পোস্ট বার দেখা হয়েছে
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য
কাকলী দাশগুপ্ত
বিখ্যাত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে প্রণাম জানাই
সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৫ই আগস্ট, ১৯২৬ - ১৩ই মে, ১৯৪৭) বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি।
১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট তিনি তাঁর পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলার, বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার, উনশিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম। বেলেঘাটা দেশবন্ধ স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এসময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুনাচল বসু। সুকান্ত সমগ্রতে লেখা সুকান্তের চিঠিগুলির বেশিরভাগই অরুনাচল বসুকে লেখা। অরুনাচল বসুর মাতা কবি সরলা বসু সুকান্তকে পুত্রস্নেহে দেখতেন। সুকান্তের ছেলেবেলায় মাতৃহারা হলেও সরলা বসু তাকে সেই অভাব কিছুটা পুরন করে দিতেন। কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়ীটিতে এখনো বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের নিজের ভাতুষ্পুত্র।
সুকান্ত ভট্টাচার্যকে উৎসর্গিত ফলক, কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। সেই বছর আকাল নামক একটি সংকলনগ্রন্থ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। কৈশোর থেকেই সুকান্ত যুক্ত হয়েছিলেন সাম্যবাদী রাজনীতির সঙ্গে | পরাধীন দেশের দুঃখ দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণ মুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন, শোষিত মানুষের কর্ম জীবন এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম তাঁর কবিতার মূল প্রেরণা | ১৯৪১ সালে সুকান্ত কলকাতা রেডিওর গল্পদাদুর আসরের যোগদান করেন। সেখানে প্রথমে তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর সেই আসরেই নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। গল্পদাদুর আসরের জন্য সেই বয়সেই তাঁর লেখা গান মনোনীত হয়েছিল আর তাঁর সেই গান সুর দিয়ে গেয়েছিলেন সেকালের অন্যতম সেরা গায়ক পঙ্কজ মল্লিক। সুকান্তকে আমরা কবি হিসেবেই জানি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যেমন কেবল মাত্র কবি ছিলেন না, সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে তাঁর ছিলো অবাধ বিচরণ। তেমনি সুকান্তও ঐ বয়সেই লিখেছিলেন কবিতা ছাড়াও, গান, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ। তাঁর ‘ছন্দ ও আবৃত্তি’ প্রবন্ধটি পাঠেই বেশ বোঝা যায় ঐ বয়সেই তিনি বাংলা ছন্দের প্রায়োগিক দিকটিই শুধু আয়ত্বে আনেন নি, সে নিয়ে ভালো তাত্বিক দক্ষতাও অর্জন করেছিলেন।
আট-নয় বছর বয়স থেকেই সুকান্ত লিখতে শুরু করেন। স্কুলের হাতে লেখা পত্রিকা ‘সঞ্চয়ে’ একটি ছোট্ট হাসির গল্প লিখে আত্মপ্রকাশ করেন। তার দিনকতক পরে বিজন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শিখা’ কাগজে প্রথম ছাপার মুখ দেখে তাঁর লেখা বিবেকান্দের জীবনী। মাত্র এগার বছর বয়সে ‘রাখাল ছেলে’ নামে একটি গীতি নাট্য রচনা করেন। এটি পরে তাঁর ‘হরতাল’ বইতে সংকলিত হয়। বলে রাখা ভালো, পাঠশালাতে পড়বার কালেই ‘ধ্রুব’ নাটিকার নাম ভূমিকাতে অভিনয় করেছিলেন সুকান্ত। