পোস্ট বার দেখা হয়েছে
নার্সিসাস
নভশ্রী সান্যাল
ইন্টারোগেশনের পরে সুতীর্থকে ছেড়ে দিতে বলে ইন্দ্রনীল। সুতীর্থ নির্দোষ।
ওসি কিংশুক দত্তর তার এই ডিটেকটিভ বন্ধুটির উপর পূর্ণ ভরসা থাকলেও
এই কেসটাতে যেখানে খুনের মোটিভ, খুনী, সব চোখের সামনে দিনের আলোর মতো পরিস্কার, খুনীকে কিংশুক যথেষ্ট প্রমানাদিসহ গ্রেপ্তারও করেছে, সেখানে নীল যে কী ভাবছে..
সাইক্রিয়াটিস্ট তথাগত সেন যথেষ্ট কমবয়সেই একটি আন্তর্জাতিক নাম।
ঈশ্বরের বোধহয় সবকিছু একসাথে কাউকে দিতে টেকনিকালি কোনো সমস্যা আছে।
কর্মজগতে তথাগত যতখানিই সফল, ব্যক্তিগত জীবন ততখানিই যন্ত্রণা-ভারাক্রান্ত।
তরুণ তথাগত কোনো সেমিনারে যোগ দিতে একবার ঔরঙ্গাবাদ গিয়েছিলেন।
সেখানেই দেখন ইরাবতীকে।
এক ফুল বিক্রেতার মেয়ে।
ইরাবতীর অসামান্য রূপে মুগ্ধ হয়ে পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলেন।
শিক্ষা-সংস্কৃতি, বংশমর্যাদার আসমান-জমিন ফারাক ইত্যাদি কোনোকিছুই মানেননি সেদিন বাবা-মা ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেক বোঝানো স্বত্বেও।
বিয়ে করেছিলেন মুগ্ধাবেশে ভালোবাসায় ভেসে গিয়ে।
প্রথম বেশ কিছু মাস ঘোরের মধ্যে কেটে গেলো যেমন যায়।
তারপর তথাগত ইরাবতীকে তার পরিবারের,সমাজের উপযোগী এবং নিজের সুযোগ্য সহধর্মিনী করে গড়ে তুলতে সমস্তরকমের ব্যবস্থা করলেন। কোনোদিকে কোনোরকম ত্রুটি রাখলেন না চেষ্টার।
তথাগত চেয়েছিলেন, ইরাবতী যেন কোথাও অসম্মানিত না হয়,কেউ ওর অপরিশীলিত,অমার্জিত ব্যবহার,আদবকায়দার জন্য ওকে হীনজ্ঞান না করতে পারে, স্বল্পশিক্ষার কারণে ওর দিকে কেউ যেন আঙুল তুলতে না পারে।
সময়ের সাথে সাথে তথাগত স্ত্রীর বাইরের আলো করা রূপের আড়ালে ভেতরের অশিক্ষার অন্ধকারকে দেখতে পেলেও ইরাবতীর প্রতি ওর নিখাদ ভালোবাসা এক কণাও কমে বিতৃষ্ণার উদ্রেক হয়নি কখনো।
ইরাবতীর কিন্তু দিনের অধিকাংশ সময়ই কাটতো আয়নার সামনে নিজেকে নিয়ে রূপচর্চায়,প্রসাধনে।
ঘন্টার পর ঘন্টা সে নিজের রূপেই মোহিত হয়ে থাকতো নার্সিসাসের মতো।
তথাগতর প্রতি আগ্রহও ম্লান হতে থাকলো।
এতকাল তার রূপ ছিলো, এখন সেই রূপকে সে প্রতিমুহূর্তে দামী পোশাকে,গয়নায়,প্রসাধনে নানানভাবে সজ্জিত করে বিমোহিত হয়ে থাকতো আয়নার ইরাবতীকে দেখে।
ইতিমধ্যে ইরাবতী সন্তানসম্ভবা। তথাগত সহ সেন বাড়িতে আনন্দের বান ডাকলো।
কিন্তু, যার সবথেকে খুশী হওয়ার কথা,সে
তীব্র বিতৃষ্ণার সাথে এই সন্তানের জন্ম দিতে অসম্মতি জানালো।
যারপরনাই আহত-বিস্মিত তথাগত স্ত্রীকে বোঝাতে চায়,
"ইরা, যে আসছে,সে তো আমাদের ভালোবাসার সন্তান। তুমি তাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে চাইছো! কেন?!"
