পোস্ট বার দেখা হয়েছে
জয়ী
বন্যা গাঙ্গুলী
সক্কাল সক্কাল ব্রেকফাস্টটা খেয়ে নিয়ে রুচিরা ফোনে মেসেজগুলো চেক করতে থাকে। হোয়াটস অ্যাপ এ রূপা শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছে। ওঃ আজ তো প্রজাতন্ত্রদিবস। করোনা আবহের পরে ছুটিগুলো আলাদা করে আর আনন্দ দেয়না। লকডাউনের সময় ঘরবন্দীর দমবন্ধ পরিবেশে অফুরন্ত ছুটির বিষময় জ্বালাটা মানুষকে তিতিবিরক্ত করে ছেড়েছে। অনলাইনে ক্লাস করাতে হয়েছে রুচিরাকেও। দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজে পড়ায় রুচিরা। অবিবাহিতা। বৃদ্ধা মা তার একমাত্র বিশ্বস্ত সঙ্গী। পার্টটাইমে রবিবার করে ওপেন ইউনিভর্সিটির ক্লাস নেয় অন্য সেন্টারে। সেখানেই আলাপ রূপার সঙ্গে রুচিরার। রূপা মূর্মূ উপজাতি ঘরের মেয়ে। বারো ক্লাস পাশ করতেই বিয়ের পিঁড়ি, লাজে রাঙা কনে বৌ।শ্বশুরঘরে উদায়স্ত পরিশ্রম করতে হয়। হাঁসদা পরিবারের বড় ছেলের বৌ হয়ে এসেছে রূপা।পান থেকে চুন খসলে কপালে জোটে নানান কথার খোঁচা। পরের জমিতে হাল টেনে চাষ করে রূপার বাবা। রূপা সংসারের জটিলতাগুলোর জট ঠিকঠাক ছাড়াতে শেখেনি তখনো। বাবার ঘরে থাকতে অর্থাকষ্টে অভ্যস্থ রূপার টুসু বা ভাদোয়ায় হয়তো নতুন পোষাক জুটতো না, কিন্তু বাঁজা মেয়েমানুষকে পালা পার্বনে নতুন শাড়ী পড়তে নেই এই বিধান তার সহজ সরল ভাবনায় ছিলো না। বিয়ের দুবছর হতে চললো তবু কোনো সন্তানের জন্ম দিতে পারেনি মেয়েটা তাই 'বাঁজা' নামক উপাধিটা তার নামের পিছনে নতুন সংযোজিত হয়েছিলো। স্বামী শিবুকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছে রূপা 'বাঁজা' কথার মানে কি? শিবু এর মানে স্ত্রীকে বুঝিয়ে বললেও একটা চাপা কষ্টে গুম মেরে থাকতো। স্ত্রী রূপাকে গ্র্যাজুয়েট করাবে এই পরিকল্পনা তার মাথাতে আসে। তাই রূপাকে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়। রেগুলার কোর্সে পড়াশুনো করা রূপার পক্ষে একটু চাপ হয়ে যাবে তাই মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে রূপার ওপর শ্বশুরবাড়ীর অত্যাচারটা মাত্রা ছাড়া হতে লাগলো। শিবুকে সব কথা খুলে বলতে ভয় করে রূপার। বিয়ের পণ বাবদ তিরিশ হাজার টাকা এখনো যে দিতে পারেনি তার বাবা। রাতের অন্ধকারে সবাই যখন ঘুমে আচ্ছন্ন থাকতো তখন রূপা পরীক্ষার জন্য প্রস্ততি নিতো। রূপার এ হেন জীবনকথা প্রফেসর রুচিরা সেন জানতে পারে যখন রূপা কলেজে ক্লাস করতে আসতো তখন। কারণ রূপা খুব সুন্দর আবৃত্তি করতে পারতো। স্পষ্ট বাংলাভাষী হলেও সাঁওতাল ভাষায় আবৃত্তি করতো রূপা। রুচিরার আরও বেশি মনে আছে রূপাকে কারন রূপা বলেছিলো এই কবিতাগুলো তার বাবার লেখা। অথচ তিনি একজন ভাগচাষী। অনেকদিন পরে রূপাকে ম্যাসেজ পাঠাতে দেখে রুচিরার খুব ভালো লাগে। উত্তরে লেখে "কেমন আছো রূপা? প্রজাতন্ত্রদিবসের শুভেচ্ছা নিও।।" ম্যাম উত্তর দিয়েছেন দেখে রূপা একেবারে আপ্লুত। সঙ্গে সঙ্গে একটা ছোট্ট বাচ্ছার ছবি পাঠিয়ে দেয় রুচিরাকে। ভাগ্যক্রমে ব্যাস্ত রুচিরা তখন অনলাইন ছিলো।