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাল্য বন্ধু লেখক অরুণাচল বসুর সঙ্গে মিলে আরেকটি হাতে লেখা কাগজ ‘সপ্তমিকা’ সম্পাদনা করেন। অরুণাচল তাঁর আমৃত্যু বন্ধু ছিলেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন। সুকান্তকে বলা হয় গণমানুষের কবি। অসহায়-নিপীড়িত সর্বহারা মানুষের সুখ, দুঃখ তার কবিতার প্রধান বিষয়। অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের স্বার্থে ধনী মহাজন অত্যাচারী প্রভুদের বিরুদ্ধে নজরুলের মতো সুকান্তও ছিলেন সক্রিয়। যাবতীয় শোষণ-বঞ্চনার বিপক্ষে সুকান্তের ছিল দৃঢ় অবস্থান। তিনি তার কবিতার নিপুণ কর্মে দূর করতে চেয়েছেন শ্রেণী বৈষম্য। মানবতার জয়ের জন্য তিনি লড়াকু ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অসুস্থতা অর্থাভাব তাকে কখনো দমিয়ে দেয়নি। মানুষের কল্যাণের জন্য সুকান্ত নিরন্তর নিবেদিত থেকেছেন। তিনি মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন। তার অগ্নিদীপ্ত সৃষ্টি প্রণোদনা দিয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে প্রয়াসী ছিলেন। মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন। সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতার (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন।তার কবিতায় অনাচার ও বৈষ্যমের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ পাঠকদের সংকচিত করে তোলে। গণমানুষের প্রতি গভীর মমতায় প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়। তাঁর রচনাবলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তাঁর রচনাবলি প্রকাশিত হয়। সুকান্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পিসঙ্ঘের পক্ষে আকাল (১৯৪৪) নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন।সুকান্তের কবিতা বিষয়বৈচিত্র্যে ও লৈখিক দক্ষতায় অনন্য। সাধারণ বস্তুকেও সুকান্ত কবিতার বিষয় করেছেন। বাড়ির রেলিং ভাঙা সিঁড়ি উঠে এসেছে তার কবিতায়। সুকান্তের কবিতা সব ধরনের বাধা-বিপত্তিকে জয় করতে শেখায়। যাপিত জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণাকে মোকাবেলা করার সাহস সুকান্তের কবিতা থেকে পাওয়া যায়। তারুণ্যের শক্তি দিয়ে উন্নত শিরে মানুষের মর্যাদার জন্য মানুষকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান সুকান্তের কবিতায় লক্ষণীয়। সুকান্তের কবিতা সাহসী করে, উদ্দীপ্ত করে। তার বক্তব্যপ্রধান সাম্যবাদী রচনা মানুষকে জীবনের সন্ধান বলে দেয়। স্বল্প সময়ের জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, জীবনানন্দ দাশসহ সে সময়ের বড় বড় কবির ভিড়ে তিনি হারিয়ে যাননি। নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন নিজ প্রতিভা, মেধা ও মননে। সুকান্ত তার বয়সিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছেন তার পরিণত ভাবনায়। ভাবনাগত দিকে সুকান্ত তার বয়স থেকে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন।
একাধারে বিপ্লবী ও স্বাধীনতার আপোসহীন সংগ্রামী কবি সুকান্ত ছিলেন কমুনিষ্ট পার্টির সারাক্ষণের কর্মী। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে নিজের শরীরের উপর যে অত্যাচারটুকু তিনি করলেন তাতে তাঁর শরীরে প্রথম ম্যালেরিয়া ও পরে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৩ই মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলিকাতার ১১৯ লাউডট ট্রিষ্ট্রের রেড এড কিওর হোমে মৃত্যুবরণ করেন। সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন মাত্র মাত্র ২১ বছরের আর লেখালেখি করেন মাত্র ৬/৭ বছর। সামান্য এই সময়ে নিজেকে মানুষের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাঁর রচনা পরিসরের দিকে স্বল্প অথচ তা ব্যাপ্তির দিক থেকে সুদূরপ্রসারী।
