২২ শে শ্রাবণ শ্রদ্ধার্ঘ্য || পর্ব - ১০




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

রবীন্দ্রনাথ এর স্বদেশ ও রাষ্ট্র ভাবনা এবং তার  প্রাসঙ্গিকতা---

অয়ন দাস


"THE TIME HAS COME WHEN BADGES OF HONOUR MAKE OUR SHAME GLARING IN THEIR INCONGRUOUS CONTEXT OF HUMILIATION, AND I,FOR MY PART,WISH TO STAND, SHORN OF ALL SPECIAL DISTINCTIONS,BY THE SIDE OF MY COUNTRYMEN,WHO,FOR THEIR SO CALLED INSIGNIFICANCE,ARE LIABLE TO SUFFER A DEGRADATION NOT FIT FOR HUMAN BEINGS. " - RABINDRANATH TAGORE.


১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ এ যে নৃশংস রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলেছিল তার প্রতিবাদে ইংরেজদের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ,লিখেছিলেন এই চাবুকের মত চিঠিটি।

বস্তুত একটু গভীরে ঢুকে রবীন্দ্রনাথ এর রাষ্ট্র চিন্তা ও স্বদেশ ভাবনা কে অনুধাবন করলে দেখা যায় সেইসময় গান্ধীজী'র পথে না হেঁটেও একা একা অন্য পথে তুমুল লড়াই চালিয়ে গেছেন একলা রবীন্দ্রনাথ। 

রবীন্দ্রনাথ সম্ভবত প্রথম ভারতীয় উচ্চ শ্রেণী উদ্ভুত চিন্তাবিদ, যিনি সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে এসে ভাবতে পেরেছিলেন এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে তথাকথিত ভদ্রলোকসুলভ সীমাবদ্ধতার বাইরে এসে আপামর জনসাধারণের ঐক্যের কথা ভেবেছিলেন ও বলেছিলেন।


১৮৭৭ সালে হিন্দুমেলার একাদশ অধিবেশনে কবি লেখেন-

" হা রে হতভাগ্য ভারতভূমি

  কন্ঠে এই ঘোর কলঙ্কের হার

  পরিবারের আজি করি অলঙ্কার

  গৌরবে মাতিয়া উঠিছে সবে?

তাই কাঁপিতেছে তোর বক্ষ আজি

 বৃটিশ রাজের বিজয়রবে?

বৃটিশ রাজ করিয়া ঘোষনা

যে গায় গাক,আমরা গাব না,

আমরা গাব না হরষ গান,

এসো গো আমরা যে কজন আছি

আমরা ধরিব আরেক তান।"


রবীন্দ্রনাথ এর প্রবন্ধ গুলি মন দিয়ে পড়লে রাষ্ট্র শক্তি বিষয়ক তাঁর ভাবনা যে কতখানি অব্যর্থ ও প্রাসঙ্গিক তা টের পাওয়া যায়।

আত্মশক্তি, রাজা ও প্রজা,সমাজ,স্বদেশী সমাজ এ তিনি স্পষ্টতই বলেছেন যে ভারতীয় সভ্যতার  মূল উৎস ছিল রাষ্ট্রশক্তি ও সমাজ শক্তির পৃথক সত্তা। লিখেছেন পাশ্চাত্য ও ভারতীয় সভ্যতার মূল পার্থক্য কে বুঝতে হবে,না হলে ভারতীয় সভ্যতাকে অনুধাবন করা যাবেনা।লিখেছেন-"ভিন্ন ভিন্ন সভ্যতার প্রাণশক্তি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত। সাধারণের কল্যাণভার যেখানেই পুঞ্জিত হয়,সেইখানেই দেশের মর্মস্থান। সেইখানে আঘাত করিলেই সমস্ত দেশ সাংঘাতিক রূপে আঘাত পায়।বিলাতে রাজশক্তি যদি বিপর্যস্ত হয়, তবে সমস্ত দেশের বিনাশ উপস্থিত হয়।এই কারণেই য়ুরোপে পলিটিক্স এত গুরুতর ব্যাপার।আমাদের দেশে সমাজ যদি পঙ্গু হয় তবেই যথার্থ ভাবে বাঁচাইয়া আসিয়াছি।"

এর চেয়ে সত্যি কথা দুটি নেই।আজকের ভারতবর্ষে যখন দেখি যে সমস্ত সমাজ কে রাজনীতির কালো কাপড়ে বেঁধে ফেলে তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে তখন  রবীন্দ্রনাথ এর এই কথা গুলো বড় মনে পড়ে।