ছবি দেখে রিপ্লাই করে "এটা কার ছবি রূপা? তোমার মেয়ে?বাঃ দারুন খবর তো!" রূপা আবার লেখে, "ম্যাম আপনাকে এখন ফোন করা যাবে?" পাহাড় সমান কথা জমে আছে আপনাকে বলার জন্য।" ছুটির দিনে রুচিরা একটু গা ভাসানো মেজাজেই ছিলো। আজ তেমন কোনো বাইরের কাজ নেই। দিল্লির রেডরোডে কুচকাওয়াজ শুরু হলে একটু চোখ রাখবে টেলিভিশনে। এই প্রোগ্রামগুলো দেখতে রুচিরার বরাবরই খুব ভালোলাগে। সে হোক একটু গল্প করা যাক পুরোনো ছাত্রী রূপার সঙ্গে।"হ্যাঁ ফোন করতে পারো।" রূপা হাতে ফোন নিয়ে অপেক্ষায় ছিলো। ম্যাম রাজি হতে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রূপা ফোন করলো রুচিরাকে।প্রাথমিক সৌজন্য পর্ব সেরে নিয়ে রূপা আবেগতারিত হয়ে গল গল করে রুচিরাকে কথার ফল্গুধারায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়। রুচিরার মনে হচ্ছিলো মেয়েটা কতকিছু বলতে চায়।চেপে রেখেছে কত মান, অভিমান, ক্ষোভ। রূপা প্রশ্ন করে রুচিরাকে "ম্যাম ভারতীয় সংবিধানে ডঃ আম্বেদকর তো মেয়েদের উন্নতির জন্য অনেক বিষয়ের ওপরে আলোকপাত করেছেন তাই না। কিন্তু এ সমাজ কবে মেয়েদের মূল্য বুঝবে? সম্মান দেবে? চুয়াত্তরতম তম প্রজাতন্ত্রদিবসে দাঁড়িয়েও আমরা ভারতীয় মেয়েরা বুক ভরে একটা মুক্ত নিশ্বাস নিতে পারিনা কেন?" রুচিরা রূপাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,"আগে বলো তুমি কবে মা হলে। এই ইস্যুটা নিয়ে তো তোমার সংসারে খুব অশান্তি ছিলো। তারপর আসছি অন্য কথায়।" রূপার গলাটা একটু ভেজা ভেজা লাগে রুচিরার।"সে অনেক বড় গল্প ম্যাম। আমার স্বামীকে একটা ছোট অপারেশন করাতে হয়।একটা দারুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে আমরা ওই সময়টা পেরিয়েছি ম্যাম। ডাক্তার বলেছিলেন একটা চেষ্টা করে দেখা যাক। মারাংবুরু- র কৃপায় আমার মেয়ে হয়েছে এই তিনমাস হলো। ওর নাম রেখেছি জয়ী। ম্যাম যখন আমি মা হতে পারছিলাম না তখন আমার শ্বশুরবাড়ী আমাকে অকথ্য ভাষায় খোঁটা দিয়েছে। আবার মেয়ে হয়েছে বলে আমাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে আনতে চায়নি। বাপের বাড়ীতে চলে যেতে বলেছিলো। আমার হাসব্যান্ড একরকম অশান্তি করে আমাকে আর মেয়েকে ঘরে এনে তোলে। এখন পুকুর ধারে একটা ছেঁচাবেড়ার ঘরে আমরা তিনজনে থাকি। দাদু ঠাকুমা এখনো নাতনির মুখ দেখেনি। ওরা মেয়ে পছন্দ করে না। সব থেকে হাস্যকর ব্যাপার হলো, আমার শ্বশুরমশাই পঞ্চায়েত প্রধান হওয়াতে আজকের দিনে অর্থাৎ প্রজাতন্ত্রদিবসের দিনে এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় পতাকা উত্তোলন করতে যান। আর সেখানে গিয়ে লম্বা চওড়া ভাষণ দিয়ে থাকেন। মেয়েরা মায়ের জাত তাদেরকে মূল্য দেওয়া দরকার। আমাদের মা ও তো একজন মেয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। ম্যাম আমাদের এখানে বাতাস কিছুটা হলেও দূষণমুক্ত তাই সেই শব্দগুলো ভীষণভাবে অনুরোণিত হয়। মাইক নামক বস্তুটির শব্দ ছড়ানোর আসুরিক ক্ষমতার সৌজন্যে ঘরে বসে আমি সেই ভাষণ শুনতে পাচ্ছি। আর মনে মনে ভাবছি উনি কতটা নির্লজ্জ মানুষ, নিজের নাতনির মুখ দেখেন না সে কন্যা সন্তান বলে।