পোস্ট বার দেখা হয়েছে
ঘুটঘুটে অন্ধকার
মনোজ কুমার রথ (শ্রীমান অকুলীন)
কালরাত্রি নয়,
কাল রাত্রি হলে...... নিঝুম হলে শর্বরী,
হেঁটে যাব বিরান পথে শহর ছেড়ে দূরে!
আলোর বন্যায় ভাসলে ভাসুক ওদের মহানগর;
তুমিও এসো...
সাদা ঘোড়ার যাত্রী হয়ে শক্ত লাগাম ধরে নয়,
কিংবা পরীর মতোও নয়...
কবিতার মতো এসো,
বাসন্তী বাতাসের মতো এসো,
গোধূলিবেলার রাখালবালকের মতো এসো,
অস্তরাগে খড়কুটো মুখে নিয়ে পাখির মতো এসো,
সাতটা পাঁচটা ডিউটি শেষে
অফিস ফেরৎ মানুষটির মতো এসো,
দীর্ঘদহনতাপের পর প্রথম বৃষ্টির মতো এসো...
ডাগর চোখে তাকাবে এসো
গত করম পরবে দেখা খোপায় বনফুল গোঁজা
ওই পলাশডাঙার নির্মেদ সাঁওতাল রমণীটির মতো।
দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে আয়ু!
অবহেলায় অপচয় করার মতো
এ জীবনে আছে কী যথেচ্ছ বেশি সময়?
জড়িয়ে ধরে আরও জড়িয়ে যাও...
মনের ভূতগুলোকে তো বিদায় দিয়েছি কবেই!
এ চতূর্দশীর পর মসির মতোই না হয় আঁধার নামুক,
ঝড়কে উপেক্ষা করে দীপ হাতে নিয়েই এসো...
ওগো দীপান্বিতা।
পরিণীতা তুমি,
পরের জন্মেও তোমাকেই চেয়ে নেবো
ভাগ্যবিধাতার কাছে...
হয়তো ফুল হয়ে ফুটে উঠবো পাশাপাশি দু'টি গাছে,
নয়তো দু'টি পরিযায়ী পাখি
ঠোঁটের ভিতর ঠোঁট ডুবিয়ে গল্প করবো
সাঁতরাগাছি ঝিলে কিংবা কাঁসাইয়ের চরে,
নইলে দুই চোখাচোখি সমান্তরালে পাশাপাশি উড়ে যাব
সুদূরের কোনো দেশে আলোর সন্ধানে।
দেখো, প্রথম হেমন্তে প্রসববেদনা ওঠা আমনের দেহে
শিশিরের আলতো পরশ,
তুমিও এসো...
ছুঁয়ে দাও আমায়,
হেঁটে হেঁটে পে'রিয়ে এসেছি এতোখানি পথ!
পথে পথে এখনও ক-ত শিউলি ফুটে আছে দেখো!
এই তো বাড়িয়ে রেখেছি...... পেতে রেখেছি হাত...
দাঁড়িয়ে আছি বিরান পথের দুইরাস্তার মাথায়...
কি ঘুটঘুটে অন্ধকার!
***********
স্বয়ংসম্পূর্ণা
কথাকলি
অনন্ত দুঃখের মাঝে এক লহমা সুখটাকে
গিলতে গিলতে দুদন্ড দাঁড়াই ঘাটের সোপানে।
দুদন্ড দাঁড়াই এই পৃথিবীময় বিমূঢ় অস্তমিত অন্ধকারে একলা।
গাঢ় দুঃখের নেপথ্যে স্থির আনন্দের
এক পরমাশ্রয়ের অপেক্ষায় আজও কাঁদে মন!