আক্ষরিক অর্থেই ভারতীয় সভ্যতা তার রাষ্ট্রীয় ঐক্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়।তাই সমাজ কে উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ কখনওই অধিক গুরুত্ববহ হয়ে উঠতে পারেনা।তাই রাষ্ট্র'র বিলুপ্তি বা জন্মে ভারতীয় সমাজে কখনওই ভাঙন ধরেনা বা বিশেষ পরিবর্তন হয়না।শাসকরা বারেবারে পরিবর্তিত হয় কিন্তু মূল সামাজিক পরিকাঠামো তার স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে।যদিও শাসকরা বারংবার রাষ্ট্রীয় শক্তির সাহায্যে সামাজিক  পরিকাঠামো কে ভাঙবার চেষ্টা করেছে এবং আজও নিরন্তর করে চলেছে কিন্তু সফল হয়নি।

রবীন্দ্রনাথ লিখছেন - "বিদেশী আক্রমণ কারী ধুলার ঝড় তুলে ভারতে প্রবেশ করেছে কিন্তু সে ধুলিজাল কেটে গেলে প্রমাণ হয়েছে তার সিংহাসন অধিকার করেছে,সম্পদ লুণ্ঠন করেছে কিন্তু ভারতাত্মা কে হত্যা করতে পারেনি।তারাই এসে ভারতের দেহে লীন হয়ে গেছে।"

এই কারণেই কবি লিখেছেন-

"এসো হে আর্য,এসো অনার্য,হিন্দু মুসলমান-

এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খ্রিস্টান।

এসো ব্রাহ্মণ, শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার,

এসো হে পতিত, হোক অপণীত সব অপমানভার।

মার অভিষেক এসো এসো ত্বরা,

মঙ্গলঘট হয়নি যে ভরা

সবার পরশে পবিত্র করা তীর্থনীরে-

আজি ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।"


মুশকিল হল আমাদের ছোটোবেলা থেকে কখনওই সত্য ইতিহাস জানানো হয়না।একপেশে রঙচড়ানো ইতিহাস জেনে আমরা ভারতবর্ষ কে অর্ধেক চিনতে শিখি।

রবীন্দ্রনাথ ব্যাথিত চিত্তে বলেছেন- "আমরা ভারতবর্ষের আগাছা পরগাছা নহি,গত শতাব্দী র মধ্য দিয়া আমাদের শত সহস্র শিকড় ভারতবর্ষের মর্মস্থান অধিকার করিয়া আছে।কিন্তু দুরদৃষ্টক্রমে এমন  ইতিহাস আমাদিগকে পড়িতে হয় যে,ঠিক সেই কথাটাই আমাদের ছেলেরা ভুলিয়া যায়,মনে হয় ভারতবর্ষের মধ্যে আমরা কেহই না,আগন্তুকবর্গই যেন সব।নিজের দেশের সঙ্গে নিজের সম্বন্ধ এরূপ অকিঞ্চিৎকর বলিয়া জানিলে,কোথা হইতে আমরা প্রাণ আকর্ষণ করিব?এরূপ অবস্থায় বিদেশ কে স্বদেশের স্থানে বসাইতে আমাদের মনে দ্বিধামাত্র হয়না,ভারতবর্ষের অগৌরবে আমাদের প্রাণান্তকর লজ্জাবোধ হইতে পারেনা।"


স্বাধীনতার এত বছর পরেও দেশ বলতে আজও আমরা রাষ্ট্র কে বুঝি,ভয় পাই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এর চোখরাঙানি কে।কিন্তু দেশ মানে যে একটা মানচিত্র নয় একথা বারে বারে বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। 

লিখছেন ---"দেশ বলতে তো কেবল মাটির দেশ নয়।সে যে মানব চরিত্রের দেশ।দেশের বাহ্যপ্রকৃতি আমাদের দেহটা গড়ে বটে কিন্তু আমাদের মানব চরিত্রের দেশ থেকেই প্রেরণা পেয়ে আমাদের চরিত্র গড়ে ওঠে।

ভারতমাতা যে হিমালয়ের দুর্গম চুড়ার উপর বসিয়া কেবলই করুণ সুরে বিণা বাজাইতেন। এরূপ ধ্যান করা নেশা করা মাত্র। কিন্তু ভারতমাতা যে আমাদের পল্লীতেই পঙ্কশেষ পানাপুকুরের ধারে ম্যালেরিয়াজীর্ণ প্লীহারোগীকে কোলে লইয়া তাহার পথ্যের জন্য আপন শূণ্য ভান্ডারের দিকে হতাশ দৃষ্টি তে চাহিয়া আছেন,ইহা দেখাই যথার্থ দেখা।