সেখানে সর্বসমক্ষে মেয়েদের সম্মান নিয়ে, অধিকার নিয়ে, উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। মনে হয় মুখোশের আড়াল থেকে মানুষটার প্রকৃত রূপটাকে টেনে সবার সামনে নিয়ে আসি।" এতক্ষণ চুপ করে ধৈর্য্য ধরে রুচিরা রূপার সবরকম অভিযোগ শুনে তাকে থামতে বলে,"রূপা এটা সত্যি সংবিধানই বলো আর দেশের আইনই বলো সেগুলোর যথার্থ প্রয়োগ হয়না ভারতীয় মেয়েদের ওপরে। কিন্তু দেখো তা বলে মেয়েরা তো থেমে নেই। মেয়েরা তো আকাশ ছুঁচছে এটা তো মানো? তোমাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে যেভাবেই হোক। আর তোমার মেয়ে হোক তোমার হাতিয়ার। কিছু করে দেখাও রূপা।" অপরপ্রান্তে রূপা একটু থমকে যায় গলার কাছে দলা পাকানো নিশ্বাসটাকে গিলে নেয়। গলায় জিতে নেওয়ার আত্মবিশ্বাসী স্বর রূপার, রুচিরার কান ঠিকই শুনছে।"ম্যাম আমি বিডিও অফিসে একটা কাজ পেয়েছি। গ্রাম পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক সব কাজই বিডিও অফিসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আশা করি আমি একদিন আমার শ্বশুরমশায়ের এই প্রসারিত হাতকে ছুঁতে পারবো। বিধাতার কি সূক্ষ্ম বিচার তাই না।" রুচিরা কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে থাকে। শুধু মনে মনে ভাবে রূপারা জাগুক। তবেই তো সার্থকতা প্রজাতন্ত্রদিবসের দিন সম্মানিত ভারতীয় সংবিধানের প্রতিটা অমূল্য কথার। আজ আর রুচিরার প্রজাতন্ত্রদিবসের কুজকাওয়াজ দেখা হলো না। দরকার নেই, তার থেকে অনেক বড় মাপের অগ্নি স্ফুলিঙ্গের জ্বলন্ত কনার উত্তাপ সে অনুভব করলো।অস্ফুট স্বরে রূপাকে বললো,"আমার জীবনে ফেলে আসা বাহান্নটা প্রজাতন্ত্রদিবস এতো স্মরনীয় হয়নি এ বছরের প্রজাতন্ত্রদিবস যতটা আন্দোলিত করলো আমাকে। রূপা তুমি পারবে।" রুচিরা ঠিক শুনছে তো? রূপা অঝোরধারায় কাঁদছে।
*********************
প্রজাতন্ত্রের অর্থ
তপন কুমার চট্টোপাধ্যায়
আক্ষরিক অর্থে প্রজাতন্ত্র হল
জনগণ সংক্রান্ত বিষয়ক,
নিজস্ব মতাদর্শ ও অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকৃতিক,
নিজস্ব সাংবিধানিক গঠনতন্ত্রের প্রকাশ বিষয়ক,
চুড়ান্ত প্রকাশের দিনই হল
প্রজাতন্ত্র দিনাংক,
প্রজাতন্ত্রের অর্থ হল যেখানে জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতাভোগী,
জনগণই নির্বাচিত করে তাদের প্রতিনিধি,
কি রাজ্য,কি কেন্দ্র, প্রতিনিধি
নির্বাচিত করে জনতা,
নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রয়োগ করে জনবিরোধী ক্ষমতা,
বাৎসরিক করভারে মাটি ধরে জনগণ,
দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি দারিদ্র্য বৃদ্ধির হয় কারণ,
