পোস্ট বার দেখা হয়েছে
মমি
শাওন আসগর
আমি মরে গেলে মমি করে রেখো
নীলনদের দেশ থেকে এনে নিও মমির ফর্মুলা কিছু
তা হলে হুবহু সংরক্ষণ হতে পারে দেহের জৌলুসপূর্ণ আদল
যদিও তোমার ঘরে রয়েছে চমকপ্রদ দেয়ালচিত্র খোঁদাই করা ভাস্কর্য
মার্বেল পাথরের মূর্তি অর্কিড কিছু
ড্রইং রুমের কর্ণার রেকে শুয়ে আছে সিরামিক ফুলদানি আর
অনিন্দসুন্দর মোজাইকের ক্যালিওগ্রাফির মনোরম বিভা
যাতে ঝলসে ওঠে অতিথির চোখ
তেমনি তাক লাগিয়ে দিও অসাধারণ একটি আশ্চর্য মমি গড়ে।
কিছু ম্যাপল কাঠ এনে নিও জার্মান মিশর থেকে
মনে করো না কোনো পঁচাবাসি উৎকট গন্ধে ভরবে চারপাশ
সুগন্ধি সিডারের খ-খ- প্লেটের ওপর বসিয়ে রেখো শান্ত নিথর দেহ
সাথে দিও কিছু সেগুন মেহগনি আতর গোলাপের জল
যদি পারো রেপিং পেপারে আচ্ছাদিত করো মুখমণ্ডল পায়ের পাতা
পুরু প্লাস্টারে ক্যামিকেল দিয়ে রেখো শরীরে আমার
প্যাপিরাসের ভাঁজে রেখো আমাকে, আপাদমস্তক জীবন্ত দেহের মতো
আমি কফিনের ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে দেখবো তোমার বিমর্ষ মুখ
কেউ জানবে না, কেউ বুঝবে না আমাদের গোপন প্রণয়।
যদি বিরহে কেঁদে ওঠি শেষ রাতে তবে
এই মুখশ্রি রেজিন দিয়ে ভরে দিও
যাতে তুমি সুরভি গন্ধে দম নিতে পারো কয়েক যুগ
তখন দেখতে পাবে আমি কীভাবে বেঁচে আছি তোমার চোখে
আমার নাম পদবীর একটি স্বর্ণালি ফলক দিও পাশে
আমি জীবন্ত অক্ষত থেকেই কর্পূরের গন্ধ বিলিয়ে
তোমার অপেক্ষায় থাকবো স্বর্গের দরোজায়।
**********************
রাজহংসী মরণ
অরুণ কুমার মহাপাত্র
তেলহীন খসখসে চামড়ার ওপর ঘসটে ঘসটে চলে সরীসৃপ দুপুর...
চলছে অরুণ্যপথ ধরে শ্বাপদ শিকারী...
পথে পথে চৌরাস্তার মোড়ে
পুড়ছে সুখ , বুকের অসুখ... ।
সুরা নারী সকলই স্থাবর
নেই কোন বরাভয়.... ।
মধ্যযামে জাপটে ধরে রাজহংসী মরণ ।
সব ক্ষুধা শরীর সঞ্জাত বলে
রতির দহনে বাড়ে অনন্ত গতি....
নিভৃতে ভাসে আদিম নগ্ন ছায়া
সারি সারি ভালোলাগা শরীর
দখল নেয়... ।
নাভির চারপাশে অবশ বসন্ত
তির তির কাঁপে শিকড় গভীরে যত ।
বেদনার আর্তি উৎরে যায় বিন্যাসের
দ্রাঘিমায় তাই ।
মৃত্যু প্রহর গোনে অনিয়মের যাঁতাকলে
নিয়ে তারাদের স্বরলিপি.... ।
*****************
ঋষি
তোমাদের সত্যি কোন ঈশ্বর নেই
নেই কোন উর্বর ভাবনা, নেই রাজনীতি , নেই যৌনতা
নেই প্রতিবাদ, নেই আগুন, নেই আয়না
তোমরা সকলেই চুপ করে বসে ভদ্রলোক সেজে ,
আসলে সময় তোমাদের ভয় দেখিয়ে চুপ করে থাকতে বলে
তুমি কুষ্ঠিয়ায় থাকো, তুমি ত্রিপুরায় থাকো কিংবা আসাম অথবা পশ্চিমবঙ্গে
সত্যি হলো তোমরা সকলে মুখস্থ বলো।
.