এই নিভৃত প্রকাণ্ড গ্রাম্য ভারতবর্ষ যে কত বিচ্ছিন্ন, কত সংকীর্ণ, কত দুর্বল, নিজের শক্তি সম্বন্ধে কিরূপ নিতান্ত অচেতন, অজ্ঞ ও উদাসীন... "

আজ এনলাইটেন্ড ইন্ডিয়ার ঝাঁ চকচকে আলোর নিচে যে বিস্তীর্ণ অন্ধকারময় ভারতবর্ষ কে দেখতে পাই সেই ভারতবর্ষ নিজের মঙ্গল, নিজের শক্তি সম্বন্ধে নিতান্ত অজ্ঞ।


রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষ 'র মূল সমস্যা কে ধরতে পেরেছিলেন,যে সমস্যা কে হাতিয়ার করে যুগে যুগে রাষ্ট্রনায়করা তাদের আখের গুছিয়েছেন এবং আজও তার বিরাম নেই।

লিখেছেন ---" বিদেশি রাজা চলিয়া গেলেই দেশ যে আমাদের স্বদেশ হয়ে উঠিবে তাহা নহে।দেশ কে আপন চেষ্টায় দেশ করিয়া গড়িয়া তুলিতে হয়।

.......স্বদেশ কে উদ্ধার করিতে হইবে, কিন্তু  কার হাত হইতে?নিজেদের পাপ হইতে।আমরা এক দেশে বেঁচে আছি অথচ আমাদের এক দেশ নয়"।এই ব্যাথা কবি কে কাঁদিয়েছে।

সেইসময় যখন গান্ধীজী'র নেতৃত্বে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে স্বদেশী আন্দোলনের জোয়ার তখনও জাত ও ধর্মের বিভাজন ভারতে স্পষ্ট ছিল।

রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেছেন - "কিছুকাল  পূর্বে স্বদেশী আন্দোলনের দিনে একজন হিন্দু স্বদেশী প্রচারক এক গ্লাস জল খাইবেন বলিয়া তাঁহার মুসলমান সহযোগীকে দাওয়া হইতে নামিয়া যাইতে বলিতে কিছুমাত্র সঙ্কোচ বোধ করেন নাই।"

১৯১১ সালে,হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় প্রবন্ধে  বলেন-- " আমাদের দেশে ভারতবর্ষীয় দের মধ্যে রাষ্ট্রীয় ঐক্য লাভের চেষ্টা যখনই প্রবল হইল,অর্থাৎ যখনই নিজের সত্ত্বা সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ ভাবে চেতনার উদ্রেক হইল তখনই আমরা ইচ্ছা করিলাম বটে মুসলমান দিগকেও আমাদের সঙ্গে এক করিয়া লই,কিন্তু তাহাতেও কৃতকার্য হইতে পারিলাম না।এক করিয়া লইতে পারিলে আমাদের সুবিধা হইতে পারিত বটে,কিন্তু সুবিধা হইলেই যে এক করা যায় তাহা নহে।....হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সকল দিক দিয়া একটা সত্যকার ঐক্য জন্মে নাই বলিয়াই রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষেত্রে তাহাদিগকে এক করিয়া তুলিবার চেষ্টায় সন্দেহ ও অবিশ্বাসের সূত্রপাত হইল।আমরা মুসলমান কে যখন আহবান করিয়াছি তখন তাহাকে কাজ উদ্ধারের সহায় বলিয়া ডাকিয়াছি,আপন বলিয়া ডাকি নাই।যদি কখনও দেখি তাহাকে কাজের জন্য আর দরকার নাই তবে তাহা অনাবশ্যক বলিয়া পিছনে ঠেলিতে আমাদের বাধিবে না।মুসলমান এই সন্দেহ মনে লইয়া আমাদের ডাকে সাড়া দেয় নাই।আমরা দুই পক্ষ একত্র থাকিলে মোটের উপর লাভের অংক বেশি হইবে বটে,কিন্তু লাভের অংক তাহার পক্ষে বেশি হইবে কিনা,মুসলমানের সেইটেই বিবেচ্য। "

আক্ষেপ করে বলেন -"ত্রেতা যুগে কাঠবেড়ালি যতটুকু কাজ করিয়াছিল আমরা ততটুকু কাজও করি নাই।"