**********************
সঙ্গোপনে
কে দেব দাস
যাহারে আমি চাই-এই মন প্রাণ সপিতে;
তাহারে আমি-পাই নাই,পাই নাই দেখিতে।
সে,শুধু আছে গোপনে-আমার কল্পনায়;
হৃদয়ের, ব্যাথা বেদনার আড়ালে-সঙ্গোপনে।
এস হে-প্রিয়, আজি সার্থক কর মোর স্বপ্ন।
দখিনা বায়ু বহিয়া আন আজি-হৃদয় কুসুম কাননে।
এ যৌবন মোর কর সুন্দর-মুক্ত পবনে।
ছড়িয়ে দাও তোমার পরশ-উন্মুক্ত গগনে।
বিরহ-বেদনার যত গ্লানি পুঞ্জিভূত-মম হৃদয়ে;
হাতড়ে বেড়ায় মন-সঙ্গোপনে তোমার অন্তরে।
আজিকে-কর তুমি অপেক্ষার অবসান;
মিলিতে পাই যেন কুঞ্জবনে-দখিনা পবনে।
*************************
মাটির গান
অরবিন্দ সরকার
খোয়াই নদীর পাড়েতে,লাল কাঁকরের ধারেতে,
ধামসা মাদল কে বাজায় রে,
শাল পিয়ালের বনেতে, কৃষ্ণচূড়ার মনেতে,
মহুল মদে গতর নাচে রে।
ধামসা মাদল কে বাজায় রে।
কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া,তারা সঙ্গী জোড়া জোড়া,
নেশায় পথে মেতে থাকে রে,
হুক্কাহুয়া শেয়াল ডাকে, জ্যোৎস্নার চাঁদ মেঘে ঢাকে,
আলো আঁধারি মাতন জাগে রে।
ধামসা মাদল কে বাজায় রে।
বাঁশের বাঁশি, ভেঙে নিশি, ঢুলু ঢুলু মেলে আঁখি,
মুখে হাসিখুশি,বলে শুধু ভালোবাসি, কথা ইশারায়।
মাটিতেই আছে মধু, নিত্য গড়ে বরবধূ,
হারানের নাতজামাইরে,
পুরানে আছে কালা, রাখালের গোশালা,
ননী মাখন চুরি করে রে।
ধামসা মাদল কে বাজায় রে।
*********************
বিরহিণীর অন্তরজ্বলা বিরহ বিচ্ছেদ গান
স্বপন শাহ্ শ্যামলাপুরী
ওরে, দিয়া কষ্ট করলি নষ্ট, আমারও জীবন যৌবন।।
ওরে পাষাণ ওরে বেঈমান, কেনো তুই করলি এমন।।
কথা কইয়া মিষ্টি মিষ্টি, সাজিয়া প্রাণেরও ইষ্টি।।
করলি কতো ফষ্টি নষ্টি।। করলি প্রেমালিঙ্গণ।
দেখাইয়া সাধ স্বপ্ন আশা, শিখাইয়া প্রেম ভালবাসা।।
কেনো আবার করলি নিরাশা।। ভাংলি আমার হৃদয় মন।
জাত কুল ও মান সবি নিলি, আমায় কলঙ্কিনী বানাইলী।।
বিনা দোষে দোষী করলি।। দিলিরে চিতার দহন।
কান্দি আমি দিন রজনী, দহন জ্বালায় জ্বলছি আমি।।
লোকে বলে কুলনাশিনী।। বাকি যে মরণ।
স্বপন শাহ্ শ্যামলাপুরী বলে, ফেলিয়া প্রেমেরও ছলে।।
সর্বস্ব কাড়িয়া নিলে।। তুই বন্ধুরুপী দুশমন।
আমারে তুই পাইয়া বোকা, দিলি আমায় এমন ধোঁকা।।
আমি পাষাণে যে ভাঙ্গি মাথা।। বুকেতে লইয়ারে দহন।
**********************
সেতুবন্ধে সকাল
অমিতাভ দত্ত
ভোরের আলোয় পাখির গানে,
মনতে রাঙানো সুর।
কলকাকলিত মুখর সুরেতে,
মন আনন্দে ভরপুর।
মাধবী কেতকী গুলোঞ্চ গোলাপ,
সুবাস ছড়ায় বাতাসে।
বেহালায় সুর তুলেছে হৃদয়,
মেতেছে মন হরষে।
সূর্য আলোকে দীপন দীপ্তি,
অবগুণ্ঠিতা শর্মিলা কিশোরী।
কাজল কালো চোখের ভাষায়,
অনুরাগে বাজে বাঁশুরী।
তপন দহনে কুঁড়িদল দোলে,
নব আনন্দে সুমধুর।
নৃত্য মূদ্রায় ধ্বনিত নূপুর,
রাঙানো সঙ্গীত সুর।
মীরা কণ্ঠে প্রেম সঙ্গীত,
শ্রবণে শান্ত নদী।
প্রভাত সূর্য ভৈরব সুরে,
সুদীপ্ত সুমন নিরবধি।
সূর্য রশ্মি স্পন্দিত স্পন্দনে,
নন্দিত বন্ধনহীন চঞ্চল।
সুবাস সৌরভে সুরভিত চন্দনে,
নিভৃতে নিবিড় বনাঞ্চল!
***************************
২৪শে স্মরণিকা
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
তোমায় কী দেবো আজ,কী বা দিতে পারি!
তোমার আকাশ ছিলো অসীম
আমাদের আকাশে মেঘ জমেছে
এতটা বয়স হোল মানুষের তবু্ও
মানুষ হওয়া কি হলো ?
