২২শে শ্রাবণ শ্রদ্ধার্ঘ্য ২০২২ || পর্ব -১




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

প্রাণের প্ৰিয় ঠাকুর 

ব্রততী রায়চৌধুরী


তোমার স্মৃতিতে বেদনা সিক্ত

     শ্রাবন বিষাদ মাখা,

মল্লিকাবনে প্রথম কলিতে

     প্রজাপতি মেলে পাখা ।

তোমার ডাকে সকাল আসে

      উদ্ভাসিত হয় রবি,

আকাশ পারে মেঘের ভিড়ে

      দেখেছি তোমার ছবি।

তোমার ছন্দে সারাদিন বাজে

      বাউলের একতারা,

খুঁজে পায় আবার নতুন দিশা

      পথ ভুলেছিল যারা ।

তোমার গানে মাতাল হাওয়া

      পাগল করা মন,

অচেনার মাঝে ভীষণ চেনা

      লাগছে তোমায় আপন ।

তোমার লেখার প্রতিটা কোণায়

      খুঁজেছি আমি নিজে,

কি  অনাবিল আনন্দ মেলে

       বলব তোমায় কি যে ।

তোমার সুরে সুর মিলিয়ে

       দুঃখের  অবসান,

ক্লান্ত মনে তোমার পরশ

       বয়ে আনে ভাটির টান।

তোমার ছোঁয়ায় বাংলার মাটি

         আহা হল সুমধুর,

হৃদয় বেদিতে জাগ্রত সদা

        প্রাণের প্ৰিয় ঠাকুর ।

====

চিরন্তন

সোমা মুখার্জী


আজ বাইশে শ্রাবণে আকাশটি জলভরা মেঘের ভারে অবনত

 কি বলতে চায় ?    কোন অব্যক্ত বেদনার কথা?

যে কবির গভীর বাণী আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়ায়.. নদীর পারের কোন আষাঢ়ের ছবি আঁকে 

যে কবির প্রিয়ার ছায়া ভেসে বেড়ায় বর্ষার সুনিবিড় ঘনকালো  আকাশে..

 বৃষ্টি ঝরা বনের গন্ধে যে কবির মানসী চিরন্তন বরণমালা গাঁথে তার হৃদয় দেউলে

  তাঁকে কি ভোলা যায় ?

 ভুলতে পারে তাঁরই সৃষ্টি সম্ভারে আবিষ্ট পাঠক কুল?

কত বাইশে শ্রাবণ কেটে যায় 

পাঠকের মানসলোকে  চির অধিষ্ঠান সে কবির..

 সবার মনের কথায় সকল অনুভূতিতে তার বাণীর অবস্থান..

সে কবির জীবনদর্শনে মননে লেখনীতে নিজেদের চেতনা মিশিয়ে নিয়েছে কয়েকটি প্রজন্ম ..

বাইশে শ্রাবণ কোন বিদায়ের দিন নয় 

বাইশে শ্রাবণে নতুন করে  কবি  তোমার আবাহন..

"তুমি এসো হৃদে এসো

হৃদিবল্লভ হৃদয়েশ...."

এভাবেই মিশে চলুক তোমার ভাবনা আমাদের চেতনায়

চিরকালীন মানব মননে।

===

থেকে যাও এভাবেই

( অণুগল্প)

দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়


দেওয়ালের তোমার ঠাকুরের ছবিতে আজ মালা দিয়েছি।ধূপ জ্বেলে সামনে রেখেছি।আজ তোমার ঠাকুরের মৃত্যু দিন।এইদিন সকাল থেকেই  থাকতো মনখারাপের সুর সারা বাড়ি জুড়ে। বারান্দায় গাছেরা সব নতমুখ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে।ওরাও জানে আজ কার মৃত্যু দিন !