আজ যখন দেখি এন আর সি ও সি এ এ নিয়ে দেশ জুড়ে রক্তের হোলিখেলা চলে,দিল্লী র পথে প্রকাশ্যে বেরিয়ে পড়ে বন্দুকধারী যুবক,দেশ জুড়ে চলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তখন মনে হয় রাষ্ট্র কত সহজে দেশ কে হারিয়ে দিচ্ছে।

তাঁর কথা মনে পড়ে----" দেশে ভেদ জন্মাইয়া দেওয়া কিছুই শক্ত নহে,মিলন ঘটাইয়া তোলাই কঠিন "।

রবীন্দ্রনাথই সেই মানুষ যিনি রাষ্ট্রকে তথা রাষ্ট্রনায়ক দের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে খণ্ডিত বা বিকৃত জাতিয়তাবাদ বা নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধ দেশপ্রেমের বাইরেও দেশ কে ভালবাসা যায়।তাঁর স্বদেশ ভাবনা যুগনিষ্ঠ ও মূল্যবোধসম্পৃক্ত।

কোনো ভৌগলিকতা,ধর্মীয় বা জাতিগত  বিভাজন তাঁর স্বদেশ ভাবনা কে নিয়ন্ত্রণ  করতে পারেনি। তিনি লিখেছেন----

"আমরা যাকে দেশ বলি,বাইরে থেকে দেখতে সে ভূগোলের এক অংশ, কিন্তু তা নয়,পৃথিবীর উপরিভাগে যেমন আছে তার বায়ুমণ্ডল, যেখানে বয় তার প্রাণের নিশ্বাস, যেখানে ওঠে তার গানের ধ্বনি, যার মধ্য দিয়ে আসে তার আকাশের আলো,তেমনই একটা মনমন্ডলের স্তরে স্তরে এই ভূভাগকে অদৃশ্য আবেষ্টনে ঘিরে ফেলেছে----সমস্ত দেশ কে সেই দেয় অন্তরের ঐক্য। "

এই ভিন্ন স্বদেশ ভাবনাই আজ সমস্ত ভারতবর্ষ'র মধ্যে সঞ্চারিত হওয়া উচিৎ। যদিও রাষ্ট্র তাতে অসুবিধায় পড়বে।কারণ তার কাজ মানুষ কে বিচ্ছিন্ন করা।যার জন্য তাঁর স্বকালের দেশপ্রেমিক রা অনেকেই তাঁকে সহ্য করতে পারেননি।


আবার ফিরে যাই জালিয়ানওয়ালাবাগ পরবর্তী একটি চিঠিতে।লিখছেন রানু অধিকারী কে-----"আকাশের এই প্রতাপ আমি একরকম সইতে পারি।কিন্তু মর্ত্য র প্রতাপ আর সহ্য হয়না।তোমরা তো পাঞ্জাবে আছ,পাঞ্জাবের দুঃখের খবর বোধহয় পাও।এই দুঃখের তাপ আমার বুকের পাঁজর পুড়িয়ে দিলে।ভারতবর্ষে অনেক পাপ জন্মেছিল তাই অনেক মার খেতে হচ্ছে।মানুষের অপমান ভারতবর্ষে অভ্রভেদী হয়ে উঠেছে।তাই কতশত বছর ধরে মানুষের কাছ থেকে ভারতবর্ষ এই অপমান সইছে।কিন্তু আজও শিক্ষা শেষ হয়নি।"

রবীন্দ্রনাথ কখনো গান্ধীজী'র ভাবধারা য় আকৃষ্ট হননি।লিখছেন - "চরকায় স্বরাজ পাওয়া যায় একথা অনেকে বলছেন।অনেকে বিশ্বাসও করেছেন।কিন্তু যিনি স্পষ্ট করে বুঝেছেন এমন লোকের সঙ্গে আজও আমার দেখা হয়নি।".........রবীন্দ্রনাথ স্বরাজ বলতে বুঝতেন স্বনির্ভরতা।

তিনি দৃপ্ত কন্ঠে বলেছেন --- "রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা আমরা কবে ফিরিয়া পাইব এবং কখনো ফিরিয়া পাইব কিনা সে কথা আলোচনা করা বৃথা।কিন্তু নিজের ক্ষমতায় জগতের প্রতিভা রাজ্যে আমরা স্বাধীন আসন লাভ করিব এ আশা কখনওই পরিত্যাগ করিবার নহে।" 

ঠিক সেই কারণেই রুশ বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ায় গিয়ে কবি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।১৯১৮ সালের জুলাই মাসে মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় লিখেছিলেন-----"We know very little    of the history of the present revolution in Russia, and with the scanty materials in our hands in our hands we can't be certain if she,in her tribulations, is giving expression to man's indomitable soul against prosperity built upon moral nihilism........ It is unlikely that as a nation, she will fail;but if she fails with the flag of true ideals in her hands,then her failure will be fade,like the morning star, only to usher in the sunrise of the new age."