ইরাবতী.. ভালোবাসার সাথে বাচ্চা নেওয়ার কী সম্পর্ক?
না না, এ বাচ্চা আমি চাই না।
আমার ফিগার,স্কিন,চুল সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে।"
বিমূঢ়-ব্যথিত তথাগত নির্বাক চেয়ে রইলেন স্ত্রীর দিকে।
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন, এই ব্যাপারে ইরাকে তিনি কোনোরকম সাহায্য করবেন না।
ইরাবতী তখনোও বহির্জগতে তেমন সাবলীল না হওয়ায় নিত্য অশান্তি করলেও অ্যাবর্ড করাতে শেষপর্যন্ত সক্ষম হয়নি।
যথাসময়ে একটি ফুলের মতো মেয়ের জন্ম দিলো ইরাবতী।
ইরাবতী ক্রমশ পাল্টাতে লাগলো এরপর। আদবকায়দায়,কথাবার্তায়, আচার-ব্যবহারে এখন আর কেউ তাকে গ্রাম্য-অশিক্ষিত-বোকা-অমার্জিত অপবাদ দিতে পারবে না।
কিন্তু, তথাগত যেভাবে স্ত্রীকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, ইরাবতী সম্পূর্ণ বিপরীতরকমের আধুনিক হয়ে উঠলো।
তার সাথে তার চোখ ধাঁধানো রূপের জন্য চারপাশে মধুলোভী সুযোগসন্ধানী স্তাবকের অভাব হলো না।
ইরাবতী এমনই আঁধারসর্বস্ব আলেয়ার স্তুতি ও রাংতামোড়া লোভের মরীচিকার দুর্নিবার মোহে ভেসে গেলো অনায়াসে।
ছোটো থেকেই রূপের প্রশস্তি শুনে সে অভ্যস্ত। কিন্তু, এর আগে সে জানতো না, তার এই রূপ কতভাবে ব্যবহার করা যায়, এর দ্বারা অর্থ সমাগমও সম্ভব।
তথাগতর অনাবিল ভালোবাসা আপ্রাণ চেষ্টা করেও ইরাবতীকে তার মনোমত করে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলো।
স্বামী,সংসার এমনকী শিশুকন্যাকেও উপেক্ষা করে মরণোন্মুখ পতঙ্গের মতো উশৃঙ্খল বিলাসব্যসনের আগুনের পানে
ধাবিত হলো।
নিত্যনতুন পুরুষসঙ্গ, ক্রমশ পানাসক্তি,
মধ্যরাত্রে প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি ব্যভিচারীতাতে তথাগতর নিখাদ ভালোবাসা ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হলেও বিচ্ছেদের ভাবনা ভাবতে পারে না,চায় না।
ইরাবতীর যথেচ্ছ অর্থব্যয়েও তথাগত কখনো বাধা দেননি।
একদিন ইরাবতী মুখাবয়বের প্লাস্টিকসার্জারি এবং লাইপো-সাকশনের সিদ্ধান্ত নেয়।
তথাগতর অজস্র নিষেধ অগ্রাহ্য করে নিজেই সমস্ত ব্যবস্থা করে নার্সিংহোমে ভর্তি হয়।
অপারেশনের পর কোনো কারণে মারাত্মক ইনফেকশনে সমস্ত শরীর বিষিয়ে গিয়ে শেষপর্যন্ত তথাগতর সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে অবশেষে সেপটিসিমিয়ায় মারা যায় ইরাবতী।
