পোস্ট বার দেখা হয়েছে
এক অনন্য ব্যক্তিত্ব
"কাজী নজরুল ইসলাম"
অমল কুমার ব্যানার্জী
আমাদের অত্যন্ত কাছের মানুষ দুঃখু মিয়া। চুরুলিয়া গ্রাম আমার পিসিমার বাড়ি। ছোট বেলায় প্রতি বছর কালীপুজোতে চুরুলিয়ায় যাওয়া চাই। তখন ছোট হলেও বুঝতাম ঐ গ্রামের একটা বৈশিষ্ট্য কাজী পাড়া। নজরুলের বাড়ি, উপাসনার ফাঁকা জায়গাটি ঘেরা করা এই টুকু।
নজরুল মেলা তখন ছিল না। ছিল নজরুল জয়ন্তী। নজরুলকে আনা হত। সবাই দেখতে যেত। কিছু বুঝতাম কিছু বুঝতাম না।
বড়রা বলতো দেখ চোখ দুটো দেখ চিনতে পারবি।
শৃঙ্খলিত কাল পাথরে খোদাই ছবিটার সাথে মিলে যাবে। তাতে লেখা "কারার ঐ লোহ কপাট ভেঙে ফেল কর রে লোপাট ---"
তার বহু পরে তাকে শেষ চুরুলিয়া আনা হয় 29 মে 1976 আর তিনি মারা যান 29 অগাস্ট 1976
উল্লেখনীয় যে 24 মে 1972 নবগঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার নজরুলকে ভারত সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশ নিয়ে যান। 1976 জানুয়ারীতে বাংলা দেশ সরকার নজরুলকে নাগরিক সন্মান প্রদান করে। তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
1941 শে 8 অগাস্ট রবীন্দ্রনাথের তিরোধান নজরুলকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছিল। তার লেখা "রবিহারা" অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ব্রডকাস্টি হও এক মাসের মধ্যে নজরুলের অসুস্থতা দেখা দেয়।
ধীরে ধীরে নজরুল মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে 1976 মানে 27 টি বছর কলম কালির সাথে বহু দূরের সম্পর্ক রেখে 29 অগাস্ট আমাদের ছেড়ে তারাদের দেশে পাড়ি দেন।
তার রচনা বা লেখা সমন্ধে আমি আসছি না।
তা এতো বিশাল আর বহু মুখী যে তার সম্বন্ধে
পরে আসা যাবে। শুধু বলতে চাই যদি ঐ 27 বছর নজরুলের কলম চলতো তা হলে বাংলা সাহিত্য কোথায় যেত তার আন্দাজ করা মনে হয় আমাদের বোধগম্যের বাইরে। তবে এটুকু বলতে পারি তার সাহিত্য সৃষ্টির প্রভাব সুদূর প্রসারী চিন্তাধারা উপর আরও বহু মুখী পথ দেখাত।
নজরুলের একটি লেখা "বারাঙ্গনা" তার নারী সমাজে প্রতি যে চিন্তাধারার প্রকাশ তা সমগ্র বিশ্বের নারী জাতির সমান অধিকারের সনদ।
আমাদের সমাজে আজও বারাঙ্গনাকে কোন অধিকার বা বিশেষ সন্মান দেওয়া তো দূরের কথা
অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখে। সেখানে নজরুল তাদের মায়ের আসনে বসিয়েছেন।
নজরুলের "বিদ্রোহী" সমন্ধে আলোচনা নাই বা করলাম। অগ্নিবীণা, দোলন চাঁপা, বিশের বাঁশি, প্রলয়শিখা, সাম্যবাদী, ফণীমনসা, সর্বহারা, ঝিঙে ফুল । আরও অনেক সৃষ্টির কথা চিরস্মরণীয়।
23 বছরের সাহিত্য চর্চা যা তাঁকে কবি, নাট্যকার গীতিকার, সুরকার, সম্পাদক ও ঔপন্যাসিক হিসেবে বিরাট পরিধির মধ্যে নিয়ে এসেছে আর জীবনের 27 বছর সাহিত্যের পরিধির বাইরে, এ এক বিরল দৃষ্টান্ত বিশ্ব সাহিত্য জগতে।
আবার আসা যাক আমার হৃদয়ের কবির আমাদের গ্রামের পরিধির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। কবিতীর্থ চুরুলিয়ার কথা। রাণীগঞ্জ কোল ইণ্ডিয়ার একটি উল্লেখ যোগ্য স্থান। সেই রাণীগঞ্জ থেকে চুরুলিয়া যেতে আমার গ্রাম তালতোড়।
বাসের রুট রানিগঞ্জ - চুরুলিয়া ভায়া জামুরিয়া - তালতোড়। এই লেখা দেখে এতো গর্বিত মনে হয় যে আমি ধন্য যে কবিতীর্থ চুরুলিয়ায় সঙ্গে আমার গ্রামের নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আরও গর্বের বিষয় যে জামুরিয়া থেকে তালতোড় রাস্তাটির নাম সিঁধু কানু ডহর। উল্লেখ যোগ্য যে, সাঁওতাল বিদ্রোহর কর্ণধার এই সিঁধু কানু দুই ভাই।
আমাদের ক্ষেত্রটি আসানসোল মহকুমার একটি বিশেষ ঐতিহাসিক নিদর্শন বহন করে।
স্বভাবতই নজরুল ও আজকের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ও সর্বোপরি নজরুল এয়ারপোর্ট
সেই ঐতিহ্যের বর্তমান পরিসংখ্যান বহন করে।
নজরুল ইসলামের কবিতার পর্যালোচনা করতে গেলে একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক।
1922 এ প্রকাশিত "বিদ্রোহী" কবিতা বাংলা তথা ভারতের তরুণ প্রজন্মকে এক সূত্রে বেঁধে দেয়।
ব্রিটিশ রাজের ভিত নাড়িয়ে দেয়ার মত সামর্থ্য রেখেছিল এই কবিতা। রবীন্দ্রনাথ এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তুমি তারুণ্যের প্রতীক। বিদ্রোহর বীজ বপন করেছে এই কবিতা।
আজ এখানেই শেষ করছি।
------------------------সমাপ্ত--------------------------------
1 মন্তব্যসমূহ
আমার আন্তরিক ধন্যবাদ মাননীয় সম্পাদক দেবাশিস জীকে। সমস্ত কুশীলবদের আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনআমার পাঠক বর্গ কে আমার বিশেষ ধন্যবাদ।
এই সংখ্যার সব লেখাই পড়লাম। সমস্ত লেখকদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন অভিনন্দন অভিনন্দন
দর্পণ সমাজের দর্পণ সাহিত্যের দর্পণ। এগিয়ে চলুক দর্পণ।