দর্পণ || সাপ্তাহিক সেরা নিবন্ধ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে



১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল এশিয়ার

 প্রথম প্যাসেঞ্জার ট্রেন

 সাহিব, সুলতান এবং সিন্ধু 


র্বাচীনের মূখবন্ধ 

TG Roy 




 From a Railway Carriage 


Faster than fairies, faster than witches,

Bridges and houses, hedges and ditches;


And charging like troops in a battle,

All through the meadows the horses and cattle


All of the sights of the hill and the plain

Fly as thick as driving rain;


And ever again, in the wink of an eye,

Painted stations whistle by.


|| Robert Louis Stevenson ||


গ্রামীণ অর্থনীতির সুষম উন্নয়ন, বণ্টন ও পুনর্গঠনে রেল পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব অনেক। রেলপথ ও রেল পরিবহন পরিবেশবান্ধব, জ্বালানিসাশ্রয়ী, দীর্ঘস্থায়ী, নিরাপদ বলে রেল জনপ্রিয়ও বটে।


সীমিত সম্পদ, অধিক জনসংখ্যা, নিম্ন আয় ইত্যাদি কারণে রেল পরিবহন এ দেশে গুরুত্বপূর্ণ। রেল ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন আধুনিক করতে পারলে দুর্ঘটনা, ক্ষয়ক্ষতি, পণ্য অব্যবস্থাপনা কমানো যাবে। এখন দেখা যাক রেলওয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখতে সক্ষম—


কাঁচামাল সংগ্রহ ও উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করে রেলওয়ে শিল্প বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।


পণ্য পরিবহনেও রেলওয়ের ব্যবহার সাশ্রয়ী, নিরাপদ। সব শহর, শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র রেলওয়েতে যুক্ত। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক সরবরাহেও রেলপথ প্রয়োজনীয়।


কৃষিবীজ, সার, কীটনাশক, সেচযন্ত্র, মাড়াইকল ইত্যাদি পরিবহনসহ কৃষিপণ্য সরবরাহ ও বণ্টনে রেলওয়ে অপরিহার্য হয়ে ওঠা সম্ভব।


কর্মসংস্থানেও এর অনুকূল ভূমিকা হতে পারে।


দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতায় রেল হয়ে উঠতে পারে আদর্শ। দ্রুত উদ্বৃত্ত অঞ্চল থেকে ঘাটতি অঞ্চলে পণ্য সরবরাহে রেলওয়ের ব্যবহার স্থিতিশীল তার সহায়ক।


জরুরি অবস্থায় যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, রাজনৈতিক দুর্যোগে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় রেলপথ সহায়ক। দ্রুত রিলিফ, খাদ্যদ্রব্য, বস্ত্র, প্রয়োজনে সৈন্য প্রেরণে রেলপথ ব্যবহূত হতে পারে।


গ্রাম-শহরে- নগরের যোগাযোগে রেলপথ নিরাপদ, সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব।


পণ্য পরিবহন সাশ্রয়ীও বটে। কাঁচামাল, উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত, পণ্যের সরবরাহে স্থিতিশীলতা, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীলতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে রেলপথ আদর্শ।


ভারতীয় রেলওয়ে বিশ্বের বৃহত্তম, প্রাচীনতম এবং ব্যস্ততম রেল নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে একটি এবং এর একটি সু-পরিচালিত নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ 


১৬শ শতকের মাঝামাঝি থেকে জার্মানিতে ঘোড়ায় চালিত রেলগাড়ির প্রচলন ছিল। যুক্তরাজ্যে বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের উদ্ভাবনের পরে ১৯শ শতকের শুরুতে আধুনিক রেল পরিবহনের ইতিহাস শুরু হয়। যুক্তরাজ্যের রেলব্যবস্থা তাই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন রেলব্যবস্থা। 


১৮২৫ সালে স্টকটন অ্যান্ড ডার্লিংটন রেলপথের উপর দিয়ে প্রথমবারের মত একটি সরকারী রেলপথে যাত্রীদের পরিবহন করা হয়; এর বাষ্পচালিত ইঞ্জিনগাড়িটির নাম ছিল লোকোমোশন নম্বর ১ এবং এর নির্মাতা ছিল জর্জ স্টিভেনসন ও তার পুত্র রবার্ট স্টিভেনসনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। 


বাষ্পচালিত ইঞ্জিনে টানা রেলগাড়ি ও রেলপথগুলি ছিল শিল্প বিপ্লবের এক অন্যতম নিয়ামক উপাদান। 


ইতিহাস কিন্তু সবসময়ই অমলিন।


এমন কিছু ইতিহাস থেকে যায় যা চিরদিন মানুষকে নাড়া দেয়। এখন ট্রেনের ভিড়ে তার সংখ্যা গোনা দায়। প্রচুর রুট, প্রচুর লাইন, প্রচুর ট্রেন। কিন্তু ১৭ দশক আগে এই ট্রেন ছিল এক আশ্চর্যের নাম। যা দেখতে মানুষ ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল হাজির হয়েছিলেন।


নারী পুরুষ নির্বিশেষে লাখো মানুষ অবাক চোখে চেয়ে দেখেছিলেন, ৪০০ জন কৌতূহলী, হতবাক মানুষ দুরুদুরু বুকে চড়ে বসেছিলেন ট্রেনের কামরায়।


আর সেই গাড়িকে লাইনের ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে ফোঁস ফোঁস করে বিকেলের আলো গায়ে মেখে লক্ষাধিক মানুষের সামনেই উর্ধশ্বাষে ছুটতে শুরু করে সাহিব, সুলতান এবং সিন্ধ ইঞ্জিন চালিত প্রথম ট্রেন।


এই ত্রিশক্তি একবিন্দুতে শক্তি সঞ্চয় করে তার বলে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে এশিয়ার প্রথম প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে। সাহিব, সুলতান এবং সিন্ধ ছিল ৩টি ইঞ্জিনের নাম, যা সেই ঐতিহাসিক ট্রেনকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল গন্তব্যে।


সেই ঐতিহাসিক মুহুর্তকে চর্মচক্ষে দেখার লোভ অনেকেই এড়াতে পারেননি। সেদিন বোরিবন্দর স্টেশন যা অধুনা ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস নামে খ্যাত সেখান থেকে ট্রেনটি ৪০০ জন বিশেষ আমন্ত্রিত যাত্রীকে নিয়ে পৌঁছেছিল থানে।


এই ৩৪ কিলোমিটারের রেল যাত্রা যে ইতিহাসের সূচনা সেদিন করেছিল এশিয়া মহাদেশের  ভারতবর্ষে তা ১৭ দশক পার করে এখন ভারতীয় রেলের অতি সুবিশাল সংসারের জন্ম দিয়েছে। 


সেদিনের সেই বম্বে থানে যাত্রা এশিয়া মহাদেশেরও প্রথম প্যাসেঞ্জার ট্রেনের যাত্রা ছিল।


তাই শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ বলে নয়, এ ইতিহাস গোটা এশিয়া মহাদেশের গর্বের। 


২১বার তোপধ্বনির সঙ্গে মহা আনন্দ, উচ্ছাস চিৎকার , শুভকামনা আর হাস্যোজ্জ্বল মানুষের শত সহস্র করতালির মধ্যে বিকেল ৩টে ৩৫ মি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