ক্লান্ত-বিপর্যস্ত-শোকতপ্ত তথাগত তার প্রাণসর্ব্বস্ব একমাত্র সম্বল মেয়ে সৃজাকে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরেন।
ধীরে কমিয়ে ফেলেন নিজের কর্মজগতের সাথে যোগাযোগ।
খুব এমারজেন্সি-সহায়সম্বলহীন মুষ্টিমেয় পেশেন্ট ছাড়া দেখতে চান না।
বাড়িতেই নিজের লাইব্রেরিতে বই আর সৃজা এইই তার জগত।
সৃজা জন্মেছে মায়ের থেকেও বেশি সৌন্দর্য ও বাবার মেধা নিয়ে। বড় হয়েছে
মায়ের অপরিসীম অবহেলা,অনাদরে স্বভাবতই মাতৃস্নেহ কাঙাল মন,বাবার অপর্যাপ্ত ভালোবাসা, অমন দেবতুল্য বাবার প্রতি মায়ের প্রতিনিয়ত অসম্মান,উপেক্ষা প্রত্যক্ষ করা ইত্যাদি এক বিচিত্র মিশ্রিত সত্তা নিয়ে।
সে একদিকে মেধাবী ছাত্রী,অত্যন্ত নরম, ভালোবাসার কাঙাল মন পোষে বুকে,আবার খুব ভীতু, অসম্ভব টেনশন-অ্যাংজাইটিতে ভোগে, একটু চুপচাপ ইন্ট্রোভার্ট।
এখন সে আই-সি-এস-সিতে খুব ভালো ফল করে কলেজে।
সে আগেই বাবাকে জানিয়েছে, ডাক্তারি সে পড়বে না। কারণ সে প্রচণ্ড ভয় পায়, রক্ত,ইন্জেকশন,কাটাছেড়া,অপারেশন ইত্যাদি। কারুর কষ্ট সে দেখতেই পারে না।
তার উপর, মায়ের অপারেশনের ফলাফলে সে আরও ট্রমাটাইজড্।
ইদানীং সে আয়নার সামনে আগের থেকে একটু বেশি থাকতে পছন্দ করছিলো।
ছোট থেকে শুনেছে সে অপরূপা, তার ভালো লাগতো না।
সুতীর্থ দাকে তো চেনে সেই কবে থেকেই,
আজকাল অন্যরকম লাগে কেন!
সুতীর্থ দা "তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে" বললে খারাপ লাগার বদলে কেমন এক ভালো লাগায় ছেয়ে যায় ভেতরটা।
আয়নায় নিজেকে যেন প্রথম দেখলো সৃজা। ও সত্যিই এতো সুন্দর!!
মাকে লুকিয়ে দেখতো ও, ভাবতো, মার থেকে সুন্দর আর কিচ্ছু নেই পৃথিবীতে।
এখন ওর নিজেকে মায়ের থেকেও সুন্দর লাগে।
সুতীর্থ তথাগতর অভিন্নহৃদয় বন্ধুর ছেলে। অ্যাকসিডেন্টে বন্ধু-বন্ধুপত্নীর মৃত্যুতে সুতীর্থকে নিজের কাছে রেখেই বড় করেছেন তথাগত।
ইচ্ছে দুজনে পরিণত হলে ওদের মত থাকলে সৃজা-সুতীর্থর বিয়ে দেবেন।
বেশ কদিনযাবৎ কটি ছেলে খুব বিরক্ত করছে সৃজাকে। একজন প্রোপোজ করেছিলো ওকে। ও না করার পর থেকেই নানাভাবে উত্যক্ত করে ওকে।
বিরক্ত লাগলেও কোথাও আত্মতৃপ্তি,
ওর এতো রূপ বলেই না...
সুতীর্থ দার মুগ্ধতাও ও এখন বেশ উপভোগ করে।
বাবার সাথেও সৃজার কাটানো সময়ের অধিকাংশই কাটে আয়নায় নিজেতে মোহিত হয়ে,প্রসাধনে।
তথাগত লক্ষ্য করেছেন। আতঙ্কিত-দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তিনি।
রক্ত কি এভাবেই ডাক দিয়ে যায় শিরা-উপশিরায়!