প্রাণের গভীরে আকাঙ্ক্ষার ক্লান্ত চরণ
আঁধারে নিমগ্ন হয়ে মনে মনে খোঁজে সেই পরমাত্মীয় আপনজনকে।
আর ক্ষিপ্র হাতে কুড়িয়ে নেয়
এক অস্তমিত সূর্যের নিঃসঙ্গ অনন্ত যাত্রাপথের পদরেণু।
কুড়িয়ে নেয় বিষন্ন বনভূমির নিদ্রিত গুঞ্জরন।
কুড়িয়ে নেয় বেদনাহত ভ্রমরের মগ্ন দৃষ্টির মৌন সম্ভাষণ।
কুড়িয়ে নেয় তীব্রতম যন্ত্রণার গভীরে লালিত তৃপ্তি।
কুড়িয়ে নেয় অনির্দিষ্ট লক্ষ্যের পিছনে ঝলসে ওঠা আবেগের বিদগ্ধ এক টুকরো আশাহত স্বপ্ন।
সহসা নদীর গভীরে ঘাটের সোপানের ঢেউএর ভাঁজে ভাঁজে কান্নার দমক গুমরে ওঠে...
আকাঙ্ক্ষার ক্লান্ত পথ পেরিয়ে
আমি তরঙ্গের অস্ফুট কল্লোলে আবার খুঁজি
সেই প্রিয়তম আশ্রয়।
কে যেনো সোচ্চার হয়ে বলে ওঠে...এ বেদনাহত অশ্রুজল তোমার জন্য নয়...তোমার জন্য নয়।
মন্দাকিনী তরঙ্গের নুপুরের ধ্বনিতে প্রতিধ্বনিত হয় তার আপ্তবাক্য।
সে সোচ্চার হয়ে বলে...বিচ্ছেদ-বেদনাই শেষ কথা নয়...শেষ কথা নয়।
স্বচ্ছ হৃদয়ের উদাত্তকণ্ঠ গান উন্মুক্ত সবখানে।
তাই বিচ্ছেদই শেষ কথা নয়।
দ্যাখো কোনোখানে কোনো বিচ্ছেদ নেই!
সহসা আমি চেয়ে দেখি সবখানে আছে
অনন্ত মিলনের অমেয় আনন্দ।
আছে রৌদ্রের প্রসন্ন করপুটে বর্ণময় ধরণীর অতলান্ত অফুরন্ত আনন্দের সম্ভার।
সেই অতলান্ত আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে
কে যেনো বলে উঠলো...পৃথিবীময় সকল দুঃখকে আত্মস্থ করো।
সকল দুঃখকে গলাধঃকরণ করো।
সকল দুঃখকে স্তিমিত করো...প্রশমিত করো।
সমাদ্রিত করো...আবাহন করো...
পরিশেষে ধারণ করে ধৃতিময়ী হও...
সহিষ্ণু হও...পরিতৃপ্ত হও...
উদাত্ত হও...উজ্জীবিত হও...স্বয়ংসম্পূর্ণা হও।
*********
ফিরে আসুক
স্নেহাশিস পালিত
না! এক্কেবারেই চেনা যাচ্ছে না!
ক্ষয়িষ্ণু তনুতে অস্থির উপহাস...
অথচ, শেষ দেখেছিলাম নিটোল অবয়বে।
মাঝের কয়েকটা মাসেই এই পরিবর্তন,
পরিবর্তন দেহে, রক্তে, মজ্জায়, মননে...
কিন্তু কেনো? কীভাবে? কেমন করে?
একাধিক রোগ বাসা বেঁধেছে একযোগে,
উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চিনি ক্রমে বেড়েছে অজান্তে...
পরোয়াহীন, উদ্ধত যাপন ক্ষমা করেনি।
চুপিসারে বৃক্কে ধরেছে শৈথিল্য,
যকৃতে জন্ডিসের বেপরোয়া শাসন...
ঝিল্লি স্রবণে চলে বর্জ্য তরলের নিষ্কাশন!
তবুও চাই ভালো থাকুক সীতানাথ,
ঈশ্বরের আশীষ থাক তার মাথায়...
