চর্চিত  মালা,

জ্বালিয়ে প্রদীপ ধূপ 

                                        বাজিয়ে শঙ্খধ্বনি,

 মুখরিত হলে বিশ্বভুবন 

                    সকলে তোমার তোলে জয়ধ্বনি।  

তোমার সৃষ্টি চোখের বালি 

                          আর বেলাশেষের গীতাঞ্জলি,

 শ্রাবণের  বাইশে তোমা চরণে

                           রাখিলাম আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।

====

 আমার রবীন্দ্রনাথ

 শিবানী বাগচী


শৈশবের অবুঝ মনে --

শুধু বারবার আমি রবি ঠাকুরকেই খুঁজেছি !

খুঁজেছি ধুলো ওড়া লাল মেঠো পথের আনাচে কানাচে,

পলাশ শিমুল বিছানো বসন্তের উঠানটাতে --

নয়তো বা আবিরে গুলালে !

হ‍্যাঁগো! সব, সব খানে খুঁজেছি তোমায় !

খুঁজেছি একতারা মন বাউলের আখড়ায়,   বনমহোৎসবে বন থেকে বনান্তে ;

সেদিনের ছোট্ট ভাবনায় দুচোখ ভরে শুধু একজন,

রবীন্দ্রনাথকে দেখতে চেয়েছিলাম ;

এক মুখ সাদা দাড়িআলা রবীন্দ্রনাথকে !

অথচ সময়ের ভাগ দৌড়ে,

আজ জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে ---

পৃথিবীর আনাচে কানাচে, আমার নিঃশ্বাসে প্রঃশ্বাসে, 

আমি যেনো তোমার দর্শণ পাই !

কখনও ছুঁয়ে দেখি রিমঝিম বরিষণে,

কখনও বা বিদ্রোহের বহ্নিশিখায় --

খুঁজে পাই প্রেম, প্রকৃতি, কখনও বা পুজার থালায়!

তুমি শুধু জোড়াসাঁকোতে নও ?

পঁচিশে বৈশাখেও নও ? বাইশে শ্রাবণেও নও ?

তুমি আছো আমার রাগে অনুরাগে, শ্রবণে, মননে, কল্পনায় --

আমার সঞ্চয়িতা গীতাঞ্জলি গীতবিতানের প্রতিটি পাতায়।

হে পরম প্রিয় ; 

তুমিই যে আমার ইহকাল, পরোকাল !!!

=====

সাক্ষী থাকুক 

সায়নী ব্যানার্জী 


হাজার বছর সাক্ষী থেকে গেছে,

হাজার বছর সাক্ষী থাকবে আরো-

ছড়িয়ে থাকা বলা না বলার ভার,

 তুমিই আজও সামলে নিতে পারো l 


সাক্ষী আছে প্রথম কথা বলা,

সাক্ষী আছে প্রথম প্রেমের গান-

রাত বেড়ে যাওয়া একলা কিশোরীবেলা,

করতে শেখা প্রথম অভিমান l 


তোমায় নিয়ে যতটুকু লেখা হোক-

বাকি থেকে যাও সবটাই মনে হয়,

তোমার কলমে তোমাকেই খুঁজে ফিরি-

হারালে পথ- তুমিই আশ্রয় l 


সাক্ষী আছে শহর-আকাশ-ধোঁয়া,

সাক্ষী আছে গ্রামের নদী পথ-

মুহূর্ত যায় সময়ের হাত ধরে, একলা 

ঘরে- রবীন্দ্রনাথ সম্পদ l   


হাজার বছর এমনি করে আরো 

সাক্ষী থাকুক হাওয়া,সময়,লোক-

ভালোবাসার অন্য আরেক নাম,

চিরটাকাল ‘রবীন্দ্রনাথ’ই হোক ll

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