আইনের শাসনব্যবস্থার হয় সর্বদা অবমুল্যায়ন,
রক্ষকদের কাছে নিরাপদ নয়
অত্যাচারিত,
আপামর শিক্ষাক্ষেত্রে আজ বিরাজমান উৎকোচ রাজত্ব,
রাজপথে প্রকাশ্যে দিনরাত্রি বিপন্ন নারী,
পথচলা নিরাপত্তাহীন, আহতকে ঘর্ষণে ছিন্নভিন্ন করে গাড়ি,
খাদ্যের বন্টনে সরাসরি দেখি
রাজনৈতিক প্রভাব,
বর্তমানে এটাই নির্বাচিতদের সামাজিক স্বভাব,
আর্থসামাজিক লুন্ঠনে কালিমালিপ্ত প্রজাতন্ত্রের সকল স্তম্ভ,
প্রকাশ্যে নির্বাচক দেখে নির্বাচিতে দম্ভ,
হায় প্রজাতন্ত্র একি লজ্জাজনক অমান্যতা তোমার প্রতি,
লোভী মেকি ক্ষমতা লোলুপের জন্য তোমার এই দুর্গতি,
আমি আশাবাদী হে বিমর্ষ প্রজাতন্ত্র,
চেতনার ঊন্মেষে উদগাত হবে নবমন্ত্র,
সুচেতনার পুর্বাকাশে ওই দেখ
নব অরুনালোক,
আনবে নতুন সমাজ প্রজাতন্ত্রের প্রকৃত অর্থালোক।
*********************
ব্যবস্থা যখন প্রজাতান্ত্রিক
সুজিত চক্রবর্তী
প্রজাতন্ত্র হচ্ছে এমন এক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যেখানে জনগণ হবেন সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর এবং দেশ পরিচালনার সাথে যুক্ত সমস্ত ক্ষমতার উৎস ! এ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কোনও একজন রাজা অথবা রাণী অবস্থান করেন না এবং সেই অর্থে বলা যায় এই ব্যবস্থা রাজতন্ত্র থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন । এখানে প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার থাকে দেশের কাণ্ডারি কে বা কারা হবেন সেটা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেওয়ার। শহরে একজন পৌর প্রতিনিধি ও প্রত্যেক গ্রামের প্রতিটি পঞ্চায়েত সদস্যকে তাঁরাই নির্বাচন করে থাকেন। এখান থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী/মুখ্যমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধান ( President) পর্যন্ত কে বা কারা হবেন তাও প্রত্যক্ষ কিম্বা পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করে দেন দেশের জনগণ। এ যেন সেই ' আমরা সবাই রাজা ' শাসন ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যেমন পরিবারতন্ত্রর স্থান নেই (যেখানে রাজার ছেলেই কেবল রাজা হওয়ার যোগ্য) , তেমনই জায়গা নেই একনায়কতন্ত্রেরও।
ইংরেজি ভাষায় " প্রজাতন্ত্র " শব্দের প্রতিশব্দ হলো " Republic " . এখানে বলা প্রয়োজন যে Republic শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দবন্ধ " res publica " থেকে,বাংলায় যার আক্ষরিক অর্থ হলো : জনগণ-সংক্রান্ত বিষয় ! সাধারণত রাজশক্তি বিহীন কোনও রাষ্ট্রকেই " প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র " বলা হয়।