হ্যা হ্যা তোমাদের বলছি
তোমরা সকলেই ব্যক্তিগত বড়,
তোমাদের নিজেদের কোন বিপ্লব নেই, এমনকি সিগারেট ধরাতেও তোমরা আগুন খোঁজ,
তোমরা ২০২২ এ দাঁড়িয়ে ছাত্রদের সাথে বসে মুখস্থ করো
গোয়াইজুলাইকে মানুষ সাজো
তোমরা সব বুঝলেও কিছুই বোঝো না।
.
তোমরা মুখস্থ করো
বিদ্রোহ আর করোনা ঝাড়ো
বাজার ফেরত ব্যাগ ভর্তি প্রতিবাদের বদলে নিজেদের অক্ষমতা আনো ,
তেলে ভাজা বাজারের কড়াইয়ে ভেসে ওঠা স্তন দেখে বোঝার চেষ্টা করো
কোনটা সত্যজিৎ আর কোনটা ঋতুপর্ণ।
তোমারা জানতে চাও না চাষের জমি মানে পোকার বাড়বাড়ন্ত
তোমরা মানতে চাও না ঈশ্বর শুধু এক শেষ না হওয়া শান্তি
তোমরা মানতে চাও মানুষের ঘর মানে শুধুই রোমান্স
তোমরা মানতে চাও ভালো বান্ধবী মানে শুধু প্রেম।
আমার শুধু এতটুকু বলার
এইভাবে আর নিজের কান কেটো না
এইভাবে আর শেষের লাইনে দাঁড়িয়ে জেতার স্বপ্ন দেখো না
বরং বিশ্বাস করো এটা তোমার দেশ
বরং বিশ্বাস রাখো নিজের উপর তুমি মানুষ, তুমিও দিন বদলাতে পারো
আর ঈশ্বর তোমরা মন্দির, মসজিদ, গির্জায় যেখানেই সাজাও না কেন
বিশ্বাস করো তিনিও একজন তোমাদের মাঝে ।
******************
নদী ও নারী
প্রহ্লাদ ভৌমিক
নদীটা ক্রমশঃ সদ্যোস্নাতা যুবতী হয়ে উঠছে,
ভালোবাসার কথা বলার আর ঢেউয়ে ঢেউয়ে
ভেসে যাবার ওই একটাইতো নদী!
অপলক দু'চোখে আর তাকানো যায় না
নদী থেকে যুবতীর সৌন্দর্য ঠিকরে বেরোলে ;
দু'চোখ যে দারুণ রহস্যময় !
তবুও,
একদম সাদা চোখে তাকাতেই এখন তৎপর আমরা ,
না হলে,বুঝব কি করে ফিরে তাকানোর ইশারা !
জলেই তো নদীর জীবন যাপন,ঘরদোর
ও নিপুণ সংসার
আর বহমান স্রোতে তার দীর্ঘ পর্যটন ;
জলের আঁচলেই ঢাকে নদীর লজ্জার শরীর
ও যৌবন সংযমের কৌশল...।
দেখতে দেখতে এভাবেই
কলহাস্যময় বহমান জীবন-চর্যার ভিতর
নদীটা যেন ক্রমশঃ উদ্ভিন্নযৌবনা নারী হয়ে উঠে।
******************
ইথার উদ্যানে অভুক্ত ডেলিভারি বয়
অসীম দাস
নক্ষত্রের ইথার উদ্যান চুঁয়ে পঙক্তির প্রথম শব্দ
আসার আগেই কবিতার কলিং বেল টিপেছে
রাজকীয় খাদ্যবহনকারী এক অভুক্ত ডেলিভারি বয় ।
সূর্যের বন্দর থেকে এক পাহাড় কয়লা জাহাজ
উড়ে আসছে মঙ্গল গ্রহের মাটিতে ।
সামুদ্রিক শহরগুলোও বায়না ধরেছে
মাধ্যাকর্ষণের মাস্তুলে চরে বেড়াবে বলে' ।
কবিতা কি শব্দের গাণিতিক মারপ্যাঁচে
ক্রমশ অবোধ্য আকাশচারী হবে !
নাকি সীমাহীন অসাম্যের শূলে
শূন্য পাকস্থলী গেঁথে আরও শক্ দেবে
গা সওয়া সভ্যতার কর্ণিয়া মূলে !
কবিতা ভাবছে , কবিও ।
0 মন্তব্যসমূহ