পোস্ট বার দেখা হয়েছে
সময়ের কাছে ঋণ
অবশেষে রাত্রির খোলা চুলে নেমে এলো শিশিরস্নাত চাঁদ,
হয়তো সে চাঁদের হাসিতে লেগে নেই স্মৃতির কোন পরশ।
তবুও হেমন্তের পাকা ধানের শীষে খুঁজে ফিরি মায়াবী বিকেলের সোনা রোদ,
হয়তো দোয়েলের ঠোঁটে বেজে ওঠেনি হৃদয়ের সুর,
হয়তো দূরত্বের যে আগুনে পুড়িয়েছি সময়ের গোধুলি,
সে আগুনে আজীবন জ্বলে যাবে উষ্ণতার কিছু ক্ষণ।
তবুও যে পরশটুকু হেঁটে এসেছিল সন্ধ্যার আলোতে,
সেটুকুই রয়ে যাবে স্মৃতির নকশীকাঁথা হয়ে,
সময়ের মত হেঁটে যাবে সময়,
দিনের পরতে কেটে যাবে দিন,
তবুও সে যাপিত স্পর্শের কাছে
থেকে যাবে হাজার বছরের ঋণ।
#
ছড়াগানঃ সোনার পাখি
[উৎসর্গঃ আমার সোনার পাখি
তাহসিনুল আজাদ আলজাহরাবিকে]
রোজ সকালে একটা পাখি
কিচিরমিচির ডাকে রে
কিচিরমিচির ডাকে,
সেই পাখিটা সোনার পাখি
বুকের ঘরে থাকে।।
সেই পাখিটা আলজারাবি
বাবার বুকে থাকে।।
সেই পাখিটা আসলো নেমে
আকাশ থেকে উড়ে,
গাইলো যে গান মধুর সুরে
বুকের জমিন জুড়ে।
সেই পাখিটার পরশে ঘর
আলো হয়ে থাকে।।
সোনার ফসল হয়ে পাখি
উঠোন, গোলা ভরে,
কিষাণ মুখে মধুর হাসি
আনে ঘরে ঘরে।
পাখি তো নয় শিল্পী সে যে
সুখের ছবি আঁকে।।
#
শরৎ এখন, শরৎ তখন
রোজ সকালে ঘাসের পাতা মুচকি দিয়ে হাসে
বলে - বাছা, শিউলীতলায় কেউ না এখন আসে।
আগের মানুষগুলোই বেশী আপন ছিলো বুঝি
মধুর মায়ায় হৃদয় খুলে তাদেরই আজ খুঁজি।
আগের মত কেউ আসে না সুবাস গায়ে মাখতে,
কেউ আসে না পাখির মত মধুর সুরে ডাকতে।
শিরশিরে সেই শরৎ হাওয়া তাই করেছে মান,
নীরব ব্যথায় কাশের বুক আজ হচ্ছে যে খানখান!
পাখপাখালির ডাকে এখন সন্ধ্যা নামে না কো,
গাঁয়ের মাঠে গোধূলী রঙ এখন থামে না কো।
নেই কো ফুলের সুবাস হাওয়া, নেই কো পাখির ঝাঁক,
এখন শরৎ নেই কো শরৎ, ঋতুর বদল বাঁক।
আগের শরৎ নেই তো এখন, কেবল কালের স্মৃতি,
শ্যামল বাংলা বুকের ভেতর গায় যে বিষাদগীতি।
আগের শরৎ ফিরে আসুক, আগের স্বপ্নালোক,
বলল শরৎ- এখন মানুষ, আগের মতই হোক।
#
বাংলা আমার বোল
মায়ের কথায় মধুর ভাষা স্নিগ্ধ মায়ের কোল,
বাংলাদেশে জন্ম আমার বাংলা আমার বোল।।
মায়ের মুখে শেখা কথা মনের ভাষা বুলি,
ফুলের মত পাপড়ি মেলা স্বপ্ন দুয়ার খুলি।
হাজার মুখে আদর ছড়ায় মধুর কথাগুলি।
ধানের ক্ষেতে দখিন হাওয়ায় যেন সুখের দোল।।
বাংলাদেশে জন্ম আমার বাংলা আমার বোল।।
হাটে মাঠে পথে ঘাটে যেই ভাষারই গান,
যেই ভাষাতে কাব্য-গানে স্বপ্ন আঁকার টান
সেই ভাষাতে রফিক সালাম বরকতেরই দান,