একথা সবার জানা যে উনিশশো সাতচল্লিশের পনেরোই আগস্ট স্বাধীনতা লাভের পর উনিশশো পঞ্চাশ সালের ছাব্বিশে জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকর করা হয় ও ভারতবর্ষ একটি গণতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং সেই কারণে প্রতিবছর ছাব্বিশে জানুয়ারিতে আমরা প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করে থাকি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে নিছকই মালা, পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতে এই জাতীয় দিবসটি উদযাপন করবলেই ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না, প্রয়োজন আছে প্রত্যেক নাগরিকের চেতনায় প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব বুঝে নিয়ে সেই আদর্শের প্রকৃত অনুসরণ।
ঠিক কেমন হওয়া উচিত এই চেতনা? সর্বাগ্রে বুঝতে হবে যে এই ব্যবস্থায় প্রজার বিপরীতে রাজা নেই। আরও বুঝতে হবে ভারতবর্ষের নাগরিক হিসেবে কোনও ব্যাক্তি বিশেষের জন্যে তার জাতি, ধর্ম বা বর্ণ কী --- এইসব পরিচয় তুচ্ছ হয়ে যায় এবং সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় একটিমাত্র গর্বের পরিচয় যা বলে আমি একজন ভারতীয়। এই আবেগের নামই স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সাধারণতন্ত্র।
অনেক লড়াই , অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতার যেন আমরা প্রকৃত মূল্য দিতে পারি । আছে আরও অনেক কিছু। প্রতিটা নাগরিকের সমান অধিকার ও দায়িত্বের অঙ্গীকার নিয়ে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। সংবিধান আমাদের কী কী মৌলিক অধিকার দিয়েছে সেটা জানাও জরুরী।
এসবের বাইরে অন্য এক চেতনার কথাও এসে পড়ে এই প্রসঙ্গে । সেটা কী? সেটা এই যে সবার সমান অধিকারের যে মহান অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শুরু হয়েছিল দেশের প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা তা পরবর্তীতে কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে এই সময়ের মধ্যে তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে। ধর্মনিরপক্ষেতা ঠিকমতো পালন হয় কি না তার বিচার করা বা এ সম্বন্ধে সচেতনতা ও সদিচ্ছা আমাদের সমাজে কতটা হয়েছে তার সঠিক মূল্যায়ন করার জন্যে
প্রয়োজনীয় বিচারবুদ্ধির ক্ষমতা। বাস্তবে আমরা দেখি যে উৎসবের আনন্দ আর বিশেষ ছাড়ের নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রকৃত মূল্য ! আর রাজনীতিতে আমরা এমন অনেক কিছু দেখেছি যাদের অবস্থান এইসব ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। একনায়কতন্ত্র আছে , ধর্ম এবং জাতির মেরুকরণের মাধ্যমে ব্যালট বাক্সে আশীর্বাদ লাভ আছে বা এমনই অনেক কিছু।
তখন মনে হয় যে আমাদের দেশে রাজনীতি আজও রাজার নীতি হয়েই রয়ে গেছে, তা কখনোই নীতির রাজা হয়ে উঠতে পারে নি। আর সেই জন্যেই স্বাধীনতা অর্জনের পঁচাত্তর বছর পরেও অন্ন , বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা , নারী উন্নয়নের মতো বুনিয়াদি সামাজিক প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে পৌঁছানোর থেকে আমরা আজও অনেক দূরেই রয়ে গেছি ।
0 মন্তব্যসমূহ