রজনীগন্ধার মালা তোমার গলায়ও দিয়েছি।

সারা বুক জুড়ে সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে।পাড় ভাঙ্গছে আমার। চুপি চুপি এসে রবিঠাকুরের ছবির সামনে চোখ বুঁজে দাঁড়ালাম। কান্না যেন ছিটকে বেরিয়ে আসছে। আসলে ওনাকে জানা তোমার হাত ধরেই। হঠাৎ কানের কাছে রবি ঠাকুরের গানের কলি "তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে....."! মনে হলো দেওয়ালের ছবি থেকে তুমি নেমে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছো তোমার ঠাকুরের সামনে করজোড়ে!

====

স্মরণে

অনন্যা গাঙ্গুলী


ধীরলয়ে শ্রাবণের স্মরণকালে কত বৈশাখ গ্যাছে কেবল পরিকল্পনায়,

অকালে ঝরঝর আকাশ আজ যেন বড্ড বেমানান ,

মেঘপুঞ্জের অট্টালিকায় ধরিয়ে চিড় রবি হেসে নিচ্ছে বিদায় বারংবার,

হয়তো ক্রমশঃ ঊর্ধ্বতর সংকল্পে মিশে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এমন করেই গড়ায় বেলা হাসি কান্নার একান্ত প্রাত্যহিকতায়।

ভারতবর্ষ,তাকে তুমি করেছিলে প্রত্যক্ষ,এঁকেছিলে দীপ্ত আঙ্গিকে তার ঘটেছে সমূহ পরিবর্তন,

তোমার আলোকিত রচনা সম্ভার অতি যত্নে সজ্জিত,

পৃষ্ঠা উল্টে আসে না ক্লান্তি,তবু সেই বৈভবের রাজমহল নেই তুমি ওগো কবি,

আছো তুমি "শ্যামল সুন্দর","আকাশ ভরা সূর্য তারা"এর ই মাঝে।

বিরাজমান তুমি অগণিত মানবের চেতনায় মননে,

কবিবর, আছো তুমি দুঃখ সুখের বিষ ও অমৃতের মাঝারে,

পঁচিশ বা বাইশে নয়,তুমি আছো তোমার চিরলিপির সঞ্চয়িতায়,

অম্লান সুরে বাজছে সুরগাঁথা,"দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে"

====

তুমি রবি তুমি সেই কবি

মো. হাকিম


আকাশ ভেঙে এলো নেমে শ্রাবণের বারিধারা 

বাহিরে যাওয়ার যেন আজ নেই কোন তাড়া,

ঘনকালো মেঘ রিমঝিম বৃষ্টি

মাঠঘাট থই থই থেমে যায় দৃষ্টি, 

নদ-নদী, খাল-বিল আনন্দে আজ ভাসছে

দুকূল ছাপিয়ে জলের ধারা মাঠের পানে ছুটছে,

ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ তুলে মাঝি আজ

ভাটিয়ালি গান তুলছে,

জেলেরা জাল নিয়ে এদিক ওদিক ছুটছে

জালে জালে টেংরা-পুটি, কৈ-মাগুর আজ নাচছে,

ভেজা বর্ষায় 

দাওয়ায় বসে কৃষাণ কৃষাণী আজ

প্রেমের হাসি হাসছে,

গাছে গাছে দোয়েল ফিঙেরা আজ

ভালোভাসার আবেগে ভাসছে,

শ্রাবণের ভরা বর্ষায় 

কবি মন আজ বিচিত্র ভাবনায় ডুবছে,

রিমঝিম বৃষ্টির মাঝে সে যেন

শুধু কবিতার ছন্দই খুঁজে পাচ্ছে,

মেঘের আড়ালে রঙধনু দেখে সে

স্বপ্নের ডানা মেলছে,

ভিজে বর্ষায় কবি যেন আজ শুধু কবিতাকেই খুঁজছে,

হৃদয়ের আঙিনায় সে যেন আজ 

অতি চেনা কারো পায়ের আওয়াজ পাচ্ছে

তুমি রবি তুমি সেই কবি

শ্রাবণের বারিধারায়

সবাই যেন আজ শুধু তোমাকেই খুঁজছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