ফিরছিলো সৃজা। পাশ দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার সময় কী যেন ছুঁড়ে দিয়ে যায়।
আর্ত চিৎকারে ছুঁটে আসে লোকজন।
খবর পেয়ে ছুঁটে আসেন তথাগত।
অ্যাসিডে ঝলসে গেছে মেয়েটার অপরূপ মুখখানির আশি শতাংশ।
তথাগত সৃজার বাবার সাথে সাথে একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞও।
সৃজাকে হসপিটালাইজড্ করে বাড়ি ফিরে প্রতিটি কর্মচারীকে নির্দেশ দেন সারা বাড়ি থেকে সমস্ত আয়না সরিয়ে নিতে।
সৃজা ফিরে যেন নিজেকে কোনোও আয়নায় দেখতে না পায়।
নিজের ওই অপরূপ মুখের এই বীভৎসতা ও সইতে পারবে না কিছুতেই।
মোবাইল সরিয়ে ফেললেন সৃজার সাথে নিজেরও লকড্ গোপন স্থানে।
মেয়েটাকে নিয়ে বাঁচা ছাড়া আর কোনোও লক্ষ্য রইলো না তথাগতর জীবনে।
সৃজা বাড়ি এসে ধীরে স্বাভাবিকবস্থায় ফিরলো।
সুতীর্থ আর বাবাই তার সঙ্গী।
আয়না খুঁজেছিলো পাগলের মতো কদিন, কিন্তু বাবার এ বিষয়ে নিশ্চুপ কাঠিণ্যে শান্ত হয়েছে সৃজা।
সেই সৃজা সেনের ভরদুপুরে পাঁচতলার ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুটা নিছক অ্যাকসিডেন্ট বলে পুলিশ মানতে নারাজ এবং সৃজা সেনের মৃত্যুতে তথাগত সেনের বিপুল সম্পত্তির মালিক
সুতীর্থ রায়ের যথেষ্ট মোটিভ থাকায় সুতীর্থকে গ্রেপ্তার করেছে।
ইন্দ্রনীল সুতীর্থর সাথে কথা বলে কিংশুককে ওকে ছেড়ে দিতে বলে।
কিংশুকের প্রশ্ন.. "তবে কি এটা আত্মহত্যা।"
ইন্দ্রনীল-- না। তবে এরপরের উত্তরের জন্য আমায় দুদিন সময় দে।
কিংশুক জানে, এখন নীল আর মুখ খুলবে না।
ইন্দ্রনীল সেন ভিলায় গিয়ে প্রথমেই ছাদে যায়। কার্নিশটা বেশ নীচু।
কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে নীচে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তথাগতর সাথে কথা বলতে লাইব্রেরীতে ঢুকেই দাঁড়িয়ে যায়।
সৌম্যদর্শন ডঃ তথাগত রায়কে চেনা দুস্কর।
বিদ্ধস্ত,অকালবার্ধক্যের ছাপ তার অবয়বে। বিষণ্ণতায় ভরে যায় মন।
ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করেন তথাগত ইন্দ্রনীলের সমবেদনাপৃর্ণ আচরণে।
অনেকক্ষণ পর যখন সেন ভিলা থেকে বেরিয়ে কিংশুককে ফোন করে ইন্দ্রনীল তখন ওর দুচোখে উজ্জ্বলতা।
সন্ধ্যায় ওসি কিংশুক সহ ইন্দ্রনীলের পূণরাগমনে তথাগত বিস্মিত, বিরক্তও বটে।
ইন্দ্রনীল: "আবার বিরক্ত করার জন্য মার্জনা চাইছি। আসলে জরুরী কিছু কথা এখন না বললেই নয়।"
তথাগত: "বলুন কী বলবেন।"
"আমি কিছু কথা বলবো, ভুল হলে আপনি সংশোধন করে দেবেন, কেমন!
