দর্পণ সাপ্তাহিক নির্বাচিত কবিতা গুচ্ছ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

নিশি ডাক 

মধুপর্ণা বসু 


প্রতিমুহূর্তে পৌঁছে যাই খাদের দিকে 

কিছু পুঁজি সম্বল সেই কুসুম ভোরের,

ফেলে এসেছি যে দক্ষিণ রোদের জানলা।

কমলালেবু খোসায় মুড়ে রাখা উনিশ বিশ,

তারপর সবুজ গ্রহ থেকে নির্বাসিত জন

আমি... 

শুধু যুদ্ধবাজ পাগলা ঘণ্টি তাড়িয়ে নিয়ে

এপথে ও পথে নিরুদ্দেশ, খবর আসেনা। 

বেয়নেট আর পিস্তলের স্কোয়াডে সস্ত্র দুপুর,

 নারী, শিশু, দারিদ্র্য অঢেল পসরা সাজ।

জানলায় টোকা দেয় ভয়ংকর ছারখার সমাজ। 

রোজ বিকেল আসে অলক্ষ্যে ক্লোরোফর্ম অবশে,

গিলে নিতে,মেনে নিতে আর তিলতিল শেষ 

গুনতে শেখায় কালবেলায় হেরে যাওয়া ঈশ্বর। 

কি ভীষণ আগুনের মন্ত্র উচ্চারণ করি রোজ

এসে বসি আতঙ্কিত ভবিষ্যতে নিশ্চুপ

অবশ্যম্ভাবী চিতা ভস্ম হাতে খাদের পাশে।

************

নির্বাসিত সময়

মনিকান্ত         


যে সাঁঝের আকাশ দূরত্ব বাড়ায় অবিরত 

তার কাছে একাকীত্বের অর্থ খুঁজতে চাওয়া মানে -

অজান্তে কোনো এক অপরিচিত বালিয়াড়ির বুকে

নিজেদের আরোও একবার হারিয়ে ফেলা, 


তার চেয়ে এসো, আরোও একটু কাছাকাছি বসি

মোমবাতির শরীরে সঁপে দিই অপ্রাপ্তির দস্তাবেজ, 

যখন আবছা আলো মুছে দেবে পর্দা আড়াল ঋণ

তখনই খুঁজে নেব আমাদের মাঝে হারিয়ে যাওয়া নদী, 


এরপর আরোও কিছু অতিক্রান্ত সময়ে পাল্টে ফেলা নিজস্বতা, 

যে পাহাড়গুলো মাথা উঁচু করেও স্থবিরতার গল্প বলে

তাদের নিয়ে ভেবে মোটেও হারিয়ে ফেলবো না সময়

তার চেয়ে ফিরে যাব ভুল ভ্রান্তি ভরা একান্ত অতীতে -


যেখানে একদিন হাতে হাত রেখে হারিয়ে যেত অবহেলিত কথার স্তুপ.... 


***********

বৃষ্টি  ভেজা দহনছল

নভশ্রী সান্যাল


রুক্ষ বুকের দুঃখ ভেজে

স্বেচ্ছাচারী বৃষ্টিতে?

কেউই কি খুব ব্যথায় কাতর

অভিমানী দৃষ্টিতে? 


আকাশ, তোমার অগোচরেই

জমছে বুকে আগুনজল।

মাটির মতো আমিও জানি

বৃষ্টিভেজা দহনছল। 


কান্না দিয়ে মেঘ ধুয়ে দেয়

আকাশ বুকে আত্মছাপ।

বানভাসি চাঁদ কলঙ্কে বয়

পূঞ্জীভূত পরিতাপ।

*******

আজ কেমন ফ্যাকাশে মনে হয়!

মনে হয় এ আকাশ এ বাতাস এ প্রেম আমার নয়।


অপূর্ব মজুমদার


রং রুটে ঠোঁটে ঠোঁট দুটি মিলে যায়

ছায়া আবছায়ায় নুড়ি কাঁকর বিছানো রাস্তায়।

ইহকালের প্রতিটি প্রেমের সংলাপ একদিন রোমান্থীত হয় বার্ধক্যর স্মৃতির পাতায়।


ছোট্ট ছোট্ট দেনা পাওনার ফর্দ গুলো কেমন ফেড হয়ে আসছে!

মন আজ জীবনমুখী গান অথবা জীবনানন্দে ভেসে যেতে চাইছে।


মগ্ন চেতনায় আকাশে ভাসতে থাকি পাল তোলা নৌকায় সাদা মেঘ হয়ে!

জড়া ব্যাধি মৃত্যুর উপলব্ধি করে একদিন আফসোসে মানুষ বলে জীবনটা বড্ড একঘেয়ে।


প্রেম বড্ড শ্বাশত চিরঞ্জয়ী একটা প্রতিকী ফুল ডেফোডিল!

পড়ন্ত বেলায় শান্ত ঝিলের পাড় ঘেঁষে উড়ে যায় একক গাঙ চিল।


বদ্ধ কুসংস্কারের মাদুলি গুলো একদিন পুরাতন পলেস্তারার মত খসে খসে খসে পরে,

প্রতিদিনের মোহের সংসার একদিন সব্বাই কে একা একদম একলা করে।


ভালোবাসাই মানুষ কে বাঁচিয়ে রেখে জীবনমুখি করে,

ভালোবাসতে বাসতেই মানুষ জীবন মরণে একদিন ডুব দেয় জীবন আঁধারে।


*********

অশ্বত্থের আড়ালে উষ্ণতার খোঁজে 

প্রিন্স এ ওয়াকী 


উষ্ণতা খুঁজে ফেরা প্রিয়ার 

কবোষ্ণ বুকে,

একটু খুঁনসুটিতে রাত্রি প্রত্যাশা। 


বিরতির মাঝে মাঝে প্রেমালাপ 

অশ্বত্থের আড়ালে, 

দেনাপাওনার হিসাব ছাড়া জাগতিক মোহে।


খণ্ড খণ্ড স্মৃতিরা সব ভেসে যায়

সীমানা হারিয়ে, 

চিনচিনে ব্যথাটা বেদম ভোগায় বুকের মধ্যিখানে। 


নির্বাচিত সময় নিয়ে ঘর সংসার 

মানচিত্র ছুঁয়ে থাকে,

অনাহুত বেদনারা আঁচড় কাটে ক্যানভাসে অনুরাগে। 


উষ্ণতা খুঁজে নিতে হয় 

নির্ভেজাল শিকারী প্রেমিকের বেশে,

বাৎস্যায়নের ষোলকলা পূর্ণতা পায় তীব্র দহনে।


এক জীবনে কত যে মান অভিমান 

মোহনার বালুতটে ভালোবাসার অভিসার, 

ধীরে বহে জলধারা সাগর সঙ্গমে অবিরাম।         

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