আজ থেকে কতবছর আগে
হাস্নাহেনার ডালে বসন্ত এসেছিলো
প্রাণভরে উপভোগ করেছিলে তুমি
অমোঘ দুঃখের মাঝে প্রেমকেই সত্য মেনে,
তাই তোমার সংগীতে ভোরের কোকিল জাগে।
যুযুধান মনুষ্যত্ব পরাভূত তোমার কবিতায়
লৌহকপাট ভাঙে কারার
বিদ্রোহী ভৃগুর বেশে পদচিহ্ন এঁকে দাও তুমি
আমাদের স্পর্ধিত , ভালোবাসাহীন বুকে
বারবার সবাই নুয়ে পড়ে তোমার সুরায়।
তুমি তো কবি হতে আসোনি
তৃষিত চাতকের মতো মানুষের ভালোবাসা চেয়ে
বারবার এসেছো ফিরে মানুষের কাছে।
আজ তাই এই দাবদাহে তোমার জন্মদিনে
তোমায় স্মরণ করি ধরে তোমার সরণি ।
**************************
শহীদ দিবস
নীলাঞ্জনা ভৌমিক
মাতৃভাষা মায়ের ভালবাসা
জুড়ায় মনের সকল আশা,
মায়ের বুকের সুধাপানে
শিশু হাসে সরল মনে।
যে ভাষাতে বুক ভরে
সেই ভাষাকে পর করে !!
গর্জে ওঠে সন্তানেরা -
প্রাণ দিতেও ভয় করে না।
দেশ ভাগের আঘাত নিয়ে
আস্তে ধীরে এগিয়ে চলে ,
ভাষাতো তবু নিজের আছে
ভরে ওঠে মন কথা বলে।
সেই ভাষা যখন কেড়ে নেয়
প্রতিবাদে রক্ত বইয়ে দেয় ,
বঙ্গবাসীর আন্দোলনে --
হাজার পুলিশ গুলি বর্ষায়।
কত যে তরুণ শহীদ হয়!
পুত্রহারা মায়ের হাহাকারে,
পাষাণ হৃদয়ও কেঁপে উঠে
চোখের জলে বুক ভাষায়।
বিশ্ববাসীর চেতনা জাগে
ধীরে হলেও সিদ্ধান্ত নেয় ,
শহীদ তথা আন্তর্জাতিক -
মাতৃদিবস রূপে স্বীকৃতি পায়।
ফাল্গুনে প্রকৃতি রাঙা হলেও
একুশে ফেব্রুয়ারি রঙিন হয়,
ছাত্রদের রক্তে মৃত্তিকা ভাসে
স্মৃতির ক্ষতে প্রলেপ না পায়।
**********************
সাম্যবাদে বিদ্রোহী
মৌমিতা চ্যাটার্জী
আমি সাম্যবাদের কবি।
আমি নিষ্পেষণের শিকল ভেঙেছি,
অত্যাচারীর আঘাত হেনেছি,
মহাযজ্ঞের বিভূতি তে আঁকি,সর্বহারার ছবি।
আমার কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে সাম্যবাদের গান-
আমার চোখে এক হয়ে গেছে ,আছে যত ভগবান।
আমি পাঠ করে যাই গীতার বাণী,
মুয়াজ্জিনের আজান।
কখনও পুড়েছি মহাশ্মশানের চিতার বহ্নিশিখায়,
আমার আত্মা পেয়েছে শান্তি,ভাইয়েদের জানাজায়।
আমি,অহংকারীর মিথ্যা দর্প অনায়াসে ঠেলি পায়,
অসহায়,যত নির্ধনজাতি-ধুলো মেখে আছে গায়।।
সম্বলহীন-নরনারায়ণে,বুকেতে জড়াই স-সম্মানে,
নত করি শির তাদের চরণে, অবাধ,নির্দ্বিধায়।
আমি একাধারে মাতি মহাবিদ্রোহে,স্বার্থকে করি ঘৃণা,
উৎপীড়কের ধ্বজা ভুঁয়ে ফেলি,বাজিয়ে প্রলয় শিঙা।
পূর্ব থেকে পশ্চিম,উত্তর হতে দক্ষিন,
আমি,উন্মাদপ্রায়, দৌড়ে বেড়াই,
সতেজ,ক্লান্তিহীন।
আমি,প্রথম প্রেমের কলি হয়ে ফুঁটি,চপলা কুমারী মনে,