ফিরে আসুক স্বভাবিক জীবন গতিতে।
জানি এ পৃথিবী বিত্তহীন মানুষের নয়,
বিত্তহীন জীবন যেখানে সার্বিক অর্থহীন...
বেলা-অবেলায় চলে সম্পর্কের টানাপোড়েন!
যে জীবন ছিল চঞ্চল তটিনীর মতো,
অনায়াসে ছাপাত দুকূল অবহেলে...
আজ উচ্ছ্বাসহীন, ক্লান্ত, নীরব, অসহায়!
আশাহত জীবনের সূচীপত্র খুলে -
পৃষ্ঠা ওল্টানো সমাধানের পথ চেয়ে...
সময়ের কাছে জমে থাকা উত্তরের আশায়।
*********
নিজের ভিতর
নরেন নাইয়া
নিজের ভিতর একটা বাঁচা আছেই
পারলে তুমি সেই বাঁচাটাই বাঁচো।
সব বাঁচাতে নয়ননদী নাচেই
সঙ্গে থাকে পুড়িয়ে দেওয়ার আঁচও।
নদীর বুকে বাঁধ যদি দাও কষে
মেঘলা আকাশ বসবে পাড়ে এসে
গোমড়ামুখে দেখবে দিনের শেষে
আগুন তোমার বিদায় নিল হেসে।
আগুন যদি আড়াল করো বর্ম দিয়ে ঢেকে
তোমার ভিতর আঁধারগুলো যত্ন করে রেখে
কেমন করে বুঝবে তখন, সূর্যটাকে দেখে
প্রতিদিনের জ্বলতে থাকা তোমার কাছেই শেখে।
**********
স্পন্দিত হৃদয়ে মুখরিত সকাল
প্রিন্স এ ওয়াকী
ঐ যে দূরে যেখানে এক বসত বাটি
আলো কী দেখা যায়,
আছে কী প্রাণের ছোঁয়া,
স্পন্দনের সুর কী বাজে হৃদয়ের তানপুরায়?
নাকি কেবলই আঁধারের আঁকিবুঁকি,
মিথ্যা খেয়ালের স্বপ্নছবি;
বেঁচে থাকার তীব্র ইচ্ছাতে আলেয়ার ছলচাতুরী?
ঐ যে কুহেলিকা প্রচ্ছায়,একি ছায়ারাগের মায়াজাল;
আচ্ছন্ন করে দেয় প্রতিনিয়ত চিন্তার অবকাশ-
ধোঁয়াশা আর কুয়াশার আড়ালে
অনিশ্চিত বেঁচে থাকার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার?
ঐ যে দূরাগত দিগন্তের ওপার থেকে
দুই ঠোঁটের ভাঁজে উন্মোচিত শিস ভেসে আসে;
একি প্রাণের স্পন্দনে আলোড়িত জীবনের মিছিল
নাকি বাতাসের করুণ ফিসফাস মৃত্যুর হাতছানি?
তবে কী ভ্রম,সময়ের নিষ্ঠুর নিরব উপহাস,
চোখের তারায় ভাসছিল অতীত আলোর খেয়াল;
আলো আঁধারের মৌনতায় হারিয়ে যাওয়ার আহ্বান?
এখন
এখানে
এই মুহূর্তে
সব অস্তিত্বের বিপরীতে আরেকটি
সূর্য স্নাত সকালের অপেক্ষা কী শুধুই দুরাশা আর
অবলীলায় অনিশ্চয়তায় ডুবে যাওয়া?
মনের ভেতর প্রচণ্ড প্রসব বেদনা ;
হাজার একটা কবিতার পাণ্ডুলিপি
থাকতে চাচ্ছেনা নিকশ অন্ধকারে,
দুর্দান্ত এক প্রত্যাশিত সকালের দেখা যে পেতেই হবে
অভিষেক হবে শব্দে শব্দে স্বপ্নবিলাসী কবিতার...
0 মন্তব্যসমূহ