জব্বার সফিক শহীদর ভাইয়ের রক্ত-ঝরা দান।।
সেই সে ভাষা আমার ভাষা বাংলা হৃদয়ের মাঝে,
বাংলা আমার স্নেহের ছোঁয়া সকাল দুপুর সাঁঝে,
শীতলতার গীতলতা যেই ভাষারই ভাঁজে,
সেই ভাষার গান শুনে শিশু দোলায় মায়ের কোল।।
বাংলাদেশে জন্ম আমার বাংলা আমার বোল।।
#
কবিতার স্রোতে ভাঙি নিমানুষী কুল
আঁধারের বুকে লেখি তারাদের নাম,
দুইহাতে মুছে দেই পৃথিবীর ঘাম।
জোনাকির গায়ে জ্বালি আগুনের ফুল,
যামিনীর ঘুম নেই ধরণী আকুল।
হতাশার মুখে আঁকি হাসিদের রেখা,
পৃথিবীর যত সুখ কবিতায় লেখা।
তোমাদের লোভে খুঁজি আমাদের হাসি,
মন খুলে গেয়ে উঠি গান- ভালবাসি।
অসীমের মাঝে খুঁজি সসীমের সুখ,
বেদনায় হাসিমাখা আমাদের মুখ।
যোগীদের ধ্যানের খুঁজি মানুষের ফুল,
কবিতার স্রোতে ভাঙি নিমানুষী কুল।
পাখিদের সুর হোক আমাদের ধ্যান,
ভালবাসাবাসি হোক জীবনের জ্ঞান।
#
সুখের আকাশ দিগন্ত ছোঁয় দূরে
চোখের ভেতর স্বপ্ন আঁকা বুকের ভেতর ঢেউ,
সোনার আগুন বিকেল পোড়ে, দেখে না তো কেউ।
সন্ধ্যে ঘনায় গাঁয়ের মাঠে পাখির ডানায় চড়ে,
একজোড়া চোখ স্বপ্ন বোনে জোনাকিদের ঘরে।
নীলপরীদের সাথে কেমন উদাস করা রাত্রি,
ঘুমের দেশে মন থাকে না, উড়াল ডানার যাত্রী!
হৃদয় পোড়া গন্ধে চাঁদে আঁচলে মুখ ঢাকে,
মিটিমিটি তারাগুলো কাকে যেন ডাকে।
জানে কি সে- তারার চোখে নিদ্রা আসে না কো?
নদীর দুকূল দুদিকে রয়, কই মিলনের সাঁকো?
শিউলি ফুলের গন্ধে মাতাল রাত্রি থাকে চেয়ে,
দীর্ঘশ্বাসে শিশির হয়ে ঝরে আঁধার বেয়ে।
খুলবে কি দোর ভোরের পাখি মধুর সুরে সুরে?
সুখের আকাশ দিগন্ত ছোঁয় কেবল দূরে দূরে।
#
শোকের ভেতর শক্তি লেখা
[উৎসর্গঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান]
স্বাধীনতার স্বপ্ন বপন হিমালয়ের চূড়ে,
এক হিমালয় গর্জনে তাঁর তর্জনীতে উড়ে।
সেই হিমালয় দাঁড়িয়ে থাকে বাংলাদেশের বুকে,
কোন্ সে পবন কোথা থেকে কেমন করে রুখে?
হাওয়ার বুকে এক পতাকা উড়ে আকাশ জুড়ে,
তার ভেতরে পিতা-খুনের শেয়াল শকুন ঘুরে।
রক্ত চোষা হায়নাগুলোর নখর হল কাল,
পিতার বুকে আঁচড়ে তার জমিন হলো লাল!
শোকের ভেতর শক্তি লেখা, ভক্তি লেখা আরো,
বুকের মাঝে কালো জমিন স্বপ্ন থাকে তারও।
সমাধিতে ফুলে মালায় ফুলকি থাকে বুঝি,
বুকের রক্তে প্রেমের রেখা, তারে কি কেউ খুঁজি?
চোখের জলে বোধির জনম, নদীর স্রোতও জানে,
বুকের মাঝে স্বপ্ন-আগুন উড়ে পাখির গানে।
#
বিজন বনে সুরের ধ্বনি
এইখানে এই মধ্য দুপুর, রৌদ্র করে খেলা,
সুর তুলে যে কোন্ পাখিটা দেয় ভরিয়ে বেলা!