'নির্ঝরিনী'র সুর গেয়ে উঠি-'দোলন চাঁপা'র বনে।
আমি মনোযোগী হই পুনরূদ্ধারে জাতির হৃত গৌরব,
প্রবল ক্রোধে বাজাই ডমরু,আমিই রুদ্র-ভৈরব।
করি ঔদ্ধত্যের নাশ,
হৃদয়ে জপেছি সংহার বাণী,
আমি ধরণীর ত্রাস।।
আমি রোপন করেছি অতীত যুগে যে,মহামিলনের বীজ,
প্রীতির ছায়ায় বিকশিত হোক,হৃদয়ের সরসিজ।
আমি,স্বপ্নে রচেছি প্রভেদ মুক্ত-প্রোজ্জ্বল পৃথিবী,
যা আছে ভেদ,বাদ-অনুবাদ,
ক্ষয় করেছি ধর্ম আঘাত,
'মানব পরম সত্য'-জ্ঞানেতে হয়েছি সাম্য কবি,
আমিই স্বর্গ,আমিই দোজখ্,আমিই দীনের নবী।
আমারই বুকের আগুনে জ্বালাব,চির অক্ষয় রবি।
****************************
হৃদয়ে নজরুল
শিবানী গুপ্ত
সাম্যের কবি প্রেমের পূজারী
মুক্ত হৃদয় কবি,
বিশ্বজনার হৃদয় মাঝারে
আঁকা নজরুল ছবি।
অন্যায় দেখে প্রতিবাদে মসি
গরজে বিষম রবে,
শিকল ভাঙার গেয়েছো যে গান
চেতন জাগাতে সবে।
বিদ্রোহী সুর অগ্নিবীণার
শাসকেরা কাঁপে ত্রাসে,
কারাগার মাঝে পাঠায় তোমারে
তবুও লিখেছো রাশে।
অমিয় মধুর সুললিত সুরে
হৃদয়ে দিয়েছো দোলা,
কাব্য ছন্দে মাতালে সবারে
তোমাকে যাবে না ভোলা।
বিভেদ দ্বেষে প্রীতির রেশে
রাখতে চাইতে সদা দূরে,
স্বীয় গুণে রয়েছো যে
সবার হৃদয় জুড়ে।
*******************************
হৃদয়ে থেকো
সুস্মিতা চক্রবর্তী
হৃদয়ের এক গোপন প্রকোষ্ঠে
নিষাতে-ধৈবতে তুমি জেগে আছো।
জেগে আছো তুমি অগ্নিবীণার ষরজে-পঞ্চমে।
আমার শৈশবের কাঠবিড়ালি আর লিচুচোরে
তুমি রয়ে গেছ সবুজ ঘাসের রঙে।
তীব্র মধ্যমে বেজে ওঠে
বিদ্রোহী-স্বর।
মস্তিষ্কের ধুসরে রিনরিনিয়ে ওঠে,
সৃষ্টি সুখের উল্লাস।
জেগে থেকো তুমি
সেই গোপন প্রকোষ্ঠে,
যেখানে লালিত হয়,
বিষের বাঁশীর সুরে
আমার গোপন স্বরধ্বনি।
*****************************
জনতার কবি------নজরুল
অসীম দাস
" বিদ্রোহী কবি " শুধু বলে
ভুল করে ভুলে যাই চলে ,
" জনতার কবি "-ই তো ছিলে
বহমান মুষ্টি - মিছিলে ।
সময়ের হাতে হাত তুলে
অমরতা বরলাভ ভুলে ।
এসো কবি , নিদারুন কালে
পথ হাঁটি জ্যৈষ্ঠ সকালে ।
ফের এসো মিলনের গানে
রুজিহীন শ্রমিকের ত্রাণে ,
গালে - হাত চাষার উঠানে
কান পাতো শাসিতের শানে ।
চারিদিকে বিভেদের বিদ্বেষ বাণে
পুড়ে যায় বিবেকের চেতনার মানে ,
যুদ্ধের শেষ শোক শোষণের কানে
গুঁজে দিয়ে চলো কবি চনমনে চানে ।
আজ বড় দরকার রাস্তা দোকানে
প্রতিবাদী প্রতিরোধ কবিতার টানে
ভয়হীন ভেঙ্গে ফেলি কারাগার মনে ,
জাগরূক থেকো তুমি জনগনমনে ।
0 মন্তব্যসমূহ