মাসখানেক আগে আপনারা শালবনীতে আপনার বাংলোতে যে বেড়াতে গেছিলেন, তখন তো নিজেদের গাড়িতেই গেছিলেন। তখনই হঠাৎ গাড়ির সাইড মিররে নিজের মুখের বীভৎসতা দেখে নিজেই ভয়ে চিৎকার করে ওঠে সৃজা।
ভীষণভাবে শকড্ হয়। আমার সুন্দর মুখটা ঝলসে গেছে জানা আর নিজে চোখে আচমকা সেটা দেখা, দুটোর মধ্যে অনেক তফাৎ।
আপনার এতদিনের এতো চেষ্টা,সাবধানতা ব্যার্থ হয়।
সৃজার কান্নাকাটি থামার পর একদম শান্ত হয়ে গেলেও ওর আচরণে,কথাবার্তায় অসঙ্গতি লক্ষ্য করতে থাকেন আপনি।
তাছাড়া, সুতীর্থর চোখে মেয়ের প্রতি মুগ্ধতার বদলে ইদানীং করুণা,সহানুভূতি লক্ষ্য করেছিলেন।
সৃজা সেদিনের পর থেকে একা একা কথা বলে, কখনো স্বভাববিরুদ্ধভাবে, " বাবা, সুতীর্থ আমায় বিয়ে করবে তো? ও আমায় ভালোবাসবে তো? আমাদের কবে বিয়ে দেবে বাবা?" এধরণের কথাবার্তা বলতে শুরু করে।
সুতীর্থকেও হয়তো কিছু এমনই বলেছিলো, যার জন্য ইদানীং বাড়িতে বেশি থাকতো না। সে কৃতজ্ঞতা,মানবতার দায়ে আতান্তরে পড়েছিলো।
আপনি আত্মজার এই মর্মান্তিক যন্ত্রণা সহ্যও করতে পারছিলেন না, সেইসঙ্গে ভাবলেন, ক্রমশ সৃজা বদ্ধ উন্মাদ হওয়ার পথে। ওর এই ভালোবাসা পাওয়ার উন্মাদনা ওকে অনেকরকম বিপদে ফেলবে কারণ চারপাশে নারীমাংসলোভী হায়নার অভাব নেই। আপনার অবর্তমানে আপন মেয়ের কষ্ট-লাঞ্ছনা-যন্ত্রণা আর ভাবতেও পারছিলেন না আপনি।
স্থির করলেন, এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবেন মেয়েকে।
আপনি জানতেন বৃষ্টি খুব ভালোবাসে সৃজা। বৃষ্টিভেজার অছিলায় দুজনে গেলেন ছাদে। অঝোর বৃষ্টিতে মিশে গেছিলো সেদিন আপনার অশ্রু।
হঠাৎই মেয়েকে বললেন, ওর এই বীভৎসতাকে কেউ ভালোবেসে বিয়ে করবে না। সুতীর্থও আর ভালোবাসে না ওকে। ও যদি মায়ের মতো প্লাস্টিকসার্জারি করে, তবে ওর এই ঝলসানো মুখটাকে বদলানো সম্ভব।
এই সবকথাগুলোই সৃজার কাছে মারাত্মক শকিং , ভয়ের।
তাহলে তো আর বেঁচে থেকে কী হবে?
অপারেশন করলে তো মায়ের মতো মরেই যাবে...এই ভয়ঙ্কর ট্রমাটাইজ হয়ে আপনার চোখের সামনে সে ছুটে গিয়ে কার্নিশ টপকে ঝাঁপ দেয়।
আপনিও একইভাবে ছুটে গেছিলেন ঝাঁপ দিতে, সেই মুহূর্তে পিছন থেকে আপনাকে টেনে আনে সুতীর্থ।
ঠিক সেই মুহূর্তেই সে আপনমনে এমনিই ছাদে এসেছিলো। ছাদে পা দিয়েই সে দেখে সৃজার ঝাঁপ আর তার পিছনে আপনারও কার্নিশের দিকে দৌঁড়ে যাওয়া।"
একটানা বলে থামলো ইন্দ্রনীল।
তথাগত বন্ধ দুচোখ বেয়ে অবিরল নোনাজল ভিজিয়েছে পাঞ্জাবীর বুক।
স্তব্ধ কিংশুক।
নিঃশব্দে বেরিয়ে এলো দুজন।
কিংশুক-- ফাইলটা ক্লোজ করে দিই, কী বল।
ইন্দ্রনীল.. নীরবে বন্ধুর কাঁধে হাত রাখে।
0 মন্তব্যসমূহ