অচেনা এক নৌকা যে বায় জীবন নদীর বুকে।
অজানা এক ঢেউয়ের তালে হৃদয় নাচে সুখে।
নাম জানি না পাখিটার ঐ, গ্রাম চিনি না আমি,
শুধুই ভাবি এ সুর বুঝি সোনার চেয়ে দামী।
হৃদয় বীণায় কি সুর বাজে, কি জানি তার নাম?
কোন্ ঘরে সে বসত করে, কোন্ খানে তার ধাম?
অবাক চোখে চেয়ে দেখি - সুরের পাখি গায়,
ভাটি থেকে সাম্পানে কি উজান পানে ধায়?
কোথায় যাবে, থামবে কোথায় সাধের মাঝি ঐ,
ইচ্ছে করে ডেকে তারে মনের কথা কই।
কি কথা কই, কি জানি কি? কোন্ ভাষাতে ডাকি,
ভাষা আমার নেই তো জানা, কেবল চেয়ে থাকি।
উদাস দুপুর, মিষ্টি নূপুর কার চরণে বাজে?
কোন্ তালে সে সুর তুলে যায় পথিক-হৃদয় মাঝে?
হোক না দূরের, তবু সুরের লহরী যে শুনি,
আপন মনে বিজন বনে বসে যে কাল গুনি!
#
এই তো জীবন
[উৎসর্গ: প্রিয় সোমা দি, যে হৃদয় দিয়ে মানুষকে ভালবাসতে জানে।]
এই তো জীবন- খানিক জল আর খানিক স্থল,
খানিক মেঘে ঢাকা, খানিক বৃষ্টির কোলাহল।
কখনো হর্ষোল্লাসে হেসে ওঠা বেশ দাদাগিরি
কখনো ভেজা মনের বিমর্ষ বিকেল বিচ্ছিরি!
কখনো মনোহর রংধনুর সাতরঙা ঝিলিমিলি,
কখনো সাদাকালো বেদনার কিলিবিলি!
এই তো জীবন- যাযাবরের হেঁটে যাওয়া মরু,
দুখের মাঝে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট নদী সরু!
নিজের চোখে নিজের মুখ দেখে কেঁপে ওঠা ক্ষণ,
তিতা পাতায় লুকিয়ে রাখা পুষ্পের মত মন।
এই তো জীবন- একতারা হৃদয়ে গাওয়া যে গান,
হাজার লোকের ভিড়ে একাকী নিরব অভিমান।
কখনো চায়ের কাপে জীবন হীরামতি পান্না,
একা বালিশে নিশুতি যামিনীর ফোঁপানো কান্না।
এই তো জীবন - ধুলোমাটি দিয়ে ক্ষণিকের খেলা,
বেলাশেষে মাটির মাঝে পুঁতে থাকা শুকনো ভেলা।
#
সুখের কেতাব লেখি না
কথার মাঝে স্বপ্ন ফোটাই, ব্যথার মাঝে ফুল,
ক্ষতের মাঝে পলি জমাই, জীবন নদীর কূল।
স্রোতের তোড়ে কিনার ভাঙে, উপচে পড়ে জল,
সাগর মাঝে ভেসে বেড়াই পাইনে খুঁজে তল।
মানুষ বলে চুপটি থাকি অবাক চোখে চেয়ে,
মনের সুখে গান গেয়ে যাই দুখের জলে নেয়ে।
ধূর্ত সময় মূর্ত হয়ে শেয়াল দাঁতে কামড়ায়,
তবু মুখে কই না কথা, ভীষণ জ্বলন চামড়ায়।
ভাগ্য বলে নিচ্ছি মেনে, দুঃসময়ের কাহন এই,
অথৈ পাঁকে নিঃস্বজনের বুকের বলই বাহন সেই।
জ্বলছে বুকে চিতার আগুন, পুড়ছি তাও কাঁদি না,
গৃহীর ঘরে দেখছি ডাকাত, তবু তারে বাঁধি না।
উর্ধ্বে ওঠার নেই কো সিঁড়ি, তাই তো উপর দেখি না,
দুখের ঘরে বেশ তো আছি, সুখের কেতাব লেখি না।
0 মন্তব্যসমূহ