আমাদের দুর্ভাগ্য রবীন্দ্রনাথ যে স্বদেশ বোধের ছবি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করতে চেয়েছিলেন তা আজ স্বার্থান্ধ ও সংকীর্ণ রাজনীতি র বিষাক্ত ধোঁয়ায় মলিন হয়ে গেছে।বহুদিন আগে তাঁর লেখা কবিতাই আজ সত্যে পরিণত হয়েছে।

" স্বার্থে স্বার্থে বেঁধেছে সংঘাত, লোভে লোভে

ঘটেছে সংগ্রাম, প্রলয় মন্থন ক্ষোভে

ভদ্রবেশী বর্বরতা উঠিয়াছি জাগি

পঙ্কশয্যা হতে।লজ্জা শরম তেয়াগি

জাতিপ্রেম নাম ধরি প্রচণ্ড অন্যায়

ধর্মেরে ভাসাতে চাহে বলের বন্যায়।

কবিদল চিৎকারিছে জাগাইয়া ভীতি

শ্মশান কুকুর দের কাড়াকাড়ি গীতি।


এই অস্থির ভারতবর্ষে রবীন্দ্রনাথ এর জীবন দর্শণ ই একমাত্র মুক্তির দিশা হতে পারে।ভারতবাসী সমস্ত সংকীর্ণতা ও হিংসা ভুলে এগিয়ে যেতে পারে মুক্তির পথে।

কবি'র শেষ জন্মদিনে যে বার্তা ধ্বনিত হয়েছিল আসুন সেই বার্তা কে আবারও স্মরণ করি।

"....আশা করব মহা প্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়ত আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত  থেকে।আর একদিন অপরাজিত মানুষ  নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাওয়ার পথে।"

=====

 আরেকটু থেকে যাওয়া

দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য 


রাতটা কষ্ট পেয়েছিলো - 

চোখের কোণায় তৃষ্ণার্ত বলিরেখা , 

যন্ত্রণা কলম ভোলেনি ঠিক,  

একাকী জানলা কিংবা উদ্বাস্তু প্রহর,

ওদেরও ঘুমাতে দেখা যায়নি,

তারাদের মেখে শ্রাবণের দমকা ভেজা ,

কালিতে কালিতে চলেছে ভ্রমণ ,

শরীর সাথ দ্যায় না আর,

তবুও মিলিয়ে রাখা আধবোঝা স্মৃতি -

কিংবা উলঙ্গ শূন্যতার কথা বলে যায়।


যন্ত্রণা - কোথাও হারিয়ে যেতে চায়,

ফিরে আসতে চায় -

অথবা হাতড়ে হাতড়ে খাটের দুপাশ -

রাতটা সজাগ ছিলো ।


দূরে বহুদূরে সকালের পাখি - 

ঝাঁকে ঝাঁকে দৈনিক গল্প বলা রাখে,

প্রত্যক্ষদর্শীরা ফিরে গ্যাছে - কিছু রয়ে গ্যাছে কবিতায় ,

আজ কবি জীবন্ত হয়ে উঠবে - হয়তো শেষবার।


কুয়াশায় ঘেরা আপনজন -

মৃত পথিক - যাঁরা ছেড়ে গ্যাছে চলে,

 শরীরে বার্ধক্য সজাগ - তবু শব্দেরা আরেকটু নিঃশ্বাসের কথা বলে ।


আরেকবার হয়েছে সকাল - 

গাছ ঠিকরে টুকরো টুকরো আলো ;

সহ্য হয়না!  সহ্য হয়না!

ভ্রাম্যমান স্বপ্ন ছড়িয়ে মিশে যায়।


শ্রাবণের প্রবল বুকে আরেকটু থেকে যাওয়া,  

আরেকটু মুছিয়ে দিয়ে যাও -

আরও গুছিয়ে রাখতে ইচ্ছে হয় আজ ;

চলে যেতে যেতে পৌঁছে যাওয়ার আগে - 

এই বর্ষা শ্রাবণী হয়তো মাখে - 

এই বিষন্নতা ২২ এর কষাঘাত ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